"রহস্যময় প্রাসাদের ছায়া"
শীতের এক সন্ধ্যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিল শুভ। সে হঠাৎই ফোনে একটি অদ্ভুত আমন্ত্রণ পায়। ফোনের অপর প্রান্তে একজন অচেনা বৃদ্ধ বললেন, "শুভ, তুমি তো ইতিহাসের ছাত্র। রহস্যময় জিনিসে তোমার আগ্রহ আছে শুনেছি। যদি সাহস থাকে, তাহলে কাল রাতে আমার বাড়ি এসো। আমি তোমার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ রেখেছি।"
অবাক হলেও শুভ সেই বৃদ্ধের ঠিকানাটি নোট করে নিলো। তার বন্ধুরা এ নিয়ে ঠাট্টা করলেও শুভের মনে হল, এ এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হতে পারে |
পরের দিন সন্ধ্যায়, শুভ সেই ঠিকানায় পৌঁছায়। এটি ছিল শহরের বাইরে, একটি প্রাচীন প্রাসাদ। প্রাসাদের চারপাশে ঝোপঝাড়ে ঢাকা, যেন বহু বছর ধরে কেউ এখানে আসেনি। শুভ কলিং বেল চাপলো, কিন্তু দরজা এমনিতেই খুলে গেলো। ভেতরে প্রবেশ করতেই সে দেখতে পেল এক লণ্ঠনের আলো জ্বলছে। বৃদ্ধ তাকে বসার জন্য বললেন।
"তোমার কাজ সহজ," বললেন বৃদ্ধ। "এই প্রাসাদে রাত ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত থাকলেই হবে। তবে মনে রেখো, এই সময়টা অতীতের আত্মারা ঘোরাফেরা করে। তুমি সাহসী তো?"
শুভ একটু দ্বিধা করলেও রাজি হলো।
রাত ১২টা বাজতেই চারদিকের বাতাস ভারী হয়ে উঠল। প্রাসাদের দেয়াল থেকে যেন কাঁদার আওয়াজ আসতে লাগল। হঠাৎ একটি দরজা নিজে থেকেই খুলে গেল। শুভ সাহস নিয়ে এগিয়ে গেলো। সে দেখতে পেলো, দেয়ালে ঝোলানো পুরনো চিত্রগুলো থেকে ধোঁয়া উঠছে, আর এক এক করে ছবিগুলোর মানুষগুলো যেন জীবন্ত হয়ে উঠছে।
এক বৃদ্ধা নারী একটি ছবি থেকে বেরিয়ে এসে বললেন, "আমাদের মুক্তি দাও!"
শুভ বিস্মিত হয়ে বলল, "কিন্তু আমি কীভাবে তোমাদের সাহায্য করবো?"
নারীটি তাকে জানালেন, "এই প্রাসাদের মালিক একজন নিষ্ঠুর জমিদার ছিল। তিনি আমাদের হত্যা করে এখানে বন্দি রেখেছেন। একটি পুরনো বাক্সে তার অভিশপ্ত দিনলিপি লুকানো আছে। সেটি ধ্বংস করলেই আমরা মুক্তি পাব।"
শুভ সেই বাক্স খুঁজতে শুরু করলো। প্রাসাদের গোপন কক্ষে একটি পুরনো কাঠের বাক্স পেল। কিন্তু বাক্সটি খুলতে গেলে, একটি ছায়ামূর্তি তার সামনে উপস্থিত হলো। মূর্তিটি বলল, "এটা খুললে তোমার জীবন বিপন্ন হবে!"
শুভ ভয় পেলেও সাহস হারাল না। সে মনে মনে ভাবলো, এই আত্মাদের মুক্ত করার জন্য তাকে ঝুঁকি নিতেই হবে। সে বাক্স খুলল। ভেতরে ছিল একটি পুরনো চামড়ার মোড়ানো ডায়েরি।
ডায়েরিটি খুলতেই, প্রাসাদের চারদিকে আলো ঝলমল করতে শুরু করলো। ভুতেরা একে একে তাদের আসল রূপে ফিরে গেলো এবং ধন্যবাদ জানিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল। তবে শুভ বুঝতে পারল, বৃদ্ধটি আর কেউ নয়, তিনিও সেই জমিদারেরই এক সেবক, যিনি ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ চেয়েছিলেন।
রাত ১টা বাজতেই প্রাসাদটি হঠাৎ করেই অদৃশ্য হয়ে গেল। শুভ নিজেকে সেই প্রাসাদের ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। সব যেন এক স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছিল, তবে তার হাতে ছিল সেই ডায়েরির একটি পাতা, যাতে লেখা ছিল:
"সত্যকে গ্রহণ করো এবং তা বাঁচাও।"
শুভ বাড়ি ফিরে এলেও সেই রাতটি তার জীবনের সবচেয়ে অদ্ভুত এবং রহস্যময় অভিজ্ঞতা হয়ে রইল। তার বন্ধুরা বিশ্বাস না করলেও সে জানত, সত্যিই একটি রাতের জন্য সে অতীতের ছায়ার মুখোমুখি হয়েছিল।
রহস্যময় প্রাসাদের ছায়া
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
85
Views
0
Likes
0
Comments
0.0
Rating