- আচ্ছা, অন্য কিছু নিয়ে কথা বলি চল। তোরা কেমন মানুষকে life partner হিসেবে চাস সে সম্পর্কে বল। (লিসা)
- ফালতু একটা বিষয়। (অরিন)
- তোর কাছে পড়াশোনা বাদে কোন বিষয়টা ভালো? (লিসা)
- আচ্ছা বাদ দে। (রিয়া)
- ফার্স্টে আমি বলি... (লিসা)
- দেখলি, লাইফের গোল নিয়ে ওর কোনো চিন্তা নেই, কিন্তু লাইফ পার্টনারের বিষয়ে সবার আগে। (অরিন)
- উফ, অরি, তুই চুপ কর। তো আমি এমন একজনকে চাই যে আমার প্রচুর খেয়াল রাখবে, আমাকে ভালবাসবে, আমাকে বুঝবে, সেই সাথে আমাকে ছাড়া কারো দিকে চোখ তুলে তাকাবে না। আর এমন যদি কাউকে পাই,তাহলে তো আমি এখনই relation শুরু করে দেবো (লিসা)
- এখনই! (অরিন)
- হুম, দেখতো 1st yearএ দূরবীন দিয়ে দেখলেও একজন সিঙ্গেল মানুষ পাস নাকি। (লিসা)
- হতে পারে, কিন্তু আমি এখন এসবে জড়াতে চাই না শুধু মন দিয়ে পড়াশোনা করতে চাই। (অরিন)
- তুই সত্যিই একজন রসকষহীন মানুষ। (লিসা)
- হলে ক্ষতি কি? (অরিন)
- নেহি, ইয়ে নেহি হো সাকতা.... তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড হয়ে রসকষহীন থাকবি, তুই যদি এমন থাকিস, তাহলে আমি জুজু কোথায় পাবো? জিজুর থেকে ট্রিট কিভাবে নেব? না এ হতে পারে না... (কিছুটা ঢং করে লিসা)
- ডিয়ার বেস্টু জুতাটা কি পা থেকে হাতে নিব? (অরিন)
-না মেরি মা, দরকার নেই। তোমার ওই সুন্দর চটি ইয়ে মানে জুতা তোমার ওই ধবধবে সুন্দর পায়েই ভালো মানায়। হাতে নিলে খুব একটা ভালো লাগবে কি? না মানে ওটারও তো একটা মান সম্মান আছে নাকি (লিসা)
- তোর জুতার সম্মান তোর কাছে রাখ, শয়তান দাড়া, দাড়া বলছি। (অরিন)
এই বলে অরিন লিসার পেছনে ছুটতে লাগলো। আর লিসা, তাকে আর পায় কে। সেও ছুটতে লাগলো। মাঠটিতে প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো দুই তরুণীর খিলখিল হাসির শব্দ। এভাবে চলছিলো হাসি, মজা, আড্ডায় কলেজ জীবনের সোনালী দিনগুলো।
আকাশ চৌধুরী:
ইনি হলেন আমাদের গল্পের নায়ক-আকাশ চৌধুরী।
বয়স ২০।তবে পড়েন Inter 1st year এ।ফর্সা গায়ের রং,বাদামি চোখ ও পেশিবহুল শরীর যেকোনো মেয়েকে আকৃষ্ট করার জন্য যথেষ্ঠ।বাবা শহরের নামকরা businessman.ইনি বন্ধুমহলের কাছে প্রচুর দুরন্ত,কিন্তু বাইরের লোকের সামনে সবসময় একগাদা attitude নিয়ে ঘুরে বেড়ান।আকাশ পড়াশোনা,নাচ,গান সবকিছুতেই perfect. যাকে বলে allrounder.বর্তমানে সারা কলেজে most handsome দের কাতারে সবার উপরে আছে আকাশ।
__________________
কলেজটির নাম হলো ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সৈয়দপুর। সংক্ষেপে-CPSCS. নাম শুনেই হয়তো বুঝতে পেরেছেন যে,এটি আর্মি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। প্রচুর ডিসিপ্লিন রয়েছে এখানে।এত নিয়ম যে আমি হয়ত লিখে শেষ করতে পারব না। যারা এসব প্রতিষ্ঠানে পড়ে তারাই বোঝে। বাকি সব প্রতিষ্ঠানের মতো এরও নির্দিষ্ট ড্রেসকোড রয়েছে। প্রতিটি ক্যান্টনমেন্ট স্কুল ও কলেজ উভয়েরই নির্দিষ্ট কিছু হাউস থাকে। CPSCS এ হাউস রয়েছে চারটি। যথা- নজরুল ইসলাম হাউজ, ফজলুল হক হাউজ,বেগম রোকেয়া হাউজ ও জসীমউদ্দিন হাউজ। প্রতিটা হাউসের নিজস্ব রংয়ের পতাকা থাকে। যেমন-নজরুল হাউজের পতাকার রং সবুজ,ফজলুল হাউজের নীল, রোকেয়া হাউজের লাল ও জসীম হাউজের আসমানি। সব শিক্ষার্থীরা এই চার হাউজে বিভক্ত থাকে। প্রতিটা হাউজের Inter 2nd year এর কিছু leader থাকে যাদের প্রিফেক্ট বলা হয়। তারা নিজ নিজ হাউজের যাবতীয় সব
কর্মকাণ্ড রক্ষণাবেক্ষণ করে। একটি হাউজে মোট পাঁচজন করে প্রিফেক্ট থাকে। তিনজন ছেলে এবং দুজন মেয়ে প্রিফেক্ট। আবার সবগুলো হাউজকে একজন দেখাশোনা করে যাকে বলা হয় হাউজ কমান্ডার বা HC. প্রতিটি প্রিফেক্ট চেনার জন্য তাদের নিজ নিজ তারকাযুক্ত solder starbatch রয়েছে।
দেখতে দেখতে নবীনবরণ চলে আসে।অরিনের যদিও এসবে তেমন কোনো উৎসাহ নেই,কিন্তু লিসা তাকে অনেকবার বলায় সে আসতে রাজি হয়েছে।অরিনের মা আজ জোর করে তাকে শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছে।
অরিন আজ পড়েছে একটি nevi blue colour এর শাড়ি,কানে blue stone এর ছোট ঝুমকো,হাতে blue stone এর ব্রেসলেট,ঠোঁটে গোলাপি লিপস্টিক, চোখে কাজল আর চুলগুলো একপাশে ছেড়ে দেওয়া।ব্যাস,এতেই অপরূপা আমাদের অরিন্নীয়া।
অরিন কলেজে ঢুকেই প্রথমে একবার চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিল। জাঁকজমকপূর্ণভাবে কোনো ফাংশন আয়োজিত হওয়ার জন্য অরিনদের কলেজ অর্থাৎ CPSCS সবার ওপরে। আজ কলেজটা যেন এক নতুন রূপে সজ্জিত হয়েছে নানা আর্টিফিশিয়াল ফুলে। চেনা ক্যাম্পাসটা দেখে মনে এক ভালোলাগার শীতল স্রোত বেয়ে যাচ্ছে।
কিছুক্ষণ এদিক ওদিক হাঁটাহাঁটি করতেই অরিন লিসার দেখা পেয়ে যায়।
-দোস্ত, আজকে তো মনে হয় জিজুর দেখা পেয়েই যাব। (লিসা)
-কিহ? (অরিন)
-না মানে তুই আজ যেভাবে সেজেছিস, আমি বলে দিলাম আজ তুই কমপক্ষে পাঁচটা প্রোপজাল পাবি। (অরিন)
- এই তোর ভাঙা রেডিও বন্ধ কর।চল পার্কে যাব। (অরিন)
-(মুখ ভেঙচিয়ে) এজন্য মানুষের প্রশংসা করতে নেই। (লিসা)
-ওটা ভালো করতে নেই হবে। (অরিন)
-ওই একই হলো। এখন চল কোথায় যাবি। (লিসা)
অরিন আর লিসা পার্কের দিকে পা বাড়াল।অন্যদিকে আকাশ ও তার বন্ধুরা কলেজের পার্কেই আড্ডা দিচছিলো। আকাশকেও আজকে কম সুন্দর লাগছিল না। তার পরনে ছিল নেভি ব্লু পাঞ্জাবী, ক্রিম colour এর পাজামা, হাতে ডিজিটাল watch, চুলগুলো স্ট্রেট করা। কাকতালীয়ভাবে আজ আকাশ-অরিনের dress colour মিলে গেছে। আকাশকে তার এক বন্ধু সোম বলল-
- কিরে তোর আজকে একটাও মেয়ে পছন্দ হলো না? (সোম)
- উহু, একটাও আমার টাইপের না। (আকাশ)
- কেন রে ভাই দেখ আজকে সবাই কত সুন্দর করে সেজে এসেছে। (সোম)
- ধূর,এরা সবাই মেকআপ সুন্দরী হয়ে এসেছে, আর তাছাড়া এরা সবাই কেমন গায়েপড়া।নাহলে কি সাধে সকাল থেকে সাতটা প্রপোজাল রিফিউজ করি। (আকাশ)
- তোর কাউকে পছন্দ আছে?(সোম)
- কী মনে হয়?আকাশ চৌধুরীকে পটানো এত সোজা? (আকাশ)
- তুই জীবনে কারও প্রেমে পড়বি না। (সোম)
- সেরকম মেয়ে এখনও পৃথিবীতে জন্মায়নি যে আমার attention পাবে। (আকাশ)
- কে বলতে পারে, হয়তো এমন কেউ আছে, যার দেখা তুই আজকেই পেয়ে যাস। (সোম)
- হুম, স্বপ্নে.. (আকাশ তাচ্ছিল্যের স্বরে)
হঠাৎ আকাশের চোখ যায় পার্কের বেঞ্চে বসে থাকা অরিনের দিকে। অন্য মেয়েদের মতো মুখে প্রসাধনীর লেশমাত্র নেই। অথচ কত সুন্দর আর মোহময়ী লাগছে তাকে। সে মনে মনে বলে-"She is uncommon and unique. মেয়েটা কত অল্প সেজেছে কিন্তু তাতেও কত সুন্দর লাগছে! আর চুলতো মাশাআল্লাহ"।
- সোম,ওই মেয়েটা কোন ডিপার্টমেন্টের? (আকাশ অরিনকে দেখিয়ে)
- দেখে তো সাইন্সেরই মনে হচ্ছে। তবে আমাদের S.H section এর না (সোম)
- তাহলে কী S.N section এর?(আকাশ)
- May be. কিন্তু তুই ওই মেয়েটার খোঁজ কেন নিচ্ছিস?ক্রাশ খেলি নাকি? (সোম)
- একটা কথা সব সময় মনে রাখবি,আকাশ চৌধুরী কখনো কারোর উপর ক্রাশ খেতে পারেনা। মেয়েটাকে একটু uncommon লাগলো তাই বললাম। (আকাশ)
- ওহ। (সোম)
এরপর মাইকে announcement হওয়াতে সবাই অডিটোরিয়াম এ চলে যায়।
____________________
অডিটোরিয়ামে.................
- অরি, তুই নাচে দিতে পারতিস। আচ্ছা নাচ না হোক গানে দিতে পারতিস। (লিসা)
- আমি পারি না ওসব। (অরিন)
- একদম আজাইরা কথা বলবি না।আমি জানি তুই খুব সুন্দর নাচ পারিস। Even, তোর গানের গলাও খুব ভালো। (লিসা)
- তুই তো জানিস আমি এসব event এ অতটা interested নই।আর সবচেয়ে বড় কথা আমি hesitate feel করি।অত লোকের সামনে পারফর্ম,আমার দ্বারা হবে না। (অরিন)
- আচ্ছা তুই performance নাই বা করলি,অন্তত অডিটোরিয়াম সাজানোর দায়িত্বতো নিতে পারতিস। (লিসা)
- প্রথমত, তার জন্য প্রিফেক্টসরা আছে।আর দ্বিতীয়ত, আমার দায়িত্ব নিতে ভয় হয়।যদি কোনো ভুল করে ফেলি (অরিন)
- এটুকুতেই এত ভয়, তাহলে by any chance প্রিফেক্ট হলে কী করবি? (লিসা)
-আমি প্রিফেক্ট হবোও না। তাই ওসব চিন্তাও করি না। (অরিন)
- এত জোর দিয়ে কীভাবে বলছিস,হতেও তো পারিস। (লিসা)
- দেখ, প্রিফেক্ট হতে হলে সবার সাথে মিশতে হয়, সবার সাথে free হতে হয়। আর তুই খুব ভালো করে জানিস, আমি সবার সাথে মিশতে পারি না। (অরিন)
অরিন চুপচাপ বসে ফোন ঘাটছিল। কারণ এসব অনুষ্ঠানে তার বিশেষ একটা আগ্রহ নেই। লিসাও যে খুব মনোযোগ সহকারে অনুষ্ঠান দেখছে তা নয়। হঠাৎ গান গাওয়ার জন্য একজনের নাম ঘোষণা করা হলো। সাথে সাথে সব মেয়েরা চিৎকার করে উঠল। অরিন বিরক্ত হয়ে বলল-
-এই এরা এত চিল্লায় কেন?(লিসা)
-তো চিল্লাবে না? কলেজের most handsome boy আকাশ গান গাবে এখন (লিসা)
- যত্তসব ঢং। (অরিন)
বলে আবার অরিন ফোনে চোখ রাখল।
স্টেজে গিটারের টিউন বেজে উঠে।কিন্তু তখনও অরিনের কোনো হেলদোল নেই।হঠাৎ অরিন খুব সুন্দর পুরুষালি কণ্ঠস্বরে গান শুনতে পেল।গলাটা এত সুন্দর ছিল যে সে একবার আকাশের দিকে তাকাতে বাধ্য হয়।আসলেই পুরো রাজপুত্রের মতো দেখতে ছেলেটাকে। কিন্তু অরিন তার চেহাটরায় কোনো গুরুত্ব না দিয়ে চোখ বন্ধ করে গান শুনতে লাগল।
-Aankhone mein teri
Ajab si,ajab si,adaayein
Hain
Hoo.........
Aankhone mein teri
Ajab si,ajab si,adaayein
Hain
Dil ko bana dein jo patang
Saansein ye teri vo hawaayein
Hain
Aankhone meri teri
Ajsb si,ajab si,adaayein
Hain
Aankhone meri teri
Ajab si, ajab si adaayein
Hain
Dil ko baba dein jo patang
Saansein ye teri vo hawaayein
Hain
Aayi aisi raat hai jo
Bohat khush naseeb hai
Chaahe jisse door se duniya
Vo mere kareeb hai
Kitna khuch kehna hai
Fir bhi hai dil mein sawaal
Kaheen
Sapno mein jo roz kahe hai
Wo phir se kahun ya nahee
Aankho mein teri
Ajab si,ajab si adaayein
Hain
Hoo...........
Aankhon mein teri
Ajab si,ajab si,adaayein
Hain
Tere saath saath aise
Koi noor aaya hain
Chaand teri raushni ka
Halka sa ik saaya hai
Teri nazron ne dil ka kiya jo hasharr
Assar ye hua............
Ab inmein hi doobke ho jaaun
Paar (আকাশ)
Yahi hai dua.......
Aankho mein teri
Ajab si, ajab si, adaayein
Hain
Aankhon mein teri
Ajab si, ajab si adaayein
Hain (আকাশ)
গান শেষ হতেই অডিটোরিয়াম হাততালির আওয়াজে মুখরিত হলো।
-উফ্ ও দেখতে যেমন ওর কণ্ঠটাও সেরকম।(লিসা)
-হুম (অরিন আনমনে বলে ওঠে)
চলবে....................
পরিচয়পর্ব এখনো শেষ হয়নি। এ গল্পের 90% মূখ্য চরিত্রও এখনো আসেনি। একটু সময় দিন, ধীরে ধীরে বুঝতে পারবেন। আর প্রিফেক্ট ও কলেজ সম্পর্কে যেসব তথ্য দিয়েছি, সেসব মনে রাখবেন। নাহলে পরে বুঝতে সমস্যা হবে।
শুধু তোমারই জন্য- (Nobinbaran Special)
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
221
Views
7
Likes
1
Comments
4.8
Rating