শেষ বিকেলের স্মৃতি ( পাট ৩ )

পলাশের হৃদয়ে এক গভীর শূন্যতা ছিল, যা কাটিয়ে উঠতে সে কিছুতেই পারছিল না। অনামিকার মা যখন তাকে সে কথা বলেছিলেন, তখন পলাশের মনে মনে একটা বড় পরিবর্তন ঘটেছিল। তার কাছে জীবনটা এখন শুধুই একটি প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে—কীভাবে আমি অনামিকার হারানো ভালোবাসা ফিরে পাব?

বিকেল বেলা, পলাশ আবার সেই পুরনো পার্কের বেঞ্চে বসে ছিল। আজকাল আর সে কোনো বই লেখার কথা ভাবত না, তার চিন্তা ছিল শুধুমাত্র অনামিকার নিয়ে। হয়তো সে ফিরতে পারবে না, কিন্তু অন্তত তার কাছে একটাই সুযোগ ছিল—অনামিকার জন্য অন্তর্দৃষ্টি আর ভালোবাসা প্রকাশ করার।

একদিন সন্ধ্যায়, পলাশ তার পুরনো এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে চলে যায়। বন্ধু, শাহিন, তাকে জানায়,

শাহিন: "তুমি তো জানো, পলাশ, জীবনের কোনো কিছু হারানোর পর সে ফেরত পাওয়ার চেষ্টা আর কখনো সঠিক সময় হয়ে ওঠে না। তবে, তুমি যা হারিয়েছো, তা তোমার মনে থাকবে।"

পলাশ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে শাহিনের কথার গভীরতা অনুভব করে।

পলাশ (নিজের মধ্যে): "হ্যাঁ, আমি বুঝতে পারি। তবে, অন্তত অনামিকার কাছ থেকে ক্ষমা চাইতে চাই।"

পরের দিন সকালে, পলাশ সিদ্ধান্ত নিল, সে অনামিকার সাথে দেখা করবে, যদি সুযোগ পাওয়া যায়। সে তার পুরনো স্মৃতির জায়গায়—অন্যদিকে সেই পার্কে—গিয়ে পৌঁছল, যেখানে একসময় তারা একে অপরকে ভালোবাসার কথা বলেছিল।

একটু সময় পর, পলাশ দেখল, অনামিকা পার্কে হাঁটছিল। সে কেমন যেন পরিবর্তিত হয়ে গেছে, মনে হচ্ছিল সময় তার উপর বেশ প্রভাব ফেলেছে। পলাশ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ধীরে ধীরে তার কাছে চলে গেল।

পলাশ: "অনামিকা..."

অনামিকা প্রথমে তাকে চিনতে পারেনি, কিন্তু পলাশের চোখের দিকে তাকিয়ে সে বুঝতে পারল। একটু থেমে গিয়ে, অনামিকা বলল,

অনামিকা: "পলাশ, তুমি? আমি ভাবিনি তুমি আবার ফিরে আসবে।"

পলাশ কিছু বলতে চাইল, কিন্তু তার গলা শুকিয়ে গিয়েছিল। সে বুঝতে পারছিল না কীভাবে শুরু করবে। তবে সে ধীরে ধীরে বলল,

পলাশ: "অনামিকা, আমি জানি, আমার প্রতি তোমার মনটা এখন একদমই অপরিবর্তনীয় হয়ে গেছে, কিন্তু আমি তোমার কাছে কিছু বলতে চাই। আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলেছি... আমার ভুল ছিল, আমি তোমার ভালোবাসাকে কখনোই গুরুত্ব দিইনি।"

অনামিকা কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল, তার চোখে যেন একধরনের নিরব কষ্ট ফুটে উঠছিল। সে গভীর শ্বাস নিয়ে বলল,

অনামিকা: "পলাশ, আমি জানি তুমি এখন বুঝতে পারছো। কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেছে। তুমি যেটা হারিয়েছো, তা আর ফিরে আসবে না।"

পলাশ মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে ছিল। তার মনে হচ্ছিল, সময়ের অমোঘ নিয়ম তাকে আর কোনো সুযোগ দেবে না। তবে, সে জানত, তার ভুল বুঝতে পারা আর অনামিকার কাছে ক্ষমা চাওয়া ছিল তার শেষ চেষ্টা।

পলাশ: "আমি জানি, আমি আর তোমার জীবনে ফিরে আসতে পারব না। তবে, আমি শুধু চাই যে তুমি জানো, তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা ছিল... এখনও আছে।"

অনামিকা কিছু সময় চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল, তারপর বলল,

অনামিকা: "তুমি যে আমাকে এত ভালোবাস, সেটা আমি জানি, পলাশ। তবে, এখন আর কিছু পরিবর্তন হবে না।"

পলাশের হৃদয়ে এক তীব্র যন্ত্রণা অনুভব হচ্ছিল, তবে সে জানত, আজকের পর সে অন্তত একটুখানি শান্তি পাবে—যতটুকু অনামিকার কাছ থেকে সম্ভব।

পলাশ আর অনামিকা কিছুক্ষণ একে অপরের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইল, কিন্তু কোনো শব্দের প্রয়োজন ছিল না। এই মুহূর্তে, সবই যেন শেষ হয়ে গিয়েছিল।

চলবে...

চতুর্থ পর্বের জন্য অপেক্ষা করুন...