আংটি রহস্য

সৈকত এবার সেই নারী কণ্ঠকে অনুসরণ করতে লাগলো। আর অজ্ঞাত নারী কণ্ঠের উৎস খুঁজতে খুঁজতে সৈকত সিঁড়ি বেয়ে উপরের দিকে উঠতে লাগলো।

সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠেই সৈকতের চোখ পড়লো তালাবন্ধ একটা বিশাল দরজার ওপর। মূলত দরজার ওপার থেকেই হয়তো আওয়াজটা আসছিলো। কিন্তু এতদিনের পুরানো তালাবন্ধ দরজার ওপারে যে কেউ থাকতে পারে এটা ছিলো সৈকতের ভাবনার বাইরে‌।

আর দরজার ওপরটাও ছিল বেশ অপরিচ্ছন্ন। তালার ওপরে মাকড়সার জাল জমে গেছে। আশপাশের অবস্থা দেখে এটা বেশ আন্দাজ করা যাচ্ছিলো যে বহু বছর ধরে এখানে কোনো মানুষের আসা যাওয়া নেই। এসব ভাবনার ঘোরে সৈকত যখন বিভোর ছিল; ঠিক তখনই সৈকত লক্ষ্য করলো ,যে তার পিছন থেকে কেউ তাকে তার নাম ধরে ডাকছে।

এমন একটা অচেনা পরিবেশে নিজের নামে ডাক শুনতে পেয়ে আচমকা পিছনে ঘুরে তাকাতেই সৈকত যা দেখলো তা দেখে তার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেলো। সে যে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে তা কখনো ভাবতেও পারেনি।

সৈকত দেখলো একজন অজ্ঞাত নারী ঘোমটা পড়া নারী নববধূর বেশে  সৈকতেরই সামনে হাওয়ায় ভাসছে। আর সৈকতকে বলছে-" তুই এসেছিস আমাকে মুক্তি দিতে!তোর জন্যেই তো কতকাল ধরে এই অভিশপ্ত বাড়িতে অপেক্ষা করছি। আমি জানতাম একদিন না একদিন তোকে তোর অতীতের মুখোমুখি হতেই হবে।"

এই বলতে বলতে সেই হাওয়ায় ভাসতে থাকা নারী মূর্তি সৈকতের দিকে দুহাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসতে দেখেই হঠাৎ সে চিৎকার করে উঠলো।তৎক্ষণাৎ সৈকত চোখ খুলে ফেললো আর দেখলো যে সে নিজের ঘরেই বিছানার ওপর শুয়ে আছে।

তার মানে সৈকত এতক্ষণ যা দেখছিলো সে সবটাই ছিল সৈকতের স্বপ্ন। কিন্তু কয়েকদিন ধরেই প্রতি রাতে এমন অদ্ভুত ভয়ানক স্বপ্ন দেখার মানেটাই বা কি? সৈকত তখনো জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছিলো আর কপালে জমে থাকা ঘামের বিন্দুগুলো এটাই প্রমাণ করে দিলো যে এই দুঃস্বপ্ন নিয়ে সৈকত ঠিক কতটা আতঙ্কিত।

এরপর বিছানার পাশে থাকা জলের বোতল থেকে কয়েক ঢোঁক জল খেয়ে নিলো আর মনে মনে ভাবতে লাগলো যে, সত্যিই কি  কোনো রহস্য বা অতীত লুকিয়ে আছে যা এই স্বপ্নের সাথে সম্পর্কিত । নাকি এটা নিছকই একটা সাধারণ  কোনো দুঃস্বপ্ন।

আর এই একই  স্বপ্ন কেন সৈকত রোজ রাতে দেখে? আর স্বপ্নে দেখা ঐ অজ্ঞাত নারীটাই বা কে? যে সৈকতেরই অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে আছে?  বাকিটা রাত কেটে গেলো ঐ দুঃস্বপ্ন নিয়ে ভাবনা চিন্তা করতে করতেই। কিন্তু কোনো প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজে পেলো না সৈকত।

চলবে......