লাহোরের গোধূলি সময়ে পাখি তার ছোট বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল। শহরের দূরের আলো ঝিকমিক করছিলো, গলির কোলাহলে মানুষের কথা আর গাড়ির গুঞ্জন মিশে গিয়েছিলো। আকাশের কথাগুলো বারবার মনে হচ্ছিলো—“তুমি একটু অন্যরকম।” পাখি জানতো এই শহর তার জন্য নতুন, কঠিন আর ভিন্ন এক জগৎ, যেখানে তাকে নিজের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে হবে। সে ঘরের দেয়ালে ঝুলে থাকা মায়ের লেখা কোরআনের আয়াতগুলো দেখল, যেন সেগুলো তার কাছে আশ্রয়স্থল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, “আমি হারব না। এই শহর আমাকে ভেঙে ফেলতে পারবে না, আমি আমার মতো করে বাঁচব।” তার হাতে ধরা স্লাইডগুলো আজকের প্রেজেন্টেশনের সাক্ষী, আর সেই প্রেজেন্টেশনই তার জীবনের প্রথম বড় যুদ্ধে পরিণত হয়েছিলো। পাখি মনে মনে ভাবল, এই লড়াই শুধু নিজের জন্য নয়, সমাজের অনেক মেয়ের জন্য যারা আজও দমে যাচ্ছে নিপীড়নের মধ্যে। সে দৃঢ় সংকল্পে মাথা নেড়ে জানল, সাহস কখনো কমবে না তার।
---
রাতের নীরবতায় আকাশ চৌধুরী তার বিশাল প্রাসাদের কক্ষে একা বসে আছে। কালো স্যুটের মধ্যে তার মন ভারাক্রান্ত। মায়ের অনুপস্থিতি আর বাবার দূরত্ব তাকে একাকীত্বের গভীরে ফেলেছিলো। বার বার তার মনের কানে বাজছিলো পাখির কথাগুলো—“তুমি কি বাস্তবতা জানো?” আকাশ নিজেকে প্রশ্ন করছিলো, এই কঠিন জীবন, এই একাকীত্ব তাকে কোথায় নিয়ে যাবে? পাখির সাহস তার ভিতরে একটা অচেনা আলো জ্বালাচ্ছিলো, যা সে আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করছিলো। সে নিজেকে বলল, “তুমি আমাকে অনেক প্রশ্ন করতে শেখাচ্ছ।” জীবনের অন্ধকারে সে মেঘের ফাঁকে একটা তারা খুঁজছিলো।
---
পরের ভোর পাখি বিশ্ববিদ্যালয়ের পথে হাঁটছিলো। রোদ তার মুখে পড়ছিলো, সে মনে মনে বলছিলো, “আমি জানি, কারণ সাহস করতে হয়।” নিজের হাতে ঝুলানো স্লাইডগুলো তার জীবনের মতো আঁকড়ে ধরে রেখেছিলো। এই নতুন শহরের পথে তার পদচিহ্ন যেন আরও দৃঢ় হচ্ছিলো।
---
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে পাখি তার রিসার্চ পেপার সাজাচ্ছিলো, চারপাশে সবাই ব্যস্ত। দূরে আকাশ এসে হাজির হয়েছিলো, তার উপস্থিতি যেন বাতাবরণে এক অন্যরকম আভা নিয়ে এসেছিলো। পাখির চোখ আকাশকে খুঁজে পেলো, কিন্তু সরাসরি তাকাতে সাহস হলো না। আকাশ সামান্য হাসি দিয়ে তার দিকে হাঁটছিলো, যেন বলছে, “আজকের দিনটা আলাদা।” দুই ভিন্ন দুনিয়ার মানুষ আজ আবার একই মঞ্চে দাঁড়াবে। তাদের মধ্যে অদ্ভুত টান গাঢ় হচ্ছিলো। পাখি মনে মনে বলল, “এখানে টিকে থাকতে হলে দৃঢ় হতে হবে।”
---
সেমিনারে পাখির আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে ঝরছিলো যুক্তি আর শক্তি। আকাশ থেমে থেমে শুনছিলো, মাঝে মাঝে সম্মতি জানাচ্ছিলো। প্রেজেন্টেশনের শেষে প্রশ্নোত্তরে উত্তেজনা তুঙ্গে। আকাশ প্রশ্ন করল, “তুমি কি জানো সমাজের কঠিন বাস্তবতা?” পাখি বলল, “বাস্তবতা জানি বলেই লড়ছি। ভয় পেলে সমাজ বদলাবে না।” শব্দগুলো যেন হালের বাতাসে বিদ্যুৎ বয়ে দিলো। সবাই নীরব হয়ে গেলো, বুঝতে পারছিলো—এই সম্পর্ক সহজ হবে না।
---
সেমিনারের শেষে করিডোরে আকাশ এগিয়ে এসে বলল, “তুমি আলাদা।” পাখি চোখে চোখ রেখে বলল, “আমাদের জগতের মেয়েদের থেকে?” আকাশ হাসি দিয়ে বলল, “সোজা কথা বলো।” পাখি বলল, “ঘুরিয়ে বলার সময় নেই, জীবন ছোট।” আকাশ কৌতূহল নিয়ে বলল, “তুমি এখানে নতুন?” পাখি বলল, “হ্যাঁ, তবে নিজেকে হারাতে আসিনি।” আকাশ বলল, “তুমি আমাকে অনেক কিছু শিখাচ্ছ।” পাখি একটু হেসে বলল, “জানার আগ্রহটাই বাঁচিয়ে রাখে মানুষকে।
চলবে.........................
মেঘে ঢাকা তারা (২)
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
87
Views
11
Likes
2
Comments
0.0
Rating