"কি সাহিরা আজ তোমার আসতে এতো দেরি হলো? আমি সেই কখন থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি, ফোন করছি বলছে 'not reachable' ।কোথায় ছিলে?"
"আসলে....আসলে আমার বেরোতে আজ একটু দেরি হয়ে গেছিলো। বুঝোই তো মামুন আসতে দেয়না। তোমার কথাও খুব বলে। "
"হুঁ, আর মাত্র কয়েকটা দিন তারপর তুমি আমি সারাজীবনের জন্য একসাথে থাকবো আর কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবে না। অনেকদিন আগেই তোমার আর আমার বিয়েটা হয়ে যায় এই পৃথার জ্বালায় কিছুতেই হচ্ছে না। পুরো উইলটাই আমার নামে হয়ে যাবে যদি ওই পৃথাকে মেরে ফেলা যায়। বার বার বেঁচে যায় হারামজাদীটা। একটা পেগ বানাও তো সাহিরা মাথাটা টা আজ বেশ ধরেছে কবে যে মেয়েটা মরবে।"
কলিং বেলের আওয়াজ শুনে সতর্ক হয়ে যান কুনাল বাবু। সাহিরাকে ভেতরের ঘরে পাঠিয়ে দিয়ে দরজার আই-হোলে চোখ রাখেন। একজন মধ্য বয়সি লোক উশকো খুশকো চুলে সাদা জামা পরে দাঁড়িয়ে আছেন। দরজাটা পাক করে ককর্শ কন্ঠে বলেন,"কি চাই?"
"আমি আপনার নিচের ফ্ল্যাটে থাকি সামনের সপ্তাহে আমার মেয়ের বিয়ে তাই নেমন্তন্ন করতে এসেছিলাম আরকি। আমাদের আত্মীয় স্বজন সব দিল্লিতে থাকে তাই কালই চলে যাবো ওখানে নেমন্তন্ন করতে এখানে আর সময় পাবোনা তাইআজই চলে এলাম আপনার কাছে। আমি বেশিক্ষণ সময় নিবোনা এই কার্ড আর শগুনটা দিয়েই চলে যাবো।"
ইচ্ছে না থাকলেও কোলাপসিবল খুলে লোকটাকে হলে নিয়ে আসেন কুনাল বাবু। "আসুন,বসুন।" বলেই পেছন ফিরতে গেলে কুনাল বাবু দেখতে পান সাদা জামা পরা লোকটা রিভলবার হাতে তাঁর বেশ তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আর ঠিক তাঁর পেছনেই বিশ খানেক পুলিশের ইউনিফর্ম পরা রিভলবার হাতে তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে। হেঁসে ওঠেন কুনাল বাবু। "আরে আরে একি? "আপনারা হঠাৎ আমার বাড়িতে কি করছেন?"
"you are under arrest Mr. Kunal Banerjee. Surrender yourself."
" আমি আবার কি করলাম?আপনারা পুলিশের লোকেরা বেশ আজব আছেন হঠাৎ হঠাৎ যার তাঁর বাড়ি গিয়ে আ্যারেস্ট করা আপনাদের এটা একটা খারাপ স্বভাব। কোথায় আপনারা খুনিদের ধরবেন তা না আমার বাড়িতে এসে আমাকে অসুস্থ অবস্থায় হেনস্তা করছেন। জানেন আপনাদের বিরুদ্ধে আমি মানহানীর মামলা করতে পারি।"
"মামলাটা কে কার বিরুদ্ধে করবে সেটা আর কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে পারবেন Mr. Banerjee। আর কে বলেছে আমরা কোনও প্রমাণ নেই?" বলেই হল ঘরের সোফার সামনে থাকা কাচের টিবলের নিচ থেকে একটা microphone cum recorder বার করে নিতে নিতে তাদের সঙ্গে আসা এক মহিলা পুলিশ আধিকারিককে সাহিরাকে ভেতর থেকে নিয়ে আসার আদেশ দেন ইনসেক্টর দিপাঞ্জন।
.......................................................................................
খাওয়া দাওয়া শেষে ছাঁদে এসে দাঁড়িয়েছে পৃথা। মনটা এখন বেশ হালকা লাগছে ওর। চারপাশটা বৃষ্টি হওয়ার কারণে বেশ ঠান্ডা। হিমেল হাওয়ায় মনটা সতেজ হয়ে উঠছে। মেহেদী পিছন থেকে এসে হঠাৎ করে কোমড় জরিয়ে ধরাতে কেঁপে ওঠে পৃথা। পৃথার থেকে সেরকম কোনও রেসপন্স না পেয়ে ঘারের কাছে পরে থাকা চুলগুলো সরিয়ে চুম্বনের স্পর্শ সিক্ত করতে থাকে পৃথাকে। মেহেদীর প্রত্যেক স্পর্শে কেঁপে ওঠে পৃথার শরীর । পৃথাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে ওর ঠোঁটে স্বাদ নিতে থাকে মেহেদী। মেহেদীর বন্ধন ক্রমশ শক্ত হতে থাকে, সাথে ভারী হয়ে ওঠতে থাকে দু'জনের শ্বাস প্রশ্বাস। পৃথার ঠোঁট ছেড়ে গলায় আশ্রয় নেয় মেহেদীর ঠোঁট। মেহেদীর হালকা কাঁমড়ে উত্তেজিত হয়ে ওঠে পৃথার শরীর। পৃথার দিক থেকে কোনও বাঁধা না পেয়ে মেহেদী তাঁর ওষ্ঠযুগল নামিয়ে আনে পৃথার বক্ষ বিভাজিকায়। হঠাৎ ফোনটা ড্রাইভেট করে ওঠে মেহেদীর। প্রথমবার না ধরলেও দ্বিতীয় বার ফোনটা পকেট থেকে বার করতেই দিপাঞ্জনের নামটা দেখে তাড়াতাড়ি ফোনটা রিসিব করে মেহেদী।
"Sorry to disturb Dr Hasan, আপনাকে একবার পুলিশ স্টেশনে আসতে হবে খুনি ধরা পরেছে আর পৃথাকে আনার দরকার নেই।"বলেই ফোন রেখে দেন দিপাঞ্জন। পুলিশ স্টেশনে গিয়ে মেহেদী দেখতে পায় পৃথার কাকু একটা চ্যায়ারে বসে আছেন আর তাঁর পাশেই বোরকা পরা একটা মহিলা। মেহেদীকে দেখতে পেয়ে অফিসার কুনাল বাবুর দিকে তাকিয়ে বলে, " এনাকে চিন্তে পারছেন নিশ্চয়ই?আমিই পাঠিয়েছিলাম এনাকে আপনার কাছে আর এনিই আপনার টেবিলের নিচে ওই microphone টা সেট করে এসেছিলেন তো Mr. Banerjee এবার সবকিছু খুলে বলুন তো খুন গুলো কি করে করলেন? "
"ও, সেইদিন জানতে পারলে তোদের দু'টোকেও মেরে পুতে দিতাম কেউ জানতে পারতো না। হ্যাঁ,হ্যাঁ আমিই মেরেছি আমার মা,বউ,ভাইয়া ভাবিকে। তাছাড়া কি করতাম আমি? আমি সাহিরাকে ভালোবাসতাম ও হিন্দু হওয়ায় আমাদের সম্পর্ক টা মা বাবা কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি। বলেছিল আমাকে সম্পত্তি থেকে বেদখল করে দেবে। তাই আমি উনাদের পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করতে বাধ্য হই, কিন্তু আবিদা আমাকে কোনও সন্তানের সুখ দিতে পারেনি। আর তাই বাবা সম্পত্তির বেশিরভাগ অংশ ভাইয়ার নামে লিখে দেয়। আমি বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলাম এসবের থেকে। এর মাঝে আবিদা আমার আর সাহিরার পরকীয়ার কথা জানতে পেরে যায়। ঘরের অশান্তি চরমে পৌঁছায়। তখন কার মতো সামলে নিলেও যখন ও জানতে পারে সাহিরা গর্ভবতী, পুলিশের কাছে সবকিছু বলে দেওয়ার হুমকি দেয়। তাই আমি গুন্ডা লাগিয়ে ওকেও আমার রাস্তা থেকে সরিয়ে দেই, আর নিজের মাথায় ইচ্ছে করে আঘাত করতে বলি ওদের যাতে আমার উপর কারও সন্দেহ না হয়।''
" আর পৃথার মা বাবাকে মারলেন কি করে? "
"ওদের গাড়ির ar freshener মধ্যে neothyl নামক এক sleeping gas মিশয়ে দিয়েছিলাম। chemistry তে মাস্টার্স করেছি তাই এসব নিয়ে অল্প বিস্তর জ্ঞান আমার আছে। ওটকা শুকতে শুকতেই ওরা ঘুমিয়ে পরে যায় আর তাতেই ওদের accident হয়ে যায়। "
"ওদের দু'জনকে নিয়ে যান।" বলে অফিসার মেহেদী কে নিয়ে বাইরে আসেন।
"আমি just ভাবতে পারছিনা অফিসার লোকটা সম্পত্তির লোভে এতগুলো খুন করলো।"
"হুঁ, আর কি করবেন? সম্পত্তির লোভ এমনি হয়, আর শুধু কোনাল বাবুকে তো দোষ দিয়ে লাভ নেই ওনার মা বাবা যদি ওই সম্পর্ক টা মেনে নিতো তাহলে হয়তো আজ এতগুলো জীবন শেষ হতো ন। যাক এসব ভেবে আমি আপনি কিছুই করতে পারবনা যা হওয়ার তা হয়েই থাকে।
" তো পৃথার ব্যাপারে কি ভাবলেন Dr.Hasan? বিয়েটা কবে করছেন?"
"সামনের মাসেই ইচ্ছে আছে। মা, আপু এখানে আসুক ওদেরকে জানাতে হবে তারপর। আপনিও আপনার team কিন্তু নিমন্ত্রণ থাকবেন। আপনারা অবশ্যই আসবেন।"
"নিশ্চই যাবো Dr.Hasan। আপনি তাহলে এখন আসুন পরে কোর্টে দেখা হবে।"
প্রথম দেখা (part 7)
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
195
Views
9
Likes
1
Comments
4.9
Rating