পরিণীতাসক্তি

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
২১.
আজ রবিবার। অফিসে রীতিমতো হুলুস্থুল পড়ে গেছে। সবাই এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে। ম্যানেজার খুব কড়াকড়িভাবে চারপাশ তদারকি করছে যাতে কোনো ভুল না হয়। কারণ ভুল হলে যে তার কপালে শনি নাচছে সেটা সে ভালো করেই বুঝতে পারছে। আখিও সকাল সকাল অফিসে চলে এসেছে। তবে সে কাজ করলেও মনের মধ্য দুশ্চিন্তাগুলো ছুরি চালাচ্ছে অনবরত। বিকেলে কি হতে চলেছে তা ভেবেই সে একটা শুকনো ঢোক গিললো। এখন মনে হচ্ছে নিশি সেদিন তার কথাগুলো না শুনলেই মনে হয় ভালো হতো। এত চিন্তা থাকতো না। দোষটা অবশ্য তারও নয়। সে কি জানতো নিশি তার সব কথা শুনছে? নাহ্, এভাবে বসে থাকলে চলবে না। ঝামেলা যখন এসেছে ঝামেলাটা যেভাবে হোক দূর করতে হবে। যার জন্য এখন দিনার সাথে কথা বলা আবশ্যক। দিনা ছাড়া এখন আর কেউ তাকে সাহায্য করতে পারবে না। সে একটা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে ম্যানেজারের কাছে গেলো।

- ম্যানেজার সাহেব........(আখি)

- কিছু বলবেন ম্যাডাম? (ম্যানেজার)

- আমি দিনাকে নিয়ে একটু বাইরে যাচ্ছি। আপনি একটু এদিককার কাজগুলো দেখে নিন। (আখি)

- ম্যাডাম এই সময় বাইরে যাবেন, কোনো সমস্যা? (ম্যানেজার)

- না, তেমন কিছু নয়। আসলে আজকে আপনার স্যার আসছেন তো, ওর জন্য কিছু কিনতে যাবো। সাথে দিনাকেও নিয়ে যাচ্ছি। (আখি)

- ও আচ্ছা। খুব ভালো কথা ম্যাডাম। কিন্তু বুঝতেই তো পারছেন, মানে আজকে স্যার আসছেন, আপনি না থাকলে.......... (ম্যানেজার)

- চিন্তা করবেন না, আমি আপনার স্যারের আসার আগেই চলে আসবো। (আখি)

- আচ্ছা ম্যাডাম, তাহলে সমস্যা নেই। (ম্যানেজার)

- আমি তাহলে যাচ্ছি....(আখি)

- হ্যাঁ, যান। (ম্যানেজার)


আখি তারপর দিনার সাথে অফিস থেকে বেরিয়ে গেলো।

২২.
বিশাল লন পেরিয়ে ধীর গতিতে বাড়ির সামনে এসে থামলো পরপর দুটো সাদা গাড়ি। বাড়িটির সামনের দিকটা যেন কোনো রাজপ্রাসাদের মুখচ্ছবি-রওশন ম্যানশন। সুউচ্চ লোহা ও পিতলের তৈরি ফটক পেরিয়েই চোখে পড়ে প্রাসাদসম ভবনটি, যার প্রতিটি তলায় আছে কারুকার্যমণ্ডিত বারান্দা, প্রাচীন ইউরোপিয়ান স্থাপত্যের ছোঁয়া, আর অলিন্দে ঝুলে থাকা ঝাড়বাতিগুলোর কাঁচে রোদের প্রতিফলন যেন রত্নের মত ঝিলমিল করে।

বাড়ির মুখ্য দরজাটা বিশাল কাঠের, যার গায়ে খোদাই করা আছে গোলাপ ও লতার নকশা, আর দরজার দুপাশে রয়েছে দুটো সিংহাকৃতি পাথরের মূর্তি—নিঃশব্দ প্রহরী যেন। দেয়ালের গায়ে উঠছে বোগেনভেলিয়ার বুনো ডালপালা, আর জানালাগুলো লম্বা, গাঢ় কাচে মোড়ানো, যেন সেগুলো ভেতরের জগতটাকে আড়াল করে রেখেছে বাইরের কৌতূহলী দৃষ্টির কাছ থেকে। কে বলবে, এতটা আড়ম্বর আর নিঃসঙ্গতার মাঝখানে একা থাকেন কেবল একজন মহিলা?

গাড়িদুটো বাড়ির সামনে এসে থামতেই প্রথম গাড়ি থেকে একে একে বেরিয়ে এলো আরিফ রওশন ও অবন্তী রওশন। আর দ্বিতীয় অর্থাৎ পরের গাড়িটা থেকে বেরিয়ে এলো মাহির ও দীপ্ত। মাহির তার চোখ থেকে সানগ্লাসটি খুলে বাড়ির দিকে অনিমেষ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। আহা! তার সমস্ত সুন্দর স্মৃতিদের সমন্বিত শৈশব কেটেছে এখানে! মাহিরের মা বাড়িটির দিকে ওপর থেকে নিচে একবার চোখ বুলালেন। তার চোখ কোনো এক কারণে ছলছল করে উঠলো। মাহিরের বাবা আলতোভাবে তার কাধে হাত রেখে পাশে এসে দাঁড়ালেন। সাথে সাথে মাহিরের মা হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে চোখের কোণ মুছলেন। জোরে একটা শ্বাস নিয়ে মুখটা কঠিন করে ফেললেন। যেন কিছু আড়াল করলেন। ভেতর থেকে কিছু পরিচারিকা এসে গাড়ি থেকে সমস্ত লাগেজ নামাতে লাগলো। সবাই বাড়ির দিকে পা বাড়ালো।

বিশালাকার ড্রইংরুমের সোফায় বসে ছিলো এক মাঝবয়সী মহিলা। তার আধপাকা চুল ও চেহারায় বয়সের ছাপ দেখে মনে হয় না তিনি অবন্তী রওশনের চেয়ে ছোট। তিনি সবাইকে দেখে বসা থেকে উঠে হাসিমুখে তাদের দিকে এগিয়ে গেলেন।

- আরে তোমরা এসে গেছো। (মহিলাটি)

- মা.... (দীপ্ত)


দীপ্ত এই বলে মহিলাটিকে জড়িয়ে ধরলো। দীপ্তর মা-ও পরম আদরে ও মমতায় ছেলেকে জড়িয়ে ধরলেন। পনেরো বছর পর মা-ছেলের মিলন সবাই প্রশান্তিভরা দৃষ্টিতে দেখতে থাকলো।

- কেমন আছো মা? (দীপ্ত)

- তোদের ছাড়া ভালো থাকবো কিভাবাে বল? খুব মিস করেছি তোদের। (দীপ্তর গালে হাত রেখে) কত বদলে গেছিস বাবা। (দীপ্তর মা)

- আমরাও তোমাকে খুব miss করেছি অঙ্কিতা। (মাহিরের মা)

- কতদিন পর সবাইকে দেখলাম বলতো। কেমন আছো সবাই? মাহির, কেমন আছিস তুই বাবা? (দীপ্তর মা)

- ভালো আছি আন্টি। (মাহির সামান্য হেসে বললো)

- ভাইজান, ভাবি, তোমরা কেমন আছো? (দীপ্তর মা)

- ভালোই ছিলাম। তবে এখন থেকে মনে হয় না এখানে ভালো থাকতে পারবো। (মাহিরের মা)

- তোমার তো দেশে পা রাখতেই খারাপ লাগে। দেশে থাকা তো দূরে থাক। (মাহিরের বাবা)

- আরিফ.... (চোখ রাঙিয়ে মাহিরের মা)

- তারপর বলো, তোমাদের আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তো? (দীপ্তর মা)

- বাংলাদেশে আসার আগে কোনো সমস্যা হয়নি, সমস্যা হয়েছে এখানে ল্যান্ড করার পর। ইস্, শহরটা আগের থেকে কত নোংরা হয়ে গেছে। রাস্তার কথা আর নাই বা বললাম। (মাহিরের মা)


দীপ্তর মা একটু হাসলেন। তারপর বললেন-

- এটা তো আর তোমার অস্ট্রেলিয়া নয় ভাবি। এটা বাংলাদেশ। রাস্তা তো একটু নোংরা থাকবেই। আচ্ছা তোমরা মনে হয় খুব tired, এখন ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। তোমাদের সবার রুম রেডি আছে। (দীপ্তর মা)

- হ্যাঁ, সেই ভালো। (মাহিরের বাবা)


এরপর যে যার ঘরের দিকে রওয়ানা হলো। মাহির নিজের ঘরের কাঠের দরজাটি ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো। আজ কত বছর পর নিজের এই চিরপরিচিত ঘরে ও পদার্পণ করলো। ছোটবেলার কত মধুমিশ্রিত স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই ঘরে!! ঘরটা সেই একইরকম আছে যেমনটা মাহির যাওয়ার আগে রেখে গিয়েছিলো। বলতেই হবে তার আন্টি খুব যত্নে রেখেছিলো বাড়িটাকে। মাহির ঘুরে ঘুরে তার নিজের রুমটাই পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। পুরো ঘরের দেয়াল সাদা রংয়ের, দেয়াল ঘেষে ঘরের মাঝামাঝি বিশালাকার বিছানা। এছাড়াও পুরো ঘর জুড়ে রয়েছে দেশ-বিদেশী নানা আসবাবপত্র। আর দরজার ঠিক বিপরীতে রয়েছে বেলকনির কাঁচের দরজা। মাহির ঘরের নানা জিনিসপত্র ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখতে লাগলো। প্রশস্ত ওয়াল সো-কেশ থেকে সে একটি ছোট্ট তাজমহল তুলে নিলো। সাথে সাথে তার কানে বেজে উঠলো কোনো মেয়ের খিলখিলিয়ে হাসির শব্দ। অতীতটা স্মৃতির পাতায় হাতছানি দিতে লাগলো। অজান্তেই মাহিরের চোখের কোণে বিন্দু বিন্দু অশ্র জমা হওয়ার উপক্রম করলো। কিন্তু তার আগেই সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করলো। চোখমুখ পূর্বের ন্যায় কঠিন করে তাজমহলটা আগের জায়গায় রেখে দিয়ে একটু এগিয়ে গিয়ে কাঁচের দরজাটি খুলে রুমের বেলকনিতে প্রবেশ করলো মাহির। বেলকনির কার্নিশে গিয়ে দাঁড়ালো সে। এটা তার মন ভালো করার জায়গা। ছোটবেলায় যখন তার মন খারাপ হতো সে এখানে এসে দাঁড়াতো। ব্যাস, তার মন ভালো হয়ে যেত। কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে সে আবার তার রুমে প্রবেশ করলো। কাবার্ড থেকে একটা টাওয়াল ও কিছু কাপড় নিয়ে সে ওয়াশরুমে চলে গেলো।


২৩.
- দীপ....... দীপ...... কোথায় তুই? (দীপ্তর মা)


দীপ্তর রুমে প্রবেশ করতে করতে দীপ্তর মা বললেন। দীপ্ত তখন বিছানার ওপর বসে ফোন ঘাটছিলো। মাকে আসতে দেখেই সে ফোনটা পাশে রেখে উঠে দাঁড়ালো।

- এইতো মা ঘরেই আছি। (দীপ্ত)

- তুই শাওয়ার নিয়েছিস? জামাকাপড় খুঁজে পেয়েছিস? (দীপ্তর মা)

- শাওয়ারও নিয়েছি, জামাকাপড়ও খুৃঁজে পেয়েছি। আমি তো আর বাচ্চা নই যে নিজের কাজ নিজে করতে পারবো না, মা। (দীপ্ত)

- হ্যাঁ, সেই তো। তুই তো আর ছোট নেই। বড় হয়ে গেছিস। আমার কি আর প্রয়োজন আছে তোর? (দীপ্তর মা অভিমানী কন্ঠে)

- কোন কথা থেকে কোন কথায় চলে যাচ্ছো তুমি মা? (দীপ্ত)

- ঠিকই তো বলছি। এত বছর আমাকে ছাড়া থেকেছিস, নিজে থেকে সবকিছু করা শিখে গেছিস। ভালোমতো খবরটাও নিতিস না আমার। আমি আর কে তোর? (দীপ্তর মা)

- বুঝেছি, আমি এতদিন তোমার থেকে দূরে ছিলাম বলে তোমার অভিমান হয়েছে আমার ওপর। আচ্ছা বাবা সরি, এই কান ধরছি (কান ধরে) এবারের মতো মাফ করে দাও। (দীপ্ত অসহায়ভাবে মায়ের দিকে তাকিয়ে)


দীপ্তর মা ছেলের কান্ড দেখে হেসে ফেললেন।

- আচ্ছা বাবা ঠিকাছে। এবার নিচে খেতে চল। নিজের হাতে তোদের পছন্দের খাবার রান্না করেছি। খিদে পেয়েছে নিশ্চয়ই। (দীপ্তর মা)

- খিদে তো পেয়েইছিলো। তোমার হাতের রান্না শুনে সেটা আরো বেড়ে গেল। কতদিন তোমার হাতে রান্না খাই না বলতো। চলো, চলো তাড়াতাড়ি নিচে চলো। (দীপ্ত)


মা-ছেলে দুজনেই ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে গেলো।


২৪.
প্রশস্ত মার্বল পাথরের ডাইনিং টেবিলের সবচেয়ে কোণার চেয়ারটায় বসে আছে আরিফ রওশন, তার পাশে অবন্তী রওশন। তারপর মাহির ও তার বিপরীত পাশে বসে আছে দীপ্ত। অঙ্কিতা রওশন খাবার পরিবেশন করছেন।

- অঙ্কিতা, বাড়ির সার্ভেন্টরা তো আছেই। তুমি কোন খামোখা কাজ করছো? খেতে বস না। (মাহিরের মা)

- সারভেন্টরা তো আছেই। কিন্তু নিজের বাড়ির লোকেদের নিজের হাতে খাবার serve করার একটা আলাদা শান্তি আছে। আর তাছাড়া রান্নাটা যখন নিজে করলাম, তখন না হয় পরিবেশনটাও আমি নিজেই করি। (দীপ্তর মা)

- দেখ অবন্তী দেখ, অঙ্কিতাকে দেখে কিছু শেখো। (মাহিরের বাবা)

- তুমি চুপ করো তো, ওসব সাংসারিক কাজকর্ম আমার দ্বারা হবে না। (মাহিরের মা)

- তোমাকে করতেও হবে না। তুমি এভাবেই ঠিক আছো। নাহলে রান্না করতে গিয়ে কখন দেখা যাবে রান্নায় নুনের জায়গায় চিনি দিয়ে ফেলেছো। (দীপ্তর মা)


দীপ্তর মার কথা শুনে সবাই হাসতে লাগলো। মাহির যদিও তেমন হাসে না, তবুও তার ঠোঁটের কোণে সামান্য হাসির রেখা দেখা গেলো। দীপ্তর মা সবাইকে খাবার বেড়ে দিয়ে দীপ্তর পাশে গিয়ে বসলেন।

- আজ এত বছর পর দেশে এসে যে কি ভালো লাগাছে বলে বোঝাতে পারবো না। (মাহিরের বাবা)

- সেই তো এক সপ্তাহ পর চলেই যাবেন। (দীপ্তর মা মুখ কালো করে)


কেউ কোন কথা বললো না। কারণ দ্বীপ্তর মা এখনো জানে না যে সবাই স্থায়ীভাবে দেশে ফিরেছে।


- দীপ, মাহির তোমরা অফিস কখন যাচ্ছো? (মাহিরের বাবা)

- বিকেলের দিকে বের হব dad. (মাহির)

- ও। আমি তাহলে আজকে অফিস যাচ্ছি না। আমি কিছুদিন ফ্যাক্টরিগুলো visit করি। তারপর অফিসে যাবো। (মাহিরের বাবা)

- As your wish dad. (মাহির)

২৫.
মাহির নিজের রুমের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দূরে তাকিয়ে আছে। সবাই খাওয়া-দাওয়া শেষে এখন যে যার ঘরে রেস্ট নিচ্ছে। মাহিরের কাজ ছাড়া কিছু ভালো লাগছিলো না। তাই সে তার প্রিয় জায়গায় এসে দাড়িয়েছে। এমন সময় মাহির তার ঘাড়ে কারও হাত রাখার স্পর্শ পায়। সে পেছন ঘুরে দীপ্তকে দেখতে পায়। দীপ্ত তার কাঁধে হাত রেখেই তার পাশে এসে দাঁড়ায়।

- কী করছিস একা এখানে? (দীপ্ত)

- এমনি দাঁড়িয়ে আছি। তুই হঠাৎ আমার ঘরে এলি? (মাহির)

- এমনি দেখতে এলাম তুই কি করছিস। (দীপ্ত)

- সবকিছু কত বদলে গেছে না দীপ? আগের সেই ঢাকা শহর আর নেই। এখন এটা আরও বেশি দূষণমুক্ত আর দমবন্ধকর হয়ে গেছে। (মাহির)

- তা তো হবেই। যুগ বদলেছে যে। যাই হোক, আজ বিকেলে পাঁচটা নাগাদ তো আমরা অফিসে যাচ্ছি। (দীপ্ত)

- হ্যাঁ তো? (মাহির)

- না, মানে বলছিলাম যে এতদিন পর দেশে আসলাম, একটু ঘোরাঘোরি না করলে হয়। আমার না হয় চারটার দিকে বেরোবো, তারপর একটু এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করে ওদিক দিয়ে অফিসে চলে যাবো। (দীপ্ত)

- তুই আর বদলালি না। আচ্ছা ঠিক আছে তাই হবে। (মাহির)

- Thank you ভাইয়া। (দীপ্ত)


প্রত্যুত্তরে মাহির একটু হাসলো।

২৬.
পার্কের বেঞ্চের মধ্যে গালে হাত দিয়ে বসে আছে দিনা। সে আখির দিকে তাকিয়ে আছে। আখি হাত কচলাতে কচলাতে এদিক ওদিক পায়চারি করছে। এক সময় তার দিনার দিকে নজড় গেলো।

- তোকে কি আমি গালে হাত দিয়ে বসে আমাকে দেখার জন্য এখানে নিয়ে এলাম? (আখি)

- তো কি করবো আমি? (দিনা)


আখি দিনার দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো-

- তোকে সকালবেলা অফিস থেকে বাড়ি নিয়ে গেলাম, দুপুরবেলায় আমারই বাড়িতে বসে ভালোমন্দ গিলে এখন বলছিস আমি কি করবো? আরে তোর জন্য আমি এতকিছু করলাম কেনো, যাতে তুই আমায় ভালোদেখে একটা idea দিতে পারিস। (আখি)

- আমার মতে সবচেয়ে ভালো idea হলো তুই অফিস থেকে রিজাইন নিয়ে নে। ব্যাস্, ঝামেলা শেষ। (দিনা)


আখি দিনার পাশে বসে তার মাথায় একটা গাট্টা মেরে বললো-

- এটা যদি করতাম তাহলে তো অনেক আগেই করতে পারতাম। এত ঝামেলা করতাম না। অন্য কোনো idea বল। (আখি)

- বস থাকবে কতদিন? (দিনা)

- শুনলাম তো এক সপ্তাহ। (আখি)

- Well, এই এক সপ্তাহ তুই অফিসেই যাস না। (দিনা)

- তোর কি মনে হয়, ঐ ম্যানেজার আমায় ছেড়ে দেবে? (আখি)

- তাহলে বাঁশ খাওয়ার জন্য রেডি থাক। (দিনা)

- এমন করে বলিস না দিনু, আমি আমার চাকরিটাকে ভালোবাসি। এটা হারাতে পারবো না। (আখি)

- আরে বাবা আমি কি চাচ্ছি যে তুই তোর চাকরি হারা? কিন্তু তুই এমন একটা situation create করে রেখেছিস যে না পারছিস জলে থাকতে না পারছিস ডাঙায় থাকতে। (দিনা)

- এই, একটা কাজ করলে হয় না। আমরা বসকে অফিসেই যেতে দেব না। মানে, আমরা যদি বসকে অফিসে যাওয়া থেকে আটকাতে পারি তাহলেই তো সব ঝামেলা মিটে যায়। (আখি)

- কিন্তু সেটা কীভাবে? এখন বাজে চারটা। আর মাত্র একঘন্টার মধ্যে বস অফিসে ঢুকবে। ওনাকে কিভাবে আটকাবি তুই? (দিনা)

- কিডন্যাপ করবো। (আখি)

- কিহ? (দিনা)

- বসকে কিডন্যাপ করবো। (আখি)


দিনা আখির কথা শুনে খুব বড়সড় একটা বিষম খেলো। কাশতে শুরু করলো সে। আখি তা দেখে বিরক্ত হলো বলে মনে হচ্ছে। সে কিছুক্ষণ পর নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো-

- তুই,,,,,, তুই বসে কিডন্যাপ করবি? তোর মাথা টাথা ঠিক আছে তো? (দিনা)

- আমার মাথা একদম ঠিক আছে। এছাড়া আর কোনো উপায় নেই। (আখি)

- আখি দেখ পাগলামো করিস না, তুই বারবার ভুল করে পরে পস্তাস। (দিনা)

- এটা করা ছাড়া আমার আর কিছু করার নেই, তুই কেন সেটা বুঝতে পারছিস না? (আখি)

- আচ্ছা বুঝলাম, কিন্তু তুই কিডন্যাপার এখন কোথায় পাবি? (দিনা)


আখি এবার চিন্তায় পড়ে গেল।


২৭.
মাহির ও দীপ্তও একটি পার্কে ঘুরতে এসেছে। তারা ফর্মাল লুকেই এসেছে। কারণ এখান থেকে তাদের অফিসে যেতে হবে। দীপ্তর মুখ দেখে তাকে বেশ প্রফুল্ল মনে হচ্ছে। কিন্তু মাহিরের কেমন লাগছে তা বোঝা যাচ্ছে না। সে পকেটে হাত ঢুকিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটছে।

- উফ, এতক্ষণ পর নিজেকে স্বাধীন মনে হচ্ছে। (দীপ্ত)

- কেন, এতক্ষণ তোকে পরাধীন কে করে রেখেছিল? (মাহির)

- আরে বাবা বাড়িতে থাকাটা যে আমার কাছে কত বড় পরাধীনতা, সেটা তুই আর কি বুঝবি। (দীপ্ত)

- হয়েছে, আমার আর বুঝে কাজ নেই। (মাহির)

- তো ভাইয়া, দেশে যখন এসেই গেছিস, তখন একটা ভালো দেখে মেয়ে পটিয়ে নে। দেখ এখানকার মেয়েরা কিন্তু সুন্দরী, ভদ্র, সুশীল। বয়স তো তোর কম হলো না। তাই না? (দীপ্ত)


মাহির তার সেই ভয়ংকর শান্ত দৃষ্টি দীপ্তর দিকে নিক্ষেপ করলো। ব্যাস, সেটা দেখেই একদম চুপসে গেলো দীপ্ত। ভুল মানুষকে ঠিক কথা বলে ফেলেছে যে।

- আমাকে মেয়ে পটাতে হয় না, না আমার মেয়েদের প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট আছে। মেয়েরাই আমার পেছনে লাইন ধরে থাকে। তাই আমার সামনে এই টপিকে কথা বলার সময় বুঝে শুনে কথা বলবি। (মাহির)


দীপ্ত মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।

- আজকে রাত দুটোর দিকে রেডি থাকবি। (মাহির)

- আজকেই যেতে হবে? (দীপ্ত চোখ বড় বড় করলো)

- পনেরো বছর ধরে তো এই দিনটার অপেক্ষাই করছিলাম। আর দেরী করতে চাইছি না। (মাহির)

- আচ্ছা। তুই যেমন বলবি, তেমনই হবে। (দীপ্ত)


এমন সময় দীপ্তর ফোন বেজে ওঠে। সে ফোনটা বের করে দেখে অঙ্কিতা রওশন কল করেছেন। মায়ের সাথে কথা বলার জন্য সে একটু সাইডে চলে যায়। মাহির তখন নিজের মনে ফোন টিপতে টিপতে ধীরপদে পার্কে হাঁটছিলো। এমন সময় হঠাৎ একটি মেয়েলি স্বর কানে আসতেই সে থেমে গেলো।

- যে করেই হোক, মাহির রওশনকে কিডন্যাপ করাতেই হবে।



চলবে..............................


এতদিন ভাবতাম কেউ হয়ত কোনো পরোয়াই করে না আমি কখন লেখা প্রকাশিত করি তা নিয়ে। কিন্তু সেই ধারণা আমার ভেঙে গেছে। আপনারা কেউ কিছু না বললে এমন ধারণাই থাকবে। তাই দয়া করে মাঝেমধ্যে একটু সাড়া দেবেন, অনন্ত নিজেদের লাভের কথা ভেবে। আমি লেখা প্রকাশে উৎসাহিত হব তাহলে।
78 Views
3 Likes
6 Comments
5.0 Rating
Rate this: