🚫শর্তক বার্ত🚫
❌এই গল্পটি সম্পূর্ন্ন রূপে কাল্পনিক । এই গল্পের চরিত্র কাল্পনিক, তবে এই গল্পে লুসিফারকে নিয়ে দেওয়া কিছু তথ্য সত্যি এবং কালো জাদুর কিছু তথ্য সত্যি। এই গল্পে কালোজাদু,লুসিফারের পূজারী, থ্রীল,ভয়ংকর ভুতের কাহীনি ও এক অনিষিদ্ধ প্রেম কাহীনি তুলে ধরা হয়েছে। এই গল্পে শুধু মাত্র বিনেদনের জন্য জ্বীন জগৎ ও জাদুটনার ঘটনাকে উপস্থাপন করা হয়েছে। তাই সকালের কাছে বিনিত অনুরোধ গল্পকে অন্য কোনো দিকে ধাবিত করিবেন না ❌
""লুসিফার বা শয়তান, বিভিন্ন ধর্মে এর ভিন্ন ভিন্ন উদাহরণ আছে। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী এহলো এক জ্বীন যাকে আল্লাহর আদেশ অমান্য করাই শয়তান উপাদ্ধি দেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে খ্রিষ্ট ধর্মাল্বীরা বলে থাকেন লুসিফার যা হলো এক দেবসূত যাকে ঈশ্বরের অবাধ্যতার শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে। খ্রিষ্টান ধর্মাগ্রান্থ বাইবেলে লুসিফারকে "ভোরের তারা" হিসেবে জানানো হয়েছে। যারা লুসিফারে বাইবেল ভিক্তিক পূজা করে তাদেরকে (Luciferianism) বলা হয় । এরা লুসিফারকে দেবদূত এবং আলোর পথ প্রদর্শক হিসাবে বিবেচনা করে, তারা বিশ্বাস করে না যে এক শয়তান।
অন্যদিকে লুসিফারের আরো একটি সস্তা দুনিয়াতে বিরাজমান। যা কেবল মাত্র অন্ধকারের দিকে ভাবিত করে। যারা নিজেদের আত্মা প্রকাশে ওহ লুসিফারের সন্তুুষ্টি অর্জনে লুসিফারের পূর্জা করে তাদেরকে অতিপ্রাকৃত শয়তানবাদী বলা হয়, এরা লুসিফারকে আক্ষরিক অর্থে একটি শক্তিশালী সত্তা হিসেবে পূজা করে। যার ফলে তারা দুনিয়ার সেই সব শক্তি অর্জন করতে পারবো যা তা চাই ""
২০২১ সালের ১২ই জুন
ঐ দিন বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায় ২৯শে জৈষ্ঠ্য, ১৪২৮ বঙ্গাব্দ এবং আরবি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১লা জিলকদ ১৪৪২ হিজরী ছিলো। যেদিন আরো ছিলো ঘনোকালো আধারের চাদরে চারিদিক ঢাকা , লোকালয় থেকে অনেক দূরে এক জঙ্গলে কথা এটা, যে জঙ্গলে পিনপতন নীরবতা বিরাজ করে, সেখানে আজ চারিদিক থেকে ভেসে আসছে শেয়ালের কান্না,এখানে আজ ঝিঁঝি পোকার ডাক নয় আধারের বুক চিরে ভেসে আসছে শত শত লোকের মন্ত্র যবের আওয়াজ.."O Lucifer, deus Satanae, appare mihi, accipe donum quod offero. ( হে লুসিফার শয়তানের দেবতা আমাকে দেখা দিন আমার দেওয়া উপহার গ্রহণ করুন ) " একইকথা একই সুরে যবে যাচ্ছে শত হাজার লোক, সবার গায়ে ভারি কাপড়ের কালো আলখেল্লা পরা, মুখটা আলখেল্লার ভাবি টুপি দিয়ে ঢাকা। যারা সবাই ঠিক জঙ্গলের মাঝখানে এক ফাকা জায়গাতে গোলাকার ভাবে একটা পাথরকে ঘিরে ধরে ল্যাটিন ভাষার এই মন্ত্র যবে যাচ্ছে। চারিদিকে খালি কালো পোশাক পরিধাণ করা মানুষ রূপে কতগুলো পিচাশ। যাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক লোক সামনে থাকা একটি পাথরকে গোল করে ঘিরে, হাটু গেরে মাথা নিচ করে বসে মন্ত্র উচ্চারণ করছে, অন্য দিকে জলন্ত মশালসহ দুহাত, কালো অন্ধকারে অচ্ছ্যন্ন আকাশে দিকে তুলে একই সুরে লুসিফারকে সাগত জানাচ্ছে এই পিচাশ গুলো। তাদের গোলাকার করে ঘিড়ে ধরা ৩ ফুট উচ্চতায় চেপ্টা পাথারের উপরে পরে আছে সদ্দ জন্ম নেওয়া এক নবজাতক শিশু। যার শরীরে এখনো মায়ের শরীর থেকে বিচ্ছেদে হওয়ার চিহ্ন বিদ্যামান। শিশুটাকে কোনোরকম পাথারের উপরে ফেলে রাখা হয়েছে। তার গলা ফাটা অত্তনাত এই পিচাশগুলোর উচ্চারিত মন্ত্রের আওয়াজের দেওয়াল ভেদ করে বের হতে পারছে না। আকাশের কালো মেঘ সরে সম্পূর্ন্ন চাঁদের দেখা মিললো, চাদের আলো শিশুটার গায়ে পরতেই মন্ত্রের আওয়াজ থেমে যাই, যেনো তারা এটারই অপেক্ষাতে ছিলো। ভিড় থেকে একজন একটা কাফনের কাপড় আর গোলাপ জল হাতে নিয়ে শিশুটার দিকে এগিয়ে আসে, কাফনের কাপড়টা খুলে কন্দনরত শিশুটাকে সম্পূর্ন্নভাবে ঢেকে দেই এরপর হাতে থাকে গোলাপ জল শিশুটার উপরে ছেটাতে ছেটাতে একই মন্ত্র তিনবার উচ্চারণ করে। লোকটার কাজ শেষে নিজ স্থানে ফিরে যাই। এতক্ষণ বিধস্ত অবস্থাই দূর থেকে ভিড়ের মাঝে দাড়িয়ে সবটাই দেখছিলো এক নারী। নিষপ্রাণ ভাবে সে শুধু কন্দনরত শিশুটার পানে চেয়েছিলো তখনি তার চোখে পরে ভিড় ঠেলে এক নতুন আলখেল্লা পরা ছুরি হাতে এক ব্যক্তিকে শিশুটার দিকে এগিয়ে যেতে। এতখন সবটাই নিষপ্রাণ চোখে অনুভুতি হীন ভাবে দেখলেও নতুন পক্ষের আগমণটা জানি সব কিছু শেষের পূর্বঅভাস ছিলো মেয়েটার কাছে। তাই তো গগন কাঁপিয়ে আতনাত করে উঠে..
~ পায়ে পরি তোমাদের ওকে ছেড়ে দাও.. ভিক্ষা দাও আমার বাচ্চা টাকে...
কিন্তুু তার আত্মানাথ শোনার মতো কেউ নেই এখানে.. এখানে আছে এক একটা অনুভূতি হীন নরপিচাশ যারা শক্ত হাতে মেয়েটাকে চেপে ধরে আছে যাতে সে তাদের কাজে বেঘাত ঘটাতে না পারে। নতুন আলখেল্লা পরা লোকটা নিতের হাতে থাকা ছুরিটা, পাশের একটা পাত্রে থাকা কুলের পাতার পানিতে ডুবিয়ে শুদ্ধ করে নেই, এরপর ধীর পায়ে পাথরের উপরে উঠে শিশুটার কাছে এসে দাঁড়াই। লোকটার বিশাল ছায়া ছোট শিশুর সমস্তশরীরকে গ্রাস করেছে, লোকটা কাছে আসতেই বাচ্চাটার কান্নার বেগ বৃদ্ধি পাই, বেচার হয়তো নিজেকে উদ্ধারের জন্য নিজ ভাষায় মিনতি করছে.. কিন্তুু ওহ কি জানে এই নরপিচাশ মানুষকে মুক্তি নয় ধ্বংস করতে জানে.. শুধুই ধ্বংস। চারপাশ থেকে মন্ত্রে আওয়াজ আরো বৃদ্ধি পেতে থাকে, সেই সাথে এক মায়ের আত্মা চিৎকারও। এই সকল কিছুকে ছাপিয়ে সকলের কানে এসে বাঁধে সপাত, সপাত, সাপত.. করা তিনটি শব্দের ধ্বনি যা ছিলো সদ্য জন্ম নেওয়া শিশু বুকে ছুড়ি আঘাতের শব্দ। পিনপতন নীরবতা ফিরে আসে আবার জঙ্গলে বুকে, আত্মা চিৎকার করা মেয়েটি এবার জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরেছে. আগন্তুুকের হাতের ছুরিটা থেকে রক্ত চুয়িয়ে পরছে.. পাথর থেকে নিচে নেমে আসে সে, পরিধারত কালো আলখেল্লা খুলে ফেলে, চাঁদের আলোতে তার পিঠে করা বিশাল লুসিফারের মাথার ট্যাটুটা পরিষ্কার ভাবে ফুটে উঠেছে, নিজে হাতে থাকা রক্ত মাখা ছুরিটা একটি পাত্র ঢুবি রাখে.. এরপর নিজের বামহাত কেটে কিছু রক্তের ফোটা সেই পাত্রেফেলে। আবারও চারিদিক থেকে উচ্চরিত হতে থাকে সেই মন্ত্র, লোকটা এক নিশ্বাসে রক্ত মেশানো পাত্রের পানি পান করে.. পানি পান করার কিছু মুহূর্তেই নিজের গলা চেপে ধরে যন্ত্রণাতে মাটিতে হাটু গেরে বসে পরে..কিন্তুু এই যন্ত্রণার মাঝেও বিকট শব্দে হাসতে থাকে লোকটা, এযেনো এক বিশ্বাস জয়ের হাসি। পুরো জঙ্গলে ছেয়ে গেছি এক পৈশাচিক হাসির আওয়াজে। যেনো ক্রমশো তা বৃদ্ধি পাচ্ছে... সবকিছু ছাপিয়ে খালি তার হাসির আওয়াজ ভেসে উঠছে..গ্রাস করছে সমস্ত নিড়াবতা...
***২০২৫....সকাল ৯টা বেজে ৩৬ মিনিট***
ঘুম থেকে বিছানার উপরে ধরফরিয়ে উঠে বসে রুমী। রুমীর এমন অবস্থা দেখে প্রহা বলে উঠে..
~ কিরে আবার এই স্বপ্ন দেখেছিস.?
প্রহা,রুমী আর পূর্জা তিনজন রুমমেট, তিনজনেই অর্নাস ২য় বর্ষের ছাত্রী। প্রহা মুসলিম, রুমী ক্যাথলীথ আর পূর্জা হিন্দু ধর্মের মেয়ে। তিনজনের ধর্মের ভিন্নতা থাকলেও বন্ধুত্বের সম্পর্কে তাদের কোনো ভিন্নতা নেই, তিন শরীর এক প্রাণ যেনো তারা। বিশ্বিবদ্যালয়ের ১ম দিনে তিনজনের পরিচয় এরপরে বন্ধুত্ব। তারপর বাসাভারা করে তিনজনে এক সাথে থাকতে শুরু করা। প্রহা বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে, গ্রামের বাড়ি বরিশাল, পূজার একটা বড় ভাই আছে যে ইন্টার পাসের পরে বিদেশে চলে গেছে কারণ বাংলাদেশের বেশির ভাগ যুবক কর্মের তাগিতে বিদেশে যাই৷ আর রুমি বাবা মায়ে একমাত্র সন্তান তবে তারা জন্মের পর তার বাবা মারা যান। মা ২য় বিয়ে করে, সে ঘরে দুই বোন আছে রুমীর। রুমীর ঘামন্ত মুখ দেখে প্রহা আবার বলে উঠে..
~ কিরে বেশি খারাপ লাগছে..? পানি খাবি..?
তুইও নাহ প্রহা...এটা কি নতুন বিগত ২ বছর ধরে একই কাজ হচ্ছে.. ঐ একই স্বপ্ন দেখবে তারপরে ধরফরিয়ে উঠে ঝিমমেরে বসে থাকবে..এর আর নতুন কি..?
ডেসিনটেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুল আঁচরাতে আঁচরাতে কথাটা বললো পূজা, প্রহা ওকে ধমকে বলে উঠে ..
~ থামবি তুই..বেচারি সত্যি ভয় পেয়ে আছে.. আর স্বপ্ন যখন দেখে তখন তো আর মনে থাকে না ওটা স্বপ্ন,, এক হলেই বা কি..
~ একনয় আজকে একটু ভিন্ন ছিলো..
ভিত চোখ মুখ নিয়ে কথা বললো রুমী, ওর কথা শুনে খাটে এসে বসে পূজা, মুখে একরাশ উত্তেজনা নিয়ে জিজ্ঞাসা করে..
~ কি নতুন ছিলোরে ছেলেটার মুখ দেখতে পেয়েছিস..?
~ ছেলেটার মুখ দেখতে পাইনি তবে..
প্রহা ; কি তবে..?
~ আগের মতোই ৬ ফুট লম্বার একটা শক্ত পক্ত গড়নের ছেলে আমার সামনে দাড়িয়ে ছিলো মুখটা ঢাকা ছিলো সেই সাদা কাফনের কাপড় দিয়ে, কিন্তুু এবার দূর থেকে নয়, আমি ছেলেটার কাছে দাড়িয়ে ছিলাম একদম মুখোমুখি, আমি সামনে যেতেই ছেলেটা তার মুখ থেকে কাপড় টা সরাই কিন্তুু..!
~ কিন্তুু কি..? ( প্রহা পূজা দুজনেই বলে উঠে)
রুমী একটা শুকনো ঢোক গিলে আবারও বলতে শুরু করে..
~ ছেলেটার মাথা ছিলো না...এটা দেখেই আমি ভয়ে নিচে বসে পরি আর আমার শরির রক্ত ভরে যাই এমন কি ছেলেটার হাতে থাকা সাদা কাফনের কাপড় টাও রক্ত লাল হয়ে গেছে, লাল রক্ত চুয়িয়ে চুয়িয়ে পরছিলো..
প্রহা ~ শান্ত হ এটা সামন্য দুসস্বপ্ন মাত্র, এটা নিয়ে এত ভাবিস না...আসলে তুই রোজই স্বপ্নে ছেলেটাকে দেখিস আর মনে করিস যদি চেহারা দেখতে পারতাম তাই তোর ব্রেন হ্যালোসিনেশন করেছে।
পূজা : ঠিকই বলেছে প্রহা, তুই এত ভাবিস না। এখন উঠ, উঠে রেডি হয়েনে বাসা খুজতে যেতে হবে বোন..! আজ মাসের ২৭ তারিখ আর মাত্র তিনদিন আছে এখনো যদি বাসা না পাই তাহলে কি হবে বুঝেছিস...
পূজার কথাই রুমী নিজের হুস ফিরে পাই, সত্যি তো আজ ২৭ তারিখ এই মাসের ২০ তারিখে বাড়িওয়ালা মারা গেছেন, আর উনার গুণধর ছেলে বাবা মারা যাওয়ার ২ দিন পরে সব ভাড়াটিয়াকে শর্ট নোটিশ জানিয়ে দিয়েছে ১ তারিখের মধ্যে বাসা উনার খালি চাই, উনি বাড়ি বিক্রি করে দিবেন, অনেকে ঐ লোকের সাথে এই বিষয়ে তর্কে জড়িয়েছে কিন্তুু তাতে কিছু লাভ হয়নি এতে আরো সময় নষ্ট। প্রতিদিন ক্লাস শেষ করে এসে বাসা খুজতে বের হয় ওরা, আজ শুক্রবার থাকাই সকাল সকাল বের হচ্ছে, হাতে তিনটা বাসা আছে যার খোজ ক্যাম্পাসের এক সিনিয়ার ভাইয়া দিয়েছে, আজ সেখানেই যাবে রুমী আর পূজা, প্রহা রান্না করবে কারণ রান্নার সে একাই রান্নাটা করতে পারে।
~ শালার জীবন একটা লোক যদি কথা শোনে.. ভাই মেয়ে হয়েছে তো কি একবার কথা শুনবি তো, এভাবে মুখের উপরে কে দরজা বন্ধ করে দেই..?
রাগে গজগজ করতে কথাটা বললো পূজা, প্রথম বাসাটা পছন্দ হলেও ভাড়া বেশি ছিলো আর ২য় বাসাটা ওদের একদম পছন্দ হয়নি, ছোট রুম তার উপরে একদমই নোংরা,হাতের শেষ ভরসা টাও মাটি হলো, বাড়িওয়ালা মুরুব্বি চাচা যখনি শুনেছেন ফ্যামেলি নয় ৩ জন মেয়ে থাকবে তখনি মুখের উপরে দড়জা বন্ধ করে দেই। ক্লান্ত আর মেজাজের রেশ কমাতে দুজন রাস্তার একপাশে গাছের ছায়াতে মাথা গুজেছে, এদিকে বেলা গরিয়ে ১২ টা পা দিয়েছে। কপালে জমে থাকা ঘামের কোণা ওড়নাতে মুছতে মুছতে রুমী বলে..
~ কি করবি পাশের এলাকা টা কি ঘুরে দেখবি..?
~ এখন আর দেখে লাভ নেইরে একটু পরে আজান দিবে, আজ শুক্র বার সবাই নামজে যাবে, দেখা গেছে দাড়য়ান কাকা বললে বাসায় সাহেব নাই পরে আসেইন বা হতো গেটে তালা মারা পাবো..
~ ঠিক বলেছিস.. তাহলে চল বাসায় যাই.. বিকালে না হয় একবার আসবো..
~ হুম তাই চল
হতাশা আর ক্লান্তি নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিতে নিলেই পিছু ডাক পরে দুজনের উদ্দেশ্যে। এক মধ্যে বয়সী লোক পান খাওয়া রঙিন দাঁত বের করে একটা হাসি দিয়ে বলে উঠে...
~ আফা মনীরা বাসা খুজতাছেন..?
রুমী : জ্বী চাচা.. কিন্তুু আপনি কে..?
লোক : আমি উসমান, ঐ যে একটু আগে আপনারা যে বাসা থেকে বের হইলেন তার পাশের বিল্ডিংএর দারয়ান আমি.. আমাদের বিল্ডিং-এ একটা ফেলেট খালি আছে..
লোকটার কথা শুনে মনে ইচ্ছে জাগলেও, তা মাটি চাপা দেই দুজনেই, হাজার হক তারা মেয়ে আর এভাবে আগবাড়িয়ে আসা কোনো লোকের কথা তো আর তাল মিলালে হবে না। তাই মুখে সৌজন্যে মুলক হাসি টেনে রুমী বলে...
~ ধন্যবাদ চাচা, বাসা লাগলে বলবো.. এখন আসি.
লোকটা আবার একটা হাসি দিয়ে বলে..
~ আফা ডরাইতেছেন, ডরাইয়েন না আফা.. আমি উসমান আপনারা জিজ্ঞান আসে পাশে, তারাও বলবো আমি কই থাকি কি করি বা বাসা সত্য খালি আছে কি নাহ....
লোকটার কথা একটু সাহস আসে দুজনের মনে, আসলেও লোকটার যদি খারাপ উদ্দেশ্য থাকে তাহলে এই দিন দুপুরে রাস্তার মানুষের সামনে কথা বলে ঘটা করে সাথে নিয়ে যাবে না,আর যে বিল্ডিং এর কথা বলছে সেটা বেশ ভালো এবং লোকালয় পূর্ণ, তো একবার দেখে আসাই যাই, কথাটা ভেবে ভদ্রলোকের সাথে দুজনে হাটা দেই। রুমী ও পূজা দুজনেই ফ্ল্যাট টা ঘুরে ঘুরে দেখছে, দারোয়ান চাচা ভোক্তাকে পটানোর মতো করে এই বাসার একে পর একে সুবিধা বলে যাচ্ছেন, যাতে তারা ভাড়া নেই..
উসমান : এই বাসাটাই একজন ব্যাংকে কাজ করা বাবুর নামে আছে .তিনি হঠাৎ কইরাই মারা যান, উনি মারা যাওয়ার পরে উনার ছেলে এখন থেকে নিজের চাচা বাড়িতে গেছেন গা। পোলাডা আমারে বলছিলো যে আমি যেন একটা ভাড়াটিয়া খুঁজা দেই , আসলে মা মরা পোলা তো বাপে বড় করছে, তাই বাপের শেষ চিনহো ডা আর বিক্রি করতে পারে নাই .. আমি কই তুমি এইহানে এইসা থাকো, ত আমারে কই তার নাকি বাপের কথা মনে পরে সে থাকতে পারতো না, এহন পইরা পইরা বাসা কি ভূতের বাড়ি হবো এর থেকে ভাড়া দেওয়া ভালা না আফা..
~ সবই তো বুঝলাম চাচা কিন্তুু এটা তো অনেক বড় বাসা, চার মাস্টার বেডরুমের এ্যাটাস্ট বাথরুমসহ বেলকনি, বড় ডাইনিং, মাঝারি লিভিং রুম আর কিচেন.. এত বড় বাসা আমরা এফোর্ড করতে পারবো না, আমারদের জন্য বেশি ভাড়া হয়ে যাবে
কথাটা বেশ ভাবুক সরে বললো রুমী, রুমীর কথাই ভদ্রলোকের চোখ জোড়া উজ্জল হয়ে উঠলো যেনো এর সমাধান তার কাছে আছে, ভদ্রলোক আগের থেকে দ্বীগুণ উৎসাহ নিয়ে বলে উঠে...
~ আফা এটা খোনো বিষয়ই না আপনারা ৪/৫ হাজার টাকা ভাড়া দিলেই হবো..
কথা শুনে দুজনেই ৪৪০ ভোল্টের ঝটকা খাই ,পূজা তটে গিয়ে বলে উঠে..
~ মজা করেন মিয়া, এত বড় বাসা মাত্র ৪/৫ হাজার টাকাতে..? আমাদের বোকা বানাচ্ছেন নাকি এখানে কোনো ঘাপলা আছে যা ভাড়া দিয়ে ঢাকতে চাইছেন..?
ভদ্রলোক একটু দমে গিয়ে আমতাআমতা করে বলে...
~ রাগ করেন কেনো আফা.. ভাড়া কম করার কারণ আছে.. ঐযে তালা দেওয়া রুম দেখতেছেন ঐটা আপনরা পাবেন না, আসলে ঐটা সাহেবের লাইব্রেরি ছিলো ঐখানে অনেক বই আছে। বাপের স্মৃতি তাই এই ঘরটা কাউরে দিতো না, এই জন্য কেউ থাকা না আফা..তাই ভাড়া কম করে দিছে..যাতে কেউ এসে থাকে..
পূজা কপালে ভাজ ফেলে বিচক্ষণ সূরে বলে..
~ বাহ প্রথমে এত এত সুবিধা দেখালেন এখন বুঝলাম কেনো এই সুবিধা আসল ঘাপলা তো ফ্ল্যাটের ভিতরে, আচ্ছা চাচা আমাদের কি এতোই বোকা মনে হয়? আপনি বললেন এটা লাইব্রেরি আর আমরা মেনে নিবো? এমনও তো হতে পারে কাউকে মেরে ওখানে লুকিয়ে রাখা হয়েছে বা ওখানে অবৈধ কোনো জিনিস আছে যেমন ইয়াবা, মদম, গাজা ইত্যাদি..
পূজার কথাই লোকটা দুহাত দূরে সরে, উচ্চ স্বরে বলে উঠে...
~ আস্তাগফিরুল্লাহ আস্তাগফিরুল্লাহ, কি কন আফা, ছিঃ ছিঃ এইগুলো কেন থাকবো ঐখানে, শোনেন আফা মানতাছি আমি গায়ে পইরা আপনাগোরে ডাইকা আনছি তার মানে এই না আপনরা যা খুশি তাই কবেন, চাবি আছে আমার কাছে আমি এখনি খুইলা দেখাইতে পারমু. দেখবেন..?
এই বলে লোকটা ঘরে দিকে যেতে নিলেই, রুমী শান্ত স্বরে ওনাকে থামিয়ে বলে উঠে...
~ আচ্ছা আচ্ছা হয়েছে কিছু দেখাতে হবে না, যদি আমরা থাকি তাহলে কি সামনের মাসে উঠতে পারবো...?
লোকটার রাগী চেহারা মূহুর্তেই খুশিতে বদলে যাই, মুখে আবারও সেই হাসি টেনে বলে উঠে
~ হ..হ.. পারবেন কিন্তুু তার আগে আপনি একবার মালিকের লগে কথা বইলা ভড়া ঠিক করে নেন..
ভুরুজোড়া কুনচিত করে বিরক্ত সুরে রুমী বলে
~ এই না বললেন ভাড়া ৪/৫ হাজার,তাহলে এখন আবার ভাড়া ঠিক করার কথা আসছে কেনো..?
~ আমি বললে কি হবে, আপনাদের ওহ কথা বলা লাগবো..
এই কথা বলেই লুঙ্গিতে গোঁজা বাটন ফোনটা বের করে স্পিকারে দিয়ে কল করে বাড়িওয়ালাকে, দুবার রিং হতেই কল রিসিভ করে রাশ ভারি পুরুষালী কন্ঠ কেউএকজন সালাম দিয়ে উঠে, দাড়োয়ান চাচা বিস্তারিত কথা বলে ফোনটা রুমীর দিকে এগিয়ে দেই, রুমি কল টা হাতে ধরে সালাম দেই..
~ আসসালামু আলাইকুম
~ ওয়ালাইকুম আসসালাম,আমি মুহান আলী.. আপনার নাম..?
~রুমী..
~ নাইস নেম.. আচ্ছা মি. রুমী আপনারা কি করেন..? গ্রামের বাড়ি কোথাই এবং আপনারা ঠিক কয়জন থাকবেন..?
~ যী আমরা স্টুডেন্ট অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছি, আমরা ৩জন থাকবো আর আমার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রাম, একজনের বরিশাল আর একজনের কুষ্টিয়া।
~ গুড, আচ্ছা আপনারা তো বাসা দেখেছেন আর এটাও জানেন একটা রুম আপনরা পাচ্ছেন না। তো এখন আসি ভাড়ার কথাই, আপনরা মাসে ১০ হাজার টাকা দিলেই হবে।
~ ১০ হাজার টাকা মানে..? চাচা তো বললো ৪ হাজার টাকা দিলেই হবে.. এখানে কি মজা চলছে..?
রুমীর এমন ঝাঝালো কথাই লোকটা শব্দ করে হেসে উঠে, যেনো তার কথাই খুব মজা পেয়েছে, একপর্যায়ে নিজেকে শান্ত করে হাসির রেশ টেনে আবারও বলে..
~ চাচাকে বলেছিলাম ভাড়া কম করে বলতে যাতে ভাড়াটিয়া আসে, কিন্তুু চাচা যে এভাবে মাঠে মারবে, তা আগে বুঝি নি। যাই হোক বাসা তো এমনিতেও খালি পরে থাকে , তাই নাই মামার থেকে কানা মামা ভালো, তো আপনার সামনের মাসে বাসায় উঠতে পারেন।আমি চাচার কাছে কিছু কাগজের নাম বলে দিচ্ছি আপনার সেগুলো চাচার কাছে দিয়ে দিবেন।
কালটা কাটরা আগে উত্তেজিত স্বরে রুমি বলে উঠে
~আমার একটি কথা ছিলো, আপনার ফ্ল্যাটে অনেক ফার্নিচার রয়েছে তো এগুলো আপনি না সরালে আমরা উঠতে পারবো না..
রুমীর কথাই অপর পাশের লোকটা কিছুক্ষণ চুপ থাকে,তারপরে ধীমি স্বরে বলে উঠে..
~ কিছু যদি মনে না করেন, তাহলে ওগুলো ওখানেই থাক আপনরা ব্যবহার করুন, খালি নষ্ট না হলেই হবে.. কারণ আমি চাচা বাড়ি থাকি এখানে কোথাই এত ফার্নিচার এনে রাখবো। আর বাসায় আলমারি, ওয়ারড্রব যা আছে তা সব খালি। তো আশা করি আপনাদের সমস্যা হবে না এবং আমার অনুরোধ টা রাখবেন...
রুমী ওহ পূজা একে ওপরের দিকে তাকাই এর পরে আস্ত করে বলে উঠে..
~ জ্বী আছা।
রুমীর ছোট্ট কথাই লোকটা বেশ স্তুতি পাই, তাই তো হাসি মাখা স্বরে বলে উঠে..
~ অসংখ্য ধন্যবাদ, অনুরোধ টা রাখার জন্য, বাকি যাকিছু তা চাচা দেখবেন কোনো সমস্যা হবে ইনশাআল্লাহ, রাখছি আসালামু আলাইকুম।
রুমী আর পূজা সব কিছু ঠিক করেই ফিরে আসে ওখান থেকে। রাতে খাবার পরে তিনজন এক সাথে বসে বাসার কথাই আলোচনা করছিলো..
~ এত বড় বাসা কিনা মাত্র চার হাজার টাকাই..? আসলেও..?
প্রহার কথা শুনে পূজা খিপ্ত স্বরে বলে উঠলো..
~ চার হাজর আর হলো কোখাই, এই বেটা দারোয়ানকে মাসে মাসে ১ হাজার দিতে হবে, এটা নাকি তার কমিশন এত সুন্দর বাসা খুঁজে দেওয়ার জন্য.. ভাবা যাই কতটা চালাক লোকটা..
~ চুপ করনা যাই হক বাসা পাওয়া গেছে এটাই অনেক,আর পাঁচ হাজার টাকা হলেও সব থেকে উন্নত মানের বাসাটাই পেয়েছি আমরা। এছাড়া ভার্সিটিতে যাতায়াতের সুবিধাও আছে,সব দিক থেকে লাভ..
রুমীর কথা শুনে প্রহা বলে উঠে..
~ আচ্ছা আমাদের কি এভাবে উঠাটা ঠিক হবে..? আর একটু ভেবে দেখলে হয় না..?
আসলেও বাসাটাতে যে এক প্রকার তারাতাড়ি করেই উঠা হচ্ছে, সেটা রুমী জানে, কিন্তুু আপাতত ওর কাছে এছাড়া কোনো উপাইয় নেই, সৎ বাবার সংসার সে ফিরে যেতে চাইনা, এত কষ্টতো সে ঐ নরক থেকে বেড়িয়েছে আবারও সেখানে। নাহ কখনোই না,
~ এক কাজ করি মানা করেদেই, বাসাতে উঠতে হবেনা। তোদের কি হবে তোরা তো বাড়ি চলে যাবি আর আমাকে? আমাকে আবারও ঐ লোকের বাড়ি গিয়ে উঠতে হবে, তোরা তো ভালো করে জানিস আমি কেনো যেতে চাই না ওখানে।
~ এভাবে কেনো বলছিস বলতো,তুই কেনো ওখানে যাবি দরকার হলে তুই আমার বাড়ি যাবি আমার সাথে থাকবি, বাসা পেলে আমরা আবার ফিরে আসবো
প্রহার কথাই রুমী যেনো একপ্রকার তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে উঠে
~ ছোট বেলা থেকে আমি অন্যের উপরে বোঝা হয়ে বড় হয়েছি এখন আর নতুন করে কারো বোঝা হতে চাই না.
এই কথাই যেনো তিনজনের মাঝে পিনপতন নীরবতা ফিরিয়ে আনে,সবার থমথমে মুখ দেখে পূজা বলে উঠে..
~ বাসা ছারবো সস্তা কথা.. এত সুন্দর বাসা আর পাবো, এখন এসব কথা বাদ দিয়ে ঘুমাতে চল কাল থেকে পেকিং করতে হবে..
কেউ আর কথা বাড়াই কারণ এখানে কথা বাড়ালেই তর্কের সৃষ্টি হবে, যার শেষ "আমি তো সবসময় বোঝা হয়েই এসেছি সবার কাছে এবারো ভাগ্য আমাকে বোঝাই বানিয়ে দিলো " রুমীর এই কথাই। রুমীকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তুু মেয়েটা বড় আত্মাসম্মানী তাই কোনো কথাই ওকে কখনো দমানো যাবে না।
ঘড়ির কটায় রাত ২ টা,শশান ঘাটের থেকে একটু দূরে বড় বটগাছের নিতে বসে বাতাসে নিকোটিনে ধোয়া মেশাচ্ছে ২৭ বছরের এক শ্যাম বর্ণের যুবক, পরনে তার হইট ফুল স্লিপ শার্ট,ব্ল্যাক পেন্ট, উচ্চতায় ৫ ফিট ১০ ইঞ্চি, শরীর গঠন স্বাভাবিক, নাতো অতি মাত্রাই প্রশস্ত নাতো অতি মেদ বহুল, শরীর দেখে বোঝা যাচ্ছে জীমের চর্চা তার দৈনিন্দন জীবনে বিদ্যমান,গোলগাল চেহারার ছেলেটার গালের ডান পাশে একটা কাটা দাগ, ক্ষতটা পুরানো হলেও তা দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে এটা বেশ গভীর ছিলো, তাইতো গালের খোঁচা খোঁচা দাড়ি ভেত করে ক্ষতটা দেখা যাচ্ছে, ডান হাতের দিকে তাকিয়ে গুচি ব্যান্ডের ব্লুডাইমান্ড হাত ঘড়িতে সময় টা দেখে নিলো , ফুল স্লিপ গুলো হাতের কনুই পর্যন্ত গোটানো,বাম হাতে থাকা সিগারেট শেষ টান দিয়ে সেটা পায়ের তালাই পিষে উঠে দাড়াই যুবকটি, যার নজর শশান ঘাটের দিক থেকে আশা এক টর্চের ক্ষীণ আলোর দিকে। ৪৫ বছরের এক বৃদ্ধ লোক টর্চ হাতে এদিকেই এগিয়ে আসছেন, লোকটা যুবকের মুখোমুখি আসতে যুবক টি বলে উঠে...
~ এত দেড়ি লাগে আসতে কখন থেকে বসে আছি..
~ নতুন মরা, তারউপরে কুমারী মাইয়া দেইখা পোড়াই না খালি মাটি চাপা দিছে, শেয়ালে যদি লাশ টানে তাই পাহারা দিতে লোকও ছিলো, সেই লোকরে বাড়ি পাঠাইতে পারমু না, তয় চায়ের মধ্যে ঘুমের ঔষুধ মিশাইয়ে খাওয়াই বেহুস কইরা তারপরে আসছি।
~ উদ্ধার করে দিয়েছো আমাকে.. যা যা আন্তে বলেছি আনেছো..?
~ হুম মেয়েটার কবরের পাশেই রাখা আছে..আসো আমার সাথে..
কথাটা বলেই বৃদ্ধ শশান ঘাটের দিকে রওনা দেই পিছন পিছন রাফি নামক সেই যুবক, বর্তমানে কুড়িগ্রাম জেলার এক ছোট হিন্দু পট্টির শশান ঘাটে আছে তারা, এই গ্রামে গতকাল এক ১৭ বছর বয়সী মেষ রাশির এক কিশোরী কন্যা মারা গেছে, হিন্দু ধর্মের মৃত্য কুমারী মেয়েকে পোড়ানো হয় না, তাদেরকে সম্মানে সাথে মাটিতে কবর দেওয়া হয়। রাফির ঠিক এমনই এক মেয়ের সন্ধানে ছিল গত ৮ বছর ধরে, অবশেষে আজ তা পেয়েছে।এই বৃদ্ধ লোকটি শশানের দেখাশোনা করেন,লোকটাকে আগে থেকে টাকা দিয়ে কিনে রেখে যাতে সে শশানে গিয়ে নিজের কার্য সম্পূর্ন্ন করতে পারে।
~ এই যে কোদল আর বেলচা, তোমার যা করার করো আমি বাইরে পাহারা দিতেছি যদি কেউ আসে বা পোলাডার গেন ফিরে তোমারে জানামু,
কথা বলে লোকটা পিছন ঘুরে চলে যেতে নিলে, রাফি পিছু ডেকে বলে উঠে...
~ চাচা তোমার ভয় করে না..? এই বুড়ো বয়সে শশান পাহারা দিচ্ছো আবার আমাকে সাহায্য করছো..?বলি ভূতের ভয় নেই..
লোকটা রাফির দিকে ঘুরে মৃদু হেসে বলে উঠে
~দুনিয়াতে বাঁচতে হলে টাকা লাগবো নাইলে এমনি মরমু, মানুষ আর অভাবের থেকে আগে বাইচা লই তারপরে তো ভূতের হাতে মরমু
বৃদ্ধ কথাই সশব্দে হেসে উঠে রাফি..
~ ঠিক বলেছো চাচা, ভূতের চেয়ে এরাই বেশি ভয়ংকর। তুমি যাও কেউ আসলে আমাকে ইশারা করবে।
~আইচ্ছা।
চারিদিক থেকে ভেসে আসছে শেয়াল আর পেচার ডাকা,বাসতে মিশে আছে পোরা লাশের বিশ্রী গন্ধ, দুএকটা শেয়াল শশানের আসে পাশে লোভান্ত জিহ্বা বের করে ঘোরাঘুরি করছে, এই সবকিছু কোনো খোঁজ নেই রাফির কাছে, সেতো নিজের পুরুষালী শক্ত-পোক্ত হস্তে কবরের মাটির উপরে কোদাল চালাতে ব্যস্ত, ঘামে ভিজে সাদা শার্ট টা শরীরের সাথে লেপটে, শ্যাম বর্ণের শরীরটাকে আর আকর্ষণীয় ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে, জেল দিয়ে বেক ব্রাশ করা চুলগুলো এখন কোদলের এক-একটা কোপের ঝাঁকিতে ঘামন্ত মুখে এসে পরছে। অবশেষে দীর্ঘ ২৫ মিনিট কোদাল চালানোর পরে লাশটাকে অখত ভাবে বের করতে পেরছে রাফি, হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুখের অবশিষ্ট ঘামটা মুছে নেই রাফি। হাতে থাকা কোদাল টাকে উপরের দিকে ছুরে ফেলে.. উলঙ্গ লাশের দিকে ঝুকে লাশটার ডান হাতটা উঁচু করে ধরে,এরপরে কোমরে গুঁজে রাখা ছোট লোহার ধারালো ছুরি দিয়ে কনুই থেকে কব্জি বরাবর একটা টান দেই.. খুবি দক্ষতার সাথে আর ১৫ মিনিট সময় নিয়ে ডান হাতের রেডিয়াস হাড়টি বের করে আনে ( রেডিয়াস হলো বৃদ্ধাঙ্গুলের বরাব থাকা একটি হাড়) হাড়টা হাতে পেতেই একটা পৈচাশিক বাকা হাসি ফুটে উঠে রাফির ঠোঁটের কোণে। হাড়টাকে নিয়ে কবর থেকে উঠে হাত পায়ের ধুলো ঝারতে শুরু করে রাফি। ঠিক তখনি পিছন থেকে ক্ষীণো স্বরে কান্নার আওয়াজ তার কানে ভেসে আসে। রাফি তাতে কোনো ভ্রুকখেপ করে না বরং সে লেস হীন ভাবে চলে যেতে নিলেই কেউ একজন তার পা টেনে ধরে। রাফি দাড়িয়ে যাই, কিন্তুু পেছন ফেরে না, যেনো পিছনে না ঘুরেই সে বুঝতে পারছে কে তার পা ধরে আটকাচ্ছে।
~ আমার হাড় দে... নিছ না আমার হাড় দিয়া যা....
নাকি সুরে কান্না করতে করতে কথাগুলো বলতে থাকে কেউ একজন, রাফির পা এখন সেই হাতে আবদ্ধ যা একটু আগেই সে কেটে ভেতর কার রেডিয়াস হাড় টা বের করে এনেছে, সেই হাড়বিহীন কাটা থকথকে হাত দিয়ে রাফির পা ধরে একই সুরে কথা গুলো বলছে পিছন থেকে। রাফির যেনো স্পষ্ট ভাবে বুঝতে পারছে কে বলছে কথাগুলো.. সে কোনো ভবিতা ছাড়াই বলে উঠে...
~ পা ছাড় আমার, সাহস থাকলে সামনে আই..তখন তোর হাড় দিচ্ছি তোকে।
রাফির এই কথা জেনো সে পিছনে থাকা ব্যাক্তির হাসি পাত্র হয়ে উঠে, পুরো শশাস ঘাট মেতে উঠে এক খিলখিল হাসির শব্দে। হাসতে হাসতে পিছন থেকে অগত লাশ বলে উঠে..
~ হাড় না দিলে তোরে এইহান থেইক্কা যাইতে দিমু না..
ঠিক এভাইবেই আরো ১০ মিনিট বাহিত হয় রাফি এখনো এই ভাবেই দাড়িয়ে আছে, নাতো সে নরছে আর নাতো পিছন থেকে ছাড়া পাচ্ছে। পিছনের ব্যাক্তি ভালো করে জানে রাফি পিছনে ঘুরবে না কারণ পিছনে ঘুরলেই সব শেষ। আর এদিকে রাফি ধৈর্য্যের বাধ ভাঙ্গছে। সময় থাকতে থাকতে এটা নিয়ে পৌছতে হবে নয়তো এটা কোনো কাজেই আসবে না, কিন্তুু এই সব কিছুর মধ্যে ঘটে যাই এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা, বৃদ্ধা পাহারাদার যেই লোকে ঘুমের ঔষুধ খাইয়ে বেহুস করে রেখেছিলো তার হুস ফেরে এবং সে দূর্ভাগ্য বসত এদিকে চলে আসে। হঠাৎ নিজের ডান দিক থেকে চিৎকারের আওয়াজ পেয়ে ঘারগুরে তাকাতেই দেখে লোকটা ভয়ে রাফির পায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। লোকটার চিৎকার শুনে ততক্ষণে বৃদ্ধ পাহাড়াদার ও চলে এসেছেন।
~ এসব কি চাচা কি এইগুলা
~ মহেশ শুন এইগুলা তোর চোখের ভুল বাইরে চল তুই আমার লগে..
পিছন থেকে পাহাড়াদার চাচা কথা টা বলতে বলতে এগিয়ে আসে, এদের কথার মাঝ খানে আরো একটা ভুল করে বসে রাফি, সে পাহাড়া দারকে সাবধান করতে গিয়ে পিছন ঘুরে তাকিয়ে পরে.. বেছ্ পুরো শশান ঘাট আবারও মত্তো হয় এক কিশোরীর খিল খিল হাসির আওয়াজে। রাফি রাগে নিজের চুল চিপে ধরে নিচে বসে পরে অকাট্য ভাষাই গালি দিতে থাকে।
~ চাচা তাহলে আপনি এই সব করেন, আমি এহনি সবাইকে সবটা জানমু আর আপনার নামে বিচার বসাইয়ে গ্রাম ছাড়া করমু।
~ বা**ই*চো*দ, তোদের জন্য আমার এত বছরের কষ্ট শেষ, এটা দিয়ে কি বা*ল ছিরবো আমি..
কথা বলে হাতে থাকা হাড়টা ছুড়ে ফেলে দিয়ে উঠে দাড়াই রাফি। রাফির চোখে মুখে ছিলো ক্ষিপ্ততা, হিংস্রতা, কাউকে জানে মারার তৃমূল ইচ্ছে আর তারই শিকার হয় শশানে থাক পাহাড়াদার বৃদ্ধ আর যুবক ছেলেটা, রাফির কাছে থাকা ছোট ছুরি টা দিয়ে দুজনের বুকে হিংস্রতার সাথে সমানে আঘাত করতে থাকে, প্রথম শিকার হয় যুবক,যুবকের গরম রক্তে নিজের শরীরকে ভিজিয়ে বৃদ্ধের দিকে রক্ত মাখা চেহারা নিয়ে এগলেই, কাকুতি স্বরে বৃদ্ধ বলে উঠে..
~ আমি তোমার পায়ে পরি বাবা আমারে ছাইরা দাও আমি তো তোমারে সাহায্য করতে ছিলাম..
~ হ্যাঁ,, আর তোর জন্যই সবকিছুর ১২ টা বেজেছে.. ঐ হারটা দেখতে পারছিস, ৮ টা বছর,, ৮ বছর অপেক্ষা করেছিলাম কিন্তু তোর জন্য সব, সব শেষ.. এটা তো নিতে পারলাম না এখন তোর রক্তের স্বাদ টা নেই..
দাতে দাত পিষে কথাটা বলে বকা হাসি নিয়ে বৃদ্ধের উপরে ঝাঁপিয়ে পরে রাফি, শশানরে নিস্তব্ধতার মাঝে খালি ছুরি চলার শব্দ ভেসে আসে, লালা টপকানো শিয়ালগুলো এখন টাটকা মাংসের স্বাদ গ্রহণে ব্যস্ত, একটু আগেই যে দেহে প্রাণ ছিলো সেই দেহ এখন শেয়াল টেনে জঙ্গলে নিয়ে যাচ্ছে। রাফি ক্ষিপ্ত মেজাজ নিয়ে শশান ঘাট থেকে বেড়িয়ে আসে,বড় বড় পা ফেলে বট গাছের কাছে আসতেই কারো উপস্থিত টের পাই রাফি। ব্যক্তির উপস্থিতি টের পেতেই ভয়ে গলা শুকিয়ে আসে, হিম হয়ে আসে তার সমস্ত শরীর । দ্রুত চলা পাটাও থমকে যাই, যেনো ব্যাক্তির কাছে এগোনোর ক্ষমতা নেই। খানিকক্ষণ ঠোঁট গোল করে তপ্ত শ্বাস ছেড়ে নিজেকে শান্ত করে এগিয়ে যাই মানুষটির দিকে। লোকটা তখোন বট গাছের নিচেই বসে আছে, লোকটার সামনে কম করেও ১০/১৫ টা কুকুর রয়েছে। নিজের ডান পাশ থেকে কিছু একটা কেটে কেটে কুকুরদের খাওয়াচ্ছে সে। রাফি কাছে আসতে কুকুর গুলো ক্ষিপ্ত ভাবে ওর দিকে ছুটে গেলেই লোকটি শান্ত কিন্তুু ভাড়ি স্বরে বলে উঠে..
~ আহা... ওহ আমার লোক..আসতে দাও ওকে
লোকটার একটা কথাই যেনো যথেষ্ট ছিলো, মালিকের আদেশ মানার মতো প্রতিটা কুকুর নিজ জায়গাতে ফিসে আসে।
~ তুমি এখানে..? কখন এলে..?
রাফি লোকটির মুখোমুখি দাড়িয়ে প্রশ্ন ছোড়ে, রাফির প্রশ্নে লোকটার নত দৃষ্টি রাফির দিকে নিক্ষেপ করে, এতে জানি মূহুর্তেই চমকে উঠে রাফি, চোখজোড়া জেনো জ্বলছে তার, জেনো চাইলে এখনি চোখ দিয়ে ওকে ভশ্য করে দিতে পারবে। লোকটা নজর নমিয়ে নেই। ৫ সেকেন্ড, হ্যাঁ মাত্র ৫ সেকেন্ড রাফির দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ছিল. এতেই যেনো রাফি আত্মা দহন হওয়ার উপক্রম। লোকটা আবারও আগের মতো কুকুরদের খাবার দিতে দিতে বললো
~ তোমার আসার ১ ঘন্টা আগে এসেছি। আর তুমি যে একটা অঘটন ঘটাবে তা জেনেই এসেছি। তাও ভেবেছিলাম কাজ টা ভালো মতো করবে, কিন্তুু তা হলো কই..
~ সব কিছু ঠিক ছিলো মাঝখানে থেকে ঐ লোকটা..
~ চুপ করো, এক্সপ্লেন করতে বলিনি.. চুপ চাপ চলো আমার সাথে..
কথাটা বলেই লোটা উঠে দাঁড়াই, লোকটা উঠে দাড়াতে পাশে পরে থাকা একটা লাশ রাফির চোখে পরে। যেটা এতক্ষণ লোকটার বড় আবছায়া শরীরের পাশে পরেছিলো, ভালো করে লক্ষ্য করলে বোঝা যাচ্ছে লাশটার গায়ে মাংস নেই, তাহলে কি এতক্ষণ এটাইকে কুকুর দের খাওয়াচ্ছিলো লোকটা..
~ এটা কার লাশ..?
লাশটার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছোড়ে রাফি..
সামনের দিকে যেতে যেতে রাশভারি কন্ঠ উত্তর দিল লোকটি
~এই এলাকার চেয়ারম্যান এর লাশ, রাতে নেশা করে যাওয়ার সময় আমাকে শ্মশান ঘাটের পাশে দেখে প্রশ্ন করতে শুরু করে কে আমি কোথা থেকে এসেছি নাম কি এটা ওটা..? প্রশ্ন করে প্রচুর মাথা খাচ্ছিলো আমার, তাই ওকে মেরে কুকুরকে খাইয়ে দিয়েছি ,, এভাবে কি দেখছ ভয় পেলে নাকি..?
ভুরু কুঞ্চিক উঁচু করে রাফি দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে লোকটি। রাফি লোকটির পায়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে চলতে ফিচেল হেঁসে উত্তর দেয়
~ তাসিন খান রেদোয়ান-কে কেউ বিরক্ত করবে আর সে কিনা প্রাণে বাঁচবে এটা অসম্ভব।
রাফির কথা জোড়ে হেসে ওঠে লোকটি, দুজনেই সমান তালে পা চালি অন্ধকারের মধ্যে মিশে যায়, যেন ঘন কালো আঁধার তাদেরকে নিজের বুকে মিশিয়ে নিল। যাদের অস্তিত্ব কেবল শুধু আঁধারেই আছে। পেছনে পড়ে থাকলো তাদের চিহ্ন হিসেবে রেখে যাওয়া তিনটি তিনটি রক্তাক্ত লাশ ।
চলবে......
মায়া জাল
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
133
Views
0
Likes
0
Comments
0.0
Rating