হারাম রিলেশন

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
অবৈধ সম্পর্কের অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরা😔

রিমা গ্রামের এক শান্ত স্বভাবের মেয়ে। পড়াশোনায় ভালো, পরিবারের কাছে ভদ্র ও বিনয়ী হিসেবেই পরিচিত। তার হাতে যখন প্রথম মোবাইল আসে, তখন সে স্কুলের বইপত্র আর কিছু ইসলামি পেজ ফলো করতো। একদিন ফেসবুকের এক স্টাডি গ্রুপে পরিচয় হয় সজীব নামে এক ছেলের সাথে। প্রথমে কথা হয় পড়ালেখার বিষয়েই—কে কোন বই পড়ছে, পরীক্ষার প্রস্তুতি কেমন চলছে, এইসব নিয়ে।

কথা বলতে বলতে তাদের মধ্যে এক ধরনের স্বাচ্ছন্দ্য তৈরি হয়। কয়েকদিন পর সজীব ব্যক্তিগত চ্যাটে এসে কথা বলা শুরু করে। প্রথমে রিমা কিছুটা অবাক হয়, কিন্তু মনে করে—“বন্ধুত্ব করতেই তো ক্ষতি কী?” তাই উত্তর দেয়। দিনে এক-দুই বার চ্যাট শুরু হয়, যা ধীরে ধীরে রাতেও চলতে থাকে। নামাজ পড়ে ঘুমানোর বদলে রিমা এখন ঘুমানোর আগে ফোন হাতে নিয়ে কথা বলে।

এক মাসের মধ্যেই তাদের আলাপ অনেক ব্যক্তিগত হয়ে যায়। সজীব তার একাকীত্বের কথা বলে, রিমাকে বলে—“তুমি ছাড়া আমি কারও সাথে এত খোলাখুলি কথা বলিনি।” এই কথাগুলো রিমার মনে এক ধরনের ভালো লাগা জাগায়। ধীরে ধীরে সে তার নিজের পরিবার, স্বপ্ন, ছোটখাটো দুঃখের কথাও সজীবকে বলতে শুরু করে। কিন্তু তার অজান্তেই, এই কথোপকথনগুলো তাকে ক্রমশ পরিবারের কাছ থেকে মানসিকভাবে দূরে সরিয়ে দিচ্ছিল।

দুই মাস পার হতে না হতেই সজীব একটু চাপ দেওয়া শুরু করে—“আমরা এত কথা বলি, অথচ কখনো দেখা হলো না। তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করো না?” রিমা প্রথমে না করে দেয়, কিন্তু সজীব বারবার বলতে থাকে—“যদি তুমি না আসো, বুঝবো তুমি আমাকে গুরুত্ব দাও না।” এই কথাগুলো রিমার মনে অপরাধবোধ তৈরি করে। সে ভাবে—“শুধু দেখা করলেই বা ক্ষতি কী?”

অবশেষে একদিন তারা শহরে দেখা করার সিদ্ধান্ত নেয়। দেখা হওয়ার মুহূর্তে রিমার মনে অদ্ভুত অস্বস্তি জাগে। সজীবের সাথে কিছুক্ষণ কাটিয়ে যখন বাসায় ফেরে, তখন মনে হয়—এটা ঠিক হয়নি। কিন্তু সজীব তখনও ফোনে কথা বলছিল, তাই সে নিজের মনকে বোঝায়—“হয়তো আমি বেশি ভাবছি।”

এরপর ধীরে ধীরে সজীবের আচরণ বদলাতে থাকে। ফোনে কথা কমে যায়, উত্তর পেতে দেরি হয়। রিমার মনে এক ধরনের ভয় ঢুকে যায়—যদি সব শেষ হয়ে যায়? কিছুদিন পর একদিন হঠাৎ সজীবের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। বারবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায় না।

রিমা তখন ভেঙে পড়ে। ঘুম নেই, মন নেই পড়াশোনায়, নামাজে মনোযোগ নেই। সবচেয়ে বড় কথা, সে বুঝতে পারে—যার জন্য সে আল্লাহকে অবহেলা করেছে, সেই মানুষটিই তাকে ছেড়ে চলে গেছে। তার মনে পড়ে আল্লাহ তায়ালার আয়াত—

🍁“যিনা’র কাছেও যেও না। নিশ্চয়ই এটি অশ্লীল কাজ এবং খুবই খারাপ পথ।” (সূরা আল-ইসরা: ৩২)🍁

সেদিন রাতে সে অনেক কেঁদেছিল। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়েছিল এবং দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়েছিল—কখনো আর হারাম সম্পর্কে জড়াবে না। ধীরে ধীরে সে মোবাইল থেকে সব অনিরাপদ যোগাযোগ মুছে ফেলে, আবার কোরআন পড়া শুরু করে, নামাজে নিয়মিত হয়। সময়ের সাথে সাথে তার মন শান্ত হতে থাকে।

রিমা বুঝে যায়—হারাম সম্পর্ক শুরুতে যতই মিষ্টি মনে হোক, শেষ পর্যন্ত তা কেবল কষ্ট, লজ্জা আর আল্লাহর অসন্তুষ্টি বয়ে আনে।

✍️ Ripon Khan ✍️
47 Views
1 Likes
0 Comments
0.0 Rating
Rate this: