বিজয়পুর, এক নিস্তব্ধ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা গ্রাম। খাল-বিল, পুকুর, আর ঘন জঙ্গল দিয়ে সাজানো এ গ্রাম তার খেজুরের রসের জন্য বিখ্যাত। এই গ্রামের দুজন কিশোর বন্ধু, রাফি আর সুজন, তাদের বয়স পনেরো-ষোলোর মধ্যে। তারা দুরন্ত, গাছ থেকে ডাব বা আম চুরি করে খাওয়াই ছিল তাদের নেশা।
সালটা ২০১১, বেশ শীত পরেছে যারা খেজুরের রস সংগ্রহ করে তারা গাছ কাটতে শুরু করেছে এবং তারা কয়েকদিন পর গাছে খুঁটিও লাগিয়েছে রাফি আর সুজন প্রতিদিন রাতে খেজুরের রস চুরি করে খেত। সেই সময়ে স্কুলে এক সপ্তাহের ছুটি পেয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেয়, নানির বাড়ি থেকে ঘুরে আসবে।রাফি আর সুজনের নানির বাড়ি একই গ্রামে রাফি প্রস্তুত হয়ে সুজনকে ডাক দেয়। কিন্তু সুজন জানায়, তার কিছু টাকা হারিয়ে গেছে, সে আগামীকাল যাবে। রাফি একাই রওনা হয় নানির বাড়ির উদ্দেশ্যে।
রাতে নানির বাড়িতে শুয়ে থাকলেও রাফির চোখে ঘুম আসে না। প্রতিদিনের মতো খেজুরের রস চুরি করার নেশা তাকে ছাড়ছিল না। হঠাৎ গভীর রাতে রাফির কানে আসে সুজনের ডাক, "কিরে, রস খেতে যাবি না?" ঘড়িতে তখন রাত একটা। রাফি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, "তুই না কাল আসার কথা ছিল?" সুজন হেসে উত্তর দেয়, "টাকাটা তো আমার প্যান্টের পকেটেই ছিল!"
রাফি আর সুজন রওনা হয় রস চুরির অভিযানে। কিন্তু আজকের রাতটা ছিল ভিন্ন, এক অদ্ভুত অন্ধকার আর শীতল বাতাস। রাফি দেখে, যত দ্রুত সে হাটুক, সুজনের সাথে তাল মেলাতে পারছে না। সুজন দ্রুত চলে যাচ্ছে। তারা পৌঁছায় বড় একটি খেজুর গাছের নিচে। সুজন বলে, "এই গাছে খুব বেশি রস পাওয়া যাবে। তুই ওঠ গাছে।"
রাফি গাছে ওঠে এবং খুঁটিতে হাত দিয়ে দেখে রস ভর্তি। সে নিচে তাকিয়ে সুজনকে ডাকে, কিন্তু তাকে কোথাও দেখা যায় না। অবাক হয়ে রাফি গাছ থেকে নিচে নেমে আসে এবং আশেপাশে খুঁজতে শুরু করে। হঠাৎ তার চোখে পড়ে এক লাল চোখওয়ালা গরু, মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে ঘাস খাচ্ছে। রাফি ভাবে, হয়তো কারো পাগলা গরু ছুটে গেছে । কিন্তু পরক্ষণেই গরুটি তার দিকে ধেয়ে আসে এবং রাফিকে আঘাত করে মাটিতে ফেলে দেয়। ধাক্কার পর রাফি জ্ঞান হারায়।
পরদিন সকালে রাফির নানারা তাকে খুঁজতে বের হয় এবং তাকে একটি পুরনো বটগাছের নিচে অচেতন অবস্থায় পায়। পরদিন সুজন এসে রাফিকে দেখে অবাক হয়ে বলে, "কিরে, তুই ওখানে কি করছিলি?" কিন্তু রাফি তখন কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়, দিন দিন তার শরীর শুকিয়ে যাচ্ছে। অনেক ডাক্তার দেখানোর পরও কোনো সমাধান হয় না।
রাফির বাবা-মা সিদ্ধান্ত নেন, তাকে কবিরাজের কাছে নিয়ে যাবে। কবিরাজ রাফিকে দেখে বলে, "এর উপর জিনের আসর আছে। রুকাইয়া করতে হবে। কাল সাতটি লাল শাপলা আর সাত পুকুরের পানি নিয়ে আসবেন।" পরদিন সেই অনুসারে তারা কবিরাজের কাছে যায়। কবিরাজ জিনটিকে হাজির করার চেষ্টা করে। অনেকক্ষণ পরে জিন রাফির শরীরে এসে বলে, "আমি একজন পরি। আমি পাশের গ্রামের খেজুর গাছে থাকি।রাফি রাত বিরাতে বাইরে যেতে এবং খেজুরের রস চুরি করে খেত প্রতিদিনই তাকে আমি রস চুরি করে খাওয়া দেখতাম এবং রাফিকে আমি ভালোবেসেছি, কিন্তু ওর বন্ধুর কারণে কাছে যেতে পারিনি। সেদিন ও নানির বাড়ি যায় সেদিন ছিল একা সেই সুযোগ সেই রাতে আমি তার বন্ধুর রূপ ধরে ওকে ডেকে নিয়ে যাই।"
কবিরাজ পরিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলে, "তুই এই ছেলেটাকে ছেড়ে চলে যা, নইলে ফল ভালো হবে না।" পরি তখন বলে, একে আমার জগতে নিয়ে যাব।" কবিরাজ তখন সাত পুকুরের পানি দিয়ে রাফির ওপর ফুঁক দেয়। সাথে সাথে রাফির শরীর কাঁপতে শুরু করে, সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। কবিরাজ তার গলায় লাল শাপলার মালা পরিয়ে দেয়।এবং পরিটি কবিরাজ এর কাছে বন্দী হয়ে যায় পরি বিদায় নেবার আগে বলে যায়, "আমি ফিরে আসব।"
রাফি সুস্থ হয়ে ওঠে, কিন্তু সেই ভয়ঙ্কর রাতের কথা তার মন থেকে কখনো মুছে যায় না। সত্যিই কি পরি আবার ফিরে আসবে? খেজুরের রস কি তার কাল হয়ে দাঁড়াবে, নাকি অন্য কোনো ভয়ংকর ঘটনা অপেক্ষা করছে?
চলবে...ভয়ংকর পরির প্রেম
লাইক করুন কমেন্ট করুন ফাইভ স্টার রেটিং দিন ফলো দিয়ে পাসে থাকুন
ভয়ংকর পরির প্রেম
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
682
Views
16
Likes
4
Comments
4.1
Rating