রাতের ছায়ায় এক অজানা মেয়ে

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
ঢাকার এক শান্ত আবাসিক এলাকায় রাকিব থাকত তার পরিবারের সঙ্গে। দিনের কোলাহল থেকে বিরতি পেতে, সে রাতে একাকী ঘুরতে বের হওয়া পছন্দ করত। একদিন রাত দেরিতে, পড়াশোনা শেষ করে ক্লান্তি মেটাতে সে শহরের পুরনো পার্কের দিকে হাঁটতে গেল।

পথে বাতাস ঠাণ্ডা, বাতাসে বাতাসে গাছের পাতার ফিসফিসানি, আর ফ্ল্যাশ লাইটের হালকা আলো ছড়িয়ে পড়ছিল ছোট ছোট ছায়ার মতো। পার্কের প্রবেশ পথে এসে রাকিব একটু থমকে গেল। পার্কের গাছগুলো যেন রাতের আঁধারে ভয়ানক রূপ নিয়েছিল।

“তুমি এখানে কেন?” হঠাৎ কোমল কিন্তু রহস্যময় এক কণ্ঠস্বর শুনতে পেল সে।

রাকিব তাকালো পাশে, কিন্তু কোনো মানুষ দেখতে পেল না।

“আমি... আমি এখানে একটু হাঁটছি, শান্তি নিতে,” সে বলল।

আচমকা কাছ থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে এলো এক মেয়ে। তার চুল কালো রেশমির মতো ঝলমল করছিল, আর চোখগুলো ছিল যেন গভীর রাতের মতো অন্ধকার, কিন্তু লজ্জা বা ভয় কোনো ছাপ ছিল না।

“আমি এই পার্কের এক রক্ষিনী,” মেয়েটি বলল, “রাত হলে আমি এখানে থাকি, যারা পথ হারায় তাদের পাশে থাকি।”

রাকিব কিছুটা ভয় পেল, কিন্তু মেয়েটির কণ্ঠস্বর মিষ্টি আর শান্ত ছিল, তাই সে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল।

“তুমি কে?” সে জিজ্ঞেস করল।

“আমার নাম নিশিতা,” সে বলল, “আমি এক সময় এই শহরের বাসিন্দা ছিলাম, কিন্তু একটা দুর্ঘটনার পর আমি আর যেতে পারিনি।”

রাকিব চমকে উঠল, “দুর্ঘটনা? কী হয়েছিল?”

নিশিতা কাঁপতে কাঁপতে বলল, “আমি এই পার্কের কাছে একটা রাত ঘুরতে গিয়েছিলাম। হঠাৎ একটা অদ্ভুত ছায়া আমাকে আঘাত করল, আমি পড়ে গিয়েছিলাম নদীতে। তারপর আর জীবিত ফিরতে পারিনি। আমার আত্মা এই পার্কে আটকা পড়েছে।”

রাকিবের চোখে জল চলে এল, “তোমাকে কি কেউ সাহায্য করতে পারবে?”

“না,” নিশিতা বলল, “আমার একটাই ইচ্ছা, আমার গল্প কেউ শুনুক। আর কেউ যেন আমার মত হয় না।”

রাত গভীর হলো। রাকিব বসে মেয়েটির গল্প শুনল। কেমন করে সে জীবনে ভালোবাসা হারিয়েছিল, কেমন করে সে একাকী মারা গিয়েছিল, আর কেমন করে আজও সে আত্মার মতো পার্কে হেঁটে বেড়াচ্ছে।

পরের কয়েক রাত রাকিব বার বার পার্কে গেল। তারা একে অপরের বন্ধু হয়ে গেল। নিশিতা রাকিবকে নানা অদ্ভুত গল্প শোনাত, আর সে শুনত।

একদিন নিশিতা বলল, “রাকিব, তুমি আমাকে মুক্ত করতে পারো।”

রাকিব ভাবল, কিভাবে? তখন নিশিতা বলল, “আমার শেষ ইচ্ছা হলো, গ্রামের পাশে নদীর তীরে আমার নামের একটি স্মৃতি স্থাপন করা।”

রাকিব সেটি করল। এরপর এক রাতে, নিশিতা এসে বলল, “ধন্যবাদ, তুমি আমার মুক্তির চাবিকাঠি।”

সেই রাতে সে ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে গেল। আর রাকিব বুঝল, যে বন্ধুত্ব, বিশ্বাস আর ভালোবাসার শক্তি জীবন এবং মৃত্যু পারাপার করতে পারে।
46 Views
8 Likes
0 Comments
5.0 Rating
Rate this: