পরিণীতাসক্তি

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
৩৮.
পরদিন সকালবেলা আখি অনেক দেরি করে ঘুম থেকে ওঠে। তার মা তাকে এত দেরি করে উঠতে দেখে একটু অবাক হন। কারণ আখি ঘুম থেকে উঠতে দেরি করলেও কখনো এত দেরি করে না। অফিসটাইম ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এখন উঠলে সে অফিসে যাবে কখন?

- কি রে, এত দেরি করে উঠলি যে। অফিস যাবি না? (আখি)

- না। (আখি)

- কেনো? (আখির মা)

- ভালো লাগছে না। এককাপ কফি দাও তো মা। (আখি)


আখির মা তাকে কফি দিয়ে গেলে সে নিজের ঘরে বসে কফি খেতে খেতে ল্যাপটপে একটু খোঁজাখুঁজি করে এখন কোনো নতুন job পাওয়া যায় কি না। এই করতে করতে সকালটা কেটে গেলো। আখি তার পছন্দমতো কোনো job খুঁজে পেলো না। এতে তার মেজাজটা একেবারে বিগড়ে গেল। সে দিনাকে ফোন করলো।

- হ্যালো (আখি)

- হুম, বল। (দিনা)

- তুই কোথায় আছিস এখন? (আখি)

- অফিসে। কোথায় আর থাকবো। তুই তো আজ এলি না। (দিনা)

- কাজ করছিস? (আখি)

- তুই-ই যখন নেই তখন আমি আর কি কাজ করবো। তোরই তো পিএ আমি। ঐ ম্যানেজার কিছু কাজ দিয়ে গেলো সেগুলো করছি। (দিনা)

- ও। কাজ শেষ হতে কতক্ষণ লাগবে? (আখি)

- আধঘন্টা। কেনো? (দিনা)

- আধঘন্টা পর একটু "খোরাকে"(রেস্টুরেন্টের নাম) আসতে পারবি? (আখি)

- Office hour শেষ না হলে কিভাবে আসবো? (দিনা)

- ম্যানেজারকে আমি বলে দিচ্ছি যাতে তোকে আসতে দেয়। আজকেই তো শেষ সব। একটু সুযোগ নিয়ে নিই। (আখি)

- আচ্ছা। (দিনা)


এরপর আখি সত্যি ম্যানেজারকে কল করে বলে দিনাকে আধঘন্টার মধ্যে অফিস থেকে বের করলো।


৩৯.
দিনা আখির বিপরীতমুখী চেয়ারে বসতে বসতে বললো-

- তো বল, তোর কি খবর। (দিনা)

- ঐ আছি একরকম। (আখি)

- আজকে অফিস গেলি না যে। (দিনা)

- গিয়ে কি করবো, সেই তো কালকের পর থেকে আর যেতে পারবো না। (আখি)

- তো সকাল থেকে বাড়িতে বসে কি করলি? (দিনা)

- নতুন একটা জব খুঁজছিলাম। (আখি)

- মানে তুই ধরেই নিয়েছিস যে তুই আর অফিসে কাজ করতে পারবি না৷ (দিনা)

- আমি লিখে দিতে পারি। অফিস থেকে বের তো আমাকে করে দেবেই, সাথে আবার কোন ক্ষতিপূরণ চায় কিনা দেখ। (আখি)

- তোকে বারবার নিষেধ করেছিলাম। যখন বলেছিলাম তখন শুনিস নি। এখন ঠেলা বোঝ। (দিনা)

- প্লিজ দিনা, আর এ কথাটা তুলিস না। (আখি)

- আচ্ছা তুলবো না। তো কালকে কি অফিস যাওয়ার ইচ্ছে আছে? (দিনা)

- না, ভাবছি কালও যাব না। (আখি)

- না গিয়ে উপায় নেই। কালকে সবার অফিসে আসা বাধ্যতামূলক। (দিনা)

- কেন, কালকে কি আছে? (আখি)

- CEO নাকি ম্যানেজারকে বলেছে উনি কালকে ফিরে আসবেন আর কিছু announce করবেন। যেটা অফিসের প্রতিটি স্টাফকে শুনতে হবে। (দিনা)

- ও। (আখি)


আখির হঠাৎ কি মনে হতে সে লাফ দিয়ে উঠে বলে উঠলো-

- এই এক মিনিট, এক মিনিট,,,, CEO তো এখন ঘরবন্দী হয়ে আছে। তাহলে ম্যানেজারকে কে বললো? (আখি)

- হয়তো দেশে আসার আগে থেকে উনি ম্যানেজারকে বলে রেখেছিলেন। (দিনা)

- হুম, হতে পারে। (আখি)

- জানিস তো, কালকের জন্য বিরাট আয়োজন হচ্ছে। কালকে নাকি মিডিয়াও আসছে। (দিনা)

- বলিস কি, কি এমন হবে কালকে যার জন্য এত তোরজোর? (আখি)

- সেটা তো কালকে গেলেই দেখা যাবে। (দিনা)

- হুম, বস আর CEO কে যদি কালকে ছেড়ে দিতে না পারি তাহলে বিরাট লঙ্কাকাণ্ড বেধে যাবে। (আখি)

- তা তো ছেড়ে দেওয়ার পর এমনিই বাধবে। (দিনা)

- আজকে ঐ দুজন অফিসে গেছে? (আখি)

- হ্যাঁ, এসে একেবাটে ফাটিয়ে দিচ্ছে। জানিস, আজকে না ওদের সত্যিকারের বস আর পিএ লাগছে। মানে গতকালও লাগছিলো। কিন্তু আজকে আলাদা একটা পার্সোনালিটি জন্মেছে মনে হচ্ছে ওদের মধ্যে। (দিনা)

- তাই নাকি? (আখি)


আখি ও দিনার মধ্যে কথোপকথন চলতে থাকে।

৪০.
একটি মার্সিডিজ গাড়ি "খোরাক" রেস্টুরেন্টের সামনে এসে থামে। গাড়ি থেকে একে একে নামে তিনজন মধ্যবয়স্ক মহিলা। যাদের মধ্যে একজন ছিল অবন্তী রওশন অর্থাৎ মাহিরের মা। তার সাথে বাকি দু মহিলাকে দেখেও তার সমবয়সী বলে মনে হয়। তাদের চালচলন দেখেও তাদের খুব আধুনিক ও ধনী মনে হচ্ছে।


- What the hell Rusha,, তুই এত ভালো ভালো ফাইভ স্টার রেস্টুরেন্ট থাকতে আমায় এখানে নিয়ে এলি? (অবন্তী রওশন)

- আরে আমরা তো lunch করলাম ফাইভ স্টার রেস্টুরেন্টে। এখন ড্রিংকসটা এখান থেকে খেলে কি সমস্যা? (রুশা সেন)

- সমস্যা এটাই যে এটা একটা চিফ রেস্টুরেন্ট। (অবন্তী রওশন একটু নাক ছিটকে বললেন)

- তুই না বড্ড বেশি কথা বলিস অবন্তী। অস্ট্রেলিয়ার দামী দামী রেস্টুরেন্টে খেতে খেতে তোর অভ্যেসটা খুব খারাপ হয়ে গেছে। (আয়রা খন্দকার)

- সেটা তে আছেই। তোকে আমি বললাম না ফাইভ স্টার রেস্টুরেন্টের লাচ্ছি ছাড়া কোনে ড্রিংসই ভালো নয়। আর তুই তো সেটা খাবি না৷ সাধে কি আমি তোকে এখানে নিয়ে এলাম? (রুশা সেন)

- এখন কথা না বলে ভেতরে চল। (আয়রা খন্দকার)

- But....... (অবন্তী রওশন)

- তুই কোনো কথা বলবি না অবন্তী। চল ভেতরে চল। (রুশা)


অবন্তী রওশনকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও একপ্রকার বাধ্য হয়েই ভেতরে যেতে হলো। তারা তিনজন কোণার একটি টেবিলে বসে পড়ে। কিছু ড্রিংস অর্ডার দেয় তারা। বেশ কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের খাওয়া শেষ হয়ে যায়। তাদের ঠিক সামনের টেবিলেই দিনা ও আখি বসে ছিলো। তাদের খাওয়া হয়ে গেলে আখি হাতে একটি কোকাকোলার কাপ নিয়ে উঠে যাওয়ার জন্য উল্টোদিকে ফিরে। অবন্তী রওশন সে সময় কোনো কারণে আখির টেবিলের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আখি পেছনে ঘুরে দাঁড়াতে তার সাথে অবন্তী রওশনের ধাক্কা লাগে আর সমস্ত কোক তার দামী শাড়ির ওপর পড়ে যায়। এতে তার শাড়িটা একেবারে নষ্ট হয়। তার মাথায় আগুন ধরে যায় আর তিনি গর্জে উঠে বলেন-


- What nonsense!!! (অবন্তী রওশন)


আচমকা এমন হওয়ায় আখি কিছুটা হকচকিয়ে যায় আর বলে-

- আব...... Sorry aunt, actually আমি দেখতে পাইনি। (আখি)

- Sorry বললেই হলো? চোখ কোথায় থাকে তোমার? (অবন্তী রওশন চিল্লিয়ে)

- আসলে আপনি হুট করে চলে এলেন.... (আখি)


অবন্তী রওশনের চেঁচামেচির শব্দে আয়রা খন্দকার এবং রুশা সেন সেখানে চলে আসেন।

- কী হয়েছে অবন্তী? (আয়রা খন্দকার)

- দেখ না, এই মেয়েটা আমার শাড়িতে কফি ফেলে এটা পুরো নষ্ট করে দিলো৷ (অবন্তী রওশন)

- এই মেয়ে, চোখে দেখতে পাও না? (রুশা সেন)

- I'm extremely sorry aunt. (আখি)

- তোমার সরি বলাতে আমার শাড়িটা আগের মতো হয়ে যাবে? কত দাম জানো এটার? দেখে তো মিডলক্লাস ফ্যামিলির মনে হচ্ছে। তোমার কিডনি বিক্রি করেও এই শাড়ির দাম মেটানো যাবে না। তোমাদের rich people দেখলেই গা জ্বলে তাই না? যেয়ে চেয়ে আমাদের গায়ে পড়তে আসো। (অবন্তী রওশন)

- আরে মিডলক্লাস ফ্যামিলির মেয়ে বুঝিস না? বড়লোক দেখলে তো গায়ে পড়তে আসবেই। (আয়রা)


আখির মেজাজটা এবার বিগড়ে গেলো। সে তাও ভদ্রতার সহিত নমনীয় কন্ঠে বললো-

- Sorry aunt, কিন্তু আপনারা আমার ফ্যামিলিকে এর মধ্যে কেন টানছেন? আমাকে যা বলার বলুন, but আমার পরিবারকে নিয়ে একটা কথা বললে কিন্তু আমি চুপ করে থাকবো না। (আখি)

- How dare you? তোমার ফ্যামিলি তোমাকে এ শিক্ষা দিয়েছে? তুমি আমাকে শাসাচ্ছো? তোমার সাহস কত? তুমি জানো আমি কে? আমি...... (অবন্তী রওশন)


অবন্তী রওশন কিছু বলার আগেই আখি বললো-

- আপনি যেই হোন না কেনো, সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। আপনি অযথা পাবলিক প্লেসে আমার পরিবারকে অপমান করছেন। আমার ফ্যামিলির শিক্ষা নিয়ে বিচার করছেন। একটা কথা শুনে রাখুন, আমার ফ্যামিলি বড়দের সম্মান করা শিখিয়েছে বলেই আমি এখন পর্যন্ত আপনার সাথে ভালো ব্যবহার করছি। আর আপনারা কি মনে করেন নিজেকে? বড়লোক বলে আমাদের স্হান কি নিজেদের জুতোর তলায় বলে মনে করেন? (আখি)


- তুমি নিজে আমার ফ্রেন্ডের গায়ে কোক ফেলে এখন বড় বড় কথা বলছো? (রুশা)

- কোকটা আমি তো ইচ্ছে করে ফেলিনি। আমি যখন উঠছিলাম, তখনই ওনার সতর্ক হয়ে যাওয়া উচিত ছিলো। আমি তো আর সামনে বসে পেছনের দিকে তাকাবো না। আর তাছাড়াও যা হয়েছে, আমি সেটার জন্য বারবার ওনার কাছে ক্ষমা চেয়েছি। কিন্তু আপনারা অযথা এটা নিয়ে সিনক্রিয়েট করছেন। (আখি)

- You......... (অবন্তী রওশন)

- আখি চল এখান থেকে। ঝামেলা করিস না। (দিনা)


আখি একবার অবন্তী রওশনের দিকে তাকিয়ে দিনার সাথে চলে গেলো।

- বেয়াদব মেয়ে। একটুও manners জানে না। (অবন্তী রওশন)

- মিডলক্লাস ফ্যামিলির মেয়ে, এমনই তো হবে। বাদ দে। (আয়রা)



অন্যদিকে....

- ওখান থেকে নিয়ে এলি কেন আমাকে? আরো কিছু কথা শোনাতাম। সাহস তো কম না ঐ মহিলার। আমার ফ্যামিলি নিয়ে বাজে কথা বলে... (আখি)

- আচ্ছা ওনাদের সাথে তর্ক করে কি লাভ বলতো? তার থেকে ভালো নিজেকে অন্যের সামনে খারাপ না করে সরে যাওয়া। (দিনা)

- তাই বলে প্রতিবাদ করবো না? (আখি)

- তুই প্রতিবাদেে জন্য একটা কথা বললে ওনারা দশটা কথা শুনিয়ে দেবেন। তাহলে দরকার কি বল। এখন চল। (দিনা)

৪১.
সকাল থেকে আজকে অফিসে সবার মধ্যে ব্যস্ততা দেখা যাচ্ছে। কেউ বসে নেই। সবাই এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই CEO তার পরিবারকে নিয়ে অফিসে চলে আসবেন। মাহির ও দীপ্ত হয়তো তার কিছুক্ষণ আগেই চলে আসবে। অফিসের সব স্টাফরা ইতিমধ্যে চলে এসেছে। আখি অফিসে কেবল ঢুকেছে, তখনই ম্যানেজার তাকে দেখতে পেয়ে তার কাছে ছুটে আসে।

- আরে ম্যাডাম, আপনি এসে গেছেন। যাক ভালো করেছেন। আপনি প্লিজ একটু এদিকে আসবেন? মানে আমি আসলে বুঝতে পারছিলাম না স্যারের নতুন কেবিনে আর স্টেজে কোন রংয়ের ফুল রাখবো। আপনি তো স্যারের গার্লফ্রেন্ড। আপনি নিশ্চয়ই জানেন ওনার কি পছন্দ অপছন্দ। (ম্যানেজার)

- হ্যাঁ... মানে, একটা রংয়ের ফুল রেখে দিন না। এত বেশি কিছু করার কি দরকার আছে? (আখি)

- No, no madam, CEO স্যার আমাকে বারবার করে বলে দিয়েছেন যে আমি যেন মাহির স্যারের জন্য আলাদা একটা বড় কেবিন রেডি করি। আর সেখানে সবকিছু যেন স্যারের পছন্দমতো থাকে। তাই আমি আরকি আপনাকে জিজ্ঞেস করছিলাম। আর ফুল যখন রাখতেই হবে, তখন স্যারের পছন্দমতো ফুল দেয়াই ভালো তাই না? (ম্যানেজার)

- আচ্ছা সাদা ফুল রাখুন। (আখি)

- Okey madam, আর মিটিংয়ের সময় কিন্তু আপনি স্যারের পাশে থাকবেন ম্যাডাম। (ম্যানেজার)

- ম্যানেজার সাহেব, আমি আপনার স্যারের বউ নই। আর আমায় কি করতে হবে না হবে তা আমি জানি। আপনাকে বলে দিতে হবে না। এখন এখানে দাঁড়িয়ে অযথা সময় নষ্ট না করে যান, কাজে যান। (আখি)

- Okey madam. (ম্যানেজার এই বলে মুখ চুন করে চলে গেলো)


ম্যানেজার চলে যাওয়ার পরপরই দিনা এসে হাজির হয়।

- অসহ্য... (আখি বিড়বিড় করে বলে)

- কি বলছিলো ম্যানেজার? (দিনা)

- ধূর, ওর ফালতু কথা বাদ দে তো। বলে কিনা, স্যার এলে আপনি স্যারের পাশে থাকবেন। কেন রে, তোর স্যার কি আমাকে মাসে বেতন দিয়ে রেখেছে তার পাশে দাঁড়ানোর জন্য? (আখি)

- আচ্ছা, আচ্ছা, Relax. (দিনা)

- আসল মাহির এসেছে? (আখি)

- জানি না। দেখতে হবে। (দিনা)


আখি এমন সময় তার একটু দূরে তাকিয়ে দেখে মাহির আসছে। তার পরণে ফর্মাল একটি শাদা শার্ট, যেটি ইন করা ও হাতা কনুই পর্যন্ত গোটানো, গলার কাছের দুটো বোতাম খোলা, চোখে সানগ্লাস। চুলগুলো যদিও এলোমেলো, কিন্তু এই গেটআপের সাথে বেশ মানানসই। পকেটে একহাত ঢুকিয়ে অন্যহাতে কালো সুটটি ঝুলিয়ে বেশ গম্ভীর মুখে এদিকেই আসছে মাহির। কি মারাত্মক সুদর্শন লাগছে তাকে! ফর্মাল লুকেও কোনো পুরুষকে এতটা আকর্ষণীয় লাগতে পারে বুঝি!

আখি মুগ্ধতার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসার সাথে সাথে মাহিরের উপস্থিতিতে বিস্মিত হয়ে যায়। দিনাকে একটু ঠেলে বলে-

- এই দিনা, এটা ঐ মাতালটা না? (আখি মাহিরকে দেখিয়ে)

- হ্যাঁ রে, পাশে ওর চামচা ঐ গাঁজাখোরও আছে দেখছি। (দিনা)


আখি এতটাই জ্ঞানশূন্য হয়ে মাহিরের দিকে তাকিয়ে ছিলো যে এতক্ষণে সে খেয়াল করলো মাহিরের একপাশে দীপ্ত ও একপাশে ম্যানেজার আছে। ম্যানেজার কিছু বলছে, আর মাহির মাঝেমধ্যে মাথা নাড়াচ্ছে। কখনো তার ঠোঁট নড়তেও দেখা যাচ্ছে। তবে সবকিছুর মধ্যেই কোথাও যেন আলাদা এক ধরনের গাম্ভীর্যতা মিশ্রিত।

- ওদের তো এখানে থাকার কথা নয়। ওরা এখানে কি করছে? (আখি)

- আরে চল গিয়ে কথা বলি। নাহলে কি থেকে কি হয়ে যাবে। (দিনা)


আখি তাদের একদম সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। মাহিরসহ ম্যানেজার ও দীপ্তর পদচারণা থেমে গেলো সেখানে। ম্যানেজর কিছু একটা বলছিলো, সে-ও থেমে গেলো।

- ম্যানেজার সাহেব, আপনি একটু ওদিকে যান তো। (আখি)


ম্যানেজার মেকি হাসি দিয়ে বললো-

- আচ্ছা ম্যাডাম। (ম্যানেজার)


ম্যানেজার সবার অলক্ষ্যে আখিকে মুখ ভেঙচি দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো। আখি মাহিরের দিকে তাকাতে সবার প্রথমে তার নজর পড়ে মাহিরের অর্ধউন্মুক্ত ফর্সা বুকের ওপর ছোট ছোট লোমগুলোর ওপর। সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নেয় সে। নতচোখেই দাঁতে দাঁত চেপে বলে-

- ফর্মালিটি কি জানো না? শার্টের ওপরের দুটো বোতাম খোলা কেন? (আখি)


মাহির আখির এমন আচরণের কারণ আন্দাজ করলেও একটু সন্ধিহান ছিলো। কিন্তু আখির কথায় তার সন্দেহ একদম দূর হয়ে যায়। সে বাঁকা হেসে বলে-

- শার্টের হাতা গুটিয়ে রাখাও ইনফর্মালিটির মধ্যে পড়ে। সেটা না বলে শুধু শার্টের বোতাম খুলে রাখার বিষয়টা বলার কারণ? (মাহির)

- কারণ তুমি মনে করো, তোমাকে দেখতে কুল লাগছে। কিন্তু আসলে অভদ্র লাগে দেখতে। (আখি)


সবসময় কথার প্রেক্ষিতে ঠেস দিয়ে কথা মাহিরই অপরকে বলে এসেছে। কিন্তু আজ বিপরীতমুখী ঘটনা হওয়ায় মাহির বেশ অসন্তুষ্ট ও বিরক্ত হলো মনে মনে।

- এতটা বেশিও কিছুও হয়ত করিনি যে অভদ্র তোকমা লাগিয়ে দিচ্ছ। আর ফর্মালিটি অফিস টাইমে মেন্টেইন করতে হয়। (হাতঘড়ির দিকে একঝলক তাকিয়ে) আর অফিস টাইম শুরু হতে এখনো তেরোমিনিট বাকি আছে। যদিও তারপরও আমি এভাবেই থাকবো। কারণ কিছু কিছু সময় আমি নিজের নিয়মে চলি। এটা তার মধ্যে একটা। (মাহির)


আখি প্রসঙ্গ পাল্টে বললো-

- এখানে কী করছো তুমি? (আখি)

- আমি এখানে থাকবো না তো কে থাকবে? (মাহির)

- বস কোথায়? (আখি)

- যেখানে থাকার কথা সেখানে। (মাহির)

- ফাজলামো হচ্ছে? আমি তোমায় বলিনি বসকে ছেড়ে দিতে? (আখি)

- হ্যাঁ, ছেড়ে দিয়েছি তো। আর সে অফিসে এসেও গেছে। (মাহির)

- তাহলে তুমি কি করছো? (আখি)


মাহির আখির দিকে একটু ঝুঁকে তার মাথায় নিজের হাত রেখে বাঁকা হেসে বলে-

- এই ছোট্ট মাথায় এত চাপ দিও না। সময় হলে সব জানতে পারবে। (মাহির)


মাহির এরপর সেখান থেকে চলে গেলো আর আখি বোকার মতো ফ্যালফ্যাল করে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।


৪২.
কিছুক্ষণের মধ্যেই CEO-র গাড়ি অফিসের সামনে এসে থামে। মাহির, দীপ্ত ও আরও কিছু স্টাফ তাকে রিসিভ করতে যায়। আরিফ রওশন, অবন্তী রওশন, অঙ্কিতা রওশন তিনজনে গাড়ি থেকে নামেন। সাথে সাথে মিডিয়া একেবারে ছেঁকে ধরে তাদের। ম্যানেজার কোনোমতে তাদের সামলে সবাইকে ভেতরে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়।

আখি সেখানে যায় নি। সে নিজের কেবিনে গালে হাত দিয়ে বসে আছে। মাহির যে কি করছে তার কিচ্ছু মাথায় ঢুকছে না। ছেলেটাও দিনদিন কেমন জটিল হয়ে যাচ্ছে। তার কথা শুনলে মনে হয় সে-ই কোন রহস্য লুকিয়ে রেখেছে। কিন্তু কি সেটা? চিন্তায় চিন্তায় তার মাথা ব্যথা শুরু হয়ে গেছে। পাশে থাকা কফির মগটিতে একবার চুমুক দিয়ে মাথা চেপে ধরে সে। এমন সময় দিনা তার কেবিনে আসে এবং বলে-

- কি রে, তুই স্যারকে রিসিভ করতে যাসনি? (দিনা)

- ওখানে গিয়ে কি আমি ঘাস কাটবো? আমি মরছি আমরা জ্বালায়....... (আখি)

- এখন এত চিন্তা করছিস কেন, এখন বলবি না- Chill baby. (দিনা)

- আমার সব ওলট-পালট হয়ে যাচ্ছে দিনা। ঐ উজবুক দুটো যে কি করে রেখেছে কে জানে। আবার তখন বললো এই ছোট্ট মাথায় এত চাপ নিও না। আমি ছোট? কোথাকার কে এসে বলে আমার মাথায় এতসব ঢুকবে না। (আখি)


দিনা কিছু বলতেই যাচ্ছিলো কিন্তু তার আগেই অফিসের পিওন তপু এসে বললো-

- ম্যাডাম, আপনারে ম্যানেজার স্যার ঐ announcement এর জায়গায় যাইতে কইসে। (তপু)

- না গেলে হবে না? (আখি)

- অন্য কেউ না যাইতে পারে। কিন্তু আপনারে যাইতেই হইবো। ম্যানেজার সাহেব কড়া কইরা বইলা দিছে। (তপু)


আখি একটি ছোট নিঃশ্বাস ফেলে বললো-

- আচ্ছা তুমি যাও, আমি আসছি। (আখি)


তপু চলে যাও কিছুক্ষণের মধ্যেই আখি announcement করার জন্য নির্ধারিত সজ্জিত জায়গাটিতে যায়। সকাল থেকে চিন্তায় চিন্তায় আর এদিকে আসা হয়নি ওর। এখনই প্রথমবার এলো। সে দেখলো তার কথা মতই জায়গাটা সম্পূর্ণ সাদা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। দেখতে অবশ্য মন্দ লাগছে না। এটি অফিসের পাশেরই একটি জায়গায় করা হয়েছে। এর এক পাশে বিশাল স্টেজ সাজানো হয়েছে। আখি আশপাশে তাকিয়ে দেখলো জায়গাটা পুরোটাই মিডিয়া ঘিরে রেখেছে। তারা ওঁৎ পেতে আছে কখন সবাই আসবে আর তারা ক্যামেরা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে তাদের ওপর। আখির মনে প্রশ্ন জাগলো-CEO কি এমন ঘোষণা করবেন যার জন্য এত এলাহি কাণ্ড? তার জানামতে CEO যে স্বপরিবারে দুদিন আটক ছিলেন, তার কোনো রেশই দেখা যাচ্ছে না। এটা দেখেই সে বেশ অবাক হলো।


কিছুক্ষণের মধ্যেই পেছন দিকে খুব শোরগোল শোনা গেলো। মিডিয়ার লোকজন চেচামেচি করছে৷ বোঝা গেল সকল অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে CEO তার পরিবারের সাথে আসছেন। এত ভিড়ের মধ্যে আখি আর সেদিকে যাওয়ার আগ্রহ দেখালো না। সে পাশেরই একটা টেবিলে বসে পড়ে।


কিছুক্ষণের মধ্যেই আরিফ রওশন সপরিবারে স্টেজে উঠলেন। তার একপাশে মাহির এসে দাঁড়ালো, অন্যপাশে দাঁড়ালেন অবন্তী রওশন, তারপর অঙ্কিতা রওশন। আর দীপ্ত এসে মাহিরের পাশে দাঁড়ালো। ইতিমধ্যে মিডিয়ার ফ্ল্যাশলাইট দিয়ে স্টেজটি আলোকিত হওয়া শুরু হয়েছে।

দিনা ও আখি অবাক হয়ে মাহির ও দীপ্তর দিকে তাকিয়ে আছে। তারা ভেবে পাচ্ছে না কি হচ্ছে? আর সিইওর সাথে ওদের সম্পর্ক কী? তারা যখন একটু ভালোভাবে অবন্তী রওশনের দিকে তাকালো তখন তারা একপ্রকার আকাশ থেকে পড়লো।

- এই দিনা, এটা ঐদিনকার আন্টিটা না, যার সাথে আমাদের ঝগড়া হলো? (আখি)

- তাইতো মনে হচ্ছে। ইনি এখানে কেন? (দিনা)

- আমি আর ভাবতে পারছি না। কি হচ্ছে এসব? (আখি)


তাদের ভাবনার মধ্যে ছেদ ঘটিয়ে আরিফ রওশন মাইক হাতে বলে উঠলেন -

- Hello ladies and gentleman, আশা করি সবাই ভালো আছেন। আপনারা সকলেই জানেন যে আমি আজকে একটি বিশেষ ঘোষণা করার জন্য এই অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছি। এখানে আমাদের অফিসের স্টাফ, শহরের নামকার অনেক বড় বড় ব্যবসায়ী অনেকেই আছেন। আমার মনে হয়েছে যে আজকে আমি যে অ্যানাউন্সমেন্ট করব তা আপনাদের সকলের জানা উচিত। তাই আপনাদেরকে এখানে ডাকা। তবে সবার আগে আপনারা যারা আজ শত ব্যস্ততার মধ্যে এখানে এসেছেন, তাদেরকে আমি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

মূল বিষয়বস্তুতে আসা যাক, তবে তার আগে আমি আমার family members দের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিই। (অবন্তী রওশনের উদ্দেশ্যে) She is my dearest wife, Abonti Raoson. (মাহিরের উদ্দেশ্যে) he is my one and only son, and the heir of Raoson Enterpris, Mahir Raosaon. (অঙ্কিতা রওশনের উদ্দেশ্যে) She is the wife of my brother who has dead five years ago, Ankita Raoson (দীপ্তর উদ্দেশ্য) and he is her son Dipto Raoson.  (মাহিরের বাবা)


আখির মুখ রীতিমতো হাঁ হয়ে গেছে। সে আরিফ রওশনের কথা বিশ্বাসই করতে পারছে না। আখি পাশে তাকিয়ে দেখল দিনাও তার মতন হাঁ করে স্টেজের দিকে তাকিয়ে আছে।


চলবে...............


এরপরের পর্বগুলোতে আরো মজা পাবেন।
প্রথমে হাসবেন তারপর কাঁদবেন।

80 Views
3 Likes
1 Comments
5.0 Rating
Rate this: