মায়াবতী বউ

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
ভোরের আলো ঠিকমতো ফুটতে না ফুটতেই গ্রামে এক টুকরো সৌন্দর্যের ছোঁয়া বয়ে আনে মায়া। তার চেহারায় মায়াবী এক আভা, যা সবাইকে আকৃষ্ট করে। মায়া গ্রামের এক সাধারণ মেয়ে, কিন্তু তার সরলতা, তার হৃদয়ের গভীরতা তাকে যেন অন্যসব মেয়ের চেয়ে আলাদা করে তোলে। তার পায়ের শব্দ, তার হাসির মৃদু ধ্বনি যেন এক অদ্ভুত মাধুর্যে ভরা।

মায়ার বিয়ে হয়েছিল আরিফ নামের এক শহুরে যুবকের সঙ্গে। আরিফ ছিল আধুনিক চিন্তাধারার একজন মানুষ, চাকরি করত শহরের এক বড় অফিসে। আরিফ প্রথমে ভেবেছিল, মায়া হয়তো গ্রামের সাধারণ মেয়েদের মতোই হবে—গৃহকর্মে অভ্যস্ত, কম কথা বলা, সরল। কিন্তু মায়া ছিল সম্পূর্ণ অন্যরকম। বিয়ের পরই আরিফ বুঝতে পারল, এই মেয়ের মধ্যে আছে এক ধরনের জাদু, যা কেবল তার চেহারায় নয়, তার কথায়, কাজে, এমনকি তার নীরবতাতেও ফুটে ওঠে।

বিয়ের পর মায়া শহরে না গিয়ে গ্রামেই থাকতে চেয়েছিল। আরিফও তাতে রাজি হয়েছিল। মায়া গ্রামের মানুষের সঙ্গে সহজেই মিশে গিয়েছিল। তার মায়াবী স্বভাবের কারণে গ্রামের প্রতিটা মানুষ তাকে ভালোবাসত। মায়া কখনো কারো উপকার করতে পিছপা হতো না। কারো ঘরে খাবার নেই শুনলে মায়া নিজের খাবার ভাগ করে দিত। কারো গরু অসুস্থ হলে নিজের হাতে ওষুধ খাইয়ে দিত। এমনকি যারা তাকে অপছন্দ করত, তাদের প্রতিও তার ব্যবহার ছিল অমায়িক।

একদিন গ্রামে ভয়াবহ এক ঝড় হয়। ঝড়ের মধ্যে গ্রামের নদীর ধারে একটি ছোট্ট বাচ্চা পানিতে পড়ে যায়। আশেপাশে কেউ সাহায্য করতে সাহস পাচ্ছিল না। মায়া তখন জীবন বাজি রেখে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। অনেক চেষ্টার পর সে বাচ্চাটিকে বাঁচিয়ে আনে। সেদিন গ্রামবাসীর চোখে মায়ার গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। সবাই বলল, "মায়া শুধু এক মেয়ে নয়, সে আমাদের গ্রামের দেবী।"

আরিফ সেই সময় শহরে ছিল। ফিরে এসে ঘটনাটা শুনে অবাক হয়ে যায়। মায়ার সাহস, তার ভালোবাসা, তার মানবিকতা—সবকিছু যেন আরিফকে মায়ার প্রতি আরও বেশি মোহাবিষ্ট করে তোলে।

এক রাতে আরিফ মায়াকে জিজ্ঞেস করল,
"তোমার এত সাহস আর মানবিকতার উৎস কোথায়? তুমি নিজের জন্য কিছুই চাও না কেন?"
মায়া মৃদু হেসে বলল,
"মানুষের ভালোবাসা আর তাদের মঙ্গলই আমার কাছে সবচেয়ে বড় পাওয়া। তুমি তো আছো আমার জীবনে—এই ভালোবাসা আর আস্থা আমার সব চাওয়া পূরণ করে দেয়।"

মায়ার এই কথাগুলো শুনে আরিফ মুগ্ধ হয়ে যায়। সে বুঝতে পারে, মায়া কেবল একজন স্ত্রী নয়, বরং একজন শিক্ষিকা, একজন পথপ্রদর্শক, আর একজন দেবীর মতো। মায়ার মায়াবী ভালোবাসা আর তার উদারতা শুধু আরিফের জীবন নয়, পুরো গ্রামের চিত্র বদলে দিয়েছিল।

এরপর থেকে আরিফ যখনই শহর থেকে গ্রামে ফিরত, মায়ার মুখের হাসি দেখেই তার সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে যেত। সে অনুভব করত, তার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া মায়া। মায়া শুধু তার জীবনে নয়, পুরো গ্রামের জন্যই এক আশীর্বাদ।

গ্রামের মানুষের মুখে মুখে এই গল্প রয়ে গেল—মায়াবতী মায়ার। যে মেয়েটি ভালোবাসা আর আত্মত্যাগের মাধ্যমে প্রমাণ করে দিয়েছিল, জীবন কেবল নিজের জন্য নয়, অন্যের জন্যও।

147 Views
0 Likes
0 Comments
0.0 Rating
Rate this: