আজও তোমায় ভালোবাসি

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
রিপন আর মীনা ছোটবেলা থেকে একই গ্রামের বাসিন্দা। গ্রামের ছোট্ট স্কুল, পাকা রাস্তা, নদের ধারে বড় বটগাছ আর আকাশ ছোঁয়া ধানের ক্ষেতে কাটানো তাদের শৈশবের দিনগুলো ছিলো স্বপ্নময়।

তাদের বন্ধুত্ব শুরু হয়েছিল একেবারে ছোটবেলা থেকে। একই গ্রামে বড় হওয়া দুই মনের মাঝে একটা অদ্ভুত টান ছিল, যা কখনো কথায় প্রকাশ পায়নি, কিন্তু ছিল স্পষ্ট অনুভূতিতে। তারা ছিল একে অপরের প্রথম বন্ধু, প্রথম সঙ্গী।

শৈশবের গরম দুপুরগুলোতে নদীর ধারে বসে তারা স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিল। রিপন বলত, “একদিন শহরে বড় হয়ে আমরা একসাথে থাকব, তোমার জন্য একটা সুন্দর বাড়ি বানাব।”
মীনা হাসত, “তুমি যদি থাকো পাশে, পৃথিবীটা সুন্দর আর কী লাগে?”

কিন্তু স্কুল শেষ হবার পর রিপনের জীবনে নতুন মোড় আসে। সে সুযোগ পায় শহরের একটি বড় কলেজে পড়াশোনা করার। মীনা তখনো গ্রামের ছোট্ট স্কুলেই পড়ে। বিদায়ের দিন তারা খুব খারাপ বোধ করেছিল, কিন্তু দুজনেই জানত যে এখন তাদের আলাদা পথে চলতে হবে।

শহরে এসে রিপনের জীবন ছিল অনেক কঠিন। নতুন পরিবেশ, নতুন মানুষ, কিন্তু হৃদয়ে মীনার ছবি থেকে যায় অটুট। সে দিনরাত পরিশ্রম করে ভালো নম্বর আনার চেষ্টা করত যেন গ্রামের গর্ব হতে পারে।

অন্যদিকে মীনা গ্রামের কাজকর্ম, পড়াশোনা আর পরিবারের সঙ্গে কাটাচ্ছিল দিনগুলো। সে জানত, রিপন দূরে গেলেও ভালোবাসা যে দূরত্বে হারায় না।

বছর পাঁচ পার হয়ে গেছে। রিপন শহরে নাম করেছে একজন সফল প্রকৌশলী হিসেবে। কিন্তু তার মনের কোনাকুনি থেকে মীনার স্মৃতি মুছে যায়নি। সে সময় পেতেই নদীর পাড়ের গ্রামে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেয়।

গ্রামে ফিরে এসে রিপন দেখল মীনা আগের চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর, কিন্তু তার চোখে একটু বিষণ্নতা রয়েছে। মীনা বলল, “রিপন, আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করেছি অনেক দিন, কিন্তু কখনো ভাবিনি তোমার সঙ্গে দেখা হবে এভাবে।”

রিপন বলল, “মীনা, তোমাকে বলতে চাই, আজও আমি তোমায় ভালোবাসি, আগের চেয়ে বেশি।”

তারপর দুজন মিলে গ্রামের ছোট্ট বটগাছের তলায় বসে স্মৃতির গল্প শুরু করল। তারা একে অপরকে সব কিছু খুলে বলল—কষ্ট, আশা, স্বপ্ন আর ভালোবাসা।

সেই দিন থেকে তাদের সম্পর্ক আরো গভীর হলো। তারা বুঝতে পারল ভালোবাসা কেবল কথা নয়, সেটা হলো বিশ্বাস, অপেক্ষা আর বোঝাপড়ার নাম।

রিপন আর মীনা শেষ পর্যন্ত বিয়ে করল। তারা গ্রামের সেই পুরনো বাড়িতে থাকল, যেখানে প্রথম দেখা হয়েছিল, যেখানে প্রথম স্বপ্ন দেখা হয়েছিল।

প্রতিদিন সকালে তারা নদীর ধারে হাঁটত, হাত ধরে কথা বলত, আর বলতে থাকত—
“আজও তোমায় ভালোবাসি...”
52 Views
7 Likes
1 Comments
5.0 Rating
Rate this: