ভোর হতে আর বেশি দেরি নেই। অর্পা রাতভর প্রায় জেগেই কাটিয়েছে। চোখ লাল হয়ে এসেছে, কিন্তু ঘুম আসেনি একটুও। টেবিলের ওপর পড়ে আছে সেই চিঠি, যেন বারবার তাকে ডাকছে। চিঠির অর্ধেক পড়া বাকি, কিন্তু সাহস পাচ্ছে না শেষটা পড়ার। অদ্ভুত একটা ভয় ঘিরে ধরেছে—যদি শেষ লাইনগুলো তার জীবনটাকেই বদলে দেয়?
জানালার বাইরে ভোরের আলো ধীরে ধীরে ফুঁটে উঠছে। রাস্তায় একটা ভ্যানের শব্দ শোনা গেলো। ভ্যানচালক ভোরের বাজার থেকে সবজি নিয়ে ফিরছে। সেই পরিচিত শব্দ যেন এই শহরের স্বাভাবিকতা বোঝাচ্ছে, অথচ অর্পার ভেতরটা অস্বাভাবিক শূন্যতায় ভরে যাচ্ছে।
সে ডায়েরি খুললো। লিখলো—
“আমি কি সত্যিই প্রস্তুত আরিয়ানের শেষ কথাগুলো জানার জন্য? নাকি চিঠিটা এমনই ভাঁজ করা থাকুক, অজানার ভেতর?”
হঠাৎ কোণে একটা পুরোনো ছবি ধরা পড়লো। অ্যালবামের মাঝে লুকিয়ে রাখা ছবি। আরিয়ান আর অর্পা—দুজনেই কলেজ জীবনের এক অনুষ্ঠানে, একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ছবিটা হাতে নিয়ে অর্পার বুকটা হুহু করে উঠলো। সে মনে করতে লাগলো—কীভাবে প্রথম দেখা হয়েছিলো তাদের।
সেদিন কলেজের বারান্দায় বৃষ্টি পড়ছিলো। ভিজে চুল এলোমেলো করে অর্পা দাঁড়িয়ে ছিলো। আরিয়ান এসে বলেছিলো—
“তুমি কি জানালার দিকে তাকিয়ে থাকলে বৃষ্টি থেমে যায়?”
সেই প্রথম কথা, সেই প্রথম হাসি।
অর্পা ঠোঁটে অশ্রু মিশ্রিত হাসি ফুটিয়ে বললো নিজের মনে—
“কেমন করে পারলে চলে যেতে, আরিয়ান?”
চিঠিটার দিকে তাকালো আবারো। মনে হলো, যেন অক্ষরগুলো ফিসফিস করছে। অবশেষে সে সাহস করে চিঠিটা হাতে নিলো, যেখানে শেষ হয়নি পড়া অংশ—
“অর্পা,
আমি জানি তুমি রাগ করবে। কিন্তু কিছু সত্যি আছে, যেগুলো বলা হয় না। যদি একদিন আমার না থাকার খবর তোমার কানে যায়, তখন মনে রেখো—আমি চাইনি চলে যেতে, আমাকে বাধ্য করা হয়েছিলো। হয়তো কোনোদিন সবকিছু খুলে বলতে পারবো…”
শব্দগুলো যেন মাথার ভেতর ঝড় তুললো। কে বাধ্য করেছিলো আরিয়ানকে? কেন?
অর্পার চোখ ভিজে এলো আবারো। সে ডায়েরিতে লিখলো—
“আরিয়ান, তুমি সত্যিই কোথায়? তুমি কি ফিরে আসবে আমার কাছে, নাকি আমি কেবল তোমার অর্ধেক কথার মধ্যে ডুবে থাকবো সারাজীবন?”
ভোরের সূর্যের আলো ঘরে ঢুকে পড়লো। চিঠিটা টেবিলে রেখে অর্পা জানালার বাইরে তাকিয়ে রইলো—অপেক্ষার জানালায়।
👉 চলবে…
অপেক্ষার জানালা
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
42
Views
3
Likes
0
Comments
4.0
Rating