পরিণীতাসক্তি

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
- যে করেই হোক, মাহির রওশনকে কিডন্যাপ করাতেই হবে।


কথাটি মাহিরের কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই সে থেমে গেলো। সে যে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলো তার ঠিক পাশেই একটি বেঞ্চে দুজন মেয়েকে দেখতে পেলো। মেয়েগুলো তার উল্টোদিকে ঘুরে বসে ছিলো বলে সে তাদের মুখশ্রী দেখতে পারলো না। চোখটা মাটিতে নিবদ্ধ রেখেই সে কান খাড়া করে তাদের কথোপকথন শুনতে লাগলো।

- তুই কি পাগল হয়ে গেছিস আখি? (দিনা)

- আরে বুঝতে পারছিস না কেন? উনি আসলে আমি অনেক বড় বিপদে পড়ে যাব। তাই যে করেই হোক, ওনাকে অফিসে পা রাখতে দেওয়া যাবে না। (আখি)

- আচ্ছা, কিডন্যাপার কোথায় পাবি? কিডন্যাপ করাবিই বা কি করে ওনাকে? স্যারের কোনো ছবি আছে তোর কাছে? তুই-ই তো জীবনে স্যারকে দেখিসনি। (দিনা)

- সেটাও তো ঠিক। আরে ওসব আমি ম্যানেজ করে ফেলবো৷ যেভাবেই হোক, আজকে মাহির রওশনকে আমি অফিসে ঢুকতে দেবো না। (আখি)


দীপ্ত মায়ের সাথে কথা শেষ করে মাহিরের কাছেই আসছিলো। সে মাহিরকে কিছু একটা বলতে উদ্যত হলেই মাহির ঠোঁট আঙুল দিয়ে ইশারায় তাকে চুপ করতে বলে। তারপর নিজেই নিঃশব্দে দীপ্তর কাছে গিয়ে তাকে নিয়ে একটু দূরে চলে গেলো।

- কি ব্যাপার বলতো ভাইয়া? (দীপ্ত)


মাহির পকেটে হাত দিয়ে ঠোঁটে একটা বাঁকা হাসি এনে আখির দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললো-

- ব্যাপারটা বেশ মজার, দীপ। (মাহির)


দীপ্ত মাহিরের চোখ অনুসরণ করে আখির দিকে তাকালো। তারপর ভ্রূ-কূচকিয়ে একবার মাহির ও একবার আখির দিকে তাকায়। এরপর কি যেন ভেবে তার মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। সে উচ্ছ্বসিত হয়ে বললো-

- তোর কি মেয়েটাকে পছন্দ হয়েছে? (দীপ্ত)


মাহির এবার দীপ্তর দিকে তার অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। সেটা দেখে দীপ্তর মুখের হাসি উবে গেলো।

- না? তাহলে? (দীপ্ত)


মাহির আবার আখির দিকে তাকালো। তার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেই সে বললো-

- ঐ মেয়েটা একটা কিডন্যাপার খুঁজছে। (মাহির)

- (ভ্রূ-ভাঁজ করে) কিডন্যাপার? কাকে কিডন্যাপ করবে? (দীপ্ত)

- আমাকে। (মাহির)

- কিহ! (দীপ্ত)


দীপ্ত অবাক হয়ে জোরে উচ্চারিত করলো। মাহির এখনো আখির দিকেই তাকিয়ে আছে। সে আবার শান্ত স্বরে বলা শুরু করলো-

- মেয়েটা সম্ভবত আমাদের অফিসের কোনো এমপ্লয়ি। আজকে আমি অফিসে গেলে ওর কোনো সমস্যা হবে। তাই ও আমাকে কিডন্যাপ করে আটকে রাখতে চায়। (মাহির)

- এ তো সাংঘাতিক ব্যাপার ভাইয়া! তুই তাড়াতাড়ি পুলিশকে কল কর। কখন কি করে বসে.. (দীপ্ত)


মাহির এবার দীপ্তর দিকে তাকালো। তারপর একটা তাচ্ছিল্য হেসে বললো-

- মাহির রওশনের সময় এতটাও খারাপ হয়নি যে সামান্য একটা মেয়ে আমার কিছু করবে। (মাহির)

- আটে আমি সেটা কখন বললাম। তোকে ছোঁয়ার সাধ্য তো বড় বড় মাফিয়ারও নেই। কিন্তু মেয়েটা তো ডেঞ্জারাস। ওকে অফিসে রাখলে সমস্যা হতে পারে। (দীপ্ত)

- (আখির দিকে তাকিয়ে) ডেঞ্জারাস নয়, সাহসী। (দীপ্তর
দিকে তাকিয়ে) শোন, পুলিশে দেওয়া বা অফিস থেকে বের করে দেওয়া কমন হয়ে গেছে। এই খেলাটা একটু অন্যভাবে খেলবো। (মাহির)

- কেমন? (দীপ্ত)

- মেয়েটা মনে হয় আমাকে দেখেনি। আমি এখন ওর কাছে যাব কিডন্যাপার হয়ে। তারপর মাহির রওশনকে কিডন্যাপ করার পর দেখবো ও আর কি কি করতে পারে। (মাহির)

- মানে? তুই নিজেকে নিজে কিডন্যাপ করবি? (দীপ্ত)

- তোর মোটা মাথায় ঢুকবে না ওসব। এক কাজ কর, এগুলো ধর। (মাহির)


মাহির এরপর একে একে তার সুট খুলে দীপ্তকে দিলো। শার্টের ইনও খুলে ফেললো।

- এই জুতোটাও চেঞ্জ করতে হবে। কিন্তু এখানে সস্তার জুতো পাই কোথায়? (মাহির আশেপাশে তাকিয়ে)

- ড্রাইভারকে বলবো? (দীপ্ত)

- হুম, ভালো বলেছিস। যা, এই জুতোগুলো ওনাকে দিয়ে ওনারগুলো নিয়ে আয়। (মাহির)


দীপ্ত বাধ্য ছেলের মতো মাহির যা বললো তা করলো। মাহির ড্রাইভারের কমদামী জুতোগুলো পড়ে নিলো।

- তুই হাতে রোলেক্স ঘড়ি পড়ে কিডন্যাপ করতে যাবি? (দীপ্ত)


মাহিরের খেয়াল হলো হাতের ঘড়িটা সে এখনও খোলেনি।

- ও, এটার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। (মাহির)


মাহির এরপর হাতের ঘড়িটা খুলে দীপ্তর হাতে দিলো। চুলগুলো ঘেটে এলোমেলো করে দিলো।

- এখন বল, মিডলক্লাস কিডন্যাপার মনে হচ্ছে তো? (মাহির)

- সত্যি বলতে না। কিডন্যাপারের বডি এমন জিমকরা আর চেহারা এমন জেন্টেল কখনো এমন হয় না। (দীপ্ত)

- তো এখন কি আমি প্লাস্টিক সার্জারি করবো? (মাহির)

- যাই করিস। Mahir Raoson is Mahir Raoson forever. (দীপ্ত)

- হুম। কিন্তু কিছুক্ষণের জন্য ভুলে যা আমি মাহির রওশন। এখানেই থাক। আমি কাজ শেষে আসছি। (মাহির)


মাহির এরপর আখি ও দিনার দিকে পা বাড়ালো। আখি নামক মেয়েটার সামনে গিয়ে প্রথম একটু ভালোভাবে দেখলো তাকে। দেখতে খুবই মিষ্টি আর নিষ্পাপ। চোখজোড়া শিশিরে ভেজা পদ্মপাতার মতো স্বচ্ছ—যেন যেখানে পৃথিবীর সকল পবিত্রতা মিশে আছে। গোলাপের পাপড়ির ন্যায় ঠোঁটগুলো যেন কখনো মিথ্যে বলতেই পারে না। মেয়েটির চুলগুলো কালো মেঘের মতো ঘন আর নরম, আর তার ত্বক যেন গোধূলির আলোয় ধোয়া পবিত্র কোনো মার্বেল। চেহারায় এমন এক কোমলতা লুকিয়ে আছে, যা কোনো শব্দ দিয়ে বোঝানো যায় না—শুধু অনুভব করা যায়। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ আলাদা। তাই মাহির সেই ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো।

আখি ও দিনা তখনও চিন্তায় মগ্ন। মাহির তাদের একটু কাছে গিয়ে বুঝতে চেষ্টা করলো তাদের পরিস্থিতিটা কেমন। প্রথম দিকে একটু দ্বিধাগ্রস্থ ছিলো সে এই ভেবে যে কি দিয়ে কথা শুরু করবে। তারপর কিছু একটা ভেবে নিজেকে প্রস্তুত করলো সে। দূরে দাঁড়িয়ে পুরো ঘটনাটা নিরীক্ষণ করতে লাগলো দীপ্ত।


- ধূর, কিচ্ছু ভালো লাগছে না। সবে সবে একটু অফিসে আরাম করতে বসেছি, এর মধ্যে ঐ বসের আসতে হলো। ইচ্ছে করছে ওটাকে এখনই এয়ারপোর্ট থেকে পার্সেল করে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠিয়ে দিই। (আখি)


- Excuse me... (মাহির)


মাহির তাদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করলো। তবে আখি বা দিনা কেউই তার দিকে তাকালো পর্যন্ত না। দিনে এরকম হাজারটা ছেলে মেয়েদের হাই-হ্যালো করতে আসে। কিন্তু মেয়েরা খুব সুন্দর করে তাদের ইগনোর করতে পারে, যেটা আখি ও দিনার জানা।

- হ্যালো... myself মা...(কিছু একটা মনে করে) মাদাল... (মাহির)


নিজের নামটি মুখ ফসকে বলতে গিয়ে সে ঝোঁকের বসে মাদাল নামটি বলে ফেলে মাহির। কিন্তু নামটি বলে মাহির নিজেই অবাক হয়ে যায়। এটা কোনো নাম হলো? আর সো এমনভাবে কথা বলছে যেন কিডন্যাপিং নয়, কোনো প্রেজেন্টেশন দিতে এসেছে। সব মিলিয়ে নিজের ওপর নিজেই অসন্তুষ্ট হলো মাহির।

কিন্তু মাহিরের কথায় আখি তার দিকে ভালোভাবে দৃষ্টিপাত তো করেই না, উল্টে তার মাথায় রাগ উঠে যায়। দিনা এবার মাহিরের দিকে তাকায়।

- তুমি মাদাল হও আর মাতাল হও, তাতে আমার কী? আমাকে বলতে এসেছো কেনো? (আখি)


মাহির প্রথমে আখির কথায় একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। অস্ট্রেলিয়ায় মেয়েরা এভাবে ঠেস দিয়ে কথা বলে না-বিশেষত তাকে। তাই এই জিনিসটার অভিজ্ঞতা তার নেই। কিন্তু সহসাই নিজেকে সামলে মাহির বলে-

- তখন শুনলাম আপনারা কাউকে কিডন্যাপ করার জন্য লোক খুঁজছেন। (মাহির)


এবার আখি ও দিনা বিব্রত হয়ে যায়। মাহিরের শারীরিক গঠন ও সুদর্শন চেহারা দেখে তাকে তারা পুলিশের লোক মনে করে। আখি সাথে সাথে বলে-

- ন... না... না, আমরা কেন কাউকে ক... কিডন্যাপ করাতে যাবো... (আখি)


নিজের তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তায় হঠাৎ করে আখির এমন পরিবর্তনের কারণ বুঝতে তিন সেকেন্ডের বেশি সময় লাগে না মাহিরের।

- না, না, ঘাবড়ানোর কোনো কারণ নেই। আমি কিডন্যাপার। পুলিশের লোক নই৷ (মাহির)


আচমকা এই কথা শুনে আখির মুখ থেকে সমস্ত ত্রাস কর্পূরের মত উবে গিয়ে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। উচ্ছ্বসিত হয়ে বললো-

- আপনি পারবেন কিডন্যাপ করতে? (আখি)

- হ্যাঁ। সেজন্যই তো এসেছি। (মাহির)


আখি একবার ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত মাহিরকে স্ক্যান করলো। তারপর সন্দিগ্ধ নয়নে তার দিকে তাকিয়ে বললো-

- কিন্তু চেহারা তো সেটা বলছে না। দেখতে সিনেমার হিরোর মতো, আর তুমি কিডন্যাপিং করো? বিশ্বাস হচ্ছে না। (আখি)

- আসলে, এসব কাজ করতে গেলে তো বডি বানাইতে হয়। ওসব কথা ছাড়ুন। এখন বলুন কাকে কিডন্যাপ করতে হবে। (মাহির)

- রওশন এন্টারপ্রাইজের CEO এর একমাত্র ছেলে মাহির রওশনকে। (আখি)

- মাহির রওশন? (মাহির)

- হু। কেন নাম শুনে ভয় পেলে নাকি? (আখি)

- ভয়? ভয় পাবো কেন? রওশন এন্টারপ্রাইজের CEO এর ছেলে মাহির রওশন তাই না? হয়ে যাবে। (মাহির)

- ভয় পাই নি। অবাক হচ্ছি। এইটুকুনি মেয়ে আমাকে কিডন্যাপ করতে চাচ্ছো? (মাহির মনে মনে তাচ্ছিল্য হাসলো)

- এই তুমি সত্যি কিডন্যাপ করতে পারবে তো? (আখি)

- হ্যাঁ, হ্যাঁ, না পারার কি আছে? পারবো আমি। তো মাহির রওশন কেনো? মানে ওনার সাথে তোমার কি শত্রুতা? (মাহির)

- সেটা আমি তোমাকে কেন বলবো? আম খেতে দিয়েছি আম খাও। আটির খবর জেনে কি করবে তুমি? যে কাজটা করতে দিয়েছি সেটা আগে করো। (আখি)

- আচ্ছা। (মাহির)

- আমার কাছে কিন্তু ওনার কোনো ছবি নেই৷ (আখি)

- সমস্যা নেই। আমি খুঁজে নিতে পারবো ওনাকে। (মাহির)

- Okey, তো এখন দাঁড়িয়ে না থেকে যাও নিজের কাজ করো। (আখি)


মাহির ভালো ছেলের মতো মাথা নাড়িয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।

- এই কি করছিস তুই? কাকে কি করতে বলছিস? (দিনা)

- আরে ছেলেটা আগ বাড়িয়ে কাজ করতে এলো। সেই সুযোগটা একটু কাজে লাগালাম। কিন্তু কেন জানিনা মনটা সায় দিচ্ছে না। (আখি)

- অযথা ঝামেলায় জড়াস তুই। (দিনা)

- উফ্, আমি আর নিতে পারছি না এসব। (ওপরে তাকিয়ে) খোদা,,,দড়ি ফেলো, আমি উঠে যাই। (আখি)


২৮.
- কি হলো ভাইয়া? মানে কি বললো মেয়েটা তোকে? (দীপ্ত)

- কি আবার বলবে? মাহির রওশনকে কিডন্যাপ করতে বললো। (মাহির)

- এখন? (দীপ্ত)

- আমার কোর্টসহ যতকিছু আছে সব ড্রাইভারকে পড়িয়ে ওর হাত পা বেধে একটা ছবি তোল। ওকেই মাহির রওশন বলে চালিয়ে দেবো। (মাহির)

- ভাইয়া, তোর বুদ্ধিকে সত্যি অস্কার দেওয়া উচিত। (দীপ্ত)

- অস্কার পরে দিস। আগে আমি যেটা বললাম সেটা কর। ফাস্ট। (মাহির)

- আচ্ছা, আমি এক্ষুনি যাচ্ছি, আর এক্ষুনি আসছি। (দীপ্ত)


মাহিরের কথামতো দীপ্ত তাদের ড্রাইভারকে কোর্ট, ওয়াচ, পড়িয়ে মাহিরের মতো সাজায়। তারপর তার হাত-পা বেধে একটা ছবি তোলে। কাজ শেষ করে আবার মাহিরের কাছে আসে সে।

- কি, তুলেছিস? (মাহির)

- হ্যাঁ, দেখে নে। (দীপ্ত)


দীপ্ত মাহিরকে ছবিটি দেখায়।

- Perfect. (মাহির বাঁকা হেসে)

- এবার কি করবি? (দীপ্ত)

- মেয়েটাকে গিয়ে সুসংবাদটা দেবো। (মাহির)

- তুই তাহলে গিয়ে সিনেমা কর। আর আমি মুভি দেখি। (দীপ্ত)

- দেখ। (মাহির)

২৯.
- এই স্যারের ছেলেটাকে যদি আজকে কিডন্যাপ করাতে পারি, তাহলে দুদিন পরেই একে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠিয়ে দেব। (আখি)

- আগে কিডন্যাপটা করা। (দিনা)


দুই বান্ধবীর কথার মাঝে হঠাৎ করে মাহির চলে আসে। মাহিরকে দেখে আখি লাফ দিয়ে উঠে তার কাছে গিয়ে বলে-

- কাজ হয়েছে? (আখি)

- হ্যাঁ, খুব ভালোভাবে। (দিনা)

- (রাগী স্বরে) মানে? ফাউল কথা বলার জায়গা পাও না? তুমি ওনার ছবি দেখলে না, ওনার সম্পর্কে কোনো information নিলে না। আর ওনাকে কিডন্যাপ করে নিলে, তাও আবার দশমিনিটে? (আখি)

- আরে ওনার খোঁজ পাওয়া কোনো ব্যাপার হলো? উনি তো প্রায় একজন সেলিব্রেটি, একটু খুঁজলেই তো ওনার সন্ধান পাওয়া যায়। এটা এমন আর কি ব্যাপার? খুজঁলে তো সৃষ্টিকর্তাকেও পাওয়া যায়, আর মাহির রওশন এমন কি? (মাহির)

- ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না আপনার কথা। (দিনা)

- আচ্ছা, আমি ছবি দেখাচ্ছি। এই দেখুন। (মাহির)


মাহির এরপর সেই হাত পা বাধা লোকের ছবি আখিকে দেখালো। আখির চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।

- কি বিশ্বাস হলো তো? (মাহির)

- হ্যাঁ। Well done মাদাল। (আখি)

- আচ্ছা এই লোককে কিডন্যাপ করে তোমার লাভটা কি হলো বলতো? (মাহির)

- সে অনেক বড় কাহিনি। (আখি)

- শর্টকাটে বলো। (মাহির)

- আচ্ছা। আসলে হয়েছে কি, অফিসের সবাই জানে যে আমি বসের গার্লফ্রেন্ড। যদিও এটা সত্যি নয়। আমি শুধু অফিস থেকে সু্যোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য এটা করেছি। যদিও আমার এরকম কোনো, plan ছিলো না। যাই হোক, ওটা দূর্ভাগ্যবশত হয়ে গেছে। আজকে যদি বস অফিসে চলে যেত তাহলে আমি ধরা পড়ে যেতাম। আমার চাকরি হারাতাম। আর আমি আমার চাকরি হারাতে চাইনা। তাই বাধ্য হয়ে আমাকে বসকে কিডন্যাপ করাতে হলো। (আখি)

- আচ্ছা, বুঝলাম। তোমাট নামটা যেন কি? (মাহির)

- আখি, আমার নাম আখি ইয়াসমিন। (আখি)

- ও, তাহলে এই মেয়ে হলো সেই আখি, কিন্তু সেদিন ম্যানেজারের কথা শুনে তো একে এমন মনে হলো না। (মাহির মনে মনে)

- তোমার পরবর্তী কাজ কি শুনে নাও। (আখি)

- হ,,,হ্যাঁ, বলো। (মাহির)

- তোমাকে ঐ মাহির রওশনকে এমন ভয় দেখাতে হবে যাতে দুদিন পর ও বাপ বাপ করে আবার বিদেশে চলে যায়। (আখি)

- আচ্ছা, তাই করবো। (মাহির)

- খুব তো কিডন্যাপ করদলি বসকে। এখন বস রাতে বাড়ি না ফিরলে ওনার বাড়ির লোক কি হাত গুটিয়ে বসে থাকবে ভেবেছিস? (দিনা)

- তার জন্যেও ব্যবস্হা করা হয়েছে। (মাহির)

- কি ব্যবস্হা? (আখি)

- ওনার মা আর বাবাকেও কিডন্যাপ করা হয়েছে। (মাহির)

- এই তোমাকে ওনাদের কিডন্যাপ করতে কে বলেছে? (দিনা বিস্মিত হয়ে)

- ইয়ে মানে, ওনারা থাকলে সমস্যা হতে পারে তাই আরকি ওনাদেরও....... (মাহির)

- দেখ, ওনাদের কিডন্যাপ করেছো, ভালো করেছো। কিন্তু কারো হাত-পা বেধে রেখো না। এমনি একটা ঘরে আটকে রাখো। আর ওনার বাবা-মাকে তো না-ই। হাজার হোক, ওনারা আমার বস, আর বয়স্কও। (আখি)

- আচ্ছা। (মাহির)

- আর মনে করে ওদের ফোনটা নিয়ে নিও। (আখি)

- হুম। (মাহির)

- আখি এটা করা কি ঠিক হলো? আজকে বস যখন অফিসে যাবে না, তখন কি হবে? (দিনা আখির কানে কানে)

- তাই তো। এটা তো ভেবে দেখিনি। (আখি)

- কি হলো, কোনো সমস্যা? (মাহির ভ্রূ-কূচকে)

- খুব জটিল একটা সমস্যা। আজকে অফিসের সবাই জানে যে বস আজ বিকেল চারটায় অফিসে আসছে। এখন যদি সে না যায়, তাহলে তো একটা ঝামেলা লেগে যাবে। (আখি)

- তাহলে এখন উপায়? (মাহির)

- অন্য একজনকে বস সাজিয়ে নিয়ে যেতে হবে। (আখি)

- কিন্তু সেটা হবে কে? (দিনা)

- আমি আছি তো। আমি বস সেজে তোমাদের অফিসে যাবো। (মাহির)

- হ্যাঁ, তাই তো। তুমি তো নাটকটা করতে পারো। শোন, তোমাকে কিছু করতে হবে না। তুমি শুধু ফাইল একটু ঘাটাঘাটি করবে, আর মাঝে মাঝে একটু english বলবে। টুকটাক english বলতে পারো তো? (আখি)

- হ্যাঁ, হ্যাঁ, English, তামিল, হিন্দি, উর্দু সব বলতে পারি। (মাহির)

- Good, তুমি তাহলে একটা ভালো দেখে দামী কোর্ট জোগাড় করো। ভাড়ার টাকা আমি দিয়ে দেবো। (আখি)

- আচ্ছা। (মাহির)

- আর পুরো কাজের জন্য কিন্তু আমি পাঁচ হাজারের বেশি দিতে পারবো না। (আখি)

- আচ্ছা ওরকম দিলেই হবে। (মাহির)

- Okey, তাহলে কাজে লেগে যাও। (আখি)


৩০.
- তুই যে কি করছিস,আমি সিরিয়াসলি কিছু বুঝতে পারছি না। তুই নিজের অফিসে নিজে অভিনয় করবি? বিষয়টা কেমন শোনায় না ভাইয়া? (দীপ্ত)

- আমার তো মজা লাগছে। (মাহির বাঁকা হেসে)

- তোকে বাংলাদেশে এসে মেয়েটা বদলে দিয়েছে। এটা যদি অস্ট্রেলিয়া হতো তাহলে বিষয়টা হয়তো তোর কাছে বিরক্তিকর লাগতো। (দীপ্ত)

- হয়তো। এখন আমার কোর্ট, ঘড়ি আর সু দে। আমাকে তো আবার অফিসে বসের অভিনয় করতে যেতে হবে। তবে অফিসের ভেতরে হয়তো আমি অভিনয় করবো না। (মাহির)

- তা তো জানি। তো আমাকেও তো যেতে হবে অফিসে নাকি। (দীপ্ত)

- হুম। যদিও তুই আমার আসলে পিএ, কিন্তু তাও আজকের জন্য তোকে আমার নকল পিএ হতে হবে। (মাহির)

- বিষয়টা সত্যি ইন্টারেস্টিং। (দীপ্ত)


চলবে.................


এর পরের পর্বগুলো আরো মজার। মিস করলে আপনাদের লস।
72 Views
2 Likes
1 Comments
5.0 Rating
Rate this: