অভাগিনী মা ও বাবা

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
একদা এক কালের কথা, এক গ্রামে বসবাস করতো একটি পরিবার, পরিবারের সদস্য ছিলো তিন জন। তাদের সংসার চলতো অভাব অনটনে।  বাবা মা ও তাদের এক মাত্র ছেলে, ছেলেকে পড়ালেখা করানোর জন্য বাবা-মা আপ্রাণ চেষ্টা করত।  ছেলেরও পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ ছিলো। 

এই ভাবে দেখতে দেখতে ছেলে দাখিল পাশ করলো। মা বাবা ও অনেক খুশি। কারন তাদের উভয়ের ইচ্ছে ছেলেকে ডাক্তার বানাবে। তাই তাদের পুঁজি তথা গুরু ছাগল যা ছিলো তা বিক্রি করে টাকা জোগাড় করে ছেলেকে ডাক্তার বানাবে এই ইচ্ছার আশায়। ছেলেকে ঢাকা পাঠালো । সেখানে ছেলে পড়া লেখা করছে বাবা মা ও অতি কষ্টে ছেলেকে টাকা পাঠাচ্ছে পড়ালেখার খরচের জন্য । ছেলেও পড়ালেখা করছে।

দেখতে দেখতে কেটে গেলো চার পাঁচ বছর। এক দিন ছেলে তার বাবা মা কে জানালো সে বিয়ে করেছে এক জন ধনী পরিবারের মেয়েকে। তার বাবা মা প্রথমে একটু নাখছ ছিলো কিন্তু পরবর্তীতে তা মেনে নিলো।

বিয়ে করার পর ছেলে এতো বেশি মা বাবার খোঁজ নিতো না। বাড়িতে টাকাও পাঠাতো না। এই ভাবে অনেক দিন কেটে গেলো। যখনি ছেলে বাড়িতে আসতে চাইতো তখন তার স্ত্রী বলতো যদি তুমি গ্রামে যাও তাহলে  ডিভোর্স লেটার নিয়ে যাও । গ্রামে তার বাবা মা খুব অসুস্থ।  ছেলে টাকা পাঠাচ্ছে না তা দেখে তার বাবা তাদের শেষ সম্বল একটা ছাগল ছিলো তা বিক্রি করে একটা পুরাতন দেখে রিকশা কিনলো। তার মার ঔষধ কিনার টাকা জোগার করার জন্য।

এই ভাবে কাটলো অনেক দিন তার মা আরো অসুস্থ হতে লাগলো । তখন ছিলো শীত কাল। তার বাবা লজ্জার ভয়ে ভোররাতে মাফলার দিয়ে মুখ বেঁধে রিকশা চালানোর জন্য বাহির হতো। কারন মানুষে লজ্জা দিবে ছেলেকে শিক্ষিত বানিয়ে কি লাভ হয়েছে আপনার। এই ভাবে এক দিন ছেলে তার স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করে মাঝরাতে বের হয়ে যায় গ্রামে আসার জন্য তার মা বাবা কে দেখতে।  সে সময় তার বাবা দেখলো  তার মাও খুব অসুস্থ ঘরে খাবার মত কিছু নেই তাই বাধ্য হয়ে বের হল রিক্সা নিয়ে। তার বাবার শরীরটাও খুব বেশি ভালো না তবুও বের হয়েছে পেটের দায়ে। বাবা রিকশা নিয়ে রিকশা স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছে কোন পথিককে তার গন্তব্যে পৌঁছে দিবে সেই আশায়। তখন এ দেখতে পেলো তার ছেলেকে। বাবা তার ছেলেকে চিনেছে কিন্তু  বাবার মুখে মাফলার থাকার কারণে ছেলে বাবাকে চিনতে পারেনি। তখন ছেলে বললো যাবেন ভাই বাবা মৃদু হেসে বলল হ্যাঁ যাবো কোথায় যাবেন। ছেলে বললো রিকশা চালাতে পারেন তো আপনি,বাবা বললো হ্যা পারি আপনি  উঠেন আমি আপনার গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছি।

তখন ছেলে উঠলো রিকশাই। রিকশা চালাচ্ছে বাবা। বাবা অসুস্থ থাকার কারনে আস্তে আস্তে রিকশা চালাচ্ছে। হঠাৎ করে ছেলে পিছন থেকে ধাক্কা দিলো। সে বললো আপনি এতো আস্তে রিকশা চালাচ্ছেন কেনো জুড়ে চালান। বাবা পিছনে ফিরে বললো বাবা আমার তো বয়স হয়েছে আর আমি অসুস্থ  তাই আস্তে চালাচ্ছি।

ছেলে বললো রিকশা চালাতে পারো না তাহলে চালাও কেনো। আবারও বাবা চালাচ্ছে আপন গতিতে রিকশা। হঠাৎ করে আবার পিছন থেকে ধাক্কা মারলো ছেলে। সে  বললো এতো আস্তে  চালাচ্ছো কেনো বলছি না জুড়ে চালাতে। তখন বাবা কিছু বললো না। আবারও বাবা চালাচ্ছে আপন গতিতে রিকশা। আবারও ধাক্কা মারলো ছেলে। এবার বাবা রিকশা থামিয়ে নিচে নেমে মাফলার খুলে কাঁদা কাঁদা কন্ঠে বলতে লাগলো চিনো আমাকে। ছেলে তাকে জড়িয়ে ধরে বললো হ্যা চিনি তোমাকে তুমি আমার বাবা।

ছেলে বলে তুমি রিকশা চালাও কেনো। বাবা বললো তোমার মা খুব অসুস্থ আজকে সকাল থেকে কিছু খাই নাই আমিও তোমার মাও। তাই বাধ্য হয়ে  রিকশা নিয়ে বের হয়েছি। তাড়াতাড়ি বাড়িতে চলো তোমার মা খুব অসুস্থ। তখন তারা দ্রুতগতিতে বাড়িতে আসে কিন্তু মা তখন পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে অনেক দুরে। তার বাবা তার মায়ের  এই অবস্থা দেখে সেখানে মারা গেলো। তখন ছেলে উচ্চ সুরে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো আমি ইহকালীন শান্তি আর  পরকালের মুক্তি দুটোই হারিয়েছি। আমি এখন কি করবো হে খোদা।
581 Views
21 Likes
4 Comments
4.3 Rating
Rate this: