মানে না মন

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
ঢাকার জমজমাট শহরের এক অলিগলি, যেখানে জীবনের গতি ছন্দ অন্য রকম, সেখানে একটা ছোট্ট মন্দির। মায়ের মন্দির। মা দূর্গার মন্দির। বৃষ্টি হলে সেখানে ঝরঝর করে ধুয়ে যেত শহরের কোলাহল, আর মাটির গন্ধে ভরে যেত মন।

রোশন—এক সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, যার জীবনের প্রতিটা দিন ছিল অফিসের টেনশন আর শহরের ব্যস্ততা দিয়ে ভরা। কিন্তু একবার সে যখন সেই মন্দিরে এল, তখন তার জীবনে ঢুকে পড়ল এক অন্যরকম শান্তি। আর স্বপ্নিল—এক তরুণী ফটোগ্রাফার, যার ক্যামেরার লেন্সে ঢাকা শহরের জীবন খেলা করত, সে সেই মন্দিরের পাশে থাকত, প্রতিদিন মায়ের সামনে বসত ছবি তোলার জন্য।

সেই দিন ছিল দুর্গাপূজার প্রাক্কাল। মন্দিরে সাজানো হয়েছে ফুল আর আলোয়, দূর্গা মায়ের মূর্তি আলোকিত। রোশন কাজের চাপ ভুলে, হাত দিয়ে ধূপের ধোঁয়া ছুঁড়ে মন্দিরের পাশে বসে ছিল। স্বপ্নিল এল তার ক্যামেরা নিয়ে, মায়ের মন্দিরের নানা দৃশ্য ছবি তুলতে।

“তুমি কি জানো,” স্বপ্নিল বলল, “মা দূর্গার আশীর্বাদ ছাড়া শহরটা এতটাই ঠাণ্ডা, এতটাই কষ্টকর।”

রোশন হেসে বলল, “শহর ঠাণ্ডা, কিন্তু মা দূর্গার মন্দিরে এসে যেন এই ঠাণ্ডা মনের ভিতরে একটু আগুন জ্বলে ওঠে।”

স্বপ্নিল তার ক্যামেরার লেন্স একটু নামিয়ে রোশনের দিকে তাকাল, “তোমার নাম কী?”

“রোশন,” সে বলল, “তোমার?”

“স্বপ্নিল,” সে বলল।

সেই প্রথম আলাপ, সেই প্রথম চোখের আড়াল থেকে শুরু হলো তাদের মনর কথা।
রোশন বলল, “তুমি কি এই মন্দিরে প্রতিদিন আসো?”

“হ্যাঁ,” স্বপ্নিল বলল, “এখানে আসলে আমি আমার নিজের সঙ্গে কথা বলি, মা দূর্গার কাছে নিজের স্বপ্ন বোনাটাও শোনাই।”

দিন গড়িয়েও তারা মন্দিরে এসে একসাথে বসত।
রোশন বলল, “আমার মনে হয় এই ভালোবাসা মায়ের আশীর্বাদ পেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।”

স্বপ্নিল বলল, “তবে মন মানে না সবসময়, অনেক সময় ভালোবাসাও কষ্ট দেয়।”

রোশন ধীরে বলল, “তাই তো ভালোবাসা বড়, যে কষ্টেও থেমে না।”

শহরের অস্থিরতা, অফিসের চাপ, জীবনের টানাপোড়েনের মাঝে তারা দুই জন একে অপরের আশ্রয় হলো।
স্বপ্নিল যখন ছবি তুলত, রোশন বলত, “তোমার চোখে আমি যেন ঢাকার রঙগুলো দেখতে পাই।”

একদিন রোশন বলল, “স্বপ্নিল, তুমি কি আমার জীবনের অংশ হতে চাও?”

স্বপ্নিল চোখে পানি এনে বলল, “আমার মন মানে না সবসময়। কিন্তু তোমার ভালোবাসায় আমি বিশ্বাস রাখি।”

সেই ভালোবাসাই ছিল তাদের জীবনের আলো, মায়ের আশীর্বাদ আর শহরের মায়ায় বাঁধা এক কঠিন বন্ধন।
44 Views
3 Likes
0 Comments
0.0 Rating
Rate this: