৩৪.
আখি মাহিরের ওপর বেশিক্ষণ জোর খাটাতে পারলো না। সে ক্রোধে মাহিরের হাত ধরে টানতে টানতে মাহিরের কেবিনের দিকেই যাচ্ছিলো। কিন্তু হঠাৎ মাহির আখি যে হাতটি ধরে ছিলো, সেই হাতটা সামান্য ঘোরাতেই আখির হাত ছুটে গেলো। আকস্মিক এমন হওয়ায় সে পড়ে যেতে যেতে দেওয়াল ধরে দাঁড়ালো। তারপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মাহিরের দিকে ঘুরে বললো-
- অফিসে এসেছ একঘন্টাও হয়নি, এর মধ্যেই জোর দেখাতে শুরু করে দিলে? (আখি)
মাহির নিজের গম্ভীর শান্ত দৃষ্টি আখির দিকে নিক্ষেপ করলো। তারপর পকেটে দু'হাত ঢুকিয়ে ঠান্ডা গলায় বললো-
- কি হয়েছে? এভাবে টানছিলে কেনো? (মাহির)
মাহিরের আচরণে আখির মাথায় দপ করে আগুন জ্বলে ওঠে। সে রে রে করে বলে-
- কি হয়েছে? কি হয়েছে না? তোমাকে আমি ওখানে গিয়ে কি বলতে বলেছিলাম? তুমি কি বললে? সেগুলো তো বললেই না, উল্টে কি সব বলে জুনিয়র এমপ্লয়িদের চলে যেতে বললে আর আমাকেও যেতে হলো। কি করলে তুমি আধ ঘন্টা ধরে সবার সাথে? (আখি)
- একজন বস তার এমপ্লয়িদের সাথে কি করবে... কাজ নিয়ে কথা বললাম। (মাহির)
- তাই? তুমি বিজনেসের কিছু বোঝো? (আখি)
- সেটা তোমার না বুঝলেও হবে। (মাহির)
- তোমার মনে হচ্ছে না তুমি একটু বেশি বেশি করছো? (আখি)
- একদমই না, অফিসের বস কেমন হয় সেটা আমার তোমার থেকে ভালো জানা আছে। (মাহির)
- তুমি কি আসলে এখানকার বস? (আখি)
- এখন তো বস। (মাহির)
এমন সময় ম্যানেজার কেবিনে প্রবেশ করে। আখি মাহিরের থেকে চোখ নামিয়ে নেয়। মাহির নিজের চেয়ারে গিয়ে বসে পকেট থেকে ফোন বের করে সেখানে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
- আব.....সরি স্যার, একটু disturb করলাম। (ম্যানেজার)
- কী বলবেন বলুন। (মাহির ফোনে চোখ রেখেই)
- আসলে স্যার, আপনার একটা সাইন লাগতো এখানে। (ম্যানেজার)
আখি বিস্ফোরিত চোখে একবার ম্যানেজারের দিকে এবং একবার মাহিরের দিকে তাকালো। মাহির ফোন থেকে চোখ সরালো ম্যানেজারের দিকে।
- এটা কিসের ফাইল? (মাহির)
- আগামীকাল থেকে আমাদের ৭০ লাখ টাকার একটা ড্রিল সাইন হতে যাচ্ছে, সেটার। (ম্যানেজার)
- আচ্ছা দিন, আমি দেখে সাইন করে দিচ্ছি। (মাহির)
আখি চোখ দিয়ে মাহিরকে সাইন করতে নিষেধ করে। কিন্তু, কে শোনে কার কথা। মাহির পেপারটি কিছুক্ষণ দেখে সেখানে সাইন করে দেয়। ম্যানেজার রুম থেকে চলে যায়।
- এই, তুমি এটা কি করলে? এখন যদি ধরা পড়ে যাই। (আখি)
- কিছু হবে না। আমি ঐ মাহিরের সাইন দেখেছি। ওটা নকল করতে পারি। (মাহির)
- সত্যি পারো তো? (আখি)
- তো তোমার কি মনে হচ্ছে আমি মিথ্যে বলছি? (মাহির)
মাহির আবার ফোনে মনোযোগ দিলো। আখি তার এমন অ্যাটিটিউট দেখে চবার রেগে গেলো। মাহিরকে কিছু না বলে সে হনহন করে চলে গেলো সেখান থেকে।
৩৫.
আখি সেদিন অফিস করে বাড়ি ফেরে। তবে তার কিছুই ভালো লাগছিলো না। তার মনটা কেমন খচখচ করছিলো। তার মনে হচ্ছিল, যা হচ্ছে তা ঠিক হচ্ছে না। তার নিজের কাছে নিজেকে দোষী মনে হচ্ছিল। তাই সে তার সবসময়ের সমাধান তার বাবার কাছে গেলো। গিয়ে দেখলো তার বাবা কাজ করছে। তার সামনে নানা ধরনের কাগজপত্র ছড়ানো ছিটানো রয়েছে।
- বাবা, কি করছো তুমি? (আখি)
- এইতো মা, একটু কাজ করছিলাম। (আখির বাবা)
- উফ্, সারাদিন শুধু কাজ আর কাজ। এখন রাখো তো এসব। (আখি)
আখি গিয়ে তার বাবার সব ফাইল তার সামনে থেকে সরাতে লাগলো। এতে তার বাবা বললো-
- আরে, কি করছিস? আমার কাজ আছে তো। (আখির বাবা)
-তোমার সব কাজ এখন বাদ দাও। আমিও তো কাজ করি, তাও তোমার জন্য তো সময় রাখি। আর তুমি, প্রতিদিন তোমায় আমাকে টেনে নিয়ে যেতে হয়। (আখি)
- আচ্ছা, বল কি বলবি। (আখির বাবা)
- আমার কিছু ভালো লাগছে না বাবা, সবকিছু কেমন অগোছালো লাগছে। (আখি)
- কেন মা, কি হয়েছে? (আখির বাবা আখির মাথায় হাত বুলিয়ে)
- জানি না। তবে আমার মনটা কেমন জানি খচখচ করছে। (আখি)
- বুঝেছি, তুই নিশ্চয়ই কারও সাথে কোনো দুষ্টামি করেছিস। (আখির বাবা)
- হুম, ব্যাপারটা অনেকটা সেরকমই। (আখি)
- দেখ মা, তুই কি করেছিস আমি জানিনা। আর জানতেও চাইনা। শুধু তোকে বলবো, তুই যদি কোন ভুল করে থাকিস, তাহলে তা শুধরে নে। নিজের স্বার্থের জন্য কখনো অন্যকে কষ্ট দিস না। (আখির বাবা)
- হুম। (আখি)
আখি এরপর তার রুমে চলে গেল। সে দরজা বন্ধ করে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো। আর ভাবতে লাগলো।
- আমি যেটা করছি, সেটা কি আসলে ঠিক হচ্ছে? আমি তো indirectly নিজের জন্য অফিসের ক্ষতি করছি। না, আমার চাকরি গেলে যাক। কিন্তু অফিসের কোনো ক্ষতি আমি হতে দেবো না। এই তামাশা আমি কালকেই বন্ধ করে দেবো। (আখি)
সে চটজলদি দিনাকে কল করে।
- হ্যালো.... (আখি)
- হুম, বল। কেন ফোন করলি? (দিনা)
- তুই-ই ঠিক ছিলিস রে। আমার নিজের স্বার্থের জন্য বসকে কিডন্যাপ করে অন্য একজনকে বস সাজিয়ে অফিসে পাঠানো উচিত হয়নি। (আখি)
- হঠাৎ এই কথা বলছিস? (দিনা)
- আমি ভাবছি এই তামাশাটা এখানেই বন্ধ করে দেবো। (আখি)
- কিভাবে? (দিনা)
- আমি এক কাজ করি, আমি আমাদের আসল বসকে ছেড়ে দিতে বলি। আর মাদালকে আর ঐ দীপ্ত না কি নাম, ওদের সবার সামনে সবটা খুলে বলতে বলি। তাহলেই সব ঝামেলা শেষ হয়ে যাবে। (আখি)
- ঝামেলা তো শেষ হবে। কিন্তু তোর কি মনে হয়, বস আর CEO স্যার এরপর তোকে আর অফিসে রাখবেন? (দিনা)
- না রাখলে না রাখুক। তাও কারো কোন ক্ষতি না হোক। আমি চাইনা আমার জন্য অফিসের বা অন্য কারো কোনো ক্ষতি হোক। আর তাছাড়াও আমি ঐ বসের গার্লফ্রেন্ড সাজার নাটক করতে করতে tired হয়ে গেছি। এভাবে থাকা যায় না দিনা। (আখি)
- যা বলছিস ভেবে বলছিস তো আখি? এরপর কিন্তু তোর আর চাকরি থাকবে না। (দিনা)
- আমি চাকরি ছেড়ে দেওয়ার জন্য ready আছি। (আখি)
- (দীর্ঘশ্বাস ফেলে) ঠিকাছে। যা ভালো বুঝিস কর। (দিনা)
- হুম। (আখি)
৩৬.
মাহির খালি গায়ে পুশআপ দিচ্ছে জীমরুমে। তার পেশিবহুল সুঠাম দেহ দিয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ছে। জীমরুমের আলোকছায়ায় অবস্থানরত এ মাহিরের শরীরটা যেন কোনো ভাস্করের নিখুঁত সৃষ্টি। এ সময় তার পেশিগুলো প্রতিটি মুহূর্তে জেগে ওঠে। বক্ষদেশের দৃঢ়তা, বাহুর স্ফীত রেখা, আর পিঠের ছায়াময় গভীরতা এক অদ্ভুত সম্মোহনের রেখাচিত্র এঁকে দেয়।
তার ত্বক ঘামে ভেজা যা আদ্র, ঝকঝকে, আর তীব্রভাবে স্পর্শযোগ্য। ঘামের বিন্দুগুলো তার ঘাড় বেয়ে নামছে বুকে, বুক থেকে পেটের উপর দিয়ে সিক্স প্যাকের ঘূর্ণি ছুঁয়ে নিচে গড়িয়ে পড়ছে... যেন প্রতিটি ফোঁটা নিজের মতো করে পথ খুঁজে নিচ্ছে সেই শরীরের উষ্ণ ভূমিতে।
তার পেটের উপরকার রেখাগুলো এমনভাবে খচিত, যেন সেগুলো কোনো পুরাতন যুদ্ধের চিহ্ন—অথচ যৌবনের অহঙ্কারে দীপ্ত। কোমরের পাশে সামান্য গর্ত, আর তার ঘামজল মেখে থাকা বুক যেন জ্বলন্ত কোনো আরাধ্য শিলাখণ্ড। এ কোনো নারীর দৃষ্টিতে পড়লে সম্মোহিত হওয়া ছাড়া তার কোনো উপায় নেই।
মাহির তার শেষ পুশআপটি দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। দেওয়ালে ঝুলিয়ে রাখা একটি টাওয়েল নিয়ে গলার দিকটা মুছতে থাকলো। এমন সময় দীপ্ত হাতে একটি কোল্ড ড্রিংকস এর প্যাকেট নিয়ে জীমরুমে প্রবেশ করলো। একটি বিনব্যাগের ওপর ধপ করে বসে বললো-
- কি ব্যাপার ব্রো? অসময়ে জীম করছিস? (দীপ্ত)
- রাগটাও অসময়েই উঠেছে। আর তুই জানিস আমি রাগ কীভাবে কন্ট্রোল করি, তাই। (মাহির)
- তো কি এমন কারণে তোর রাগ উঠেছে যে সেটা কন্ট্রোল করার জন্য জীম করতে হচ্ছে? এক মিনিট, এক মিনিট, তোর রাগের কারণটা কি ঐ আখি? (দীপ্ত)
মাহির দীপ্তের এই প্রশ্নের উত্তর দিলো না। তার হাত থেকে কোল্ড ড্রিংকস এর ক্যানটি নিয়ে সেখান থেকে এক ঢোক গিলে পাশে রাখা সোফায় হাত-পা ছড়িয়ে ধপ করে বসে পেছনে মাথা এলিয়ে চোখ বন্ধ করলো। দীপ্ত মাহিরের নিরবতাকে সম্মতির লক্ষ্মণ ভেবে নিলো।
- তোকে আমি বলেছিলাম, মেয়েটার বিরুদ্ধে কোনো স্টেপ নে। তা না করে তুই ওকে লাই দিয়ে ওপরে ওঠাচ্ছিস। (দীপ্ত)
- এতটা ওপরে ওঠাব যে একটা সময় হঠাৎ ওর হাত ছেড়ে দিলে যেন মাটিতে পড়ে গিয়ে ওর শরীরের সমস্ত হাড়গোড় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। (মাহির)
মাহির এতক্ষণ ওভাবে বসেই কথাগুলো বলছিলো। এবার সোজা হয়ে বসে সে বলা শুরু কর-
- You know দীপ, আমার সবচেয়ে বেশি বিরক্ত লাগছে কোন বিষয়টা? অফিসের সবাই জানে আমর একটা গার্লফ্রেন্ড আছে। Like... How disgusting! (মাহির চোখ মুখ কূচকে বলে)
- তোর প্রবলেম তারমানে আখি নয়, তোর প্রবলেম এটাতে যে লোকে জানে You have a girlfriend. (দীপ্ত)
- I hate love Deep, I just hate this stupidity named love. (মাহির)
মাহিরের চোখে যেন অন্যরকম কিছু একটা দেখা গেলো। দীপ্ত কথা ঘোরাতে বললো-
- বাদ দে। কিন্তু আজকে যা হলো, আমার এখনও সব কেমন সিনেমার মতো লাগছে। ভাগ্যিস তুই মেয়েটার কথা শুনে ফেলেছিলিস। (দীপ্ত)
- (তাচ্ছিল্য হেসে) তোর কি মনে হয়, আমি যদি না-ও শুনতাম, তাহলে আজকে এখানে থাকতাম না? আমাকে কিডন্যাপ করা এত সোজা? ঐ পিচ্চি মেয়ে কিনা করবে আমাকে কিডন্যাপ। (মাহির)
- তাও ঠিক। কিডন্যাপার তোর জিম করা বডি দেখেই উল্টো পালাতে। (দীপ্ত)
- তবে একটা জিনিস দেখেছিস? মেয়েটা কারো ক্ষতি চাইছে না। কিন্তু ও নিজে ফাঁসতে চাইছে না। (মাহির)
- কীভাবে? (দীপ্ত)
- ও আমাকে মানে মাহিরকে কিডন্যাপ করতে বলেছিলো ঠিকই কিন্তু বলেছিলো, আমি যেন ওকে শুধু ঘরবন্দি করে রাখি। ওর কোন ক্ষতি যেন না করি। তারপর যখন তুই আমাকে ফাইলগুলো দিলি, ও তখন ক্ষেপে উঠলো। ওর ধারণা ছিল যে আমরা ফাইলগুলো ওলটপালট করে দেবো। আমি যখন পেপারে সাইন করলাম, তখন ও আমার উপর রেগে গিয়েছিলো। তার মানে ও অফিসের ক্ষতি চাচ্ছে না। (মাহির)
- হুম, ওর সাথে যে মেয়েটি ছিলো, সে মেয়েটা কি যেন নাম,,,,,,হ্যাঁ, দিনা, ওকে দেখেও তো ভালো মনে হচ্ছিলো। ও আখিকে এসব করতে বারবার মানা করছিলো। (দীপ্ত)
- হুম, তারমানে এটা বোঝা যায় যে ওদের মনটা ভালো। ওরা শুধু বাঁচার জন্য এসব করছে। (মাহির)
- আখি মেয়েটার কিন্তু কোম্পানির প্রতি যথেষ্ট ভালোবাসা আছে। (দীপ্ত)
- হুম, তবে মাহির রওশনকে যখন ও কিডন্যাপ করতে চেয়েছে, তখন এর মাশুল তো ওকে দিতেই হবে। (মাহির বাঁকা হেসে)
দীপ্ত কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু তখনই মাহিরের ফোনটা বেজে ওঠে। মাহির ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে স্ক্রিনে 'Akhi' নামটা উঠে আছে।
- কি রে, এই মেয়েটা আবার এখন কেন ফোন দিচ্ছে। (দীপ্ত)
মাহির ফোনটা রিসিভ করে লাউড স্পিকারে দিলো।
- হ্যালো। (মাহির)
- হ্যালো, আখি বলছি৷ (আখি)
- হ্যাঁ, বলো, এই রাত্রিবেলা আমায় কল করলে। (মাহির)
- তুমি কাল থেকে আর অফিসে যাবে না। (আখি)
- কেনো? আমার অভিনয় কি ভালো হচ্ছে না? তুমি অন্য কাউকে দেখেছ? (মাহির)
- আরে বাবা না, আর কেউ কিছু করবে না। তুমি কালকে আমার বসকে ছেড়ে দেবে। তারপর অফিসের সবার সামনে গিয়ে সব সত্যি বলে দেবে। (আখি)
- আর তোমার কি মনে হয়, অফিসের সবাই আমাকে জামাই আদর করে ছেড়ে দেবে? (মাহির)
- তোমাকে কিছু করবে না। কিছু বললে আমার ওপর সব দোষ চাপিয়ে দিও। (আখি)
- তুমি সব দোষ নিজের ঘাড়ে নিচ্ছ? (মাহির)
- হ্যাঁ। (আখি)
- কিন্তু কেন? মানে তুমি এতকিছু করে শেষ পর্যন্ত......... (মাহির)
- আমি আর এই ঝামেলা নিতে পারছি না তাই। আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি। মুক্তি চাচ্ছি এসব থেকে। (আখি চিল্লিয়ে)
এরপর বেশ কিছুক্ষণ ফোনের উভয় পাশেই নিস্তব্ধতা বিরাজ করলো। কেউ কোন কথা বললো না। তারপর নিস্তব্ধতা কাটিয়ে আখিই প্রথমে বললো-
- তুমি তাহলে কালকে স্যারকে ছেড়ে দিও। (আখি)
মাহির কিছু একটা ভেবে বললো-
- কালকে তো হবে না। (মাহির)
- কালকে হবে না মানে? কেন? (আখি)
- আসলে যার কাছে ওই রুমের চাবিটা আছে, সে এখন ঢাকায় নেই। পরশুদিন আসবে। তাই কালকেও ওই গেটটা খোলা যাবে না। (মাহির)
- What the... আবার কাকে চাবি দিয়েছো? তুমি আর কাকে কাকে কাজে লাগিয়েছো একটু বলবে? (আখি)
- না, না, আর কাউকে কাজে লাগাইনি। শুধু ও-ই। (মাহির)
- কেন, চাবিটা কি তোমার কাছে রাখা যেত না? (আখি)
- ইয়ে মানে যদি হারিয়ে যেত তাহলো...... (মাহির)
- ইডিয়েট একটা। কালকে অফিসে যাবে তুমি। আর পরশু স্যারকে আর ওনার ফ্যামিলিকে ছেড়ে দেবে। আমি অফিস যাবো না কালকে। তুমি অফিসে গিয়ে কি করবে না করবে সেটা তোমার ব্যাপার। (আখি রেগে)
- আচ্ছা। (মাহির)
আখি এরপর মাহিরের মুখের ওপর ফোনটা কেটে দেয়।
- হুহ,,, আমার খেয়ে আমাকে রাগ দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে কানের গোড়ায় একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিই। (মাহির ফোনটা মেঝেতে পেতে রাখা নরম গদির ওপর ছুঁড়ে মারলো)
- তুই ঐ মেয়েটাকে কিছু বলতে পারলি না? ও কোন সাহসে তোকে ইডিয়েট বললো? (দীপ্ত)
- আরে বলতে দে, বলতে দে। ও যত বেশি আমাকে অপমান করবে, সেটা ওর জন্য তত বেশি খারাপ হবে। খেলার মোড় ঘুরতে যাচ্ছে দীপ। শুধু দেখতে থাক, আমি ওর কি করি। (বাকাঁ হেসে মাহির)
তখনই নিচ থেকে দীপ্তর মায়ের গলার আওয়াজ শোনা গেলো।
- মাহির,,,,,,দীপ,,,,,,, তাড়াতাড়ি নিচে আয়। খাবার রেডি হয়ে গেছে। (দীপ্তের মা)
- যাচ্ছি মা। (দীপ্ত)
- চল নিচে চল। (মাহির সোফা থেকে উঠে)
- হুম, চল। (দীপ্ত থেকে উঠে)
৩৭.
দিনের একটা সময় রওশন পরিবারের সবাই একত্রিত হয়। তা হলো রাতের আহারের সময়। খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে চলে নানা কথাবার্তা। তাছাড়া সবাই সবসময় নিজেদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। সারাদিন তো আছেই, সকালে ব্রেকফাস্টের সময়ও কেউ আগে খাওয়া দাওয়া করে, কেউ পরে। দুপুরবেলা তো ছেলেরা কেউ বাড়িতেই থাকে না। অতএব রাতে ডিনার ছাড়া সবার একসাথে দেখা পাওয়ার কোনোরকম সুযোগ নেই। কিন্তু একত্রিত হয়েই বা আর কি হয়, গুরুগম্ভীর কিছু ব্যবসায়িক আলোচনা ছাড়া কিছুই শোনা যায় না সেখানে৷
- অঙ্কিতা, কাল দুপুরে সার্ভেন্টদের আমার জন্য লাঞ্চ বানাতে নিষেধ করো। আমি কালকে বাড়িতে থাকবো না। (মাহিরের মা)
- কেন, কোথায় যাবে তুমি? (মাহিরের বাবা)
- কাল দুপুরে ফ্রেন্ডসদের সাথে লাঞ্চে যাবো। (মাহিরের মা)
- খেয়েদেয়ে কাজ নেই তো। (মাহিরের বাবা)
- এমন করার কি আছে? আমি কতদিন পর আমার ফ্রেন্ডদের কাছে এসেছি। ওদের সাথে একটু টাইম স্পেন্ড করবো না? (মাহিরের মা)
- সেই তো ভাইজান, আপনার ভাবিকে ওভাবে বলা উচিত হয়নি। (অঙ্কিতা)
- আচ্ছা বাবা ঘাট হয়েছে আমার। আর বলবো না৷ (মাহিরের বাবা বিরক্ত হয়ে)
- মাহির-দীপ,, তোরা এতক্ষণ ঘরে কি করছিলিস? (দীপ্তর মা)
- আব..... (দীপ্ত)
- ঐ অফিস নিয়ে কিছু কথা বলছিলাম। (মাহির)
- একেবারে বাপ-চাচার মতো হয়েছিস দুজনে। কাজ ছাড়া কিছু বুঝিস না। (দীপ্তর মা)
- ও হ্যাঁ, ভালো কথা মনে করিয়েছো। দীপ্ত, মাহির,,, কেমন লাগলো অফিস? অফিসের প্রথম দিন কেমন কাটলো? (মাহিরের বাবা)
- Quite good dad, ভালোই ছিলো। তবে কিছু কিছু দিক আমি স্টাফদের মধ্যে দেখলাম, সেগুলো change করতে হবে। (মাহির)
- হুম,,,তাহলে নতুন রুলস বানাও। (মাহিরের বাবা)
- এক সপ্তাহের জন্য নতুন রুলস বানিয়ে কি হবে, সেই তো কিছুদিন পর চলেই যাবেন, তখন কি আর কেউ রুলস মানবে? (দীপ্তর মা)
- সেটা তো পরের কথা। রুলস না মানলে তার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। (মাহিরের বাবা)
- হুম। সেটাই করতে হবে আংকেল। আমি আরেকটা জিনিস লক্ষ্য করলাম। সেটা হলো এখানকার স্টাফরা কিন্তু একটু অলস। (দীপ্ত)
- তাই নাকি? (মাহিরের বাবা)
- Yes dad. হাতেগোনা কজন ছাড়া কারোরই কাজ করার প্রতি তেমন আগ্রহ নেই। (মাহির)
- তাহলে এটার জন্য কি করতে চাইছো? (মাহিরের বাবা)
- তোমার কি মনে হয় ড্যাড, আমি যখন একবার এসে গেছি, তখন কেউ আর কাজে ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ পাবে? (মাহির)
- সেটাই, তুই-ই এবার সবাইকে সোজা করবি, সেটা বোঝাই যাচ্ছে। (দীপ্ত)
- ড্যাড, তুমি পরশু যাচ্ছো তো অফিসে? (মাহির)
- হুম, আর শুধু আমিই নই, অবন্তী-অঙ্কিতাও যাবে। (মাহিরের বাবা)
- আমরা আবার কেন ? (দীপ্তর মা)
- কারণ আমি সেখানে এমন কিছু announce করবো যেটা তোমাদের জানা উচিত। আর হ্যাঁ, ঐদিন কিন্তু মিডিয়ার লোকজনও আসছে। (মাহিরের বাবা)
- তাহলে পরশু দিনটা খুব জাঁকজমকপূর্ণ হতে চলেছে। (দীপ্ত)
- হওয়াই উচিত। রওশন ফ্যামিলির function বলে কথা। (মাহিরের মা)
চলবে....................
পরবর্তী পর্ব থেকে শুরু হবে আসল গল্প। পড়বেন না? তো এতদিন এগুলো পড়ে শুধু শুধু সময় নষ্ট করলেন।
পরিণীতাসক্তি
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
75
Views
2
Likes
2
Comments
5.0
Rating