পূজার কেনা কাটা করে এনে সব কিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে রিম ঝিম দেখাতে ব্যাস্ত। কিন্তু সে গুলো দেখার উৎসাহ নেই মানবের। আসলে জীবন সংগ্রাম গল্প সবার চোখে পড়ে।পুরুষের মানসিক যুদ্ধটা চোখে দেখা যায় না,তাঁর খবরের কেউ পায় না।প্রতি মুহূর্তে যে নিজের পরিস্থিতি আর ইচ্ছা সাথেই যুদ্ধ করে , তাঁর চিন্তা ভাবনাটা একটা ভয়ঙ্কর যুদ্ধ ক্ষেত্র, লড়াই তাঁর নিজের সাথেই।
আপনি বলবেন মানব তো সফল , আগের থেকে সহস্র গুণ ভালো হয়েছে ওদের অবস্থা, বেশ সুখেই আছে, ও। তাহলে কিসের চিন্তা।
ওর বংশ পরিচয় যাই হোক, ও কিন্তু একজন শিক্ষক। ও ছাত্র রাহুল ও , ওর ছাত্রী রিম ঝিম ও। খোকন বা রাহুল ওর চোখে সমান। এই পূজা তে আপনি হয়তো কেনা কাটা করেছেন, নানা রঙের পোশাক পরবেন আপনি বা আপনারা। এই পোশাক বলে দেবে আপনার অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন। রূচী কেমন। কিন্তু মানব শিক্ষক ওর সামনে ছেলে মেয়ে গুলো এক রকম পোশাক পড়ে আসে।কে বড়ো লোক, কে গরীব, কে হিন্দু, কে মুসলিম ও বুঝতে পারে না।কারো মেধা কম, করো বেশি। কিন্তু অনুশীলন করলে সবাই সমান হতে পারে। অন্তত শেখানোর ব্যাপারে ও পক্ষ পতিত করে না।
H.S পরীক্ষার রেজাল্ট বেড়িয়ে গেছে 7ই মে। WBJEE পরীক্ষা শেষ হয়েছে 27 শে এপ্রিল। এখনও রেজাল্ট এর দেখা নেই।কলেজ গুলো তাদের Merit list বের করেনি। চার মাস অতিক্রান্ত। সরকার নির্বিকার। শিক্ষা মন্ত্রী ধূমকেতু নিয়ে ব্যস্ত। লক্ষ লক্ষ ছেলে মেয়েদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির দায় কার???? এই প্রশ্ন টাই ওর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
রিম ঝিম কে ওর মা ব্যাঙ্গালোর পড়তে পাঠাচ্ছে। ও এবার h. S পাশ করেছে। তাই পূজার কেনা কাটা ও নিজে করেছে। ও মানব কে অন্য মনস্ক দেখে," বাপি তুমি কি চিন্তা করছো। এতো বলতো, আমি অষ্টমী পড়ার জন্য, একটা তাঁতের শাড়ি কিনেছি, দেখো তো জমিন দেখে ঠোকে গেলাম কিনা,,"
রাই বলল " কিরে তুই আন্টি কে না দেখিয়ে স্যার কে শাড়ি দেখাছিস। স্যার শাড়ি কি বোঝে। "
তৃণা প্রতিবাদ করে বললো " না না তোমাদের স্যার কাছে ঐ একটা ব্যাপার আমি হরে যাই গো। তবে হবে না কেন তোমাদের স্যার বাবা একটা সময় বিখ্যাত তাঁতী ছিলেন, বেশ নাম ডাক ছিলো তাঁর। '
রিম ঝিম বললো " আসল গল্প টা চেপে গেলে মা , পূজার সময় শাড়ি দোকানে শাড়ি কিনতে গিয়ে তো মা সাথে বাবার লাভ স্টোরি শুরু। "
রাই বললো " তাই আন্টি আপনাদের লাভ মেরেজ জানি কিন্তু শাড়ি দোকান আপনাদের আলাপ"
রিম ঝিম বললো "বাবা খুব চালাক ছিলো জানিস, মা, দিদুন খুব দরাদরি করতো। কলেজ যাবার সময় মাকে বাবা মাঝে মাঝে চোখাচোখি হতো, মা ভাবতো বাবা মা ভালো বাসে। শাড়ি গুলো কম দামে দেবে ওদের দোকান থেকে কিনে কিন্তু বাবা খুব শয়তান ছিলো। আগে থেকে মামা দাদু তিনগুণ দাম বলতো। বাবা মায়ের বলতো দুই গুন দাম । আবার বলতো এটা আপনার জন্য অন্য কারো জন্য নয়। এই ভাবে বোকা বানিয়েছে মাকে বছর পর বছর "
ওরা অতীতের খুনসুটি ভরা গল্পে মেতে উঠলো। কিন্তু মানবের মনটা চলে গেলো। চক গ্রামে । ও যখন তখনই চক গ্রামের পূর্ব গৌরব অস্তমিত হচ্ছে, তবুও গ্রামের অলি-গলি পথ দিয়ে চলার সময় হস্ত চালিত কাপড় বোনা যন্ত্রের ‘ঘটাং ঘট ঘটাং ঘট’ শব্দ ওর মনকে উড়িয়ে নিয়ে যায় চকের গৌরবময় অতীতে।
কাশিমবাজার তখন পূর্ব ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্দর শহর। দেশি-বিদেশি বহু বণিকদের ভিড় লেগেই থাকত এখানে। শহরের রেশম ব্যাবসা বেশ ফুলে ফেপে উঠেছিল। সব কিছু বেশ ভালোই চলছিল। এমন সময় এক গুজব রটল বর্গিরা ধেয়ে আসছে কাশিমবাজার আক্রমণ করতে। এখবর শুনে শহরবাসীদের অনেকেই ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে কাশিমবাজার ত্যাগ করে মুর্শিদাবাদের প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে বসবাস করার সিদ্ধান্ত নিল। কারণ আলী বর্দী খানের মতো সুলতান রা গরীব মানুষের ওপর অত্যাচার করতে সক্ষম হলেও, বর্গি দের মতো বীর যোদ্ধা দের মুখ্য মুখি হতে ভয় পেতো।
বর্গি হামলার ভয়ে ভীত মানুষ গুলির অধিকাংশই ছিল আসলে গরীব তাঁতি আর কাপড় ব্যাবসায়ী। এরা প্রত্যেকেই শহর ছেড়ে অন্যত্র বসবাসের জন্য একটি নিরাপদ স্থানের খোঁজ করছিল। বহু খোঁজা-খুঁজির পর অবশেষে তারা এসে উঠেছিল পদ্মার শাখা নদ ভৈরবের তীরে অবস্থিত একটি প্রাচীন জনপদ ইসলামপুরে। আর তাঁতিদের গড়ে তোলা নতুন বসতিতে গড়ে উঠল রেশমের বাজার। জনমুখে ইসলামপুরের এই নতুন বসতি পরিচয় পায় 'চক’ নামে। ‘চক’ একটি পার্শি শব্দ যার অর্থ বাজার। চক গ্রাম এক তাঁতী পরিবার জন্ম মানবের।
চক গ্রামে তাঁতী রা কাপড় দাম পেতো না। মানব জীবন টা তখন রথ দেখা কলা বেচার প্রবাদ বাক্য মতো। কলকাতায় পড়তে এসে কাপড়ের দোকান কাজ নেয় আর এই কাপড় দোকান থেকে ওর বাবা তৈরি করা কাপড় গুলো পাইকারি বিক্রি কতো অন্যান্য দোকানদার দের। আর এই দোকান থেকেই সত্য তৃনার সাথে মানবের প্রেম শুরু। ঠিক এই রকম পূজায় কেটা কাটার সময়। আসলে ওরা কেউ কেউ কাউকে ভালো বাসা কথা মুখে প্রকাশ করে নি। মানব রোজ একটা দোকানে সামনে দাঁড়িয়ে ট্রি সার্ট দেখতো, কিন্তু দাম জিজ্ঞাসা করতো না। পূজার কেনা কাটার সময় তৃণা ঐ দোকান থেকে ট্রি সার্ট কিনে, মানব কে উপহার দেয়। মানব নেবে না। তখন ট্রি সার্ট দিয়ে তৃণা বলেছিলো " যদি পুরূষ মানুষ হন, ট্রি সার্ট আপনি নেবেন, রিটার্ন গিফট হিসেবে সারা জীবনের ভাত কাপড় দায়িত্ব নেবেন। নিজেকে সেই ভাবে তৈরি করুন যাতে পর পূজা গুলোতে আমার পূজার কেনা কাটি করা দায়িত্ব আপনি নিতে পারেন। "
সত্যি তৃণা জন্য ওর জীবন টা বদলে গেছে। ওর ভালো বাসা ছিলো মানবের । প্রেরণা নয়তো খোকন মতো ওর জীবন টা নষ্ট হয়ে যেতো। উচ্চ শিক্ষা অর্জন করতে গেলে সত্য আজ ব্যাকিং লাগে। শিক্ষা তো এখন বড় ব্যবসার জায়গা। পয়সা ছাড়া শিক্ষা অর্জন সম্ভব নয়। তাই খোকন রা একালব্য দের মতো হারিয়ে যাবে। রাহুলদের নাম অর্জুনেদের মতো উজ্জ্বল অক্ষরে লেখা থাকবে। কারণ ওরা রাজ পুত্র।
রাই বললো " আরে তুই দেখ ভুলে করে কত গুলো বাচ্চাদের জামা কাপড় নিয়ে এসেছিস। "
রিম ঝিম বললো "না ওগুলো আমি কিনেছিরে।"
রাই বললো "তুই কি পাগলো এতো গুলো বাচ্চাদের জামা কাপড় কি করবি, এগুলো তো পয়সা নষ্ট।"
রিম ঝিম বললো " কোন পয়সা নষ্ট নয়। দেখি তো আমার পূজার কেনা কাটা, আমি এবার কোনো ব্যান্ড দেখে জামা কাপড় কিনি নি। অনেক টাকা বেচে গেছে। তোর মনে আছে কাল, ট্রেনের বাচ্চা টার কথা,, ও বললো ওর পূজার কেনা কাটা হয় না কখনো, আমি ঠিক করেছি এমন কিছু বাচ্চাদের এ বছর থেকে জামা কাপড় কিনে দেবো .."
কথা শুনে মানব মেয়ে জন্য একটা গর্ব বোধ করলো তারপর এগিয়ে গিয়ে বললো " ব্যাঙগালোর গিয়ে তোর মাসিকে বলে খোকনের একটা চাকরি জোগাড় করে দিতে পারবি, ও তাহলে online এ পড়াশোনা চালু করতে পারে। তোর মাকে বলতে ভয় পাই। বকাবকি করবে। পূজার মার্কেটিং এ একে যাই নি, জানিস তো তোর মায়ের মাথা একটু বেশি গরম।"
পূজার মার্কেটিং
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
45
Views
1
Likes
0
Comments
3.0
Rating