তোর অপেক্ষায় আমি

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
ঢাকার এক রোদের সকাল।
জানালার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়ে, চোখে রোদ ঠেকিয়ে তাকিয়ে আছে নিচের উঠোনে। গায়ে হালকা হলুদ-সাদা সালোয়ার, চুলগুলো আজ খোলা। নাম তার সারিন শেখ মিহা।

আজ তার প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাস।
তাহমিনা শেখ বারবার চুল ঠিক করে দিচ্ছেন, আর বলছেন,
“তুই আজ একটু হাসিস অন্তত, মা! এমন মুখ করে ক্লাসে গেলে, কেউ তো তোর পাশে বসবে না!”

মিহা হালকা হেসে বলে,
“হাসলে যদি কেউ পাশে বসে, তাহলে না হয় না–ই হাসলাম…”

তাহমিনা শেখ কুঁচকে তাকান, কিন্তু কিছু বলেন না।
মিহা চুপচাপ ব্যাগ কাঁধে তুলে নেয়

ক্লাসে ঢুকেই যেন এক অদ্ভুত গুমোট পরিবেশ!
নতুন নতুন মুখ, কেউ কাঁচুমাচু, কেউ সেলফি তুলছে, কেউ আবার আগে থেকেই দল বেঁধে বসেছে।

আর ঠিক তখনই সে এল।

হাঁটতে হাঁটতে, গিটার কেস হাতে, চোখে সানগ্লাস আর একরকম অলস ভঙ্গি।
ক্লাসের এক কোণায় গিয়েই বসলো। কেউ কথা বলছে না ওর সঙ্গে—তবুও যেন সবচেয়ে বেশি আলো ছড়াচ্ছে ছেলেটাই।

রায়ান আহাম্মেদ রিদান।

মিহা তাকিয়ে থাকে। খুব স্বাভাবিকভাবে, আগ্রহ ছাড়া। কিন্তু কী জানি কেন, তার ভেতরটায় যেন কিছু একটা চেপে বসে।

রায়ান একবার তাকায় মিহার দিকে। চোখে চোখ মেলে।

দুই সেকেন্ড…
তিন…
চার…

তারপর সরে যায়—কেউ কিছু বলে না, কেউ কিছু বোঝেও না। কিন্তু সময়টা যেন একটু থেমে যায়।

মিহা ক্যান্টিনে বসে আছে একা। তৃষা এখনো আসেনি। একটা বই নিয়ে বসেছে, পড়ার ভান করছে।

“তুমি কবিতা পড়ো?”

মিহা চমকে তাকায়।
রায়ান দাঁড়িয়ে আছে সামনে।

“হুম…” – জবাব ছোট।

“আমি গান লিখি। মাঝে মাঝে কবিতা চুরি করি।” সে মুচকি হেসে বলে।

“তাহলে আমি চুরি না হওয়াটাই ভালো মনে করি।”
মিহা চোখ নামিয়ে নেয়।

রায়ান একটু চুপ থাকে, তারপর বলে,
“তোমার চোখে বিষাদ আছে, আর আমি বিষাদের প্রেমে পড়ি…”

মিহা খোলাখুলি কথা বলেনি, কিন্তু অদ্ভুতভাবে রায়ানের কিছু শব্দ সারাদিন মাথায় ঘুরতে থাকে।
সে জানে, এসব গল্প হয় না… গল্পে এমন কিছু হয় না।

তবু সে জানালা দিয়ে চাঁদ দেখে, আর মনে মনে ভাবে—

“তুমি কারো হয়ে আসো না, কিন্তু হাওয়ার মতো ছুঁয়ে যাও কেন?”

“তুই কে রে, অচেনা ছেলেটা?”

“তোর অপেক্ষায় আমি… কেন জানি এখনই…”

শহরের ব্যস্ততা যেন আর এক ধাপ স্লো মোডে চলে আসে মিহার মনে।
ক্লাসে ঢোকার আগ মুহূর্তে তার হৃদয় একটু অস্থির।

তৃষা এসে পাশে বসলো,
— “তুই তো আজকাল অনেক খেয়াল খেয়াল করিস, মিহা! কে এই নতুন রাজকুমার?”

মিহা লজ্জায় কানে আগুন লেগে গেল,
— “না, কিছু না, ওর সাথে তো আমি কিছু বলিনি!”

তৃষা হেসে বলল,
— “বলিস না কেন? ও যে তোর দিকে বারবার তাকায়, আমি দেখেছি!”

মিহার চোখ বড় হয়ে গেলো, কিন্তু সে কেবল হেসে দিলো চুপচাপ।


ক্লাস শেষে রায়ান হঠাৎ মিহার কাছে এসে বলল,
“আজকে… তুমি ভালো লাগছো।”

মিহা লজ্জায় মাথা নীচু করে দিলো, বলল না কিছু।

সেদিন রাতে মিহার ডায়েরির পৃষ্ঠায় লেখা ছিলো,

“আজও আমি বুঝতে পারছি না ওর কথা, ওর চাহনি, ওর হাসি... কেন সব কিছু এত সহজ মনে হয় না?”

দিন গড়িয়ে যাচ্ছে, কিন্তু মিহার মনে একটু একটা ঝঞ্ঝা উঠছে।
রায়ানের নিঃশব্দ ভালোবাসার মধ্যে সে হারিয়ে যাচ্ছে।

একদিন হঠাৎ মিহা স্কুলে তার ছোট বোন নাহিয়ালকে দেখতে গেলো।
নাহিয়াল মিহাকে বলল,
“আপি তুমি আজকাল অনেক দূরে চলে গেছো, আমি মনে করি তুমি কারো জন্য অপেক্ষা করছো।”

মিহার চোখে অদ্ভুত একটা জল জমে গেলো। সে কিছু বলতে পারল না।

এক বিকেলে রায়ান হঠাৎ মিহাকে ফোন করলো, “আজ সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে ছাদের নিচে আসিস, তোর জন্য একটা গান বাজাব।”

মিহা একটু ভয়ে সম্মতি দিলো।

সন্ধ্যা হল, ছাদের নিচে বাতাসের সুরে রায়ান গিটার বাজাচ্ছে।
তার গলায় গানের লহরী, মিহার হৃদয় ভাসিয়ে দিলো এক গভীর প্রেমের স্রোতে।

গান শেষ হতেই রায়ান বলল,
“তুই হয়তো বুঝবি না, কিন্তু তোর জন্য আমি জীবনের সব হারিয়েও এই গান গাই।”

মিহার চোখ থেকে জলের ধারা চলে এলো। সে অবাক হয়ে চুপচাপ বসে রইল।
130 Views
0 Likes
0 Comments
5.0 Rating
Rate this: