মায়ের ভালোবাসা

সময়টা ছিলো ডিসেম্বরের প্রায় শেষের দিকে। নতুন আর পুরাতন বছরের মাঝে মাত্র কয়েকটা দিনের ব্যবধান। তাই বছরের একদম শেষ প্রান্তে এসে সময়টাকে স্মরণীয় করে রাখতে-কিছু বন্ধু মিলে একটা বনভোজনের আয়োজন করবো বলে সিদ্ধান্ত নিলাম।
যেই কথা সেই কাজ।

অবশেষে সেই আকাঙ্ক্ষিত রাত এসে উপস্থিত। আমরা বন্ধুরা মিলে পাহাড়ের টিলার মতো একটা জায়গায় ফায়ার ক্যাম্পিং করে রাত্রি যাপনের সিদ্ধান্ত নিলাম। সেই সাথে সাথে সময়টাকে আরও উপভোগ্য করে তুলতে গান বাজনাও করতে লাগলাম যতক্ষণ না পর্যন্ত রান্না শেষ হচ্ছে। এদিকে রান্না শেষ হয়ে ডাক পড়তেই আমরা যেই না খেতে বসবো তখনই লক্ষ্য করলাম আমাদের তাঁবু থেকে একটু দূরে থাকা অন্ধকারে থাকা ঝোপটা যেন নড়ে উঠলো।

এমনটা দেখে আমরা একটু অবাকই হলাম। তবে মনের আশঙ্কা দূর করতে আমরা যেই না ঝোপটার কাছে গেলাম অমনি দেখলাম একটা কালো কুকুর, জ্বল জ্বল দুটো চোখ নিয়ে আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালো। তবে সেই চাহনিতে কোনো হিংস্রতা নেই, আছে শুধুই অসহায়ত্ব,ক্ষুধা আর তীব্র শীতের যন্ত্রণা।

এটা দেখে সেখানে উপস্থিত সকলেরই খুব মায়া হলো। তখন আমরা কুকুটিকে কিছু খাবার খেতে দিলে- দেখলাম কুকুরটা খাবার স্পর্শ না করে শুধু গন্ধ শুঁকেই দৌঁড়ে চলে গেলো কুয়াশায় ঢাকা রাতের আঁধারে। এমনটা করার কারণ আমরা তখন কেউ কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না । কিন্তু এর কিছুক্ষণ পরেই সেই কুকুরটা আমাদের সবাইকে চমকে দিয়ে ফিরে এলো, সাথে তার মুখে করে নিয়ে এসেছিলো একটা ছোট্ট কুকুর ছানা। এটা বুঝতে বাকি রইলো না যে ঐ কালো কুকুরটাই এই ছানাটার মা।


এবার পরম যত্নে মুখ থেকে রেখে, ছানাটাকে পাশে নিয়ে সেই মা কুকুরটা আমাদের দেওয়া খাবার খেতে লাগলো। আর তার সাথে সাথে ছানাটিকেও দুধ খাওয়ালো। একে তো শীতের রাত তার ওপরে এতো ঠাণ্ডা যে সেই ছোট্ট ছানাটি খুব কাঁপছিলো, যদিও মা কুকুরটা ছানাটিকে বুকের মধ্যেই জড়িয়ে রেখেছিলো।

এমন একটা পরিস্থিতি দেখে তখন আমি খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি।
আর নিজের একটা সোয়েটার সেই মা কুকুরটিকে আর একটা পাটের বস্তা ছোট্ট ছানাটিকে পড়িয়ে দেই‌। এরপর যেটা ঘটলো আমার সাথে তা হয়তো আমি কোনোদিন ভুলতে পারবো না।দেখালাম সেই মা কুকুরটা ছানাটিকে রেখে- নীরবে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো, আর আমার হাতটা চেটে দিলো, যেটা হয়তো ছিলো আমার প্রতি ঐ মায়ের কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ। সেই দিন রাতের এই ঘটনাটা আমার মনে এক গভীর ছাপ ফেলে দিয়েছিলো।

সত্যিই তো মানুষ হোক বা প্রাণী দুনিয়ার সকল ক্ষেত্রেই সন্তানের প্রতি তার মায়ের ভালোবাসার কখনো কোনো পরিবর্তন হয় না।

-------------------------------০-------------------------------