৫৮.
- স্যার লাঞ্চ টাইম তো হয়ে গেছে। আমি এখন যাই? (দিনা)
- আমি তোমাকে যেতে বলেছি? (দীপ্ত)
- না। (দিনা দমে গিয়ে)
- তুমি টিফিন এনেছ না? (দীপ্ত)
- হ্যাঁ,,,, এনেছি। (দিনা)
- নিয়ে এসো। আমি খাবো। (দীপ্ত)
- হ্যাঁ!! না, মানে স্যার... আমার এক্ষুণি মনে পড়লো, আখি ম্যাম না আমার সব টিফিন খেয়ে ফেলেছেন। (দিনা বোকা হেসে)
- Do you think I'm an idiot? তোমার প্রথমে মনে পড়লো না, আর আমি যখন খাওয়ার কথা বললাম, তখন তোমার মনে পড়লো? (দীপ্ত)
- সত্যি আমার টিফিন আখি ম্যাডাম খেয়ে ফেলেছেন। (দিনা কাচুমাচু মুখ করে)
- তুমি কি যাবে নাকি আমি তোমার ব্যাগ আনাবো? (দীপ্ত)
- যাচ্ছি যাচ্ছি। (দিনা)
দিনা মন খারাপ করে নিজের টিফিনটি এনে দীপ্তর সামনে রাখলো৷ টিফিন বক্স খুলতেই দীপ্তর মুখ চকচক করে উঠলো। কারণ টিফিন বক্সে রয়েছে তার পছন্দের ফ্রাইড রাইস।
- আরে ব্বাস, ফ্রাইড রাইস! দিনা, এক কাজ করো, তুমি আমাকে খাইয়ে দাও। আমার নিজের হাতে খেতে ইচ্ছে করছে না। (দীপ্ত)
- দেখুন, টিফিন এনে দিতে বলেছেন, এনে দিয়েছি। খেতে চাইছেন, খেতেও দিচ্ছি। কিন্তু খাইয়ে দিতে পারব না। নিজের হাত আছে, হাত দিয়ে খান। (দিনা)
- তুমি কি নিজের চাকরি হারাতে চাইছো? (দীপ্ত)
দিনার মুখটা এবার কাঁদোকাঁদো হয়ে গেলো। দীপ্তর যা দেখে ভারি মজা লাগলো।
- আপনি খুব শয়তান একটা লোক। (দিনা)
- গাঁজাখোর বলেছিলে না, এখন মজা দেখ। (দীপ্ত)
দিনা অনিচ্ছা সত্ত্বেও দীপকে চামচ দিয়ে ফ্রাইড রাইস খাওয়াতে লাগলো। এমনি ফ্রাইড রাইস দিনার খুব পছন্দের একটি খাবার, তার ওপর এখন যদি সেটা নিজে না খেয়ে বসকে খাইয়ে দিতে হয়, তাহলে এর থেকে বেশি দুঃখের বিষয় আর কি হতে পারে? দিনা মনে মনে গজগজ করতে করতে দীপ্তকে খাইয়ে দিতে থাকে। আর দীপ্ত দিনাকে জ্বালাতে পেরে মহা খুশি হয়ে খাবার খেতে থাকলো। তবে তারা জানতো না এই মুহূর্তের সাক্ষী শুধু তারাই নয়, অন্য একজনও ছিল। সে নিরবে তাদের দেখছিলো।
৫৯.
- স্যার, আমার কাজ শেষ। আমি তাহলে আমার কেবিনে যাচ্ছি। (আখি)
আখি এই বলে যেতে উদ্যত হলে মাহির বললো-
- Wait... (মাহির)
আখি দাঁড়িয়ে পড়লো।
- তোমাকে কে বললো তোমার কাজ শেষ? আমি তোমাকে যেতে বলেছি? (মাহির)
- না... মানে....... (আখি)
- আমার কেবিনটা অগোছালো হয়ে গেছে, একটু ময়লাও হয়ে গেছে....... (মাহির)
- আমি তো তেমন কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। আপনার কেবিন যথেষ্ট পরিষ্কার আর গোছালো আছে। (আখি আশেপাশে তাকিয়ে)
- কিন্তু আমি দেখতে পাচ্ছি। আমার অপরিচ্ছন্নতা পছন্দ নয়। তাই তুমি আমার কেবিনটা পরিষ্কার করবে, right now. (মাহির)
- স্যার, সেটার জন্য cleaner আছে। আপনি আপনি তাদেরকে বলুন। আমার নিজেরও তো একটা রেপুটেশন আছে নাকি? (আখি)
- (তাচ্ছিল্যের স্বরে) হু,,, রেপুটেশন দেখাচ্ছে...... আমারই মিথ্যে গার্লফ্রেন্ড হয়ে সবার কাছ থেকে রেপুটেশন নিয়ে, আমাকে রিপুটেশন দেখাচ্ছ তুমি? তোমার তো ভাগ্য ভালো আমি এখনো অফিসে কাউকে কিছু বলিনি। আর তুমি যদি এখন আমি যা বলছি সেটা না করো, তাহলে এটা ফাঁস করতে আমার ২ সেকেন্ড ও লাগবে না? (মাহির)
- আপ...... (আখি আঙুল দেখিয়ে মাহিরের দিকে এগিয়ে)
- You will do or not.... (মাহির)
- আপনি খুবই খারাপ একটা লোক। (আখি ফোঁস করে)
- (বাঁকা হেসে) I know. আধঘন্টার মধ্যে ফিরে আসবো। এসে যেন দেখি আমার রুমটা ঝকঝক করছে। (মাহির)
মাহির এই বলে পকেটে হাত দিয়ে attitude নিয়ে মুখটা গম্ভীর করে কেবিন থেকে বের হয়ে গেল। আখি রেগে নিজের পা মাটিতে ঠুকলো।
৬০.
দিনা কাচুমাচু মুখে কম্পিউটারে নিজের কাজ করছিলো। লাঞ্চ টাইমে তো আর খাওয়া হলো না। তাই পেটে ক্ষিদে নিয়েই তাকে কাজ করতে হচ্ছে। এমন সময় তপু তার কাছে এসে বললো-
- ম্যাডাম,,,,, (তপু)
- কিছু বলবে? (দিনা)
- জ্বী ম্যাডাম, দীপ্ত স্যার আপনারে এইডা দিতে কইছে। (তপু)
দিনা দেখে তপুর হাতে KFC এর পার্সেল, আর সাথে কিছু চিপস আর চকলেটও আছে।
এগুলো দেখে দিনার মনটা খুশি হয়ে যায়। তবে তা তপুর সামনে প্রকাশ করে না।
- ঠিকাছে, তুমি এগুলো এখানে রেখে যাও। (দিনা)
- আচ্ছা। (তপু)
তপু সেগুলো সেখানে রেখে চলে গেলে দিনা চটজলদি চিকেন বের করে খেতে থাকে। আহা! পেটের ক্ষিদেটা নিরাময় হয়ে কি আরামটাই না পাচ্ছে সে। খেতে খেতেই সে ভাবে-
- লোকটাকে যতটা খারাপ ভেবেছিলাম, ততটাও খারাপ নয়। (দিনা)
দিনার ঠোঁটের কোণে একটা হাসির রেখা খেলে গেলো। অনুভূতির বীজ সদ্য বপন হলো মনে হয়।
ম্যানেজার আড়াল থেকে সবই লক্ষ্য করে। লাঞ্চ টাইমেও সে দিনাকে দীপ্তকে খাইয়ে দিতে দেখেছে। আবার এখন দীপ্ত দিনার জন্য এসব পাঠাচ্ছে। তার একটু খটকা লাগে।
- এদের দুজনের মধ্যে কিছু তো আছে। নাহ্, তদন্ত করতে হবে। যা দেখছি, অফিসে দুদিন পর কাজ করার বদলে তিনবেলা প্রেম দেখে থাকতে হবে। যত্তসব....... (ম্য্যানেজার)
৬১.
কোনো এক অন্ধকার ঘরের জানালার সামনে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে এক যুবক। পাশে থাকা মোবাইল ফোনটি হঠাৎ শব্দ করে বেজে উঠে। সে না দেখেই ফোনটা কানে ধরলো, যেন সে জানে কে ফোন করেছে।
- হুম, বলো। (যুবকটি)
- স্যার, আখিকে মাহির রওশন নিজের পিএ করেছে।
- জানি, তারপর বলুন। (যুবকটি)
- মাহির রওশন আখিকে সবসময় নিজের কাছাকাছি রাখছে।
- তারপর..... (যুবকটি)
- মনে হচ্ছে দীপ্ত রওশন এবং আখির পিএ দিনার মধ্যেও কিছু চলছে।
- ওদের ওপরেও নজর রাখো। (যুবকটি)
- আর একটা কথা স্যার.......
- বলো। (যুবকটি)
- কোম্পানির কিছু কিছু হিসেবে যে গোলমাল আছে, সেটা মাহির রওশন বুঝতে পেরে গেছে। কোম্পানি জয়েন করার পর থেকেই সে এটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে।
- সাব্বাস! দুদিনে এসেই তো দেখছি অনেক কিছু ধরে ফেলেছে মাহির। বিজনেস সম্পর্কে বেশি অভিজ্ঞতা না থাকার পরও এত তাড়াতাড়ি এসব বিষয় ধরে ফেলা খুব সোজা নয়। ভালো, প্রতিপক্ষ ভালো খেলোয়ার না হলে খেলায় মজা আসে না। মাহির অল্প কিছুদিনেই বেশ দক্ষ হয়ে উঠেছে। কিন্তু আমার থেকে বেশি নয়। সমস্ত প্রুফ মুছে ফেলো। আমার অথবা আমার কোম্পানির নাম যেন কোনোভাবেই বেরিয়ে না আসে। বুঝেছো? (যুবকটি)
- Yes sir.
ফোন কেটে যাওয়ার টুং টুং শব্দ শোনা গেলো। যুবকটি হাতে ধরে থাকা অর্ধেক খাওয়া সিগারেটটা আবার মুখে দিলো। কিছুক্ষণ পর সে মুখ থেকে ধোয়া বের করে বললো-
- লুকোচুরি অনেক হলো, এবার সামনাসামনি খেলার পালা। যে যাই বলুক, লুকিয়ে যুদ্ধ করার মধ্যে কোনো মজা নেই। আমার next target হবে আখি। এমন চাল চালবো যে ধীরে ধীরে তুমি নিজে যে তোমার কোম্পানির কত বড় ক্ষতি করে ফেলবে তা তুমি বুঝতেও পারবে না আখি। (যুবকটির মুখে একটি কুটিল হাসি ফুটে ওঠে)
৬২.
ঘড়ির কাটা জানান দিচ্ছে রাত বাজে ১০:২৭। মানে প্রায় সাড়ে বারোটা বাজতে চললো। অফিসে এখনো কাজ করছে মাহির, দীপ্ত, আখি ও দিনা। তারা চারজনে অফিসের একটি বড় রুমে একসাথে কাজ করছে। আগামীকাল তাদের একটি বড় প্রেজেন্টেশন আছে। প্রেজেন্টেশন শেষ হলেই আমেরিকার একটি কোম্পানির সাথে তাদের এক বছরের ডিল সাইন হবে। CEO আর COO কে তো তাই কাজ করতেই হবে। আখি ও দিনা যেহেতু তাদের পিএ, তাই তাদেরও এতক্ষণ ধরে কাজ করতে হচ্ছে। নাহলে পুরো কাজ মাহির ও দীপ্ত মিলে সারারাতেও শেষ করতে পারবে না। তবে এতে তাদের কোনো বিরক্তি নেই। কিন্তু এটা যদি মাহির ও দীপ্তর কোনো পার্সোনাল কাজ যেমন- কেবিন পরিষ্কার করা, খাবার আনা হতো তাহলে তাদের চরম বিরক্ত লাগতো।
কাজ করতে করতে হঠাৎ কি মনে হতে মাহির নিজের হাতঘড়ির দিকে একপলক তাকিয়ে দিনা ও আখির উদ্দেশ্যে বললো-
- আখি, দিনা, তোমরা বরং চলে যাও। অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে। (মাহির)
- না, স্যার, আমাদের কাজ করতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। (আখি)
- আর আপনারা দুজন শুধু কাজ করলে আজকে রাতের মধ্যে প্রেজেন্টেশন রেডি করতেও পারবেন না। (দিনা)
- কিন্তু তোমাদের বাড়িতে টেনশন করবে। (দীপ্ত)
- ও নিয়ে আপনারা ভাববেন না স্যার। তাছাড়াও আর বেশি কাজ বাকি নেই। খুব বেশি দেরি হবে না। (আখি)
- ঠিকাছে। তাড়াতাড়ি কাজ করো। (মাহির)
কাজ শেষ করতে করতে রাত প্রায় এগারোটা বেজে গেলো। সব কাজ গুছিয়ে তারা একসাথে বাইরে বের হলো।
- তোমাদের বললাম আগে চলে যেতে, এখন দেখ কত রাত হয়ে গেলো। তোমাদের ফিরতে সমস্যা হতে পারে। (দীপ্ত)
- না, না, স্যার আমরা যেতে পারবো। (আখি)
- উহুঁ, দিনকাল ভালো নয়। তোমাদের একা ছেড়ে দেয়া যাবে না। দীপ, তুই তোর গাড়িতে করে দিনাকে বাড়িতে ড্রপ করে দে, আর আমি আখিকে ড্রপ করে দিচ্ছি। (মাহির)
- স্যার এসবের কোনো প্রয়োজন নেই। আপনাদের আমাদের জন্য ব্যস্ত হওয়ার দরকার নেই। (আখি)
- তোমাদের এতক্ষণ পর্যন্ত যখন রেখেছি, তখন তোমাদের রেসপনসেবলিটিও আমাদের। এখন যদি তোমাদের কিছু হয়ে যায়, তাহলে তো দোষটা আমাদের ঘাড়েই আসবে। (মাহির)
- স্বার্থ ছাড়া কিছু বোঝেনা। (মনে মনে মুখ ভেঙচে আখি)
- কিন্তু..... (দিনা)
- অতিরিক্ত ভদ্রতা দেখানোটা বন্ধ কর আর চলো। (দীপ্ত)
- আর তুমিও এসো। (মাহির আখিকে উদ্দেশ্য করে)
দিনা দীপ্তর গাড়িতে ও আখি মাহিরের গাড়িতে উঠে পড়লো। গাড়ি দুটো কালো ধোঁয়া উড়িয়ে চলে গেলো শহরের বুকে।
৬৩.
মাহির গাড়ি ড্রাইভ করছে। আখি জানালা দিয়ে বাইরে একমনে তাকিয়ে আছে। কোনো এক গভীর ভাবনার জগতে হারিয়ে আছে যেন। তবে মাহির মাঝে মাঝে আখির দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে। গাড়ির মধ্যে পিন ড্রপ সাইলেন্স। নিরবতা ভেঙে মাহিরই প্রথমে বললো-
- বাড়িতে কে কে আছে? (মাহির)
হঠাৎ মাহির গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করাতে আখি একটু চমকে উঠলো। তারপর মাহিরের কথা বুঝে সে উত্তর দিলো।
- আমি, মা আর বাবা। (আখি)
- তোমার কোনো ভাইবোন নেই? (মাহির)
- না, আমি একা। আপনার নেই? (আখি)
আখি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে মাহিরের দিকে তাকালো। কিন্তু মাহির কোনো উত্তর দিলো না। আখির একটু অস্বস্তি হলো। তার মনে হলো তার প্রশ্নটা হয়ত মাহিরের ঠিক পছন্দ হয়নি। অস্বস্তি কাটাতেই মনে হয় সে বললো-
- মা-বাবা নিশ্চয়ই খুব চিন্তা করছে। (আখি)
- বাড়িতে জানাওনি? (মাহির)
- না, ফোন সুইচড্ অফ হয়ে আছে। (আখি)
- আমার ফোন থেকে বাড়িতে ফোন করতে পারো। (মাহির)
- তার দরকার নেই। বাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছি। (আখি)
- তোমার মা-বাবা তোমায় নিয়ে খুব চিন্তা করেন? (মাহির)
- হুম, অনেক বেশি। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান আমি। করবেই তো। (মাহিরের দিকে তাকিয়ে) কেন? আপনার মা বাবা করে না? (আখি)
মাহির তার এই প্রশ্নেরও উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলো না হয়ত। সে সামনে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলো। আখি বাইরের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায়ই বললো-
- কারোর কাছে নিজের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর শুনে নেওয়ার পর অপরপক্ষের প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া মোটেও ভালো নয়। (আখি)
আখি যে কথাগুলো তাকে ইঙ্গিত দিয়ে বলছে সেটা বুঝতে মাহিরের বিলম্ব হয় না। সে আড়চোখে একবার আখির দিকে তাকিয়ে আবার সামনে তাকায়। সামনে তাকিয়েই বলে-
- না। আগে করতো, এখন করে না। মাঝে মাঝে ছোট আন্টি একটু খোঁজখবর নেয়। (মাহির)
- ওহ্। (আখি)
মাহিরের মা বাবা কেন তাকে নিয়ে ভাবে না-এই প্রশ্নটি আখির মাহিরকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করলো না। তার মনে হলো মাহির হয়তো তার প্রশ্নের উত্তর দেবে না। তাই শুধু শুধু প্রশ্ন করে লাভ কী? একবার মাহিরের দিকে তাকায় সে। সে এতক্ষণে খেয়াল করেনি মাহির একহাতে স্টিয়ারিং ঘোরাচ্ছে। অন্যহাতটি কোনো কারণ ছাড়াই সে ব্যবহার করছে না। দরকার হলে শুধু মাঝে মধ্যে সেটা দিয়ে হ্যান্ডব্রেকটা টানছে। মার্সিডিজের থ্রি পয়েন্টেড স্টার লোগোর সাথে তার বলিষ্ঠ হাতের শিরাগুলো যেন একদম নিখুঁত কম্বিনেশন। তার হাতের পেশিগুলোও শার্টের ওপর থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। কি ভীষণ আকর্ষণীয় এ যুবক। আখি চোখ সরিয়ে নিলো দ্রুত। এ যুবকের প্রতি আকর্ষণ যেন নৈঃশব্দ্যের মাঝে গড়ে ওঠা এক দুর্লভ সিম্ফনি, যা যতবারই দেখতে চায়, ততবারই তাকে বন্দি করে রাখে। চক্ষু সরিয়ে নেওয়াই ছিল আখির জন্য বুদ্ধিমতীর কাজ। কারণ তার দৃষ্টি থেমে থাকলেই, অন্তর যেন হারিয়ে যেত এই রহস্যময় সৌন্দর্যের জালে।
৬৪.
দীপ্তর গাড়ি রাতের শহরের বুকে ছুটে চলেছে। দিনা জানালা দিয়ে রাতের আলোকিত শহর দেখছে। বাতাস এসে তার চুল উড়িয়ে দিচ্ছে। অবাধ্য চুলগুলো আজ স্বাধীনতা চাইছে। বাধ মানছে না। দিনা নিজের চুলগুলো নিজের মতো উড়তে দিচ্ছে। মাঝে মাঝে কিছু চুল এসে তার মুখে বারি খাচ্ছে। কিন্তু তাতেও তার কোনো হেলদোল দেখা যাচ্ছে না।
দীপ্তর কাছে আজকে মেয়েটিকে অনেক মায়াবী লাগছে। আগে কখনো দিনাকে গভীরভাবে খেয়াল করেনি সে। কিন্তু আজ করছে। চুলগুলো মুখে পড়ায় তাকে খুব মোহময়ী লাগছে। গাড়ি চালানোর ফাঁকে মাঝে মাঝে সে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে দিনার দিকে। দীপ্ত অনেকক্ষণ ধরে দিনার সাথে কথা বলতে চাইছিলো কিন্তু কি দিয়ে কথা শুরু করবে সেটা বুঝতে পাছিলো না। তার মধ্যে একটু দ্বিধাও কাজ করছিলো। অবশেষে সব দ্বিধা দন্দকে দূরে ঠেলে দীপ্ত বলেই উঠলো-
- তুমি যে এতক্ষণ ধরে বাইরে আছো, তোমার মা বাবা টেনশন করছেন না? (দীপ্ত)
- কে টেনশন করবে? আমার মা নেই, আর বাবা হয়তো এতক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে। (দিনা)
- আংকেল এত তাড়াতাড়ি ঘুমোন কেনো? (দীপ্ত)
- বাবার হার্টের সমস্যা আছে। তাই বাবাকে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে হয়। বাবা ঘুমিয়ে পড়লে আমি আরেকটা চাবি দিয়ে বাড়িতে ঢুকি। (দিনা)
- আংকেলকে ডাক্তার দেখাওনি? (দীপ্ত)
- (দীর্ঘশ্বাস ফেলে) দেখিয়েছি। একমাসের মধ্যে অপারেশন করাতে হবে। নাহলে বাবাকে বাঁচানো যাবে না। (দিনা)
- তাহলে তো ব্যাপারটা বেশ সিরিয়াস। (দীপ্ত)
- হুম। আমি টাকা জোগাড় করছি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি ওনার চিকিৎসা করাতে চাই। (দিনা)
- কোনো হেল্প লাগলে বলতে পারো। (দীপ্ত)
- (মলিন হেসে) যদি অন্যের কাছ থেকে হেল্প নিতাম, তাহলে আমি আরও আগে ওনার অপারেশন করিয়ে ফেলতাম। (দিনা)
৬৫.
মাহিরের গাড়ি আখির বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো। আখি গাড়ি থেকে নেমে বললো-
- আমাকে help করার জন্য Thank you, sir. (আখি মিষ্টি হেসে)
- কালকে অফিসে তাড়াতাড়ি এসো। প্রেজেন্টেশন এর আগে সবকিছু ভালো করে চেকআপ করে নিতে হবে। (মাহির)
- Okey sir. (আখি)
আখি এই বলে তার বাড়ির দিকে পা বাড়ালো। একটু ভালো করে বিদায়ও দিতে জানে না এই লোকটা। আর যে এইটুকু পারে না, তাকে তার চলে যাওয়ার পর বাড়িতে ঢোকার মতো ভদ্রতা দেখানোর কোনো মানেই হয় না। তাই মাহিরের প্রস্থান করার জন্য অপেক্ষা না করেই আখি বাড়িতে ঢুকে গেলো।
আখি বাড়িতে চলে যাওয়ার সাথে সাথেই বাড়ির ভেতর থেকে একজন ভদ্রলোক ও ভদ্রমহিলার গলা শোনা গেলো। নিশ্চয়ই আখির বাবা-মা। কারণ সে বলেছিলো বাড়িতে শুধু সে এবং তার বাবা মাই থাকে। তাদের কথা শুনে মনে হলো তারা এখনই অফিসে আখির খোঁজ নেয়ার জন্য ফোন করতে যাচ্ছিলেন। তারা আখিকে একটু বকাঝকা করলেন তারপর একটু আদর করলেন। আখি ঠিকই বলেছিলো, তার মা-বাবা অনেক যত্ন করে তার। একসময় তার মা বাবাও এমন যত্নশীল ছিলো। কিন্তু একটা সময় পর সবকিছু বদলে গেছে। সে নিজেও বদলে গেছে। আজকে মাহিরের আবার হুট করে সেই পুরোনো দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেলে যখন তার মা বাবা সবসময় নিজের কাজে ব্যস্ত থাকতো না। মাহিরের সাথে সময় কাটাতো। কত সুখী না ছিলো পরিবারটা। কিন্তু একটা ঝড় এসে সবকিছু শেষ করে দিলো। মাহিরের আফসোস হতে থাকে। সে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
চলবে.....................
পরিণীতাসক্তি
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
112
Views
3
Likes
1
Comments
5.0
Rating