পরিণীতাসক্তি

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
১.
চারদিকে শুনশান নিরবতা। নির্জনতা এতটাই গভীর যে কারও নিঃশ্বাসের শব্দও স্পষ্ট শোনা যায়। চাঁদের আলো বাইরে স্তব্ধ নদীর গায়ে নেমে এলেও, এই পরিত্যক্ত গোডাউন ঘরটিকে ছুঁয়ে যেতে পারেনি। ভেতরে কেবল সোডিয়াম বাতির ঝাপসা হলুদ আলো, যেন বিষণ্নতা ছড়ানো কিছু মরচে ধরা প্রহর, যেখানে সময় থেমে আছে। সেই আবছা আলোয় ভেসে ওঠে কয়েকটি প্রতিচ্ছায়া। ঘরের ঠিক মাঝখানে একটি পুরোনো কাঠের চেয়ার।
সেখানে বসে আছে একজন যুবক। উন্নত কাঁধ, প্রশস্ত বুক, আর একধরনের আত্মবিশ্বাসী স্থিরতা যার পুরো শরীরজুড়ে বিদ্যমান। পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে সে। ডান হাতে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে একটি চিকচিকে ধারালো ছুরি। ছুরিটির ফলা মাঝে মাঝে আলো প্রতিফলিত করায় যেন আলোটুকুও কেঁপে উঠছে।
যুবকটির চোখে কোনো রাগ নেই, মুখে কোনো ক্ষোভ নেই, শীতল ও শান্ত দৃষ্টি। তবু তার সেই নির্লিপ্ত, গভীর ও তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে এমন কিছু আছে—যা বুকের ভেতরটা কাঁপিয়ে দেয়।

হঠাৎ তার হাত থেমে যায়। ছুরিটি আর নড়ে না। বাতাসটাও যেন থেমে যায় তার সঙ্গে সঙ্গে। তার চোখ ধীরে ধীরে উঠে আসে সামনের দিকে। মেঝেতে তিনজন যুবক গুটিসুটি হয়ে পড়ে আছে। তারা কাঁপছে—প্রচণ্ড ভয় আর অনিশ্চয়তার কারণে। যুবকটির দৃষ্টি স্থির। সে একটু নীচু হয়ে শুধু শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তাদের দিকে। তারপর একসময় রাশভারি গম্ভীর কণ্ঠে বলে ওঠে-

- মেয়েটার গায়ে সর্বপ্রথম কে হাত দিয়েছিলি? (যুবকটি)


আচমকা যুবকটির ভারী কণ্ঠস্বর যেন তাদের কাঁপুনি আরো বাড়িয়ে তুলেছে। তারা তিনজনেই একটা শুকনো ঢোক গিললো।

- বল.. নাহলে তিনজনকেই পুঁতে রেখে দেবো। (যুবকটি)


যুবকটি এবারে উচ্চস্বরে ধমক দিয়ে বললে তিনজনই কেঁপে ওঠে। যুবকটির একেকটি আওয়াজ যেন প্রতিপক্ষের জন্য একেকটি আশঙ্কা। শেষে প্রাণের ভয়ে তারা একটি ছেলের দিকে আঙুল উচিয়ে দেখিয়ে দিলো। তাদের নির্দেশিত ছেলেটির মুখ বর্ণহীন হয়ে গেলো। একটা শুকনো ঢোক গিলে কম্পিত হাতদুটি জোড় করে বললো-

- মাফ ক... (ছেলেটি)


আর বলতে পারলো না ছেলেটি। তার কথা শেষ হওয়ার আগেই যুবকটি তার হাতে থাকা ছুরিট ছেলেটির দিকে ছুঁড়ে মারলো। তার নিশানা লাগানোর নিখুঁত দক্ষতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে ছেলেটির হাতের পাঁচটি আঙুলই পড়ে গেলো। বিকট একটি চিৎকার ধ্বনিত হলো বাতাসে। নিশাচর পাখিদের ডানা ঝাপটানোর শব্দও পাওয়া গেলো। যুবকটি শান্ত দৃষ্টি রক্তচক্ষু আকার ধারণ করলো। সে উঠে দাঁড়ালো। উচ্চস্বরে হাঁক দিয়ে বললো-

- এই কে আছিস.... এ সবকটাকে চাবুক মেরে মেরে অজ্ঞান করে ফেলে একটা ঘরে বন্ধ করে রাখ। তারপর জ্ঞান ফিরে এলে কয়েকটা ক্ষুধার্ত কুকুরের খাঁচায় ঢুকিয়ে দিবি। দেহটাকে খুবলে খুবলে খেলে যে কতটা যন্ত্রণা হয়, বুঝতে পারবি এবার। (যুবকটি)


যুবকটি বেরিয়ে গেলো। কুয়াশাচ্ছন্ন রাতের আধারে মিলিয়ে গেলো সে।

২.
- আখি, আখি..... এই মেয়ে, ওঠ, আখি..... (মহিলাটি)

এক মধ্যবয়স্কা মহিলা বিছানায় পড়ে থাকা ঘুমন্ত মেয়েটিকে তোলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তার ডাকাডাকিতে খুব একটা কাজ হচ্ছে না। কারণ তার ডাকে মেয়েটি চোখ পর্যন্ত খুলছে না।

- আর পাঁচ মিনিট। (আখি)

বিছানায় শুয়ে থাকা আখি ঘুমকাতুরে গলায় ঠোঁট উল্টে বলল।

- সেই কখন থেকে তো পাঁচ মিনিট পাঁচ মিনিট করেই যাচ্ছিস। ওদিকে যে ন'টা বাজতে চললো তার খেয়াল আছে? (মহিলাটি)

মহিলার এই কথা শুনেই আখি লাফ দিয়ে উঠে বসলো। তার চোখ মুখ থেকে ঘুম ঘুম ভাব কেটে গিয়ে দেখা দিয়েছে বিস্ময় ও ভয়। সে সবিস্ময়ে বললো-

- নটা বেজে গেছে !!! তুমি আমাকে আগে ডাকোনি কেন? (আখি)

- সেই আটটা থেকে তোকে ডেকে চলেছি। কিন্তু কে শুনছে কার কথা? তুই কুম্ভকর্মের মতন ঘুমিয়েই যাচ্ছিস। (মহিলাটি)

- এখন সরো, সরো, দশটার দিকে অফিস। ন'টা বেজে গেছে। এক ঘন্টার মধ্যে আমাকে অফিসে যেতে হবে।


আখি তাড়া দিয়ে বলল। সে দৌড় দিয়ে গিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো। আর তার মা কিছুটা বিরক্তি সহকারে বললো-

- একদিনও যদি সময় মত ওঠে। প্রত্যেকদিন এভাবে দেরি করে উঠে পাড়াপাড়ি করবে। আমারই হয়েছে যত জ্বালা। (আখির মা)


আখির মা ড্রাইংরুমে যান। তিনি গিয়ে দেখেন আখির বাবা সোফায় বসে পত্রিকা পড়ছেন। তাকে গজগজ করতে দেখে আখির বাবা বলে উঠলেন -

- কী ব্যাপার, সকাল সকাল রাগারাগি করছো কেনো? (আখির বাবা)

- কেনো আর করবো, তোমার মেয়ের জন্য করছি। এত অলস যে কেনো মেয়েটা কে জানে। (আখির মা)

- ওই একটু আধটু দেরী হয়ই। ছেড়ে দাও। বাচ্চা মানুষ। (আখির বাবা)

- বাচ্চা! দুদিন পর বাচ্চার মা হবে, সেই মেয়েকে তুমি বাচ্চা বলছো! (আখির মা)

- আমার কাছে ও সবসময় বাচ্চাই থাকবে। (আখির বাবা)

- হ্যাঁ, সেই। (আখির মা)

এমন সময় আখি দ্রুতপদে অফিসের ফর্মাল লুকে ডাইনিং টেবিলে হাজির হয়। আর তাড়াতাড়ি খাবার নিয়ে খেতে শুরু করে।

- আরে আস্তে খা। (আখির বাবা)

- আস্তে খাওয়ার টাইম নেই বাবা। এক্ষুনি অফিস দৌড়াতে হবে। (আখি)

আখি কোনোমতে খাবার গলধঃকরণ করে অফিসের দিকে রওয়ানা দিল। তবে যাওয়ার আগে একবার উঁকি দিয়ে বলল-

- বাবা, রাতে এসে কিন্তু আড্ডা দেবো। রেডি থেকো।  (আখি)

- হ্যাঁ, হ্যাঁ থাকবো। সাবধানে যাস। আর ফেরার সময় দিনার সাথে আসিস। (আখির বাবা)

- Okey, bye. (আখি)

আখি আবার বাইরের দিকে ছুটলো।

আখি ইয়াসমিন বছর পঁচিশের খুবই মিষ্টি একটি মেয়ে। তার হরিণের মতো টানাটানা চোখ, গোলাপের পাপড়ির মতো ঠোঁট ও লম্বা ঘন হালকা কোকড়ানো চুল যেকোনো পুরুষের মন চুরি করার জন্য যথেষ্ট। বাবা ও মায়ের সাথে ঢাকা শহরে থাকে। তার বাবা একজন শিক্ষক ও মা একজন গৃহিনী। তাদের পারিবারিক অবস্থা মোটামুটি স্বচ্ছল। পড়াশোনা শেষ করেই সে ঢাকার একটি বড়ো কোম্পানিতে চাকরি পায়। শুরু হয় তার চাকরিজীবন। সে এমনি তার কোম্পানিকে ভালেবাসে, কিন্তু সে একটু অলস প্রকৃতির। সময়মতো কাজ না করার জন্য সে প্রায়ই অফিসের ম্যানেজারের কাছে বকা খায়। জীবনে এই একটা সমস্যা ছাড়া তেমন কোনো সমস্যা নেই তার। জীবনের পঁচিশটা বছর সরলতার সাথে নির্বিঘ্নেই কেটেছে। কিন্তু এই নির্বিঘ্নতা কাটতে আর বেশি দিন নেই। খুব শীঘ্রই জোয়ারভাটা আর জটিলতায় তার সমগ্র জীবন যে পূর্ণ হতে চলেছে, সেটা এখনও বিন্দুমাত্র টের পায়নি সে।

৩.

দীর্ঘ পনেরোমিনিট জ্যামে আটকে থাকার পর অবশেষে আখি অফিসে পৌঁছালো। সে এখন একটি বারোতলা বিল্ডিংয়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। বিল্ডিংয়ের গায়ে বড় করে 'Raoson Enterprise' নামটি লেখা আছে। আখি ভীত কন্ঠে একবার হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো-

- পাঁচমিনিট লেইট। এভাবে পরপর তিনদিন লেইট করলাম আমি। ওপরওয়ালা জানে, আজকে কপালে কি আছে। (আখি)

মনে কিছুটা ভয় নিয়েই আখি অফিসে প্রবেশ করে। অফিসে ঢুকতেই অফিসের সব এমপ্লয়ি তাকে Good morning জানায়। সেও তাদের উত্তর জানায়। তার সমবয়সী একটি মেয়ে তার কাছে এসে বলে-

- আখি, তুই আজকেও লেইট। (মেয়েটি)

- জানি আমি। তাই তাড়াতাড়ি পা চালাচ্ছি। তুই এখানে বোস, আমি ম্যানেজার স্যারের কাছ থেকে আসছি। (আখি)

- হুম। (মেয়েটি)


আখি ভয়ে ভয়ে ম্যানেজারের কেবিনের গেটে নক করলো।

- May I come in, sir? (আখি)

- Yes, come in.

ভেতর থেকে উত্তর এলো।


আখি ভয়ে ভয়ে কেবিনের ভেতরে গেলো। ভেতরে একটি লোক বসে আছে। তার বয়স পঞ্চাশোর্ধ হবে। পেছনদিকে একগোছা চুল ছাড়া পুরো মস্তকে আর কোথাও চুলের টিকি নেই। মুখের কোঁচকানো চামড়াগুলো আরো কূচকে তিনি বাজখাঁই কণ্ঠে বলে উঠলেন-

- আপনি আজকেও পাঁচমিনিট লেট মিস আখি। (ম্যানেজার)

- ইয়ে.... মানে, স্যার, রাস্তায় একটু জ্যাম ছিলো। তাই আরকি........ (আখি)

- প্রতিদিন রাস্তায় জ্যাম থাকে? (ম্যানেজার)

- হ্যাঁ স্যার। আসলে রাস্তাটায় এইসময় এত বেশি মানুষ আসা-যাওয়া করে যে........ (আখি)

- (ধমক দিয়ে) চুপ করুন। আচ্ছা আপনার লজ্জা করেনা? আপনি প্রতিদিন যে দেরি করে আসেন। সামন্যতম লজ্জা থাকলেও তো এই অভ্যাসটার পরিবর্তন করা যায়। (ম্যানেজার)

আখি নিশ্চুপ শ্রোতা হয়ে মাথা নিচু করে শুধু ম্যানেজারের কথা শুনলো। কোন উত্তর দিলো না।

- ভাগ্যিস বড় স্যার এখানে থাকেন না। নাহলে আপনি অনেক আগেই এই অফিস থেকে বের হয়ে যেতেন। আজকে আপনাকে শেষবার সুযোগ দিচ্ছি। এরপর যদি আর একদিন দেরী করেন, তাহলে আর কোনো কথা শুনবো না। সোজা ঘাড় ধাক্কা দিয়ে অফিস থেকে বের করে দেব। Got it. (ম্যানেজার)

আখি উপর-নিচে মাথা নাড়ালো।

- এই ফাইলগুলো নিয়ে যান। এগুলো সব আগামীকালের মধ্যে কমপ্লিট করে আমাকে এসে জমা দেবেন। (ম্যানেজার)

- Yes sir. (আখি)

আখি ফাইলগুলো নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে। সে বের হওয়ার সাথে সাথে সেই আগের মেয়েটি তার কাছে আসে এবং বলে-

- কীরে, কি বললো ম্যানেজার? (মেয়েটি)

- ঐ ওনার ডায়লগগুলো শোনালো। (আখি)

ম্যানেজার তাকে যা যা বলেছে সব সে মেয়েটিকে বললো।


- আমার মনে হয় উনি কিন্তু একটু বেশিই বলেছেন। অসহ্যকর লোক একটা। আসলে একটা কথা কি বলতো, এখানে বস নেই বলে উনি নিজেকে এখানকার সর্বেসর্বা মনে করছেন। (মেয়েটি)

- বাদ দে না ওসব কথা দিনা। কাজে চল। এমনিই দেরী হয়ে গেছে। (আখি)

- হুম, চল। আর এরপর থেকে একটু তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করিস। (দিনা)

- ওকে মেরি মা। (আখি)


দিনা আখির কোথায় ফিক করে হেসে ফেললো। তারপর যে যার কাজে চলে গেল।

দিনা আখির ছোটবেলাকার বন্ধু। দেখতে সে খুবই কিউট। সৌন্দর্যে আখির থেকে কোনো অংশে কম নয়। দিনা ও আখি হলো একআত্না-একপ্রাণ। তারা একসাথে স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি পড়েছে। এমনকি তারা এখন একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছে। আখির কোন ইচ্ছেই ছিল না এখানে চাকরি করার। নেহাত দিনা এখানে চাকরি পেয়েছিল, তাই সেও একরকম বাধ্য হয়েই এখানে চাকরির ফর্ম তুলেছিলো। আখি মেধাবী হওয়ায় তার চাকরিটা পেতে কোন সমস্যা হয়নি। তবে চাকরির শুরুটা বাধ্য হয়ে করলেও এখন আখির এই কোম্পানির প্রতি একটা আলাদা ভালোবাসা জমে গিয়েছে।


সেদিনকার মতো আখি অফিস শেষ করে দিনার সাথে বাড়িতে ফিরে আসে। আর এসেই ড্রয়িং রুমে বাবা মেয়ের আড্ডা বসে যায়। আখি বাবাকে সারাদিন কি কি করেছে সবকিছুর বর্ণনা দেয়।

 
আখির বাবা শুধু তার বাবাই নয়, বরং সবচেয়ে কাছের বন্ধুও বটে। তার সম্পর্কে এমন কোন কথা নেই যা তার বাবা জানে না। এই মানুষটা তাকে সবসময় সঠিক পরামর্শ দিয়ে এসেছে। সব রকমের পরিস্থিতিতে তার হাত ধরে রেখেছে। মধ্যবিত্ত পরিবারের হলেও তাকে কখনো অভাবের ছোঁয়া পেতে দেয়নি। আখির সামান্য থেকে সামান্যতম আঘাতে তার চোখ থেকে জল বেরিয়েছে। সব সময় একটি বটবৃক্ষের মতন তাকে আগলে রেখেছে।

আজকের অফিসের সব ঘটনা আখি তাকে বললে তিনি আখিকে পরবর্তী দিন সময় মত অফিসে যেতে পরামর্শ দেন। আখি কিছুক্ষণ বাবার সাথে আড্ডা দিয়ে ঘুমাতে চলে যায়।


৪.
আমেরিকার এক অভিজাত অট্টালিকার তৃতীয় তলায় অবস্থিত রওশন এন্টারপ্রাইজের কনফারেন্স রুম তখন পিনপতন নীরবতায় ডুবে ছিল। টেবিলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফাইল আর স্ক্রিনে চলমান প্রেজেন্টেশনের সামনে দাঁড়িয়ে এক যুবক নিজের ভুলের ব্যর্থ সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করছিল। ঠিক সেই মুহূর্তে কাচের দরজা নিঃশব্দে ঠেলে ঘরে প্রবেশ করলো এক দীর্ঘদেহী যুবক। তার পরনে ছিল ধূসর রঙের স্যুট, পায়ে চকচকে কালো চামড়ার জুতো, আর ডান হাতের ঘড়ির নিচ থেকে উঁকি দিচ্ছিল শিরা ওঠা কড়া কবজির রেখা।

তার চোখেমুখে ছিল এক অসম্ভব গাম্ভীর্যতা, যা তার গৌরবর্ণের ত্বকের সঙ্গে ঠোঁটের চারপাশে সুবিন্যস্ত চাপা দাড়ির আবরণে আরও বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছিল। তার হাঁটার ভঙ্গি ছিল স্থির ও অবিচল, আর চোখে ছিল এক সরল দৃষ্টিপাত। সেই দৃষ্টিতে কোনো তীব্রতা ছিল না, ছিল এক অভ্যস্ত শীতলতা, যা তার ব্যক্তিত্বের গভীরতা প্রকাশ করে।

তার প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই যেন ঘরের ভেতরের বাতাসও ভারী হয়ে উঠলো, এক নিস্তব্ধ পিনপতন নীরবতা কনফারেন্স রুমের প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে পড়লো। সে নীরবে হেঁটে গিয়ে নিজের জন্য নির্দিষ্ট সামনের চেয়ারটিতে বসে পড়লো। তাকে আসতে দেখে এতক্ষণ ধরে সাবলীলভাবে প্রেজেন্টেশন দেওয়া যুবকটিও যেন মুহূর্তেই ঘাবড়ে গেল। হাতে ঘাম আর কণ্ঠে জড়তা নিয়ে সে তবুও তার উপস্থাপনা চালিয়ে যেতে বাধ্য হলো।


- স্যার, সেকেন্ড কোয়ার্টারে আমাদের projected ROI কমে গেছে কিছু unavoidable delay-এর কারণে... আমি..... (ছেলেটি)

ছেলেটির কথা শেষ হওয়ার আগেই যুবকটির ঠোঁট নড়লো। একরাশ ভারী ও গাম্ভীর্যপূর্ণ কণ্ঠে সে বলে উঠলো-

- বিজনেসে 'unavoidable' বলে কিছু নেই। যা হয়, সেটার দায় কাউকে না কাউকে নিতে হয়। (যুবকটি)


ঘরজুড়ে আবার নিস্তব্ধতায় ছেয়ে গেলো। কিন্তু তাও ছেলেটি একটি শুকনো ঢোক গিলে বলল-

- স্যার, হিসেবটা আমরা রিভাইস করব। (ছেলেটি)

- হিসেব ভুল হলে সেটা শোধরানো যায়। কিন্তু আমার সময় নষ্ট হলে, সেটা তো ফেরত পাওয়া যায় না Mr.Joseph. (যুবকটি)


যুবকটির চোখের দৃষ্টি এমন, যেন একটা সামান্য ভুল সংখ্যা বসানোও ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। সে এবারে সামনে থাকা ফাইলটি বন্ধ করলো।

- এই রিপোর্ট বাতিল করো। দুপুরের মধ্যে স্টিফেন নতুন এনালাইসিস তৈরি করবে। (জোসেফের দিকে তাকিয়ে) আর আপনি, টেবিল ছেড়ে যাওয়ার আগে আরেকবার ভাববেন-আপনি এখানে চাকরি করতে এসেছেন, না ভুল ধরিয়ে দিয়ে আমার সময় নষ্ট করাতে। (যুবকটি)


এই বলে যুবকটি টেবিল থেকে উঠতেই আরেকজন বলে ওঠে-

- স্যার JR company-র সাথে কি আমরা ডিলটা করছি? ওনাদের কথা শুনে যা মনে হলো, তাতে তো মনে হয় ওনাদের বিশ্বাস করা যায়। (স্টাফ)


যুবকটি তার দিকে না তাকিয়েই দৃঢ় গলায় বলে-

- আমি contact paper এ বিশ্বাস করি, মুখের বুলিতে নয়। ওদের কাগজের ভিত্তি নড়বড়ে। আর আমি ইস্পাতের দৃঢ়তা ছাড়া এগোই না। আশা করি বুঝতে পেরেছ। (যুবকটি)


যুবকটি হাতে থাকা সানগ্লাসটি চোখে পড়ে নিয়ে বড় বড় পা ফেলে কনফারেন্স রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। কনফারেন্স রুম থেকে বেরিয়ে সে যখন স্যুটের হাতা গোটাচ্ছিল, তখন তার পেশিবহুল বাহুর স্পষ্ট আভাস পাওয়া যাচ্ছিল, যা তার বলিষ্ঠতার প্রমাণ। করিডোর ধরে হাঁটার সময় তার প্রতিটি পদক্ষেপে ছিল এক ধরনের ছান্দিক সুশৃঙ্খলতা, যা তার আত্মবিশ্বাসকে আরও বাড়িয়ে তোলে। তার উন্নত নাসা, সুসংজ্ঞায়িত চিবুক আর দৃঢ় চোয়ালের রেখাগুলো যেন নিখুঁত ভাস্কর্যের উদাহরণ। তার চওড়া বুক, সোজা পিঠ আর দৃঢ় কাঁধের ওপর শুধু দায়িত্ববোধ নয়, বরং এক সহজাত আধিপত্যের ছাপ সুস্পষ্ট। মনে হচ্ছিল যেন সে যেকোনো পরিস্থিতিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রস্তুত। তার হাঁটার ভঙ্গিতে ছিল এক ধরনের সুদৃঢ়তা, যা তাকে ভিড়ের মধ্যেও আলাদা করে তোলে। পোশাকের ভাঁজে ভাঁজে লেগে থাকা সুগন্ধটুকুও ছিল তার ব্যক্তিত্বের মতোই মার্জিত—শীতল অথচ তীব্রভাবে আকর্ষণীয়, যা যে কাউকেই তার দিকে তাকাতে বাধ্য করবে। তবে হঠাৎ সে থমকে দাঁড়ালো এক নারীকণ্ঠে।

- মাহির!!


মাহির থেমে দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে ঘুরে তাকালো পেছনে। একটু দূরেই লেডিস স্যুট পরিহিত ফর্মাল গেটআপে থাকা এক যুবতীকে কিছু নিরাপত্তাকর্মী আটকে রেখেছে। মেয়েটি দেখতে ছিপছিপে গড়নের। একটু রোগা, তবে মুখশ্রীতে মিষ্টতার ছোয়া। তবে তাকে আটকে রাখায় সেই মিষ্টতায় কোথাও একটা বিরক্তি লুকিয়ে রয়েছে।

মাহির চোখের ইশারায় গার্ডদের সরে যেতে বলে আবার নিজের পথে হাঁটা দিল। মেয়েটি দ্রুত এগিয়ে এসে তার পাশে এসে তার সাথে পা মেলাতে লাগলো। একটু অধিকার ফলানোর ভঙ্গিতে বললো-

- তোর গেস্ট আমি। একটু সম্মানের সাথে আমাকে রিসিভ কর। (মেয়েটি)


মাহির থেমে গেলো। থেমে গেলো মেয়েটিও৷ মাহির মেয়েটির দিকে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে-

- প্রথমত তুই এর আগেও অনেকবার আমার অফিসে এসেছিস। তাই তোকে গেস্ট বলা যায় না। আর দ্বিতীয়ত, কাকে সম্মান করবো আমি? যে এই সামান্য বাধা পেরোতে পারে না? (মাহির)

- সামান্য? ওপারে কে আছে সেটা দেখতে হবে তো। বাধা পেরিয়ে মাহির রওশনের কাছে যেতে চাইছি। এ বাধা পেরোনো কি মুখের কথা? (মেয়েটি)

- শহরের One of the top businessman এরিশ ইনান-এর মেয়ে শানায়া ইনানের এইটুকু ability থাকা উচিত। (মাহির)

- (ছোট্ট শ্বাস ফেলে) কি আর করার। সেই ability তার নেই। (গলার স্বর পরিবর্তন করে) যাই হোক, ফোন ধরছিলিস না কেন? (শানায়া)

- মিটিং এ ছিলাম। (মাহির)

- ওহ। এখন কি দু-মিনিট সময় পাওয়া যাবে? (শানায়া)

- আরেকটা মিটিং শুরু হতে এখনো বারোমিনিট আছে৷ দশমিনিট পাওয়া যেতেই পারে। (মাহির)

- আমার পরম সৌভাগ্য স্যার, যার থেকে অন্যদিন একমিনিট সময় পাওয়াই দুষ্কর, আজ তার কাছ থেকে দশমিনিট পাবো। (শানায়া)


শানায়ার কথা বলার ধরনে মাহিরের ঠোঁট একটা সূক্ষ্ম হাসির রেখা দেখা গেলো, যা হয়ত খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ না করলে বোঝা যাবে না।

- কেবিনে আয়। (মাহির)


মাহির সোজা নিজের কেবিনের দিকে হাঁটা দিলো। শানায়াও তার পেছনে পেছনে গেল। কেবিনে গিয়েই মাহির নিজের চেয়ারে বসে পড়ে। শানায়াও হাতে থাকা পার্সটি টেবিলের ওপর রেখে তার বিপরীতমুখী চেয়ারটায় বসে। মাহির টেবিলে রাখা ল্যান্ডফোনের মাধ্যমে দু-কাপ কফি অর্ডার করে। তারপর আআার ফোনটি আগের স্থলে রেখে শানায়ার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।

- বল, কি কারণে এসেছিস। (মাহির)

- আংকেলের কাছে শুনলাম বাংলাদেশে যাবি কিছুদিনের মধ্যে। (শানায়া)

- হুম। কথা চলছে। (মাহির)

- কবে ফিরবি? (শানায়া)

- জানি না। না ফিরতেও পারি। (মাহির)

- হুম, বলা যায় না। দেখা গেল ওখানে তোর কোনো মেয়ে পছন্দ হলো, তার তুই তাকে বিয়ে করে পার্মানেন্টলি ওখানে থেকে গেলি। (শানায়া)


মাহির এবার আবার তার গম্ভীর দৃষ্টি শানায়ার দিকে নিক্ষেপ করলো। শান্ত অথচ রাগত স্বরে বললো-

- তুই খুব ভালো করো জানিস শানা, আমি এসব stupidity কখনো করবো না। (মাহির)

- আরে আমি তো মজা করো বলেছিলাম। আমি কি জানিনা-তোর মন জয় করা আর পাথরে ফুল ফোটানো সমান। যাই হোক, আন্টি কি তোকে কিছু বলেছে আমার ব্যাপারে? (শানায়া)

- মম? কোথায়। কিছু বলেনি তো। কেন? কিছু কি হয়েছে? (মাহির ভ্রূ-কূঞ্চিত করে)

- না... মানে তেমন কিছু না। ড্যাড অর্ণবের সাথে আমার বিয়ের কথা বলছিল। (শানায়া)

- অর্ণব শিকদার? (মাহির)

- হুম। শিকদার ইন্ডাস্ট্রির CEO. (শানায়া)

- ওনাকে চুজ করতে পারিস। ওনার সাথে আমি কাজ করেছি। যথেষ্ট responsible আর dedicated উনি। (মাহির)

- উঁহু। আমি অন্য একজনে আসক্ত। (শানায়া)


মাহিরের মুখে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দেখা গেলো।

- তোর ফ্রেন্ড হিসেবে তোকে সাজেশন দিচ্ছি-যদি কারো ওপর আসক্ত হয়ে থাকিস,তাহলে সেটাকে ধ্বংস করে ফেল। নাহলে কখন সেই আসক্তি তোকে ধ্বংস করে ফেলবে বুঝতেও পারবি না। কারণ মানুষ আসক্ত হয়ই ধ্বংস হওয়ার জন্য। (একবার হাতঘড়ি দেখে) আমার মিটিংয়ের টাইম হয়ে এসেছে। পরে কথা হবে। আর অর্ণবের বিষয়টা ভেবে দেখিস। ছেলেটা ভালো। (মাহির)


মাহির এই বলে উঠে দাঁড়িয়ে সানগ্লাসটি আবার চোখে পড়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো। শানায়া তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেললো।


৫.
আখির পরের দিন অফিসে আসতে কোন দেরি হয় না। ফলে সেদিক দিয়ে সে বেঁচে যায়। কিন্তু সমস্যা হয় অন্য এক জায়গায়। অফিসে এসেই সে প্রথমে ম্যানেজারের কেবিনে যায়।

- May I come in, sir? (আখি)

ভিতর থেকে হ্যাঁ উত্তর আসলে সে কেবিনের ভেতর চলে যায়।

- আজকে সময় মতো এসেছেন দেখছি। (ম্যানেজার)

- জ্বী স্যার। (আখি)

- হুম, এটা যেন প্রতিদিন হয়। এর ব্যতিক্রম হলে মনে আছে তো? (ম্যানেজার)

- Yes sir. (আখি)

- আচ্ছা, এখন তাড়াতাড়ি ফাইলগুলো দিন। (ম্যানেজার)

- কোন ফাইল স্যার? (আখি)

- কেন কালকে যে দিলাম আপনাকে? (ম্যানেজার)


আখির মনে পড়ে কালকে ম্যানেজার তাকে কিছু ফাইল কমপ্লিট করতে দিয়েছিলো। সে কিছুটা করেছে, কিন্তু বাকিগুলো পরে করার জন্য জমিয়ে রেখেছিল। পরে সেগুলো কমপ্লিট করার কথা সে ভুলে গিয়েছিল।

- আসলে স্যার, ফাইলগুলো তো কমপ্লিট করা হয়নি। মানে হয়েছে, কিন্তু একটু... (আখি)

- বাকি আছে। তাই তো? (ম্যানেজার)

- (মেকি হাসি দিয়ে) হ্যাঁ স্যার। (আখি)

- আপনার লজ্জা করছে না, আপনি ফাইল কমপ্লিট করেননি আর দাঁত বের করে হাসছেন। (ম্যানেজার)

আখি কিছু না বলে মাথা নিচু করলো।

- আপনি কখনো শুধরাবেন না, তাই তো? আপনাকে বারবার warning দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু আপনি মনে হয় সেগুলো গায়েই লাগাচ্ছেন না। আমি কয়দিন থেকে লক্ষ্য করছি, আপনি কাজে খুব হেলা করছেন। কি সমস্যাটা কি আপনার সেটা বলুন তো? কেন যে আসে আপনাদের মতো মেয়েরা অফিসে? চাকরি ভালো না লাগলে তো চাকরি ছেড়ে দিতে পারেন। (ম্যানেজার)

এরপর শুরু হলে ম্যানেজারের বকবক। টানা ১৫ মিনিট সে আখির মাথা খেলো। এরপর সে এক পর্যায়ে বলল-

- নেহাত বড়স্যার ও তার ছেলে দুজনে অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। চেনেন বড় স্যারের ছেলেকে? মাহির রওশন। কাজের বিষয়ে একচুলও অবহেলা পছন্দ করেন না তিনি। কিছুদিনের মধ্যে উনি এখানে আসছেন। তারপর যে আপনার কি হবে আমি সেটা ভেবেই পাচ্ছি না। (ম্যানেজার)

এমন সময় ম্যানেজার সাহেবের ফোন বেজে ওঠে। তিনি ফোনের দিকে তাকালে দেখেন স্ক্রিনে Boss লেখাটি জ্বলজল করছে। তিনি আখিকে বলেন -

- ঐযে, ছোট স্যার মানে আমাদের বড় স্যারের ছেলে মাহির স্যার ফোন করেছেন। (ম্যানেজার)

তিনি কল রিসিভ করে লাউডস্পিকারে দিয়ে বলেন-

- Hello, sir, good morning sir. (ম্যানেজার)


বহুতল বিল্ডিংয়ের ওপর মাহিরকে ফোন কানে ধরে থাকতে দেখা যায়। সে কাচের দামি টেবিল থেকে উঠে নিজের ফোনটা কানে নিয়েই পিছন দিকে ঘুরে কাচের দেয়ালের দিকে যেতে থাকে। সেখান থেকে পুরো শহরটা দেখা যাচ্ছে। মাহির স্বভাবসুলভ গম্ভীর গলায় বলে -

- Morning. অফিসের কি অবস্থা ম্যানেজার সাহেব? (মাহির)

- এইতো স্যার, সব মোটামুটি ভালই চলছে। (ম্যানেজার)

- এখন থেকে যেন মোটামুটি কথাটা না থাকে। কারণ আমি সামনের সপ্তাহে ঢাকায় আসছি। সবাইকে এলার্ট করে দেবেন। সবাই যেন সব কাজ নিখুঁতভাবে করে। আমি এসে যদি কোন গাফিলতি দেখি, তাহলে তার জবাব আপনাকে দিতে হবে। (মাহির)

- Yes sir. (ম্যানেজার)

এরপর কিছুক্ষণ কথা বলে তারা ফোন রেখে দিল।

- দেখলেন স্যার কেমন? তাই এখন থেকে শুধু কফি না গিলে একটু কাজে মন দিন। (ম্যানেজার)

- Yes sir. (আখি) 

- যান এখন কাজে যান। (ম্যানেজার)

- আচ্ছা স্যার। (আখি)


আখি ম্যানেজারের কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে। সাথে সাথে দিনা তার কাছে আসে।

- আজকে আবার কি নিয়ে বকা খেলি? (দিনা)

- ফাইল কম্পলিট করিনি বলে। (আখি)

- মানে প্রত্যেকদিন ম্যানেজারের কাছ থেকে এই বকাটা না খেলে তোর পেট ভরে না, না? (দিনা)

- না। (আখি)

- এবার তো একটু সিরিয়াস হ। (দিনা)

- ধূর, ঐ ম্যানেজারের কথা কে গায়ে লাগায়? এককান দিয়ে শুনবো, আরেককান দিয়ে বের করে দেবো। (আখি)


এমন সময় সেখানে একটি মেয়ে আসে। মেয়েটি একহাতে নাকের কাছের চশমাটি তুলে আখিকে উদ্দেশ্য করে বলে-

- এই মেয়ে, আচ্ছা তোমার লজ্জা-সরম বলতে কিছু নেই? প্রতিদিন ম্যানেজার স্যারের কাছে বকা খাও। তাও তোমার হুশ-আক্কেল হয় না? (মেয়েটি)

- না। আমার হুশ হয় না। তোমার কোনো সমস্যা? (আখি)

- আসলেই তো তুমি অনেক বেয়াদব দেখছি। তোমার ওপরের পোস্টে চাকরি করি তাও আমার সাথে এভাবে কথা বলছ? শোনো, মাহির স্যারের আসার আগেই না চাকরি ছেড়ে দাও। নাহলে তোমায় ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বসই এখান থেকে বের করে দেবেন। (মেয়েটি)

- নিশি, সেটা আমরা দেখে নেবো। You may go now. (দিনা)

- ভালোর জন্য বললাম। ভেবে দেখো। (নিশি এই বলে চলে গেলো)

- একেবারে অসহ্যকর একটা মেয়ে। (দিনা)

- যা বলেছিস। সব বিষয়ে নাক গলায়। (আখি)

- আখি, তোর কিন্তু এবার ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নেওয়া উচিত। বস আসছেন। তোর বিপদ হতে পারে। (দিনা)

- হুম। (আখি)

এর কিছুক্ষণ পর যে যার কাজের জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় চলে গেলো এবং নিজেদের কাজ করতে লাগলো।

 আখির একটা বদঅভ্যেস আছে। সে খুব কফি খেতে পছন্দ করে। দিনে ক'বার যে সে কফি খায় তার ঠিক নেই। আর অফিস হলে তো কোনো কথাই নেই। কম্পিউটারে বসার সাথে সাথে তার এক কাপ কফি লাগবে।

আজও তার ব্যতিক্রম হলো না। সে কম্পিউটারে বসার সাথে সাথে অফিসের পিওন তপুকে ডাক দিলো। সে অফিসের সবাইকে চা-কফি ও স্ন্যাকস পরিবেশন করে আর অফিস পরিষ্কার করে।

- এই তপু.......(আখি)

- জ্বী ম্যাডাম। (তপু)

- এককাপ কফি দাও তো। (আখি)

- ম্যানেজার সাহেব আপনারে কফি দিতে নিষেধ করছে। (তপু)

- কেনো? আমাকে কফি দিতে নিষেধ করেছে কেনো? (আখি)

- আপনে শুধু কফি খান, কোনো কাজকাম করেন না,তাই। (তপু এই বলে চলে গেলো)


আখির প্রচন্ড রাগ হলো। সে নিজের মাথার চুল খামচে ধরে বিরক্তি প্রকাশ করে একটি শব্দ করলো।

- আঁ.......... আজকের দিনটাই খারাপ। আমার অবস্হা এতটাই খারাপ হয়ে গেছে যে আমি সামান্য কফিটুকু পাচ্ছি না। এই বসটার নাম কি যেনো.... হ্যাঁ, মাহির। ঐ মাহির স্যার যদি আমার হাজবেন্ড.... না হাজবেন্ড না, যাদি বয়ফ্রেন্ড হতো, কত্ত ভালো হতো! এদের সবাইকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাতাম আমি। (আখি)


চলবে...................





251 Views
4 Likes
3 Comments
4.5 Rating
Rate this: