৭৫.
- Wow, দিনা দেখ এই earingsগুলো সুন্দর না? (আখি একজোড়া earing উঠিয়ে)
- হুম। খুব সুন্দর। নিতে পারিস। তোকে পড়লে দারুন মানাবে। (দিনা)
- সত্যি নেবো? (আখি)
- তোকে তো আংকেল আজকে স্বাধীনতা দিয়েই দিয়েছে। তোর পছন্দ যখন হয়েছে তখন নিয়ে নে। তবে এটা কিন্তু খুব expensive. (দিনা)
- মা কি বলেছে মনে নেই? আজকে মা সোনার কিছু নিয়ে যেতে বলেছে। আমি তো সোনা পছন্দ করি না। তাই ডায়মন্ড নিচ্ছি। কিন্তু এতগুলো টাকা ওড়ানো কি ঠিক হবে? (আখি)
- আরে আংকেলের ক্রেডিট কার্ড তো তোর কাছে আছেই। এত যখন পছন্দ হয়েছে, নিয়ে নে এটা। (দিনা)
- আচ্ছা এটা একটু রাখতে বলি, আমরা বরং ওদিক থেকে একটু ঘুরে আসি। (আখি)
- ঠিকাছে বল। (দিনা)
- Excuse me! (আখি)
- Yes mam, How can I help you? (সেলসম্যান)
- আপনি প্লিজ এই earingটা একটু সরিয়ে রাখুন। আমরা একটু পর এসে এটা নিয়ে যাবো। (আখি)
- Okey mam. (সেলসম্যান)
আজকে আখি ও দিনা একটু টুকিটাকি শপিং করতে একটা বড় শপিংমলে এসেছে। আখির বাবা আজকে আখিকে তার পুরো ক্রেডিট কার্ড দিয়ে দিয়েছেন। আজকে সে যা খুশি তা নিতে পারবে। অন্যদিকে আখির মা তাকে বলে দিয়েছেন হাবিজাবি কোনোকিছু না নিয়ে ভালো দেখে স্বর্ণের কোনোকিছু নিতে। তাই আখি দেখেশুনে একটি ভালো কানের দুল পছন্দ করেছে। কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরির পর তারা আবার সেই জুয়েলারি শপে আসে।
- Excuse me! (আখি)
- Yes mam. (সেলসম্যান)
- আমি একটা earing রেখে দিতে বলেছিলাম। ওটা প্লিজ দিন। (আখি)
- সরি ম্যাম, ওটা তো সেল হয়ে গিয়েছে। (সেলসম্যান)
- সেল হয়ে গিয়েছে মানে? আমি না আপনাকে বললাম আমি একটু পর আসছি। (আখি ভ্রূ-কূচকে)
- আপনি চলে যাওয়ার পর অন্য একজন মহিলা এসেছিলেন আর উনি ওটা খুবই পছন্দ করেছেন। আমরা ওনাকে দিতে চাচ্ছিলাম না কিন্তু উনি ওটা double price এ কিনে নিয়েছেন। (সেলসম্যান)
- এটা কিরকম হলো? আমি প্রথমে এসে ওটা দেখ গেলাম আর একজন মহিলা যিনি আমার পরে এসে ওটা পছন্দ করেছেন, আপনি সেটা তাকে দিয়ে দিলেন। এটা তো ঠিক নয় তাই না। (আখি)
- ম্যাম, উনি অনেক প্রভাবশালী একজন মহিলা ছিলেন। আপনি জানেন উনি কে? উনি..... (সেলসম্যান)
- উনি কে সেটা তো আমার জানার প্রয়োজন নেই। উনি যেই হোন না কেন, আমি আপনাকে প্রথমে বলে গেলাম আমি ওটা নেবো, আপনি তাও ওটা কেন ওনাকে দিলেন? (আখি)
- তুই থাম না। আচ্ছা ঐ একই ডিজাইনের কি আর কোনো কালেকশন available আছে? (দিনা)
- Sorry mam, ওটার শুধু একটা piece ই ছিলো। (সেলসম্যান)
- Very well. আমাকে এখন যেখান থেকে পারুন ওটা এনে দিন। এটা না নিয়ে আমি যাবো না। (আখি)
- ম্যাম এটা সম্ভব নয়। উনি pay করে দিয়েছেন। উনি এখন শুধু এসে earing টা নিয়ে যাবেন। (সেলসম্যান)
- ঠিকাছে, উনি আসুক। আমি প্রয়োজনে ওনার সাথে যুদ্ধ করে ওটা নেবো। তাও আমি ওটা নেবো। (আখি)
- আখি এসব কি বাচ্চামো শুরু করেছিস তুই? (দিনা)
- এটা বাচ্চামো নয় দিনা। একজন এসে টাকার গরম দেখিয়ে আমার পছন্দ করা জিনিস নিয়ে যাবে- আমি এটা টলারেট করবো না। (আখি)
ঠিক তখনি আখির পাশে একজন মহিলা এসে দাঁড়ায় ও সেলসম্যানকে বলে-
- আমি যে earing রেখে গিয়েছিলাম সেটা দিন।
- এই যে উনি এসে গেছেন। এখন আপনার যত কথা ওনার সাথে বলুন। (সেলসম্যান)
আখি সেই মহিলার দিকে ফিরতেই আকাশ থেকে পড়লো। কারণ সেই মহিলা আর কেউ নন অবন্তী রওশন ছিলেন। তিনিও আখিকে দেখে প্রচন্ড অবাক হন।
- এই মেয়ে আর ঝামেলা করার লোক পায় না। বারবার এই একই জায়গায় বোমা ফেলে। (দিনা মনে মনে)
- ম... ম্যাম.... আপনি.. (আখি)
- You! What the hell are you doing here? এই তুমি কি আমাকে ফলো করছো? (অবন্তী)
- No, no mam, আমি.. আপনাকে ফলো কেন করতে যাবো? আমি তো....... (আখি হকচকিয়ে গেলো)
- আপনারা একে অপরকে চেনেন। তাহলে তো ভালোই হলো। আপনারা প্লিজ নিজেদের মধ্যে মিটমাট করে নিন। (সেলসম্যাম)
- কেন, কী হয়েছে? (মাহিরের মা)
- দেখুন না ম্যাম, উনি এই earing টার জন্য তখন থেকে ঝামেলা করছেন। উনি বলছেন উনি আগে দেখেছেন বলে নাকি উনি এই earing টা নেবেন। (সেলসম্যান)
- তুমি আগে দেখলে আমিও আগে এটা টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছি। তাই এটা আমার। (মাহিরের মা)
- কিন্তু এটা তো অন্যায় হলো, তাই না ম্যাম? আপনার টাকা আছে বলে তো আপনি অন্যের অধিকার কেড়ে নিতে পারেন না। যাই হোক, আপনি এটা নিয়ে যান ম্যাম। আমার এটা লাগবে না। (আখি)
- আসলে কি বলো তো, তুমি এটা নিতেই না। কারণ তোমার মতো ছোটলোকদের এসব earing কেনার যোগ্যতাই নেই। তোমরা বরং ঐ ফুটপাতের দোকানগুলোতে যাও। ওখানে সস্তায় সবকিছু পেয়ে যাবে। (মাহিরের মা তাচ্ছিল্যের স্বরে)
আখি মাথা নত করে চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে থাকে। তখনই মাহির ও দীপ্তর মা সেখানে প্রবেশ করে।
- কি হয়েছে মম? (মাহির)
- কী আবার হবে, এই মেয়েটা আবার অভদ্রতামো শুরু করেছে। (মাহিরের মা)
- ওরা কে? আর কি করেছে ওরা? (দীপ্তর মা আখি ও দিনাকে উদ্দেশ্য করে)
মাহিরের মা মাহির ও দীপ্তর মাকে সব খুলে বললো।
- আচ্ছা মম, তুমি তো ওটা নিয়েছো, তাহলে কেন আবার অযথা ঝামেলা করছো। (মাহির)
- সেই তো, ভাবি চলো আমরা ওদিকে যাই। (দীপ্তর মা মাহিরের মাকে নিয়ে অন্যদিকে চলে যায়)
- একটা জুয়েলারি নিয়ে ঝামেলা কেন করো, এখানে আরও অনেক সুন্দর সুন্দর জুয়েলারি রয়েছে। (মাহির অন্য একটি earing এগিয়ে দিয়ে সাথে সাথে সেখান থেকে চলে যায়)
- আরে ব্বাস, এটা তো আগের জুয়েলারিটার থেকেও বেশি সুন্দর। (আখি উচ্ছ্বসিত হয়ে)
- চোখে কি এতক্ষণ সানগ্লাস পরে ছিলিস যে এটা দেখতে পারিসনি? (দিনা)
- তুই কি মুনগ্লাস পড়ে ছিলিস যে এটা দেখিসনি? (আখি)
দিনা আখিকে একটা মুখ ভেঙচি দিলো।
- তবে যাই বল, মাতালটার চয়েস আছে বলতে হবে। (আখি)
আখি ও দিনা সেই earingটি নিয়ে চলে আসে।
৭৬.
- কীরে, মন খারাপ কেন, আখি কিছু বলেছে? (ইরা)
- ওর কথা আমার সামনে বলবি না৷ (নিশি)
- তার মানে নিশ্চিয়ই আবার আখি কিছু করেছে। তুই না ঐ দিন কি করতে চেয়েছিলি....... (ইরা)
- আমি করেছিও। কিন্তু ঐ আখি কীভাবে যে বেঁচে গেলো, আমি বুঝতে পারলাম না। উল্টে আমাকে গালি খেতে হলো। (নিশি)
- কি হয়েছে পরিষ্কার করে বল তো। (ইরা)
Flashback...........................
মিটিং কিছুক্ষণ আগে শেষ হয়েছে। আখি ও মাহির নিজেদের কেবিনে চলে গেছে। মিটিংয়ের আগেই নিশি মিটিংয়ের সব কাগজপত্রের ওপর কফি ফেলে সেগুলো নষ্ট করে দিয়েছিলো। তাই মাহিরের আখির ওপর রেগে থাকার কথা। একমাস অফিস করে মাহিরের রাগের ধারণা অফিসের প্রায় সবাই জেনে গেছে। যদি মাহির আখির ওপর ক্ষেপে থাকে তাহলে এতক্ষণে অফিসে লঙ্কালান্ড বেধে যেত। কিন্তু সেরকম কিছুই হলো না। নিশির কিছুটা সন্দেহ হলো। আখি আবার পার পেয়ে গেলো না তো? কিছুক্ষণ পর তাকে আখির কেবিনে ডাকা হলো।
- ম্যাম, আসবো? (নিশি)
- এসো। বসো বসো, খাবারদাবার কিছু দিতে বলি। (আখি)
- অ্যাঁ....... (নিশি)
- আরে তোমার তো কুকাজগুলো করতে শক্তির খরচ হয়, সেগুলোর জন্য তো খেতে হবে। না খেলে সেগুলো করবে কিভাবে। (আখি)
- ক...... কী বলছেন ম্যাম এসব? (নিশি)
- ভুল কিছু বলছি আমি? একটু আগে মিটিংয়ের paper গুলোতে কফি ফেলতে খুব কষ্ট হয়েছে তাই না? (আখি)
- (হকচকিয়ে) ক.... কি বলছেন ম্যাম? আমি কখন আপনার paper এ কফি ফেললাম? (নিশি)
- তুমি মনে হয় ভুলে যাচ্ছো যে এই অফিসের প্রতিটি কোণায় 360° অ্যানগেলের সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো আছে। তাই তুমি কি করেছো আর কি করোনি সেটা আমাকে শেখাতে এসো না। (আখি)
- (নিশি নিশ্চুপ)
- তুমি কি নিজের পজিশনটা ভুলে যাচ্ছো নিশি? তুমি এটা কেন করলে, যাতে পুরো কাজের দায় আমার ওপর এসে পড়ে, আর স্যারের কাছে আমি খারাপ হয়ে যাই, তাই তো? তোমার আমাকে এত বোকা মনে হয়? আমি এত important একটা মিটিংয়ের papers মাত্র এককপি রাখবো? ভাগ্যিস আমি ওটার বেশ কয়েকটা কপি রেখেছিলাম যার জন্য এবার কোম্পানি দুর্নাম হওয়া থেকে বেঁচে গেলো। সেটা যদি না থাকতো তাহলে কি হতো সেটার কোনো ধারণা আছে তোমার? আমি বারবার তোমাকে সাবধান করছি। কিন্তু তুমি, তুমি আমার কথা কানেই তুলছো না। সত্যি বলছি, তোমার নামে যদি আর একটা কমপ্লেইন পাই, তাহলে তোমার জন্য খুব খারাপ হয়ে যাবে। Now get out from my cabin. (আখি)
আখি শেষের কথাটি একটু জোরেই বললো। ফলে নিশি ভয় পেয়ে সেখান থেকে চলে যায়।
৭৭.
আখি অনেকক্ষণ ধরেই মাহিরকে একটা কথা বলবে বলবে করছে কিন্তু বলে উঠতে পারছে না। মাহির ফাইলে চোখ রেখেই আখির অস্থিরতা বুঝতে পারছে। তাই সে বললো-
- কিছু বলবে? (মাহির)
- ইয়ে, মানে, স্যার, একটা কথা বলার ছিলো। (আখি)
- উসখুস না করে তাড়াতাড়ি বলে ফেলো। (মাহির)
- স্যার, আমি আগারওয়াল ইন্ডাস্ট্রির CEO র সাথে কথা বলেছি। ওনারা আমাদের কোম্পানির সাথে একমাসের একটা ডিল করতে চান। (আখি)
- এই কথাটা বলতে তোমার এত সময় লাগলো? (মাহির)
- মানে আপনি কি বলবেন............ (আখ মিনমিন করে)
- ঠিকাছে ডিল যখন করতে চাইছেন তখন আমাদের সাথে মিটিং করতে বলো। (মাহির)
- উনি মিটিং করতে চাইছেন না। (আখি)
- মিটিং করতে চাইছেন না মানে? (মাহির)
- উনি অযথা একদিন মিটিং করে সময় নষ্ট করতে চাইছেন না। উনি সরাসরি আপনার সাথে কাজ করতে চাইছেন। (আখি)
- তো মিটিং না করলে আমরা বুঝবো কি করে যে এই ডিলের মাধ্যমে আমরা কতটা প্রফিট পাবো? (মাহির)
- উনি এই জন্য আমাকে একটা ফাইল দিয়েছেন। যদি আপনার প্রপোজালটি পছন্দ হয় তাহলে আজকের মধ্যেই উনি আপনাকে এখানে সাইন করে ডিলটা ফাইনাল করে নিতে বলেছেন। (আখি)
- ফাইলটা দাও। (মাহির)
মাহির আখির থেকে ফাইলটি নিয়ে কিছুক্ষণ ফাইলটি দেখলো। তারপর বললো-
- ওনাদের প্রপোজালটা মন্দ নয়। তবে সাইন করার আগে একবার আগারওয়াল ইন্ডাস্ট্রির CEO-র সাথে কথা বলে নিলে ভালো হতো। Well, উনি যখন সময় নষ্ট করতে চাচ্ছেন না, তখন আমারও সেটার কোনো ইচ্ছে নেই। আমি সাইন করে দিচ্ছি। ওনাকে কাল-পরশুর মধ্যে আমাদের অফিসে আসতে বলো। (মাহির)
মাহির ফাইলে সাইন করে দেয়। কিন্তু সে জানলো না শুধুমাত্র এই একটা সাইন করার ফলে নিজের অজান্তেই সে শত্রুপক্ষকে কত বড় সুযোগ করে দিলো।
৭৮.
আখিকে মাহির একটি ফাইল চেকআউট করতে দিয়েছিলো। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে যাওয়ার পরও তার কোনো পাত্তা পাওয়া যায় না। মাহির আখির কেবিনের সামনে দিয়েই যাচ্ছিলো তাই সে ভাবলো আখির কেবিনে ঢুকে একবার দেখে আসবে আখি কি করছে। আখির কেবিনের দরজায় দুবার নক করেও ভেতর থেকে কোনোরকম সাড়া না পাওয়া গেলে মাহির কেবিনে ঢুকে যায়। সে দেখে আখি টেবিলে মাথা রেখে কাজ করতে করতেই ঘুমিয়ে পড়েছে। মাহির আস্তে আস্তে আখির কাছে এগিয়ে গেল। আখিকে এই প্রথম একটু ভালোভাবে লক্ষ্য করলো সে। ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় খুব মায়াবী লাগছে তাকে- যেন ঘুমরাজ্যের কোনো ঘুমন্ত পরী। আখির মুখের ওপর কিছু ছোট ছোট চুল পড়েছিলো। যার জন্য তাকে দেখতে আরো মোহময়ী লাগছিল। মাহির আখির দিকে ঝুঁকে তার মুখে পড়ে থাকা চুলগুলো আস্তে আস্তে কানের পিছনে গুঁজে দিল। তখন নিজের অজান্তেই তার ঠোঁটের কোণে সূক্ষ্ম হাসির রেখা দেখা গেলো। কিছুক্ষণ পর মাহিরের খেয়াল হলো সে কী করছে। সে দ্রুত আখির থেকে সরে এলো। কী আশ্চর্য! পনেরো বছর থেকে যে মাহির রওশনের মুখে কৃত্রিম হাসি ছাড়া কোনো হাসি দেখা যায়নি, সেই মাহির রওশন আজ একটি মেয়ের সুপ্ত মুখ দেখে নিজের অজান্তে হাসলো! এ কেমন অনূভুতি! মাহিরের আবারও অনুভূত হলো-সে পরিবর্তিত হচ্ছে।
চলবে.....................
পরিণীতাসক্তি
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
72
Views
2
Likes
1
Comments
5.0
Rating