সূরা আল ফালাক

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
সূরা আল-ফালাক:

সূরা আল-ফালাক হলো কুরআনের ১১৩ নম্বর সূরা এবং এটি মদিনায় অবতীর্ণ। এই সূরাটি ৫টি আয়াত বিশিষ্ট। "ফালাক" শব্দের অর্থ হলো "ভোর" বা "সূর্যের উদয়"। সূরা আল-ফালাক মানবজাতির জন্য আশ্রয়ের একটি নির্দেশনা হিসেবে এসেছে, যেখানে আল্লাহর নিকট বিপদ থেকে মুক্তির প্রার্থনা করা হয়।

অবতরণের কারণ:

সূরা আল-ফালাক বিশেষ করে আযাব ও ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য আবেদনের উদ্দেশ্যে নাজিল হয়েছে। এটি সে সময় অবতীর্ণ হয় যখন কিছু মানুষ অসৎ উদ্দেশ্যে নবীজির (সা.) বিরুদ্ধে যাদু ও ক্ষতি করার চেষ্টা করছিল। এই সূরাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যা প্রতিদিনের বিপদ ও অশুভ থেকে নিরাপত্তা প্রার্থনা করার জন্য বলা হয়।

সূরার ব্যাখ্যা:

1. "কুল আওযু বি রাব্বিল ফালাক"

বলুন, আমি সকালবেলার প্রভুর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

এই আয়াতে আল্লাহর প্রতি আশ্রয় প্রার্থনার কথা বলা হচ্ছে। সূরা শুরু হচ্ছে প্রার্থনার মাধ্যমে, যেখানে আল্লাহর নাম নিয়ে শুরু করা হয়েছে, যা পরবর্তী বিপদ ও অশুভ থেকে রক্ষার জন্য।



2. "মিন শারর মাখলাক"

সৃষ্টির ক্ষতি থেকে।

এখানে আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে থাকা সকল খারাপ বা ক্ষতিকর বিষয় থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা হচ্ছে। এটি সাধারণভাবে সমস্ত সৃষ্টির ক্ষতি এবং বিশেষভাবে মানুষের ক্ষতি বোঝায়।



3. "ও মিন শারর গাসিক ইযা ওয়াক্বাব"

এবং যখন রাতের অন্ধকার ছড়িয়ে পড়ে।

"গাসিক" বলতে রাতের অন্ধকার বোঝানো হয়েছে। রাতের অন্ধকারে অনেক ভয়াবহতা থাকতে পারে, যেমন চোর, শত্রু, কিংবা অশুভ শক্তির আক্রমণ। এই আয়াতে রাতে সংঘটিত খারাপ ঘটনা থেকে রক্ষার জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা হয়েছে।



4. "ও মিন শারর নাফাথাতি ফি উকাদ"

এবং যারা গুটিতে ফুঁ দেয়।

এই আয়াতে "নাফাথাতি" শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, যা জাদুকর বা জাদু করার উদ্দেশ্যে ফুঁ দেওয়ার সাথে সম্পর্কিত। এটি এক ধরনের জাদু বা কাল্পনিক শক্তি দ্বারা ক্ষতির ইঙ্গিত দেয়। এখানে আল্লাহর কাছে সুরক্ষা প্রার্থনা করা হচ্ছে যাদুকরী কার্যকলাপের ক্ষতি থেকে।



5. "ও মিন শারর হাসিদ ইযা হাসাদ"

এবং ঈর্ষার ক্ষতি থেকে।

এই আয়াতে ঈর্ষার কারণে আসা ক্ষতির বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রার্থনা করা হয়েছে। ঈর্ষা মানুষের মধ্যে এক ধরনের অশুভ অনুভূতি সৃষ্টি করে এবং এর ফলে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। এখানে বলা হচ্ছে, আল্লাহ যেন ঈর্ষার কারণে আমাদের ক্ষতি থেকে রক্ষা করেন।




তাৎপর্য:

1. আল্লাহর আশ্রয়ের গুরুত্ব:
সূরা আল-ফালাক আমাদের শেখায় যে, বিপদ থেকে রক্ষা পেতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানব জীবনে অনেক বিপদ ও সমস্যা আসতে পারে, সেক্ষেত্রে আল্লাহর সাহায্য ও আশ্রয় প্রার্থনা করা আবশ্যক।


2. অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে সুরক্ষা:
এই সূরা বিশেষ করে যাদু, অশুভ চোখ ও ঈর্ষার কারণে আসা ক্ষতির বিরুদ্ধে সুরক্ষার জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দোয়া। এটি আমাদেরকে সজাগ থাকতে এবং অশুভ শক্তির প্রভাব থেকে নিজেকে রক্ষা করার উপায় নির্দেশ করে।


3. ঈর্ষা ও ক্ষতির প্রভাব:
সূরা আল-ফালাক আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে, মানুষের মধ্যে ঈর্ষা ও অসৎ উদ্দেশ্য অনেক ক্ষতি সৃষ্টি করতে পারে। তাই ঈর্ষার বিরুদ্ধে সুরক্ষার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা গুরুত্বপূর্ণ।


4. রাতের অন্ধকারের ভয়:
রাতের অন্ধকার অনেক ভয়াবহতার জন্য উপযুক্ত। এটি শত্রুদের আক্রমণ এবং অন্যান্য ক্ষতিকর ঘটনাগুলোর সূচনা হতে পারে। তাই রাতে আল্লাহর সাহায্য ও সুরক্ষা প্রার্থনা করার গুরুত্ব আছে।


5. আধ্যাত্মিক সুরক্ষা:
সূরা আল-ফালাক শুধুমাত্র শারীরিক ক্ষতি থেকে রক্ষা করে না, বরং এটি আধ্যাত্মিক ক্ষতির বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রার্থনা করার জন্যও একটি মাধ্যম। এই সূরা আমাদেরকে আল্লাহর কাছে নিবেদিত থাকতে এবং সমস্ত খারাপ কাজ থেকে নিজেকে রক্ষা করার আহ্বান জানায়।





সূরা আল-ফালাক আল্লাহর কাছে বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার প্রার্থনা ও আশ্রয়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া। এটি যাদু, অশুভ চোখ ও ঈর্ষার কারণে আসা ক্ষতির বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রার্থনা করে। আল্লাহর নাম নিয়ে শুরু হওয়া এই সূরা আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় যে, আমাদের সবসময় আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হবে, কারণ তিনিই আমাদের রক্ষাকারী।
115 Views
5 Likes
1 Comments
0.0 Rating
Rate this: