প্রথম প্রেমের সূচনা

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:

গ্রামের প্রান্তে একটি ছোট্ট কুটিরে বাস করতেন রাহুল ও তৃষা। রাহুল ছিল একজন কবি, আর তৃষা ছিল গ্রামের এক মিষ্টি মেয়েটি। দুজনের পরিচয় হলো এক বৃষ্টির দিনে। তৃষা রাস্তার পাশের একটি গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ছিল, বৃষ্টির জল তার চুলে ঝরছিল। রাহুল তখন কবিতা লিখতে বসেছিল। প্রথমবারের মতো তৃষার চোখের দিকে তাকিয়ে সে বুঝতে পারল, তার হৃদয়ে নতুন কিছু শুরু হচ্ছে।

“আপনারা কি একাই বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন?” তৃষা জিজ্ঞেস করল।

“না, আমি তো কবিতা লেখার চেষ্টা করছি। আপনি কি কিছুটা সময় আমার সাথে দাঁড়াতে পারেন?” রাহুল একটু সংকোচ নিয়ে বলল।

তৃষা হাসল। “অবশ্যই, আমি কি আপনার কবিতার বিষয়বস্তু হতে পারি?”

রাহুল তার এই উত্তরে আনন্দিত হল। তারা একসাথে অনেক কথা বলতে লাগল। তৃষার হাসি ও কথায় রাহুলের মনে একটা অদ্ভুত অনুভূতি তৈরি হলো। সময় কিভাবে চলে গেল, তারা নিজেও বুঝতে পারলো না।

সেই দিন থেকেই শুরু হলো তাদের বন্ধুত্ব। তারা একসাথে সময় কাটাত, কবিতা পড়ত, আর গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করত। রাহুলের কবিতা যেন তৃষার জন্যই লেখা হচ্ছিল। সে যতবার রাহুলের কবিতা শুনত, ততবার সে নতুন করে প্রেমে পড়তে লাগল।

কিন্তু রাহুলের মনেও কিছু একটা চলছিল। সে বুঝতে পারছিল, তৃষা তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হয়ে উঠেছে। কিন্তু কি করে সে তার অনুভূতি প্রকাশ করবে, তা নিয়ে সে চিন্তায় ছিল। তার মনে হয়েছিল, যদি তৃষা তার অনুভূতি জানতে পারে, তবে তাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হতে পারে।

একদিন রাহুল সিদ্ধান্ত নিল, সে তার অনুভূতি ব্যক্ত করবে। সে তৃষাকে একটি পুরনো বৃক্ষের নিচে ডাকলো, যেখানে তারা প্রথমবার দেখা করেছিল। তৃষা সেখানে আসতেই রাহুল বলল, “তৃষা, আমি তোমার সাথে কিছু শেয়ার করতে চাই।”

তৃষার চোখে আগ্রহ দেখা গেল। “কি বলছ, রাহুল?”

“তুমি জানো, আমি কবিতা লিখি। কিন্তু এখন আমি বুঝতে পারছি, আমি তোমার জন্য কবিতা লিখি। তুমি আমার জীবনে যে আনন্দ এনেছ, সেটার জন্য আমি তোমাকে ভালোবাসি,” রাহুল তার হৃদয়ের কথা বলল।

তৃষার মুখে একরাশ অবাক ভাব ফুটে উঠল। কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর সে বলল, “আমি জানতাম তুমি কিছু বিশেষ অনুভব করো। আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি, রাহুল।”

তাদের দুই হৃদয় এক হয়ে গেল। সেই মুহূর্তে, বৃষ্টির droplets আবারও তাদের উপরে পড়তে লাগল, কিন্তু তারা সে দিকেও খেয়াল করল না। রাহুল তৃষার হাত ধরে বলল, “এই বৃষ্টি আমাদের প্রেমের প্রতীক।”

দিনগুলো পেরিয়ে গেল, আর রাহুল ও তৃষার প্রেম যেন আরো গভীর হতে থাকল। তারা একসাথে নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করল। গ্রামের পটভূমিতে তাদের প্রেমের কাহিনী অন্যদের কাছে রূপকথার মতো মনে হতো। কিন্তু সবকিছুতে যেন একটা সমস্যা ছিল—তৃষার পরিবার।

তৃষার বাবা ছিলেন একজন কঠোর মানুষ। তিনি চাননি যে তার মেয়ে একটি কবির সাথে সময় কাটাক। তিনি চেয়েছিলেন তৃষা একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর সাথে বিয়ে করুক। তৃষা জানতো, তার বাবা কখনো রাহুলের সাথে সম্পর্ক মেনে নেবেন না।

একদিন, তৃষা রাহুলকে বলল, “আমার বাবা আমাদের সম্পর্ক মানবেন না। আমি কি করব?”

রাহুল চিন্তায় পড়ে গেল। “আমরা আমাদের প্রেমের জন্য লড়াই করতে পারি। সত্যিকারের প্রেম সব বাধা অতিক্রম করে।”

তৃষা তার উত্তরের প্রতি আশাবাদী হতে পারছিল না। “কিন্তু আমার বাবার সামনে গিয়ে বলার সাহস নেই।”

“তাহলে আমরা একসাথে গিয়ে কথা বলব। আমি তোমার বাবাকে বোঝাতে চাইবো যে আমি তোমার জন্য কতটা সত্যি,” রাহুল দৃঢ়তার সাথে বলল।

একদিন, রাহুল এবং তৃষা তৃষার বাবার কাছে গেল। তৃষার বাবা তাদের দেখে বেশ রাগান্বিত হলেন। “তুমি একজন কবি। তোমার পেছনে আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ নষ্ট হবে!” তিনি চিৎকার করলেন।

রাহুল সাহস নিয়ে বলল, “আমি জানি, আমি কবি, কিন্তু আমি তৃষাকে সত্যি ভালোবাসি। আমি তার জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত।”

তৃষা বলল, “বাবা, আমি রাহুলকে ভালোবাসি। আমি তাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না।”

বাবা কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন। তারপর তিনি বললেন, “তুমি যদি সত্যিই রাহুলকে ভালোবাসো, তাহলে তোমার মন এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে তুমি দায়িত্বশীল হও। যদি সে তোমার জন্য উপযুক্ত হয়, তবে আমি বাধা দেব না।”

তৃষা আর রাহুল দুজনেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল। তারা জানলো, তাদের প্রেমের পথে প্রথম বাধা অতিক্রম হয়েছে।

বছরের পর বছর পেরিয়ে গেল। রাহুল ও তৃষা একসাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করছিল। তারা নিজেদের জন্য একটি নতুন জীবন শুরু করলো। রাহুলের কবিতা তৃষাকে নিয়ে নতুন নতুন গল্পে পূর্ণ হতে লাগল।

একদিন, রাহুল তৃষাকে নিয়ে একটি বিশেষ দিন উদযাপন করল। সে একটি রূপালী নেকলেস কিনল এবং তৃষার হাত ধরে বলল, “তৃষা, তুমি আমার জীবনকে যেভাবে আলোকিত করেছ, আমি চিরকাল তোমার পাশে থাকতে চাই। কি তুমি আমার সাথে বিয়ের প্রতিজ্ঞা করবে?”

তৃষার চোখে আনন্দের অশ্রু। “হ্যাঁ, আমি চিরকাল তোমার সাথে থাকতে চাই।”

সেই রাতে তারা চাঁদের নিচে প্রেমের অঙ্গীকার করল, এবং তাদের জীবনের নতুন সূচনা হলো। প্রেমের গল্পটি যেন সেখান থেকেই শুরু হলো, যা কখনো শেষ হবে না।
170 Views
3 Likes
0 Comments
5.0 Rating
Rate this: