বজবজ লোকাল

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
বিয়ে বাড়িটা একাই জমিয়ে রাখলেও বাসর রাতের আড্ডাতে থাকতে পারলাম না। কলেজে সার্ভের প্রাকটিক্যাল ক্লাস যেতে ই হবে। প্রিয়াঙ্কা কফি নিয়ে হাজির বেশ মিষ্টি লাগছে। একটু খানি খুনসুটি করে বললাম " তোমার বাবা তো পারমিসন দিলো তবুও চোরমতো বাড়ি বাইরে সিঁড়ি দিয়ে আমায় নিয়ে এলে কেন? চিলেকোঠার ঘরে শুতে দিলে , বাড়িতে ঢোকালে না।ভয় পাচ্ছো নাকি , বাড়ি তে নয় আমি তো তোমার মনে জায়গা চেয়েছি?"
ও বলল"জীবনে সবসময় রসিকতা চলেনা। তুমি কতটুকু বা জানো আমাদের ব্যপারে? আমি যদি সাজি রিংকুর চেয়ে আমাকে অনেক ভালো লাগবে। এ বাড়িটা একটা অভিশপ্ত বাড়ি। নীচের তালাটা বাবার ঘর । পড়ানোর ঘর। দোতালায় আমার পাগল মা থাকে। এই চিলেকোঠায় আমাকে থাকতে হয়। আজ থেকে আট বছর আগে বাবা শর্ত দিয়ে ছিলো, যদি পড়াশোনা করতে হয় সাজাগোজা যাবে না, কোন ছেলে বন্ধু করা যাবে না। সেবার আমাদের সরস্বতী পূজা সব দায়িত্ব নিয়েছিলো নুর দা। ছোট্ট বেলা থেকে ও আমাদের বাড়িতে থাকতো বাড়ীর ছেলের মতো। দিদির সাথে পড়াশোনা করতো। বাবা ওর কাছ থেকে মাইনে নিতো না। তাই আমাদের বাড়ির ফাইফরমাস খেটে দিতো। দিদি মাধ্যমিক এ ভালো রেজাল্ট করেছিল। সায়েন্স পড়বে বলে , এখানকার স্কুলে ভর্তি হলো না। নুরদার সাথে ওখান থেকেই ওর সম্পর্কে চির ধরেছিল। সরস্বতী পূজা তে অঞ্জলী দিতে এলো অভি দা, দিদির নতুন স্কুলের বন্ধু। সন্ধ্যায় নুরদা মদ খেয়ে বাড়িতে এসে ঝামেলা শুরু করলো" আমি পাঁচ নমাজি সাচ্চা ইসলাম ধর্ম লোক হয়েও তোর পূজা সব দায়িত্ব নেবো আর অন্যের সাথে পিরিতি করবি।"
দিদিও বলল" কি ইসলাম বরাই করিস, মদ খাওয়াও তোর ধর্মে বারন খাসনি তুই , যা পড়াশোনা ছেড়ে মসজিদে পাঁচ বার নামাজ পড় আল্লাহ কে পেয়ে যাবি। আমি তো তোকে বলেই ছি, আমি ধর্ম টর্ম মানি না। আমাকে পেতে হলে পড়াশোনা ছাড়লে হবে না। তুই স্কুলে যাওয়া শুরু কর তারপর ভাববো সব কিছু।"
পাড়ার লোক জানাজানি হবার আগে কাকার নুর দা মেরে বের করে দিলো। সেজো কাকা বাবাকে অনেক কথা শোনালো। বলল " মোল্লার বাচ্চাদের বাড়িতে ঢুকতে দিতে না করতাম শুনতে না, দেখলেতো। ওরা মিজাফরের জাত।" কিন্তু গায়ে হাত দেওয়া উচিত হয় নি। সপ্তাহ দুই যেতে না যেতে একদিন সন্ধ্যা গড়িয়ে গেলো দিদি বাড়ি এলো না। খোঁজ খবর নিয়ে পাওয়া দিদিকে জলার ধারে। নুর দার সাথে আরো তিনটে ছেলে ছিলো। দিদি কয়েক দিন পর আত্মহত্যা করলো। আসলে লোক সমাজে মুখ দেখানো দূরে থাক নিজের মুখ নিজে দেখতে , পারছিলো না। অ্যাসিড দিয়ে পুরিয়ে দিয়েছিল ওরা দিদির মুখটা। আমি তো হাসতে ভুলে গেছিলাম। যেনো আমার প্রেম করতে ইচ্ছা করে অন্য মেয়েদের মতো কিন্তু বেহেনজি , টমবয় টাইপের আমি কে আমাকে পছন্দ করবে। তোমার সঙ্গে দেখাহতেই মনের মধ্যে প্রজাপতি উড়তে শুরু করেছিলো। তোমার ঐ কথা খুব ভালো লাগছে আমার " ফেয়ার এন্ড লাভলি মাখলে আপনি শুধু ফর্সা হতেন , কিন্তু আপানি খুব মিষ্টি, তার মানে আপনি নিশ্চয়ই আইসক্রীম মাখেন।" তুমি আমার হাতে ফুল দিয়ে জুতোর ফিতে বাঁধে আবার ফুল টা নিয়ে নিলে । রিঙ্কু খুব রেগে গিয়ে ছিলো। ও বললো " কি অসভ্য ছেলেরে বাবা একটা মেয়েকে ফুল দিয়ে নিয়ে নেয় ‌।" তুমি আমার চোখে চোখ রেখে বললে " আমি সুন্দরী মেয়েদের হাতে ফুল দিই না। কারন ফুলরা হিংসুটে, হাসি বন্ধ করে শুকিয়ে মরবে।" আমার একবার ও মনে হয়নি তূমি মজা করছো। আমার মনে হচ্ছিল তুমি আমাকে আকর্ষণ করতে সবকিছু করছো।"
সাতচড়ে রা না কাটা মেয়েটা একনিশ্বাসে কতো কথা বলে গেলো। মনে মধ্য আমার লাড্ডু ফুটলো।আমি বুঝলাম ওর মন গলেছে। তাছাড়া চোখ জলে ভরে গেছে। ওকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেয়ে বললাম " আমি তোমাকে ই ভালোবাসি পাগলি।"
ওর জন্মদিন মা বাড়িতে নিমন্ত্রণ করলো, অনাদির মোগালাই খেয়ে , সিধা মেট্রোরেলের টিকিট। ভিড় দেখে পিঠব্যাগটা বুকব্যাগ করতে যাচ্ছিলো, করতে দিলাম না, বললাম এটা তোমার " বজবজ লোকাল নয়" মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ভিড়ের সুযোগ টা ভালো ই নিলাম, কানে কানে একবার ও বলল " বজবজ লোকাল ওঠা মেয়েদের ব্যাগে স্যেভটিপিন থাকে, দুষ্ট লোকেদের হাতে থেকে স্যেভটির জন্য। " কিছু বলবার আগেই উত্তমকুমার চলে এলো। মনে মনে একটা গান গুন গুন করে উঠলো।
" এই পথ যদি না শেষ হয় , কেমন হতো তুমি বলতো।"
জীবনে অনেক মানুষের সাথে আমরা পথ চলতে চাই সারাজীবন কিন্তু সেটা আর হয়ে ওঠে না,
নামবার সময় ফর্মালিটি করে জিঙ্গাসা করলাম " রাগ করলে?"
ও বললো " এর পরেদিন শাড়ি পরে বেড়াবো, আমার মনে হয় তোমার জন্য ভালো হবে"। ওর ঠোঁটে মিষ্টি হাসিতে ভেসে এলো কত স্বপ্ন,,,
67 Views
3 Likes
0 Comments
5.0 Rating
Rate this: