ছায়া

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
রাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া

রাতের সেই হ্যাকিং, আয়াতের ছবি, Project A-16-এর নাম…
সব মিলিয়ে মিডিয়া ও সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ভয়ানক আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

প্রথমে সরকার বিষয়টি “সাইবার ভুয়া তথ্য” বলে উড়িয়ে দেয়।
কিন্তু এরপর ‍যখন রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টার ফোন হ্যাক হয় এবং তার মেসেজ বক্স থেকে Project A-16 সংক্রান্ত তথ্য লিক হয়ে পড়ে—তখন সরকারের মুখ থমথমে।

G-9 ফাউন্ডেশন আর লুকিয়ে থাকতে চায় না।
তারা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে জানায়:

> "এই ছায়া নামের হ্যাকার শুধু একটা ছেলে নয়।
এটা একটা মুভমেন্ট।
ওর বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা না নিলে কাল সারা দেশের মানুষ আয়াতের অনুসারী হয়ে যাবে।"



প্রধানমন্ত্রীর এক গোপন আদেশে বলা হয়:

> “State Enemy List”-এ ‘ছায়া’ নামটি প্রথমে যুক্ত করা হোক।




---

▸ ছায়ার হাতে পৌঁছায় আয়াতের লুকানো চিঠি

লিজেন তখন ‘ছায়া’ হিসেবে আরও গভীরে প্রবেশ করছে।
সে জানে, সত্য প্রকাশ মানেই মৃত্যু সামনে ডেকে আনা।
তবুও সে থামে না।

তখনই এক মধ্যরাতে এক অচেনা প্যাকেট তার বগির জানালার ফাঁক দিয়ে ঢুকে পড়ে।

সাদা খামে লেখা:

> "For the One Who Believes in Me."



ভেতরে একটি হাতের লেখা চিঠি।

> "আমার শেষ ইচ্ছা ছিল, কেউ একজন আমার বানানো প্রযুক্তিকে তার আত্মার জন্য ব্যবহার করবে, যুদ্ধের জন্য নয়।
যদি তুমি তা করো, তাহলে তুমি শুধু একজন ‘ছায়া’ নয়—তুমি আমার স্বপ্ন।
একটি নির্দিষ্ট জায়গায় আমি আমার সব মূল ফাইল, টেস্ট রেজাল্ট এবং একটি কন্টেইনমেন্ট ইউনিট রেখেছি।
তুমি যদি পারো, তা খুঁজে বের করো।
আমি তোমার উপর ভরসা রাখি।
— আয়াত"



চিঠির শেষে একটি ঠিকানা:

> "Shanti Ghat, Sector-7, Uttara.
Basement Locker: A-9-B."




---

▸ অনুসন্ধানে ছায়া

পরদিন রাত ২টা।
লিজেন এক লম্বা কোট পরে, হুড দিয়ে মুখ ঢেকে শান্তি ঘাটে পৌঁছে।

স্থানটি এখন সরকারি নির্মাণাধীন এলাকা, জনমানবশূন্য।
কিন্তু তার কাছে মানচিত্রে থাকা লোকেশনের কো-অর্ডিনেট সব মিলে যাচ্ছে।

সে নিচে নেমে একটি ধাতব দরজার সামনে দাঁড়ায়—এটিই Locker A-9-B।

দরজার উপর আয়াতের হাতে আঁকা একটি প্রতীক:

> একটি চোখ যার পেছনে অর্ধেক চাঁদ।



দরজা খুলতেই সামনে বিশাল এক ফাইল স্টোরেজ, কিছু পুরোনো ডিভাইস আর একটি ছোট কন্টেইনমেন্ট ইউনিট।

তার ভেতরে একটা কাঁচের কেসে কিছু রাখা—একটি ছোট স্মৃতি ইউনিট, যার উপর খোদাই করা:

> “AY-001”



এটি আয়াতের নিজস্ব ব্রেইন ব্যাকআপ।


---

▸ বাস্তবতা ও ভালোবাসার দ্বন্দ্ব

লিজেন ভীষণভাবে দ্বিধায় পড়ে।
এই ডেটা সে কি এখনি ব্যবহার করবে?

হয়তো এটা প্লাগ করলেই আয়াত তার সামনে ফিরে আসবে।
হয়তো শুধুই এক স্মৃতির ছায়া হয়ে।

তবে সে চুপচাপ সেই ইউনিটটি ধরে বলে:

> "আমি তোমাকে ফিরিয়ে আনতে চাই, তবে মরে গিয়ে নয়—জেগে থেকে।
আমি যুদ্ধ জিতব, তারপর তুমি ফিরবে।"



সে ইউনিটটি ব্যাগে রাখে।
ঠিক তখনই একসাথে তিনটি সেনা ড্রোন তার সামনে হাজির হয়।

মাইক থেকে ভেসে আসে:

> “আপনি অবৈধভাবে সরকারি গোপন ইউনিটে প্রবেশ করেছেন।
আপনার নাম ছায়া।
আপনার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের হয়েছে।
আত্মসমর্পণ করুন।”




---

▸ ছায়া বনাম রাষ্ট্র

লিজেন ধীরে ধীরে মুখের হুড নামিয়ে ফেলে।
চোখে আগুন।
সে হাত বাড়িয়ে তার সাইবার ডিভাইস অ্যাক্টিভ করে।

ড্রোনগুলোর সেন্সর এক মুহূর্তে ঝাপসা হয়ে যায়।
পরের সেকেন্ডেই তিনটি ড্রোনের একসাথে সিস্টেম ক্র্যাশ।

মাটিতে পড়ে যাওয়ার আগে, ড্রোনগুলোর ক্যামেরা একটি ছবি পাঠায় G-9 এর হেডকোয়ার্টারে।

ছবিতে দেখা যায়—

> একজন লোক দাঁড়িয়ে, হাতে স্মৃতি ইউনিট, পেছনে আয়াতের প্রতীক।




---

▸ পরিণতি: দেশজুড়ে আতঙ্ক

সকালের খবরপত্রে একটাই হেডলাইন:

> “ছায়া সরকারের গোপন গবেষণা ইউনিটে হামলা চালিয়েছে। G-9 হুমকির মুখে। সেনাবাহিনী প্রস্তুত।”



দেশ এখন দুইভাগে বিভক্ত।
একদিকে তারা যারা আয়াতকে বিশ্বাস করে।
আরেকদিকে রাষ্ট্রযন্ত্র।

আর মাঝখানে দাঁড়িয়ে এক ব্যক্তি—লিজেন,
যার পরিচয় আজ আর শুধুই “ছায়া” নয়,
সে এখন একটি প্রতীক।
একজন নিঃশব্দ বিপ্লবী।


---

(চলবে…)


ছায়ার নতুন ঠিকানা

ঢাকা শহরের ব্যস্ততা থেকে দূরে, পূর্বাচলের শেষ প্রান্তে একটি পুরোনো টেলিকম টাওয়ারের নিচে, ছায়া এখন তার নতুন আস্তানা বানিয়েছে।
একটি পরিত্যক্ত বিল্ডিং, যার প্রতিটি দেয়ালে ক্যামেরা ও মোশন সেন্সর লাগানো।

আয়াতের স্মৃতি ইউনিটকে সে প্রাথমিকভাবে স্ক্যান করেছে।
ডেটাগুলো ইনক্রিপ্টেড, কিন্তু কিছু সংকেত সে ধরতে পেরেছে—

> “AYAT_MEMORY_NODE: 23.7600° N, 90.3750° E”
“A-16 Test Result: ইচ্ছাশক্তি তথ্যের মধ্যে ছড়িয়ে যায়।”



ছায়া এখন জানে—আয়াতের প্রকল্প শুধু বৈজ্ঞানিক ছিল না,
তা ছিল চেতনার অস্তিত্ব ধরে রাখার উপায়।
এবং সেটিই G-9 ফাউন্ডেশনের জন্য ভয়ংকর হয়ে উঠেছে।


---

▸ প্রতিবাদের আগুন

এই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া, তরুণ-তরুণীদের একটি অংশ ছায়ার নামে গোপনে সংগঠিত হতে শুরু করে।

তারা শহরের বিভিন্ন এলাকায় দেয়ালে আঁকতে শুরু করে—

> “AYAT LIVES”
“WE ARE SHADOWS”
“PROJECT A-16 IS NOT DEAD”



প্রথমে সরকার এগুলোকে নিছক “অরাজনৈতিক শিল্পকর্ম” বলে পাত্তা দেয়নি।

কিন্তু যখন এক রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্স ফ্যাকাল্টির সামনে বিশাল এক ছায়ার মুখ আঁকা পোস্টার টানানো হয়,
আর পোস্টারে নিচে লেখা থাকে—

> “তোমাদের বিজ্ঞান শুধু জেনে রাখে, আর আমরা তাকে অনুভব করি।” — ছায়া”



তখন সরকারের ঘুম ভাঙে।


---

▸ বিপ্লব শুরু হবার ঠিক আগে

ছায়া এখন নিজের জন্য একটি বিশেষ সাইবার নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে—ShadowNet।
এটি শুধুমাত্র নির্দিষ্ট তরুণ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া, হ্যাকার ও প্রতিবাদকারীদের জন্য।

এই নেটওয়ার্কে প্রতিদিন আপডেট যায়:

নতুন গবেষণার তথ্য

G-9 এর দুর্নীতি ফাঁস

সরকারি মিথ্যা প্রচারণার বিপরীতে সত্য তথ্য

এবং আয়াতের কথাগুলোর টুকরো টুকরো ভিডিও


এক রাতে ছায়া ShadowNet-এ একটি বার্তা পাঠায়—

> “এই রাষ্ট্র শুধু পেট্রোল, পুলিশ আর প্রোপাগান্ডা দিয়ে চলে না।
একদিন এক বিজ্ঞানী এসেছিলো, সে প্রেম আর পবিত্রতা নিয়ে গবেষণা করেছিল।
তারা তাকে মেরে ফেলেছে।
এখন সময় তার স্বপ্ন ফিরিয়ে আনার।
ছায়া আর একা নেই।”




---

▸ রাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া: সাইবার জরুরি অবস্থা

এরপর রাষ্ট্র সাইবার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে।
সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, মেসেজিং অ্যাপ, এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ সীমিত করে দেওয়া হয়।

তবে ShadowNet বন্ধ করা যায় না।
কারণ এটি সাধারণ ইন্টারনেট নয়—এটি ছায়ার তৈরি ডার্কনেট-ভিত্তিক এনক্রিপটেড সিস্টেম।

G-9 এখন ভাবছে—ছায়াকে হ্যাকার দিয়ে ধরা যাবে না।
তারা চায় তাকে মানসিকভাবে ভাঙতে।


---

▸ ছায়াকে 'লিজেন' বানানোর ষড়যন্ত্র

তারা ছায়ার পুরনো তথ্য ঘেঁটে বের করে তার আসল পরিচয়—লিজেন হোসেন।

G-9 মিডিয়ায় ‘ফাঁস’ করে যে ছায়া নামে হুমকি দিচ্ছে সে এক "মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি", যার অতীতে প্রেমে ব্যর্থতা ও হিংসা ছিল।
আয়াতকে সে ভালোবাসত, কিন্তু সে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল।

এমন গল্প ছড়াতে থাকে টিভি, ইউটিউব, ফেসবুক লাইভে।

কিন্তু লিজেন হাসে।

> “তারা যদি জানত, আমি কোনোদিন তাকে ছুঁয়েও দেখিনি…
শুধু ভালোবেসে গেছি।”



এই মুহূর্তে তার চোখে জল আসে না।
কিন্তু বুকের ভেতর একটা আগুন আরও প্রজ্বালিত হয়।


---

▸ অস্তিত্বের দ্বন্দ্ব: ছায়া বনাম লিজেন

এক রাতে, সে নিজের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে।

একদিকে সে নিজেকে দেখে—একজন সাধারণ যুবক লিজেন হোসেন, যার ছোট্ট একটা গ্রাম থেকে শহরে আসা, যে আয়াতকে শুধু টিভিতে দেখে প্রেমে পড়ে যায়।

অন্যদিকে সে এখন ‘ছায়া’—যে আয়াতের হত্যার প্রতিশোধ নিতে চায়, রাষ্ট্রের ভিত কাঁপিয়ে দিতে চায়।

সে নিজেকেই প্রশ্ন করে:

> “আমি কে? লিজেন, না ছায়া?”



তার মাথায় যেন এক সাইবার সিগনাল বেজে ওঠে।
সে উত্তর দেয় নিজেকেই—

> “আমি সেই সরল ছেলে, যে বাঁকা হয়ে গেলে,
একশোটা বাঁকা মানুষের বাপ হয়ে যায়।”




---

(চলবে…)
53 Views
0 Likes
0 Comments
0.0 Rating
Rate this: