তুমি হীন

রাহুল
রাহুল
লেখক

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
তুমি হীন, "সিজন ২" পর্ব ৩...
সূর্য উঠে আসার সঙ্গে সঙ্গে চারপাশ রাঙা হয়ে উঠল। লাকি আর নিলয় একে অপরের হাতে হাত রেখে সেই সৌন্দর্যের অংশ হয়ে থাকল কিছুক্ষণ। দুইজনের মধ্যে নিরবতা ঘিরে ফেলেছে কোন কথা নেই।
তবুও তাদের মনের ভিতর একটাই কথা ঘুরতেছে, জীবনের প্রতিটি ছোট ছোট মুহূর্ত এমনই সুন্দর—যদি আমরা তা উপলব্ধি করতে জানি।

কেটে যাচ্ছে সময় তার মতো করে.. এদিকে নিলয় - লাকির ভালোবাসা আরো গভীর হতে থাকে
সারা দিনের ক্লান্তি শেষে সন্ধ্যে হলেই নীড়ে ফেরা পাখির মতো নিলয় ফিরে আসে তার প্রিয়শীর কাছে তার পরিবারের কাছে। নির্ঘু্ম প্রতিটা রাতগুলোতে পরম স্পর্শে নিলয়ের বুকে জড়িয়ে পরে তার অষ্টাদশী ।

এখন নিলয় লাকিকে অনেক ভালোবাসে তার কেনো মন খারাপ, কেনো এড়িয়ে যাওয়া, কেনো মেজাজ খারাপ, কিছু বিষয় নিয়ে কি চিন্তা করছে, কেনো করছে
এসব লাকি না বলতেই বুঝে যায়।

★★★
দুপুর থেকেই কাঠফাটা রোদ ছিল বিকেল হতেই সূর্যটাকে একদল দস্যি মেঘ এসে ঢেকে ফেলল। চারদিকে কেমন ঝড়ের মতো বাতাস বেয়ে যাচ্ছে। খানিকক্ষণ পর পর বিদ্যুৎ ও চমকাচ্ছে।

এদিকে লাকি ও অনেক টেনশনে আছে। সাথে তার মা আমেনা বেগম। লাকি তার রুমে গিয়ে নিলয়ের ফোনে ফোন দিচ্ছে বারবার কিন্তু রিং হলেও রিসিভ হচ্ছে না ঐপাশ থেকে। টেনশনের মাত্র ও ক্রমে ক্রমে বেড়েই যাচ্ছে।

চোখের কোণো ওকি দিচ্ছে নোনা জল। হয়তে আরেকটু সময় পেরিয়ে গেলেই আর বাদ মানবে না। নিয়ন্ত্রণ হারা হয়ে যাবে। হঠাৎ এই গেইট খোলার শব্দ কানে আসলো। সাথে সাথে বেড়িয়ে আসে লাকি। নিলয়কে দেখে যেনো আরেকটা জীবন ফিরে পেল। নিলয় রুমে আসতেই তাকে খুব করে জড়িয়ে ধরে বিলিয়ে দিতে লাগে হাজারো ভালোবাসার ছোঁয়া।

এদিকে নিলয় ও খানিকটা ভিজে গেছে। তার মনে হইলো এভাবেই লাকি কে কোলে করে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে। কিন্তু সেটা করা যাবে না। লাকির মাঝে আছে আর একজন তার ঠান্ডা লাগতে পারে। সেইভাবে মনের ইচ্ছে কে সেখানেই রেখে লাকির কাজ থেকে নিজেকে বের করে নিয়ে। ফ্রেশ হয়ে নিল।

বৃষ্টির নামার কোনো কথাই নাই। যেনো হাজারো দিনের আক্ষেপ আজকেই শেষ করে ফেলবে।
বেলকনিতে নিলয় দারিয়ে বৃষ্টি দেখতেছে। আর ডুবে আছে ভাবনায়।

বৃষ্টি নিয়ে তার কল্পনার শহরে ভাবালুতার মাঝে ছেদ ঘটালো লাকি। 'সে নিলয়ের পাশে দাড়িয়ে বললো, কি সুন্দর বৃষ্টি তাই না গো?'
"হুম"
আপনি জানেন? বৃষ্টির সময় দুআ করলে ওই দুআও আল্লাহ কবুল করেন। চলেন আমরা দুআ করি। "(লাকি বললো)"
'কী দুআ করবো?
'যা মন চায় সেটাই করেন'
লাকির এক হাত চলে গেলো রিমঝিম বৃষ্টিতে। ভিজে যাচ্ছে তার হাত। সে চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে কিছু বলছে। আর নিলয় অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। নিলয় জানে তার এই বলার অনেকটা জুড়ে সে আছে। তাকেই রাখবে।☺️

★★★
অনেক রাত হয়ে গেছে। এখন ও বৃষ্টি হচ্ছে তবে থেমে থেমে আর সাথে বিদ্যুৎ ও চমকাচ্ছে । খাওয়া দাওয়া শেষ হয়ে সবাই শুয়ে পড়ছে। লাকি ও শুয়ে আছে নিলয়ের বুকে। হঠাৎ এই নিলয় তার ঘুমের রাজ্য থেকে ফিরে আসে বিদ্যুৎ চমকানোর আওয়াজে।

লাকি ঘুমিয়ে আছে সারাদিন সাংসারিক ব্যস্ততায় পরে এক শান্তির ঘুমে বেগার সে। তার নিষ্পাপ, মায়াময় চেহারা, তাতে কোথাও অভিযোগের রেখা ফুটে নাই। নিলয় তার মায়াময় চেহারার দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে আছে ভাবতেছে এই মেয়েটা সারাটাদিন তাকে নিয়ে ভাবে, তার কত ভাবনা চিন্তা।

আচ্ছা মেয়েরা কোন ধাতুতে গড়া। একেবারে অপরিচিত একটা মানুষ, একটা পরিবার, একটা পরিবেশ কে কতো নিবিড় ভাবে না আপন করে নেয়। সেই বিয়ের প্রথম দিন থেকেই কোনো অভিযোগ না করে সব কিছু মেনে নিয়ে। যেটা মানার নয় সেটাও মানে নিয়ে তার সাথে কিভাবে আছে। এত্তোটা ও একটা অচেনা মানুষকে কেউ ভালোবাসতে পারে? লাকি কে না পেলে হয়তো বুঝতে পারতো না নিলয়।

লাকিকে হালকা করে তাদের বালিশ এ মাথা রেখে দেয়। বেলকনিতে এসে দাড়ায় সে। লাকি বলেছিল বৃষ্টিতে দুআ করলে সেই দুআা কবুল হয়। বাইরে হাত বাড়াতেই বৃষ্টির ফোঁটা গুলো তার হাতে লাগে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে।

চোখ বন্ধ হৃদয়ের গভীর থেকে ভালোবাসা টেনে নিয়ে, মনে মনে বলতে লাগলো " আল্লাহ, লাকিকে আমি অসম্ভব ভালোবাসি । সেও আমাকে ভালোবাসে জানি। আমাদের ভালোবাসায় যেনো শয়তানের আগমন হতে তার ধোঁকা থেকে বাঁচার এবং হালাল ভাবে জীবন-যাপন করে নিজেদের রক্ষা করতে পারি সেই রকম মজবুত করে দিও। যেনো জান্নাতে ও আমরা এভাবে কাছাকাছি পাশে থাকতে পারি।

★★★

রাত ৩ টা বাজে কারো চোখে ঘুম নেই, আমেনা বেগম বসে আছে সামনে রাখা বেঞ্জে, সাথে নিলয়ের বাবাও। তাদের সামনে দাড়িয়ে আছে নিলয়।
অপারেশন থিয়েটারের করিডোরে। ভেতরে লাকি। প্রচন্ড প্রসব-বেদনায় কাতর সে।

দরজার ফাক দিয়ে আসা চিৎকার নিলয়ের বুকের ভেতরটা ভেঙে খান খান করে দিচ্ছে। আজ তাদের ঘরে নতুন আলো আশার দিন।

একদিকে আনন্দ অন্য দিকে ভয়।
ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিলয় যেনো বার বার হারিয়ে ফেলছে নিজেকে। সময় বেয়ে যাচ্ছে অপারেশন থিয়েটারের দরজা খুলার জন্য অপেক্ষার সময় যেনো শেষ হচ্ছে না।

চোখের কোণোয় যেনো উঁকি দিচ্ছে কোথা থেকে যেনো ছুটে এসেছে হাজারো নোনা জল। তার সাথে সাথে প্রকৃতি ও যেন মিল দিচ্ছি বৃষ্টি শুরু গেলো বাইরে।
এই মধ্যরাতের বৃষ্টি যেনো চারদিকে আরো নিরবতা এনে দিচ্ছে। আর দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি হচ্ছে না নিলেয়ের সে ও বসে পড়ে বেঞ্জে।

বৃষ্টির শব্দে যেনো মনের ভিতরে লাকির দেয়া কথা গুলো উকি দিচ্ছে। তার মনে পড়ে গেলো লাকি বলছিল যে "বৃষ্টির সময় দুআ করলে ওই দুআও আল্লাহ কবুল করেন।" সেদিন ও বৃষ্টি ছিল।

নিলয় ও সাথে সাথে বেরিয়ে আসে বেলকনিতে আসমানের দিকে হাত তুলে দিল। বৃষ্টির ফোঁটা গুলো এসে পড়তেছে তার হাতে। সে বলতে লাগলো "আল্লাহ আমার স্ত্রীকে ধৈর্য দিন। এই ভীষণ ব্যথা সয্য করার শক্তি তাকে দিন। বলেই অঝোরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে সে। হঠাৎ এই ভেসে এলো এক মধুর কান্নার আওয়াজ! নিলয়ের বুকে উথাল-পাতাল অবস্থা। কান্না থেমে গেলো। মনের ভিতর অন্য রকম অনুভূতি কেমন আছে লাকি? আর নতুন যে এলো সে কেমন আছে?
213 Views
3 Likes
2 Comments
3.5 Rating
Rate this: