গ্রীষ্মের দুপুর, ঢাকার এক বস্তিতে মানুষজনের গর্জন মিশে উঠছিল—একটি পুরোনো মন্দিরের পাশে জমে ওঠা জনতার ভিড়ে যেন বাতাসও থমকে গিয়েছিল। সবাই এক মুখ—“জয় হনুমান!”
এই কণ্ঠস্বর ছিল শুধু ভক্তির নয়, ছিল আশার, ছিল শক্তির।
অল্প বয়সী রকিব এই জনতার মাঝে দাঁড়িয়ে নিজের হৃদয় কেমন এক অজানা বিষ্ময়ে ভরে উঠছিল। ছোটবেলা থেকেই সে ছিল ভীতু, স্কুলে কেউ যদি তার সাথে ঝগড়া করতো, সে পালাতো, আর নিজের ভাই-বোনদের রক্ষা করতে কখনো সাহস জুটতো না।
কিন্তু আজ তার ভিতরে অন্য এক আগুন জ্বলছিল। কারণ আজ তার বাবা হারিয়ে গিয়েছিল বস্তির পাশের গলির অন্ধকারে, আর তাকে খুঁজে পেতে তার একমাত্র ভরসা ছিল—হনুমান।
হনুমান, যে তার পিতার কাছে ছোটবেলা থেকেই এক দেবতা নয়, বরং একটা প্রতীক, শক্তির নাম।
“যে যেখানে থাকুক, যখন তুমি তার নাম বলবে, তখন সে তোমার সাহায্য করবে,” বলত তার বাবা।
রকিব মাথা গুঁজে ভাবতে লাগল, সত্যি কি এমন কোনো শক্তি আছে? যে তাকে সাহায্য করতে পারে? সে কি শুধু একটা গল্প?
হঠাৎ তার কানে শোনা গেলো এক বৃদ্ধের কণ্ঠ—
“জয় হনুমান! যারা বিশ্বাস রাখে, তাদের কখনো পরাজয় হয় না। এসো, চল এবার আমরা তাকে খুঁজে বের করি।”
বৃদ্ধের সঙ্গে বস্তির লোকেরা একযোগে এগোতে লাগল। রকিবের বুকের অজানা ভয় কাটতে লাগল। এই ভিড়ে সে দেখতে পেলো কত লোকের চোখে ভরসার ঝিলিক।
তারা এক অন্ধকার গলির মুখে পৌঁছালো। সেখানে ছিলো ছিমছাম পোশাক পরা এক যুবক, যাকে বস্তির সবাই ‘হনুমান’ বলে ডাকে। তার নাম রাহুল। ছোটবেলা থেকেই সে বস্তির বাচ্চাদের জন্য কাজ করে আসছিলো, পড়াশোনা করিয়ে, তাদের সুরক্ষিত রাখতে।
কেউ জানত না, এই রাহুলের পরিবার ধনী ছিলো, কিন্তু সে সব ছেড়ে বস্তির মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।
রকিব তার কাছে গেলো, চোখে জিজ্ঞাসা,
“আপনি কি আমার বাবাকে দেখেছেন? তিনি হারিয়ে গিয়েছেন।”
রাহুল একটু হাঁটলো, মুখে নির্ভরতার হাসি,
“যারা হারিয়ে যায়, তাদের খুঁজে পাওয়া সম্ভব যদি আমরা একসাথে চেষ্টা করি।”
একযোগে তারা গলির অন্ধকার অতিক্রম করতে লাগল। রাহুলের সাহস আর ভক্তির সুরে সবাই জোর পেলো। রকিবের ভয় যেন লুপ্ত হতে লাগলো।
একটু দূরে, এক কুয়োর পাশে বাবার জুতার স্লিপার পড়ে ছিলো। রকিব দৌড়ে গেলো, সে বুঝতে পারল বাবা এখানেই!
হঠাৎ ঝাঁপ দিয়ে রকিবের পেছন থেকে একজন দুর্বৃত্ত এসে পড়লো, তাকে আটকানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু রাহুল এসে ঝড়ের মতো এসে তাকে সরিয়ে দিলো।
“ভয় পাওয়ার কিছু নেই, আমরা একসাথে আছি,” বললো রাহুল, আর সবাই একসঙ্গে চিৎকার দিলো—
“জয় হনুমান!”
অবশেষে তারা বাবাকে উদ্ধার করলো। বস্তির সবাই মিলেমিশে রকিবের বাবাকে হাসতে দেখলো। রকিব এবার ভেবেছিলো, হয়তো সত্যিই এমন শক্তি আছে—বিশ্বাস আর সাহসের শক্তি, যেটা নাম দেয় হনুমান।
সেই দিন থেকে বস্তির ছেলেমেয়েরা আর রকিব জানলো, সত্যিকার জয় হল ভয়কে হারানো, আর যখন নাম উঠবে হনুমানের, তখন একতা আর সাহসের জয় হবেই।
জয় হনুমান
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
23
Views
5
Likes
0
Comments
0.0
Rating