অহংকারী মেয়ে

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
মিজান সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
মিজানের এই অবস্থা দেখে রাতুল সেখান থেকে তাড়াতাড়ি চলে যায়। নাঈম ও আবির মিজানকে ধরে হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং মিজানের পরিবারকে জানায়। মিজানের পরিবার মিজানের এই অবস্থা শুনে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে আসে। বিস্তারিত ঘটনা শোনার পর মিজানের বাবা-মা রাতুলের নামে থানায় মামলা দায়ের করেন।

নাঈম: আবির, আমার খুব চিন্তা লাগছে, মিজানের যদি কিছু হয়ে যায়?
আবির: চিন্তা করিস না, নাঈম। কিছু হবে না।

সবাই পেরেশান, কী অবস্থা হবে তা নিয়ে চিন্তিত। মিজানকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হলো। ডাক্তার বাইরে আসছে না। মিজানের বাবা-মায়ের আর্তনাদ যেন বেড়েই চলেছে। রাত একটা বেজে গেছে, তবুও অপারেশন শেষ হয়নি। রক্তের জন্য অনেক খোঁজাখুঁজির পর রক্ত ম্যানেজ হলো। অপারেশন সফল হয়েছে। ডাক্তার আশা দিয়েছেন, মিজানের আর কোনো সমস্যা হবে না।

সবাই অপেক্ষা করছে। চারদিকে মিজানের খবর ছড়িয়ে পড়েছে। বন্ধু-বান্ধবের আড্ডায় এই খবর নিয়ে আলোচনা চলছে। একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকে সবাই। নাঈম দুঃখ নিয়ে সেসব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। মিজানের জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায় সবাই বসে আছে। ডাক্তার কিছুক্ষণ পর জানালেন, এখন মোটামুটি সুস্থ।

তাই নাঈম ও আবির বাসায় চলে যায়।
সকালবেলা।
নাঈম: চল না, আবির, একবার দেখে আসি মিজানকে।
আবির: হ্যাঁ, চল যাই।

আবির ও নাঈম হাসপাতালে গেল। মিজানের সঙ্গে কথোপকথন হলো। ভালো-মন্দ জিজ্ঞাসা করা হলো।
বিকেল হয়ে এলো। আমি চলে গেলাম মিথিলাদের বাসায়। অন্যদিকে রাতুল পলাতক, তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

নাঈম: আসসালামু আলাইকুম।
মিথিলার আম্মু: ওয়ালাইকুম আসসালাম। কী খবর শুনলাম, তোমাদের বন্ধু মিজানকে রাতুল আঘাত করেছে? কেন, কী হয়েছিল?
নাঈম: এমন কিছু না, আন্টি। আসলে দুষ্টুমি করতে করতে ছুরি নিয়ে টানাটানি করতে গিয়ে হঠাৎ লেগে যায়। তারপর এমন অবস্থা হয়েছে। (সত্যটা তো আর আন্টিকে বলা যাবে না যে তার মেয়ের জন্য এই ঘটনা, তাই মিথ্যা বললাম।)

মিথিলা: ভাইয়া, কী হয়েছিল রাতুল ভাইয়ের সঙ্গে?
নাঈম: তেমন কিছু হয়নি। পড়তে বসো।
মিথিলা: এই নিন গতকালের বাড়ির কাজ।
নাঈম: তোমার এই অবস্থা কেন?
মিথিলা: কোথায়, ভাইয়া? আমার লেখা তো আমাদের স্কুলের সবার চেয়ে ভালো। স্যার-ম্যাডাম সবাই প্রশংসা করেন। আপনি আছেন খারাপ?
নাঈম: হয়তো তারা তোমাকে সান্ত্বনা দেয়। আরও সুন্দর করতে হবে।
মিথিলা মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।

সত্যি বলতে মিথিলার লেখা অনেক সুন্দর। তাও বললাম খারাপ। দেখলাম ওর রিঅ্যাকশন কী হয়। আহা! কবে যে পাব তোমাকে—সে চিন্তায় আমি আর কোনো চিন্তা করতে পারছি না। (মিথিলার দিকে তাকিয়ে মনে মনে নাঈম বলল।)

নাঈম: তোমাকে একটা কথা বলার ছিল।
মিথিলা: ওকে, বলুন।
নাঈম: তোমার বাবা কবে আসবে?
মিথিলা: শুনেছিলাম, দুই দিন পর আসবে।

সত্যি বলতে নাঈম মিথিলাকে অন্য কিছু বলতে চেয়েছিল, কিন্তু বলতে পারেনি। হয়তো ভালোবাসার মানুষের প্রতি নিজের কথাগুলো সহজে প্রকাশ করা যায় না। আহা! কী বলব? মিথিলার চোখের চাহনিগুলো যখন আমার দিকে পড়ে, মনে হয় কোনো হরিণের চোখজোড়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আহা! বাঁকা ঠোঁটের হাসি হৃদয়ের গহীনে আঘাত আনে বারবার। সত্যি বলতে, মিথিলাকে যদি কেউ একবার দেখে, হয়তো তার মায়ায় পড়ে যাবে।

আমি মিথিলার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। হঠাৎ মিথিলা বলে উঠল:
মিথিলা: কী হলো? আপনাকে কখন থেকে বলছি যে সাবজেক্টটা বুঝতে পারছি না, কোনো সাড়া দিচ্ছেন না কেন?
নাঈম: ওহ, সত্যি। তোমাদের দেওয়ালের প্রিন্টিংটা খুব সুন্দর, যা আমার খুব ভালো লেগেছে। তাই এক ধ্যানে তাকিয়ে আছি তার দিকে।
মিথিলা: আপনার কি চোখ ট্যাগরা?
নাঈম: কেন?
মিথিলা: না, আপনি পেন্টিংয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন। আমার মনে হলো, আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। তাই বললাম, আরকি। মনে করবেন না।
নাঈম: না, তেমন কিছু না। সত্যিই পেন্টিংয়ের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। মনে মনে মিজানের কথা ভাবছিলাম।
মিথিলা: ও আচ্ছা। সাবজেক্টটা বুঝিয়ে দিন।
নাঈম: ঠিক আছে। ধরো…

পড়া বুঝানোর শেষে মিথিলা বলল: একটু ওয়েট করুন, আমি আসছি।

মিথিলা পড়ার টেবিল থেকে উঠে রান্নাঘরে চলে গেল। প্রায় দশ মিনিট পর মিথিলা হাতে চায়ের কাপ নিয়ে এসে আমার সামনে বসে বলল:
মিথিলা: এই নিন চা। শুধু চা নয়, সঙ্গে দিয়েছি বিস্কুটও।
নাঈম: তুমি কেন? তোমার আম্মু কোথায়?
মিথিলা: আম্মু পাশের বাসায় গেছে। যদি না থাকে আম্মু, তাহলে যেন আপনাকে চা বানিয়ে দিই।
নাঈম (দুষ্টমির ছলে): এই চা কি খাওয়া যাবে?
মিথিলা: কেন নয়? আমি কি পারি না?
নাঈম: আচ্ছা, দেখা যাক। খেয়ে দেখি।
মিথিলা: জি, অবশ্যই দেখুন।
নাঈম: ও মাগো।

চলবে....
305 Views
0 Likes
0 Comments
0.0 Rating
Rate this: