জামাল বেগমকে জিজ্ঞাসা করল আমার বাড়িতে আবার কিসের প্রমাণ দেবে তুমি চাচী ।
বেগম : আগে চল পরে বলি,, তোকে আজকে হাতে নাতে দেখাবো যে তোর বউ কতটা ভালো মানুষ।
জামাল : আচ্ছা চলো তাহলে তাড়াতাড়ি,, এই বলে দুজনে হাঁটতে শুরু করলো,,
আর ওইদিকে শাজাহান দাঁড়িয়ে আছে আছিয়ার ঘরের দরজার সামনে,, আছিয়া তখন ঘুমিয়ে আছে,,, কিছুই জানেনা আছিয়া ,, মেয়েদেরকে নিয়ে গভীর ঘুমে মুগ্ধ হয়ে পড়ে আছে ।
শাজাহান চুপি চুপি আছিয়ার ঘরে ঢুকলো । ঢুকে খাটের নিচে লুকিয়ে পড়লো । বেগম আর জামাল বাড়ির কাছাকাছি এসে পড়ছে। বেগম জোরে জোরে কথা বলা শুরু করলো বাহিরে যাতে শাজাহান ঘর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে চলে যেতে পারে। শাজাহানও বুঝতে পারল যে বেগম আর জামাল এসে পড়েছে ,,,
শাজাহান তাড়াহুড়া করে মুখ গামছা দিয়ে বেঁধে ফেলল যাতে তাকে চেনা না যায়। হাতে তেল দিয়ে আসছে যাতে হাতে ধরলে পিচলিয়ে পালিয়ে যেতে পারে ।
জামাল বেগমকে বলতে লাগলো আমার বাড়িতে কি হয়েছে এখানে কেন নিয়ে আসলে আমাকে।
বেগম : আমি প্রতিদিনি একটা লোককে আছিয়ার ঘরের দিকে আসতে দেখি ,,, আমার বিশ্বাস আজকেও এসেছে ,,, তাই তোকে প্রমাণ স্বরূপ দেখাতে এনেছি।। জামাল তো রেগে ফায়ার ,, ।
জামাল : তুমি কিন্তু চাচি বেশি বেশি বলছো ,, সব জিনিস নিয়ে মিথ্যা কথা বলা ভালো না ,,, ।
বেগম : আগে চল দেখি তারপর বলিস এগুলো আমাকে ,,,
জামাল দরজার কাছে গেল আর জোরে জোরে আছিয়াকে ডাকতে লাগলো,, এই আছিয়া বাহিরে বের হ ,,, আরো খারাপ খারাপ ভাষায় গালি দিতে লাগলো । তখনই শাহজাহান মুখ ডেকে দৌড় দিল জামাল পিছনে পিছনে দৌড়ে শাজাহানকে ধরার অনেক চেষ্টা করল ,,, কিন্তু কোন ভাবে ধরতে পারল না ।
কোথাই যেন উধাও হয়ে গেল শাজাহান । এদিকে বেগম পালিয়ে বাড়িতে চলে গেল । বেগম মনে মনে বললো ,,, যা করার করে ফেলেছি এখন শুধু মজা দেখবো। বাড়িতে চলে গেল বেগম ।
জামাল দৌড়ে দৌড়ে হাপাঁতে হাঁপাতে আবার চলে আসলো ,, আসার পর আবার খারাপ ভাষায় বকা শুরু করছে আছিয়াকে ।
কিছু না জানা আছিয়া বকাবকিতে ঘুম থেকে জাগনা পেল ,,, আছিয়া মনে করল হয়তো নেশা করে আসছে,এর জন্য এমন করছে । আছিয়া তাড়া হুড়া করে ঘুম থেকে উঠে ভাত বারতে লাগলো । ভাত বেরে জামাল কে বলল ভাত খেয়ে নেন । জামাল তো ভাতের থালা নিয়ে আছিয়ার মুখের মধ্যে ডেল মেরে ভাত ফেলে দিলো ।
আর আছিয়াকে বলল জামাল,,, তুই যে দুশ্চিন্তা মহিলা আমি আগে জানতাম না আজকে হাতেনাতে প্রমাণ পেলাম । আছিয়া তো কিছু বুঝতে পারছে না । মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে মাথার মধ্যে অনেক জোরে ব্যথা পেয়েছে জামালের ভাতের থালার বারিতে।
আছিয়া : এগুলো কি বলছেন,,,, আর আপনাকে কে বলল আমি দুশ্চিন্তা মহিলা ।
জামাল আরো দুইটা লাথি মেরে বলল ,,,, এর জন্যই তো বলি তুই এত টাকা কোথায় পাস ,,থালা বরা ফল,,,, পাতিল ভর্তি দুধ,,, মেয়েদেরকে নিয়ে খাস ,,, বাবা কে খবর দিয়ে টাকা পয়সাও দিয়ে দেস,,মুরগীর মাংস খাওয়াস, এখন বুঝতে পারছি যে তুই কিভাবে এতো টাকা পাস ।
আছিয়া : আপনি আমাকে যাই তাই বলেন দুশ্চিন্তা মহিলা বইলেন না । আমার আল্লাহ জানে ,,,আমি কোন খারাপ কাজ করিনি দুশ্চিন্তা মহিলা হওয়ার মতো।
জামাল : আবার মুখে মুখে তর্ক করিস। আমি নিজের চোখে দেখছি পরপুরুষকে তোর ঘর থেকে বের হতে । তুই কালকেই চলে যাবি আমার বাড়ি থেকে ,,, তর মুখ আমি আর দেখতে চাইনা।
আছিয়া : এগুলো কি বলেন আপনি ,,আমি কোথায় যাবো ? আছিয়া জামালের পা ধরে আছে,,, পা ধরে বললো আমাকে তাড়িয়ে দিয়েন না। আমাদের মেয়েদের দিকে তাকান ,,, ।
জামাল : তোর মত মানুষের কোন কথা আমি শুনতে চাই না ,,, তুই একটি দুশ্চিন্তা মহিলা । আছিয়া আর এই কথাটা শুনতে চাইলো না। সাথে সাথে তর্ক করতে লাগলো ,,,
আছিয়া : আমি কোন দুশ্চিন্তা মহিলা না ,,, আপনি কি আমাদের কোন খবর কোনদিন রাখেন ,,,আমরা কেমন আছি ,,,কি খেয়েছি ,,মেয়েরা কেমন আছে,,,,, আপনি কি জানেন সারার কঠিন রোগ হয়েছে ,,, চিকিৎসা করতে পারছি না ,,, ফলমূল খাওয়াতে বলছে ডাক্তার,, ।
জামাল : তাই বলে তুই খারাপ পথে যাবি দুশ্চিন্তা মহিলা হয়ে যাবি ,,,,
আছিয়া চিল্লাইয়ে চিল্লাইয়ে বলল আপনি আমাকে আর একবারও দুশ্চিন্তা মহিলা বলবেন না ,,, আমি কোন খারাপ কাজ করিনি,, কিসের লোক ঘরে আসছিলো আমি কিছু জানিনা ,,,, আপনি যে প্রতিদিন চুমকির সাথে রাত কাটান কোনদিন আমি কিছু বলছি আপনি কি খুব ভালো মানুষ,,,
জুয়া খেলে বেড়ান বউ বাচ্চার কোন খোঁজ নেন না ।।।।
জামাল কি বোঝার লোক,,, সে আরো বলে আমার চুমকির কথা খারাপ বলবি না ,,,, আছিয়া এটা শুনে হাসতে লাগলো ,,, আছিয়া বলল আমার চুমকি তাই না ,,,, আচ্ছা কালকে আমি চলে যাব। আপনি আপনার চুমকিকে নিয়েই থাকেন।
জারা আর সারা,,, গভীর ঘুমে আছে এখনো । এগুলোর শব্দে তাদের ঘুম ভাঙ্গিনি ,,, সারার শরীলে এখনো প্রচুর জ্বর । আছিয়া বললো চিন্তা করিয়েন না ,,,, সকাল হলেই চলে যাবো ,,,, এই বলে মাটিতে পার্টি ভিছিয়ে সুয়ে পড়লো আছিয়া।
জামাল মেয়েদের কাছে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লো ,, আছিয়া সেদিন সারা রাতিই কান্না করলো ,,, আর আগের সব কথা ভাবতে লাগলো ,, কত সপ্ন ছিল তার স্বামীর ভালোবাসা নিয়ে । ছোট্ট একটি সংসার থাকবে তার, ভালোবাসার কোন কমতি থাকবে না তার সংসারে ,,
("আর এগুলো হয়তো সব মেয়েরই স্বপ্ন থাকে,,, স্বামী একটি ভালো মানুষ হবে ,,, তাকে অনেক ভালবাসবে,,, সুখে দুঃখে তার পাশে থাকবে,,,, জীবনে সব সময় হাসি খুশি রাখবে তাকে,, সন্তানদের নিয়ে স্বামিকে নিয়ে সুখের সংসার হবে ,,, এগুলো সব মেয়েদের স্বপ্ন থাকে ,,, সব মেয়েরই কি সব স্বপ্ন পূরণ হয় ,,, অনেকের জীবনে এই সুখগুলো,,, স্বপ্নগুলো পূর্ণতা পেয়ে থাকে ,,, আর কারো কারো এই স্বপ্নগুলো অপূর্ণতায় হয়ে রয়ে গিয়েছে আছিয়ার মতন।
আছিয়ার ও অনেক সপ্ন ছিল। সারাদিন কাজ করে স্বামী বাড়িরে আসবে ,, সন্তানদের জন্য মজা নিয়ে আসবে হাতে করে ,,তা দেখে মেয়েরা খুশিতে তাদের বাবাকে জড়িয়ে ধরে চুমু দিবে ,,,হাসি খুশি খুনসুটিতে মেথে থাকবে স্বামীর সাথে ,,,, এগুলো আছিয়ার সপ্ন এখন। এগুলো আছিয়া ভাবতে ভাবতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছে ,,,।
সকালে সারার জ্বর বেশি উঠাতে ঘুম থেকে উঠে পড়ছে ,,, আছিয়া মেয়ের কান্নার শব্দে ঘুম থেকে জাগনা পেল ,,, আছিয়া ঘুম থেকে উঠে দেখলো জারা পড়তে বসছে ,,
আছিয়া ডাক দেওয়ার আগেই ঘুম থেকে উঠে,,জারার তো আজকেও পরীক্ষা আছে । জারা আছিয়াকে বলল ,,, দেখছো মা তোমার মেয়ে কত বড় হয়ে যাচ্ছে,, তোমার আগে ঘুম থেকে উঠছি আমি ,,,
তুমি খুশি হওনি ,,,, আছিয়া কান্না কান্না শুরে বলল ,,, হ্যা মা খুশি হয়েছি ,,, আমি চাই তুমি অনেক বড় হও মানুষের মতো মানুষ হও
জারা : মা তুমিকি কান্না করছো ,,, তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? আছিয়া বলল কিছু হয়নি রে মা ,,, আজকেই কি তোর পরীক্ষা শেষ? জারা উত্তরে বলল হ্যাঁ মা ।
আছিয়া : তুই একাই বাড়িতে থাকিস,,, তোর বাবাকে দেখে রাখিস আমি তোর নানার বাড়িতে যাব তোর নানি অনেক অসুস্থ শুনছি ,,,
জারা কান্না করে বলল মা আমাকে রেখে কোথাও যেও না ।
আছিয়া : মা তুই অনেক বড় হয়ে গেছিস,, পরীক্ষা দেও ,, কিছু দিন পর আমি নিয়ে যাবো তোমাকে । জামাল আছিয়াকে বাহিরে ডাক দিল , এখানে আস, এই কথা বলে ডেকে বলল জামাল আমার বাড়ি থেকে তাড়াতাড়ি চলে যা ,,আছিয়া বললো আচ্ছা চলে যাবো।
এবার কি হবে আছিয়া কি সত্যিই চলে যাবে?
চলবে,,,,,,
জুয়া
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
184
Views
1
Likes
0
Comments
0.0
Rating