আমি আবিদ, একজন মেডিকেল ডক্টর।
আজ আমার বিয়ে সেটাও আবার একটি পিচ্চি মেয়ের সাথে যার বয়স নাকি মাএ ১৬বছর। বিয়েটা আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে হচ্ছে ।আমি কখনো আমার বাবার অবাদ্ধ হয়নি আজও হয়তো তার কথা রাখতেই বিয়েটা করা।
মেয়েটাকে বিয়ে করার ইচ্ছা আমার একদমই নেই, মাকে অনেক বলেছি এই বিয়েতে আমি রাজি না তবুই কেউ আমার কথাকে গুরুত্ব দেই নি। এতো পিচ্চি একটি মেয়েকে আমি কিভাবে বিয়ে করতে পারি আমার সাথে তার একদমই যায় না।
মা তুমি কিভাবে আমাকে বলো একটা ১৬ বছরের মেয়েকে বিয়ে করতে? একজন মেডিসিন স্পেশালিষ্ট হয়ে ওই বাচ্চা মেয়েকে আমি বিয়ে করতে পারবো না।
চুপ কর আবিদ।তোর বাবা যেহেতু বিয়েটা ঠিক করেছে তোর বাবাকে বল যা..
আর মেয়েটা খুব সুন্দর।একেবারে মায়াবী চেহেরা তার।
মায়াবী হোক আমি বিয়ে করবো না।
"বেশি কথা বলিস না ।খুব ভালো মেয়ে। তোর বাবার বন্ধু নাহিদ সাহেবের মেয়ে। তিনি মারা গিয়েছেন দু মাস হলো।রুবিনা খাতুন মেয়েকে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে চাননি এখন।কিন্তু গ্রামের কিছু বা'জে ছেলে মেয়েটাকে খুব জ্বালাচ্ছে। দয়া করে রাজি হয়ে যা বাবা।তোর বাবা কেমন মানুষ তুই তো জানিস।তারওপর সে একবার স্ট্রোক করেছে।এখন যদি তুই বিয়ে করবি না কথাটা শুনে আবার কিছু হয়ে যায়।পাগলামো করিস না আবিদ।
'মায়ের কথা শুনে আবিদ কিছুটা নত হলো...
আবিদ শেখ। বাবা মায়ের বড় সন্তান। তার একটি ছোট বোন ও আছে। আপাতত মেডিকেলে পড়ছে। ভাইয়ের মতো ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছে আছে। আবিদ পেশায় একজন ডাক্তার (মেডিসিন বিশেষজ্ঞ)।
বাবা হুমায়ুন শেখ সরকারি চাকুরীজিবী ছিলেন। তিনি মূলত একজন সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। আর মা মুনিরা বেগম সাধারণ মহিলাদের মতো গৃহিনী।
' আবিদ কিছুক্ষণ ভেবে উত্তর দিলো'
"ঠিক আছে আমি বিয়ে করবো।
'কথাটি বলে ধপাধপ পা ফেলে রুম ত্যাগ করলো। মুনিরা বেগম হাসছেন। এ হাসির যেনো তৃপ্তিময়। মুনিরা বেগম তিনিও মুচকি হেসে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।
'প্রায় ৩ঘন্টা পর আবিদ এবং তার পরিবার গ্রামে এসে পৌঁছলো।গ্রামেই তার বিয়ে হবে। বিয়েটা সাধারণ ভাবেই হবে কারণ হুমায়ুন শেখ চান না এতো বড় করে বিয়ে হোক। এমনিতেও তার বন্ধুর কোনো রকম সংসার ছিলো। এখন সে ও নেই বিয়েটা বড় করে করলে তার বন্ধুর পরিবারের উপর বড় ভাবে একটা প্রভাব ফেলবে। তাই তিনি চাননি বিয়েটা বড় করে হোক।'
" আপু তোমার বর চলে এসেছে। কিছুক্ষণ পর তোমাকে বিয়ে করে নিয়ে চলে যাবে।হাহাহা!"
'পুষ্পের কথা শুনে রোজা কেঁপে উঠলো। বিয়ের কথা শুনে রোজা বুকটা কেমন করে যেনো জ্বলে উঠলো। যেনো কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। চোখ দিয়ে বেহায়া হয়ে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। সে চায়নি এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে কিন্তু তার মা তাকে অনেক কথা বলার পর সে রাজি হয়েছে।
'কিছুক্ষন পর তাদের বিয়েটা শেষ হলো। এখন বিদায় দেওয়ার পালা। রোজা বেঘোরে কান্না করছে। আবিদের বোন ইজনিয়া রোজার হাত ধরে আছে। রুবিনা খাতুন কান্নারত অবস্থায় আবিদের উদ্দেশ্য বললেন
"বাবা আমার মেয়েটা অত্যন্ত ছোট। সবেমাত্র ওর বেড়ে ওঠার সময় এখনি তার বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। পরিস্থিতির কারণে আমার মেয়েটার এ দশা। বাবা হারা মেয়ে আমার। তুমি ওকে একটু মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করো। আমার মেয়েটা যেনো ভালো থাকে।"
আবিদ গম্ভীর কন্ঠে জবাব দিলো।'
"জ্বী"
অতঃপর গাড়িতে উঠিয়ে তারা আবার ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা হলো। গাড়িতেও রোজা কান্না করছে। রোজার এক পাশে আবিদ এবং বিরক্ত হচ্ছে হঠাৎ ইজনিয়া বলে উঠলো।
"কিছু বলবে ভাবি?"
'রোজা খুব ইতস্তভাবে বললো।
"আপু আমি একটু পানি খাবো।"
'ইজনিয়া শুনে তাড়াতাড়ি পানি দিলো। রোজা ঢকঢক করে পানি এক বোতল খেয়ে ফেললো। পানির বোতল ইজনিয়াকে দিয়ে আবিদ দিকে তাকালো।আবিদোর দৃষ্টি মোবাইলের দিকে।মোবাইলের আলো মুখে পড়ছে।
'রোজা মনে মনে ভাবলো এতো সুন্দর পুরুষ তাকে বিয়ে করলো।কি সুন্দর চেহেরা,গালে চাপ দাড়ি,চোখে চশমা। মনে হলো এ যেনো এক সুদর্শন পুরুষ।
' এভাবে চেয়ে থাকতে দেখে ইজনিয়া রোজাকে কানে কানে ফিসফিস করে বললো।
"ভাইয়াকে কি বেশি পছন্দ হয়েছে নাকি?এখন এতো বেশি দেখো না। একেবারে বাসর ঘরে দেখো মনভরে।
'ইজনিয়ার কথা শুনে তৎক্ষনাত চোখ নামিয়ে ফেললো রোজা।
দীর্ঘ একটা লম্বা জার্নির পর সবাই বাসায় আসলো।
'মা মুনিরা শেখ দ্রুত সিড়ি বেয়ে নেমে এসে তার পুএবধুর কাছে আসলেন।কিসব নিয়ম আছে সেগুলো শেষ করার পর নতুন বউকে ঘরে তুলবেন তিনি। আবিদ এগুলো না শেষ করেই করেই উপরে চলে গেলো। এ বিষয়ে হুমায়ুন শেখ একটু রাগ হলেন। সব নিয়ম-কানুন শেষ করে ইজনিয়া রোজা কে নিয়ে আবিদের রুমে গেলো।প্রায় রাত ১২টা বেজে গিয়েছিলো।
" ভাবি তোমার লাগেজ এ সব জামা-কাপড় আছে।তুমি ফ্রেশ হয়ে পড়ে নিও। আমি যাই প্রচুর ক্লান্ত আমি।
'কথাটি বলে ইজনিয়া বাহিরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো আর তখনই রোজা তার হাত ধরে ফেললো। বেশ আকুতি করে বললো
"আপু আমি কখনো একা ঘুমাইনি আমার ভয় লাগে। সব সময় আমার ছোট বোন আমার সাথে ঘুমাতো।
'ইজনিয়া হেসে ফেললো কথা শুনে।
" তুমি একা কোথায় ভাইয়া আছে তো।
'ইজনিয়ার কথাটা শুনে অবাক হয়ে গেলো। সে একজন পুরুষ মানুষের সাথে ঘুমাবে শুনেই কেমন শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠলো।'
" না না আপু আমি একটা ছেলের সাথে ঘুমাতে পারবো না।
'ইজনিয়া হেসে দিলো কথাটি শুনে।
"সে তোমার বর।খাঁটি বাংলা যেটাকে বলে স্বামী। আজকে থেকে তার সাথেই তোমার ঘুমাতে হবে।
'রোজা বড়সড় একটা ঢোক গিলল।
" উনার সাথে ঘুমাতে হবে?"
'ইজনিয়ার কিছু বলতে যাবে তখনই আবিদ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো। চেহেরা দেখে মনে হচ্ছে খুব রাগান্বিত।
"কি ব্যাপার? কি হচ্ছে ওখানে?"
"না ভাইয়া আমি শুধু ভাবিকে দিতে আসলাম।"
"তাহলে এখনও দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?"
"না এইতো যাচ্ছি।''
"বলেই ইজনিয়া চলে গেলো।ইজনিয়া চলে যাওয়ার পর আবিদ রোজার সামনে এসে দাঁড়ালো। আবিদ সামনে রোজাকে একটা মশার মতো মনেহলো।
"নাম কি তোমার?
গম্ভীর কন্ঠ শুনে রোজা কেমন করে উঠলো। বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকতে দেখে আবিদ হালকা ধমকের সুরে বললো।
" কথা বলতে পারো না? তোমাকে আমি একটা প্রশ্ন জিগ্যেস করেছি।"
আবিদের ধমক খেয়ে আমতা আমতা করে বললো
"রো রো রোজা..
'আবিদ খুব মনোযোগ দিয়ে তার গালের দাড়ি গুলোতে হাত বুলাতে বুলাতে রোজাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখছে।'
"শুনেছি তোমার বয়স নাকি ১৬ বছর?"
'রোজা শুনে অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।
"জ্বী হ্যাঁ।"
"জানো আমি তোমার কতো বড়?"
"জ্বী না।"
"এটা জানো না?
" না।"
"১৪ বছরের বড় আমি তোমার। কেনো বিয়ে করলে হু?"
'আবিদের প্রশ্ন শুনে রোজা থতমত খেয়ে যায়।
"আসলে আমি বিয়ে করতে চাইনি। আমার মা বাধ্য করেছিলো।"
"মা বললো আর বিয়ে করে ফেললে বাহ্!"
'আবিদের কথা শুনে রোজার চোখে পানি চলে আসে। হঠাৎ বিয়ে হয়ে যাওয়াটা মেনে নিতে পারেনি।তারওপর আবার আবিদের এসব কথা."
"কাঁদছেন কেনো ম্যাডাম?যান ফ্রেশ হয়ে আসুন। শাড়িতে যে আপনি ঠিকমতো দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেন না ভালো করেই দেখতে পারছি।"
'রোজা চুপচাপ হেঁটে লাগেজ থেকে একটা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চললো।
আবিদ তীক্ষ দৃষ্টিতে চলে যাওয়া দেখছে।সে এমন একটা মেয়ে কে বিয়ে করেছে 'সে জানেই না তার স্বামী তার থেকে বয়সে কতো বড়'। হায় এ কোন মেয়েকে বিয়ে করলাম।
হসপিটালের কোনো লোক যদি জানে আবিদ তার ১৪ বছরের ছোট একটা মেয়েকে বিয়ে করেছে তাহলে তার মান সম্মান কিছু থাকবে না।একজন সিনিয়র ডক্টর এই কাজ করেছে শুনলে হসপিটালের সিআই মেইবি অ'জ্ঞা'ন হয়ে যাবে।আবিদ এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ তার কলিগ শানায়া কল দিলো। সেও আবিদের মতো সিনিয়র ডাক্তার। এতো রাতে শানায়ার কল পেয়ে কিছুটা বিরক্ত হলো আবিদ। মেয়েটা প্রায়ই এই কাজ করে। ইজহান কলটা রিসিভ করলো।'
"হ্যালো শেখ কি অবস্থা আপনার?"
" ভালো। হঠাৎ এতো রাতে কল দেওয়ার কারণ জানতে পারি কি?'
"আমি তো প্রায়ই এই কাজ করি। আপনি কি জানেন না নাকি হু!"
"আচ্ছা।"
'এটা বলে আবিদ ফোন কেটে দিলো। ইদানীং শানায়ার অকারণে কল দেওয়াটা খুব বিরক্ত করে আবিদকে।শুধুমাত্র সিনিয়র ডাক্তার দেখে কিছু বলতে পারেনা।
'ওয়াশরুম থেকে রোজা বের হয়ে আসলো। আবারও সে শাড়ি পড়েছে। শাড়ি পড়া হয়নি। দেখে মনেহচ্ছে কেউ শাড়ি পড়তে জোর করেছিল তাই এভাবে পড়েছে।
"আবার শাড়ি পড়েছো কেনো? তোমাকে কি আমাদের বাসা থেকে আর কোনো ড্রেস দেওয়া হয়নি!"
"থ্রি-পিস দেওয়া হয়েছে। আসলে আমাদের গ্রামের মেয়েরা বিয়ের পর শাড়ি পড়ে।"
"শাড়ি তো পড়তে পারো না দেখে তো মনেহচ্ছে কেউ জোর করে পড়িয়েছে।"
'রোজা আবিদের কথায় লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো।
"আসলে কখনো পড়া হয়নি তো তাই।
কিছুই তো পারো না দেখছি..
'আবিদ মুখ ঘুরিয়ে ফেললো।অনেক রাত হয়েছে এবার ঘুমাতে হবে। কাল আবার সকাল সকাল হসপিটালে যেতে হবে। লাইটটা অফ করে খাটে শুয়ে পড়লো। রোজা লাইট অফ খুব ভয় পেয়ে গেছে। যেনো কেউ আশেপাশে দাঁড়িয়ে আছে তার এমন মনেহচ্ছে।
এতো বেশি অন্ধকার যে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। রোজা ভয়ে মুখে হাত দিয়ে আছে। একটু ঝুঁকে সামনের দিকে চলে গেলো। এইতো খাট এপাশে আবিদ নেই তাই রোজা শুয়ে পড়েছে।
বেশিক্ষণ চোখ মেলে থাকতে পারলো না কারণ ঘুম তাকে একটু একটু করে ধরছে।রোজা শুয়ে শুধু মনে মনে একটি দোয়াই করতে লাগলো ঘুমের ঘোরে যেনো তার কাপড় ঠিক থাকে আর সে যেনো আবিদের ধারেকাছে না যায়।
আবিদ ও অনেটা বিরক্ত নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল...
আসসালামু আলাইকুম সবাইকে। নতুন একটি গল্প লিখছি ভুলত্রুটি হবেই।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন, ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট ফলো করবেন। যাতে পরবর্তী অংশ গুলো পড়তে পারেন, কমেন্ট করলে খুবই খুশি হবো ধন্যবাদ..
বলো ভালবাসি
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
472
Views
12
Likes
2
Comments
5.0
Rating