আই এস লাভ বয়

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
আই এস – বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। বয়স মাত্র ১৩ বছর, পড়াশোনা করে সপ্তম শ্রেণিতে। বাবা মনসুর আলী একজন মৎস্য ব্যবসায়ী, আর মা রিনা খান একজন গৃহিণী।

আই এসের জন্মের আগেই, প্রতিরাতে তাহাজ্জুদের নামাজে বাবা মনসুর আলী রবের কাছে একটাই দোয়া চাইতেন – যেন তার ছেলে বড় হয়ে একজন ডাক্তার হয়। একই স্বপ্ন ছিল মা রিনার – ছেলেকে বড় মানুষ করার।

সময় কেটে যায়...

আই এস তখন ১৬ বছরের কিশোর, এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। একদিন রাতে, মাছ বিক্রি করে ফেরার পথে বাবা মনসুর আলী ছেলের জন্য একটি বড় কাতলা মাছ কিনে আনছিলেন। পকেটে ছিল মাছ বিক্রির টাকা। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, সেই রাতেই দুর্বৃত্তদের হাতে প্রাণ হারান মনসুর আলী।

পরদিন সকালেই মা রিনা খানের বুকফাটা কান্না আর থামছে না। পাশে দাঁড়িয়ে আই এস মাকে শান্তনা দিচ্ছে, “মা, তুমি কেঁদো না। আমার খুব কষ্ট হয়।” বাবার দাফনের পর শুরু হয় সংগ্রামের জীবন। আই এস অল্প অল্প যা ইনকাম করতো, তা দিয়েই চলতো সংসার আর পড়াশোনার খরচ।

দিন যায়...

এসএসসি পরীক্ষা চলছে। পাশের বেঞ্চে বসে থাকা লাবণ্য প্রতিদিন আই এসের সঙ্গে একটু কথা বলার চেষ্টা করতো, কিন্তু আই এস কথা বলত না। কারণ, মা প্রতিদিন বলতেন, “বাবা, কোনো দুষ্ট মেয়ের ফাঁদে যেন পড়ো না।” আই এসের একটাই লক্ষ্য – ডাক্তার হতে হবে, মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে হবে।

একদিন পরীক্ষা শেষে বৃষ্টি নেমেছিল। লাবণ্য বললো, “আই এস, চলো একসাথে যাই।”
আই এস বললো, “না, আমি একা যাবো, বৃষ্টি থামলে। আপনি ছাতা নিয়ে চলে যান।”
লাবণ্য চলে গেলো, আর আধা ঘণ্টা পর আই এসও রওনা দিলো।

রাস্তায় শুনলো কেউ সাহায্য চাইছে। গিয়ে দেখে, কিছু ছেলে লাবণ্যকে মারছে। সাহস করে আই এস ঝাঁপিয়ে পড়লো তাকে বাঁচাতে। অনেক কষ্টে তাদের তাড়িয়ে লাবণ্যকে জিজ্ঞেস করলো, “তারা কেন তোমাকে মারছিলো?”
লাবণ্য বললো, “প্রতিদিন বাজে কথা বলতো, আজ চেয়ারম্যানের কাছে নালিশ দিতে যাচ্ছিলাম, তাই মারলো।”

এক সপ্তাহ পর, পরীক্ষা শেষে বের হওয়ার সময় লাবণ্য ডাক দিলো, “আই এস, তোমার নাম্বারটা দেবে?”
আই এস জিজ্ঞেস করলো, “কেন?”
লাবণ্য হাসলো, “ভালো ছাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা ভালো।”
আই এস ফিসফিস করে বললো, “ভালো ছাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে লাভ কি, যদি প্রিয় মানুষটাকে কাছে না পাওয়া যায়...”
লাবণ্য জিজ্ঞেস করলো, “কি বললে?”
আই এস কিছু বলল না, হাঁটতে লাগলো। পেছন থেকে লাবণ্য বললো, “আই এস, আমাকে ভুলে যেও না…”

আই এসের চোখ থেকে অশ্রু ঝরতে লাগলো, কিন্তু মায়ের কথা তো অমান্য করা যাবে না...

বছর কয়েক পর...

আই এস তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র। দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, তাই গ্রামে আছে। একদিন শুক্রবার, পড়ার টেবিলে বসে ছিলো, তখন দরজায় কেউ নক করলো।
“আমি রনি, চেয়ারম্যান সাহেব পাঠিয়েছেন – আপনার মাকে বয়স্ক ভাতার কার্ড দিবেন।”

কার্ড করা হলো। কিছুদিন পর প্রতিষ্ঠান খুলে গেলে আই এস ফিরে যায় ঢাকায়।

এদিকে লাবণ্য প্রতিদিন ফোন করতো, কিন্তু আই এস কখনো ফোন ধরতো না। মাস কয়েক পর একদিন চাচা ফোন করে বললো, “তোর মা খুব অসুস্থ, তাড়াতাড়ি আয়।”

আই এস এসে দেখে, মায়ের অবস্থা খুব খারাপ। ঢাকায় নিয়ে গেলে ডাক্তার বললো, “অপারেশন লাগবে – খরচ হবে ৫-৬ লাখ টাকা।”

চিন্তায় পড়ে যায় আই এস – এত টাকা কোথা থেকে আসবে?

চলে গেলো চেয়ারম্যানের কাছে।
চেয়ারম্যান বললো, “দিবো, কিন্তু একটা শর্তে – আমার একমাত্র মেয়ে সারিকাকে বিয়ে করতে হবে। যদিও তার জন্ম থেকেই এক হাত নেই।”

আই এস বললো, “আপনার অনেক টাকা, মেয়ের বিয়ে অন্য কোথাও দিতে পারেন। আমি তো শুধু টাকা চেয়েছি, বউ না।”
চেয়ারম্যান বললেন, “আমি তো টাকাটা ফেরত চাইনি, জামাই চাইছি।”

শেষে মা'কে বাঁচাতে রাজি হয়ে গেলো আই এস।

চিকিৎসা শেষে মা সুস্থ হয়ে উঠলেন। কয়েকদিন পর চেয়ারম্যান এসে বললেন, “বিয়ের কথা মনে আছে তো?”
আই এস বললো, “মনে আছে চাচা, তবে আমি টাকা ফেরত দিতে চাই – ডাবল দিয়েও দিবো।”

কিন্তু কে শোনে কার কথা?

সব শুনে ছুটে আসে লাবণ্য।

“তুমি কি পারতে না একবার বলতে যে তোমার টাকা দরকার? আমি তো তোমায় ভালোবাসি। আমার জন্য কি একটুও মায়া নেই তোমার?”
আই এস চুপ করে থাকে। চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে।
লাবণ্য বলে, “তোমার চোখে আজও ভালোবাসা দেখি...”

বিয়ের আগের দিন, লাবণ্য অজু করে সেজদায় পড়ে যায়। সলাতুল হাজ্জত পড়তে শুরু করে।

আই এস তখন ফোন করে ম্যাজিস্ট্রেট চাচাকে – যাঁর সাথে সম্পর্ক একরকম বিচ্ছিন্ন ছিল। সব ব্যাখ্যা দিয়ে সাহায্য চায়।

চাচা আসেন – এবং বিয়ে বন্ধ করে দেন। এরপর লাবণ্যকে ডেকে আনেন এবং আই এসের সঙ্গে তার বিয়ে দেন।

লাবণ্য বলে,
"সত্যি তুমি একজন লাভ বয়..."


---

শিক্ষা:

ধৈর্যের ফল কখনো তিক্ত হয় না। সবসময় মিষ্টিই হয়।

রবের কাছে অভাব নেই। কিন্তু আমাদের চাইতে জানতে হয় সঠিকভাবে, পবিত্র মনে।



---

বিঃদ্রঃ এই গল্পটি কাল্পনিকভাবে বাস্তবতার সাথে মিল রেখে লেখা হয়েছে। যদি কারো জীবনের সাথে মিলে যায়, তা সম্পূর্ণ কাকতালীয় এবং লেখক দায়ী নহে।
77 Views
1 Likes
0 Comments
4.0 Rating
Rate this: