তুমি হীন সিজন ২

রাহুল
রাহুল
লেখক

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
তুমি হীন সিজন ২, পাট ১-
নীল আকাশটা যেন আজ কালো মেঘে ঢেকে গেছে। মসজিদের পাশেই সেই ছোট্ট কবরটা, যেখানে মুমমুম চিরনিদ্রায়, তার ওপরে মাথা ঠেকিয়ে নিঃশব্দে কাঁদছে নিলয়। চোখের জল শুকিয়ে গেছে, কিন্তু বুকের কান্না থামে না। সাদা কাগজের মতো তার মনটা আজও শূন্য।

কান্না করতে করতে একপর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে নিলয় মুমমুমের কবরে উপরে! কল্পনায় যেনো মুমমুম তাকে জড়িয়ে ধরছে। তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। হঠাৎ সে অনুভব করে মুমমুমের স্পর্শ। সেই কোমল হাত, যা একসময় তার কপালে হাত বুলিয়ে শান্ত করত, আজ আবার ফিরে এসেছে।

"নিলয়, কাঁদিয়ো না," মুমমুমের কণ্ঠ যেন বাতাসে মিশে আসে। "আমি তো তোমাকে ছেড়ে যাইনি। আমি তোমার মাঝেই আছি।"

নিলয় তড়িঘড়ি করে উঠে বসে। দেখে, মুমমুম বসে আছে তার পাশে, সেই চিরচেনা হাসিটা ঠোঁটে।

"তুমি... তুমি ফিরে এসেছো?" নিলয়ের গলা কাঁপছে।

"ফিরে আসিনি। কিন্তু তোমার ভালোবাসা আমাকে টেনে এনেছে।" মুমমুম তার কপালে আলতো করে হাত রাখে।

নিলয়ের বুক ভেঙে যায়। "তুমি কেন চলে গেলে, মুমমুম? তুমি তো বলেছিলে সব ঠিক হয়ে যাবে!"

মুমমুম মৃদু হেসে বলে, "নিলয়, পৃথিবীতে সব সম্পর্ক চিরস্থায়ী হয় না। কিছু ভালোবাসা আমাদের শিখিয়ে যায় কীভাবে বাঁচতে হয়, কীভাবে কারও জন্য প্রার্থনা করতে হয়। তুমি আমার ভালোবাসা ভুলো না, কিন্তু তুমি তোমাকে নিয়ে বাঁচতে শিখো।" আমি তোমার সাথে আছি চিরকাল থাকবো সবসময়।

নিলয় ভাঙা গলায় বলে, "তুমি ছিলে আমার জীবন। যখন তুমি যেটা বলছো সেটাই করছি তোমার সুখের জন্য এমনকি বিয়ে করতে বলছো সেটাও করেছি, নিজেকে কন্ট্রোল করে রাখতাম এই ভেবে যে তুমি আছো, আমার পাশে কিন্তু তুমি এখন নেই, পৃথিবী থেকে চিরকালের জন্য বিদায় নিছো আর ইচ্ছে করলেও তোমাকে কখনো দেখতেও পাবো না, শেষ বারের মতো তোমাকে দেখতে ও পারলাম না। আমি আর পারছি না, মুমমুম। সব শূন্য মনে হচ্ছে।"

মুমমুম মৃদু হেসে বলে, "তুমি জানো, শূন্যতায়ও সৌন্দর্য আছে? শূন্য মানে শেষ নয়, শূন্য মানে নতুন কিছু শুরু করার জায়গা। কি জানো, আমি প্রতিটা মুহূর্তে তোমার পাশে ছিলাম? যখন তুমি ভেঙে পড়েছিলে, আমি তোমার কাঁধে হাত রেখেছিলাম। যখন তুমি একা ছিলে, আমি তোমার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। শুধু তুমি দেখতে পাওনি।"

নিলয়ের চোখ সন্ধ্যা বেলার অন্ধকারে ম্লান হয়ে আসছে। মুমমুমের চেহারা ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে।

তুমি যেও না!" মুমমুম! নিলয় হাত বাড়ায়, কিন্তু সে তাকে স্পর্শ করতে পারলো না।

কিছু ক্ষণ পর জ্ঞান ফিরে আসলো নিলয়ের উঠে দেখে, সে কবরের উপরে শুয়ে পাশে পড়ে আছে। সন্ধ্যার অন্ধকার চারদিকে ছড়াচ্ছে। মুমমুম চলে গেছে, চারদিকে নীরবতা, কিন্তু বাতাসে যেন ভেসে বেড়ায় মুমমুমের শেষ কথাগুলো, "আমি তোমার সাথেই আছি, সবসময় থাকবো।

নিলয় নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে।
যেন এক অদ্ভুত দুনিয়া থেকে ফিরে এলো এবার নতুন এক জীবন শুরু করতে যাচ্ছে, চারদিকের সবকিছু মনে হচ্ছে নতুন।
উঠে দাঁড়ায় নিলয়। হঠাৎ মনে পড়ে লাকির কথা সে অপেক্ষা করছে তার-জন্য।
নিলয় মুমমুমের কবরের দিকে আবারো কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। তার চোখে যেন এক অসীম শূন্যতা, অথচ হৃদয়ে এক গভীর শান্তি। এতদিন পরেও মনে হচ্ছিল, মুমমুম যেন তাকে ছেড়ে যায়নি, তার প্রতিটি চিন্তায়, প্রতিটি কথায় মুমমুমের উপস্থিতি অনুভব হচ্ছে । হালকা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে, যেন মুমমুমের আত্মা তাকে শান্তি এনে দিচ্ছে।

নিলয় কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। তার হাতে মাটি ধরে, যেন মুমমুমের আত্মাকে আরও একবার স্পর্শ করার চেষ্টা করছে। “তুমি তো জানো, মুমমুম, তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা কোনোদিনও কমবে না। যতদিন বাঁচব, তোমার ভালোবাসায় শক্তি পাবো, তোমার স্মৃতিতে বাঁচব।
“মুমমুম, আমি জানি তুমি যেখানেই আছো ভালো আছো, শান্তিতে আছো,“তোমার হাসি, তোমার কথা কখনোই ভুলব না। তোমার সাথে এক এক করে যে মুহূর্তগুলো কাটিয়েছি, সেগুলো যেন এক একটা অমূল্য রত্ন হয়ে আমার হৃদয়ে থেকে যাবে। সবসময় তোমার জন্য দোয়া করি, আল্লাহ যেন তোমাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন। তোমার এমন জীবন ছিল, যে জীবনটা সবাই চায়, আর আমি নিশ্চিত, তোমার জন্য আল্লাহর কাছ থেকে সবচেয়ে ভালো কিছুই অপেক্ষা করছে।”

তারপর নিলয় চোখ বন্ধ করে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করল, "হে আল্লাহ, তুমি মুমমুমকে জান্নাতুল ফেরদৌসে স্থান দিও। তার মতো একজন স্নেহময়ী, সহানুভূতিশীল মানুষ পৃথিবীতে খুব কমই আসে। তার জন্য শান্তি এবং সুখ দিও, যেন সে কখনো কোনো কষ্ট না পায়।

আল্লাহর কাছে প্রার্থনা শেষ হলে, নিলয় কবরের পাশে হাত জোড় করে বলল, "মুমমুম, আমি তোমার জন্য সবসময় ভালো কিছু করব, যেন তুমি কষ্ট না পাও, তোমার স্মৃতি আমাকে শক্তি দেয়, আর সেই শক্তি দিয়ে আমি তোমার ছেড়ে দেওয়া কাজগুলো শেষ করব। এতদিন করে আসছি শেষ নিঃস্বাস পযন্ত করবো..
একটু থেমে গিয়ে, নিলয় আরও একবার মুমমুমের কবরের দিকে তাকিয়ে বলল, "তুমি যেখানে আছো, শান্তি এবং সুখ পাবে, আর আমি জানি, তুমি সবসময় আমাকে দেখছো। তুমি ছিলে, তুমি আছো, এবং তুমি চিরকাল থাকবেই।"
সেই মুহূর্তে তার হৃদয়ে এক অদৃশ্য শান্তি প্রবাহিত হচ্ছে, যেন মুমমুমের আত্মা তার পাশে আছে এবং তাকে দেখছে।

মুমমুমের কাছে বিদায় নিয়ে হাঁটা শুরু করলো বাসার দিকে। রাস্তায় অপেক্ষা করতেছে রিকশার জন্য..
হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে লাকির ফোন..
ফোন রিসিভ করতেই
লাকি- হ্যালো কোথায় আছেন,
নিলয়ের কন্ঠে কান্নার ছাপ পড়ে গেছে, একটু স্বাভাবিক হয়ে ঘড়ির দিকে তাকায় দেখলো ৭ টা বেজে গেছে এখন তো অফিস টাইম।
নিলয়- অ-অফিসেসে
লাকি- ওহ আচ্ছা। বের হবেন কখন?
নিলয়- একটু পরেই!
লাকি- আচ্ছা, আর শুনেন আসার সময় আইসক্রিম নিয়ে আসিয়েন তো।
নিলয়- ওকে নিয়ে যাবো। আর কিছু লাগবে?
লাকি- নাহ শুধু আইসক্রিম।
নিলয়- ওকে, রাখি তাহলে!
লাকি- আচ্ছা মহারাজ। বায়
^_বলেই লাকি ফোন কেটে দেয়।

আরেক বার নিলয় পিছন ফিরে তাকায় মুমমুমের কবরের দিকে। এটায় যেনো শেষ তাকানো না হয়।..

নিলয় আইসক্রিমের দোকানে গিয়ে লাকির জন্য আইসক্রিম নেয়।
★ভালোবাসলে বুঝি দুর থেকেও অনুভব করা যায় ভালোবাসার মানুষটা কাছে আসলে টের পাওয়া যায়★

নিলয় গেইটের ভেতরে পা না রাখার সাথে সাথেই লাকি রুম থেকে বের হয়ে বারান্দায় চলে আসে। আর অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিলয়ের দিকে ।

নিলয় আর তাকালো না। কারণ তাকালেই মহা বিপদে পড়বে। লাকির হাতে আইসক্রিম দিয়েই ওয়াশরুমে যায় ফ্রেশ হতে। লাকি কিছু বলছে না শুধু তাকিয়ে আছে আর রাগে ফোপাঁসছে। নিলয় কোনো কথা বলে নাই এমন কি লাকির কথাও রিপ্লাই দেয় নাই।

বারবার মুমমুম এর কথা মনে পড়তেছে নিজেকে সান্ত করার ও অনেক চেষ্টা। আর লাকি সামনে খাবার পেরে লাকি শুধু নিলয়ের দিকেই তাকিয়ে আছে। সে কিছুই বুঝতে পারছে না। নিলয়ের এই নিস্তব্ধতা তাকে ভেতর থেকে অস্থির করে তুলছে। নিলয়ের মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। এমন কি তাকাচ্ছে ও না। সবকিছু যেনো এলোমেলো লাগতেছে। মুমমুমের সেই কবরটা চোখে ভাসতেছে। কল্পনায় তার কথা গুলো কানে আসতেছে। এবার আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না একটু একটু চোখ দিয়ে বের হয়ে গেলো অশ্রুর বিন্দু কণা।
লাকি বিস্মিত, নিলয়ের এমন অবস্থা দেখে কিছুই বুঝতে পারছে না। চেয়ার থেকে উঠে ধীরে ধীরে নিলয়ের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। এক মুহূর্ত দ্বিধায় কাটানোর পর, নিলয়ের মুখটা নিজের বুকে টেনে নেয়। নরম হাতে মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,

"কি হয়েছে? কেন এমন করে কাঁদছেন? কিছু বলুন তো।"

কিন্তু নিলয় তড়িঘড়ি করে আরও গভীরভাবে লাকির বুকে মাথা লুকিয়ে ফেলে। নিঃশব্দে কাঁদতে থাকে,

লাকি কিছুই বুঝতে না পেরে একটুখানি অস্থির হয়ে পড়ে, কিন্তু নিলয়ের মাথায় হাত রেখে শান্ত স্বরে বলে,

"সব ঠিক হয়ে যাবে, বলুন তো কি হয়েছে। আমি তো আছি আপনার পাশে।"

নিলয়ের অশ্রুভেজা চোখ যেন লাকির ভালোবাসায় একটু একটু করে শান্ত হতে থাকে।
চলবে..
310 Views
6 Likes
3 Comments
4.8 Rating
Rate this: