মাইশা রুম থেকে বের হতে যাচ্ছিল তখনই আরিয়ান ওর হাত টেনে ধরল। মাইশা দাঁড়িয়ে ঘুরে তাকালো।আরিয়ানের চোখ যুগল মাইশার দিকে স্থির। আরিয়ান কেমন ভাবে জানি মাইশা কে অবলোকন করছে। আরিয়ানের সে চাহনি যেন এক নেশাক্ত চাহনি। আরিয়ান এক পা দু পা করে মাইশার দিকে এগিয়ে গেল। মাইশার বিশ্বাসটা যেন ভারি হয়ে আসছে। হঠাৎই মাইশা কিছু বুঝে ওঠার আগেই আরিয়ান মাইশা কে কোলে তুলে নিল। হঠাৎ মাইশা কে এই ভাবে কোলে তুলে নেওয়াতে মাইশা তো পুরোই হতবাক হয়ে গেল। মাইশার মুখটা কিঞ্চিৎ হা হয়ে গেল। আশ্চর্যের ঘোরে অনবরত চোখের পাতা ফেলছে মাইশা।
মাইশাকে এইভাবে হা করে থাকতে দেখে আরিয়ান বলে উঠলো,
" মুখটা বন্ধ কর। তা না হলে মশা মাছি গর্ত ভাববে তোর মুখের মধ্যে ঢুকে পড়বে।
আরিয়ানের কথায় মাইশার ঘোর ভাঙলো।সঙ্গে সঙ্গে মাইশা বলে উঠলো,
" এটা কি হলো।
" দেখতেই তো পাচ্ছো কি হলো।
মাইশা কিছুটা হাত পা ছুঁড়ে বলল
" আমাকে এখনই নামিয়ে দাও বলছি
আরিয়ান মাইশার কথার কোন উত্তর না দিয়ে মাইশা কে কোলে নিয়ে আপন মনে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। মাইশা আরিয়ানকে বারবার বলছে তাকে নামিয়ে দেবার জন্য।
আরিয়ান কিছুটা বিরক্ত হয়ে মাইশা কে বলল,
" আর একটাও যদি কথা বলো না ঠোঁটে ডাইরেক্ট সুপার গ্লু লাগিয়ে দেব।
মাইশা সঙ্গে সঙ্গে তার হাত দিয়ে মাইশার ঠোঁট চেপে ধরল। মাইশা আর কিছু বলার সাহস পেল না কারণ মাইশা ভালো করেই জানে আরিয়ান খুব সাংঘাতিক। মাইশার ঠোঁটে সুপার গ্লু লাগিয়ে ও দিতে পারে আরিয়ানকে কোন বিশ্বাস নেই। আরিয়ান হাঁটতে হাঁটতে মাইশাকে কোল থেকে ফেলে দেওয়ার ভান করল। মাইশা সঙ্গে সঙ্গে তার দুই হাত দিয়ে আরিয়ানের গলা জড়িয়ে ধরল।
আরিয়ান খুব খুশি হল তার গলা জড়িয়ে ধরাতে কারণ আরিয়ানের প্লান টা সাকসেস হয়েছে আরিয়ান চাচ্ছিল মাইশা তাকে জড়িয়ে ধরুক। মাইশা কেমন জানি কোন কিছুই যেন বুঝে না সবকিছু বলে বলে করাতে হয়। তাই এই টেকনিক টা খাটিয়ে নিজের মনের ইচ্ছাটা খুব অনায়াসে পূরণ করে নিল আরিয়ান।
আরিয়ান মাইশা কে ছাদে এনে কোল থেকে নামিয়ে দিল। খুব সুন্দর একটা মৃদু বাতাস বইছে। হালকা বাতাসে ওদের শরীরটা দুলে দুলে উঠছে। গরমের গুমোট ভাবটা এই প্রকৃতির শীতল বাতাসে অনেকটা কমে এসেছে। আকাশে সুন্দর গোলাকৃতির পূর্ণ একটা চাঁদ উঠেছে। চাঁদের আলোয় চারি পাশটা একদম আলোকিত হয়ে যেন জ্বলজ্বল করছে। মাইশা আপন মনে এক ধ্যানে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। চাঁদের পাশে কিছু তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে জ্বল জ্বল করছে সেই তারাগুলো চাঁদটাকে আকাশের বুকে আরও অনেক সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছে। সব মিলিয়ে দারুন একটা পরিবেশ বিরাজ করছে।
আরিয়ান কিছুটা ঝুঁকে মাইশার কাঁধে থুতনি রেখে বলল,
" কি গো কেমন লাগছে বললে না।
মাইশা চোখ বন্ধ করে লম্বা একটা শ্বাস টেনে তার হাত দুটোকে প্রসারিত করে বলল,
" খুব ভালো লাগছে।
তারপর আঙ্গুল দিয়ে চাঁদের দিকে ইশারা করে বলল,
" বিশেষ করে চাঁদটা অসম্ভব সুন্দর লাগছে। চাঁদটা যেন পুরো আকাশটাকে একদম আলোকিত করে রেখেছে।
আরিয়ান মাইশা কে পেছন থেকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বলল,
" হ্যাঁ যেমন তুমি আমার জীবনকে আলোকিত করে রেখেছো ঠিক সেইভাবে।
আরিয়ানের কথা শুনে মাইশা ভাবছে,
" কোনদিনও ভাবতে পারি নি আমি কখনো কারো জীবনের চাঁদ হয়ে উঠবো। কেউ আমাকে তার জীবনের সবকিছু ভাববে।
মাইশা একমনে কথাগুলো ভেবে তার ভাবনায় ডুবে ছিল।আরিয়ান মুখ দেখে ভালোই বুঝতে পারছিল মাইশা অন্য কোন ভাবনায় ডুবে আছে। মাইশার এই নিশ্চুপ ভাবনা ময় ভঙ্গি মনের ভিতর ঝড় তুলেছে। মাইশার এই মলিন চেহারাটা আরিয়ানের মনের ভেতরটা নাড়িয়ে দিতে যথেষ্ট।
আরিয়ান মাইশার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে হঠাৎই মাইশা কে আলতো করে জড়িয়ে ধরল। মাইশার কর্ণ আরিয়ানের বুকের সাথে লেগে আছে। আরিয়ানের বুকের ভিতর ধুক ধুকানির শব্দ টা খুব শান্তভাবে কর্ণপাত করছে মাইশা। আরিয়ানের বুকের বা পাশের ওই বুকের ধুকধুকানি শব্দটা যেন মাইশার হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে।মাইশা একটা ছোট বাচ্চার মত আরিয়ানের বুকে সাথে জড়িয়ে আছে। আরিয়ানের এই ছোট ছোট ভালোবাসা খুনসুটি পাগলামি এখন খুব ভালো লাগে মাইশার কাছে।
আরিয়ান মাইশা কে জড়িয়ে ধরে যেমন স্বর্গ সুখ খুঁজে পায়। ঠিক তেমনি মাইশার উদাসীনতা আরিয়ানকে দ্বিগুণ পরিমাণ কষ্ট দেয়। আরিয়ান চায় মাইশার ওই ছোট্ট মনের ভেতরটা সব সময় আরিয়ানের ভাবনায় বিভোর হয়ে থাকুক।
আরিয়ান মাইশা কে জড়িয়ে ধরে ভাবছে,
" তোমাকে আমি আর অন্য কোন ভাবনার মধ্যে ডুবে থাকতে দেবো না। তোমার ভাবনায় শুধুমাত্র আমি থাকতে চাই। আর অন্য কিছু নিয়ে তোমাকে আমি কখনোই ভাবতে দেবো না।
___________________________
রাতের নিস্তব্ধতা চারিদিক জড়িয়ে নিয়েছে। সবাই নিজেদের ব্যস্ততা ভুলে নিস্তব্ধ রজনী কে আপন করে নিয়েছে। সবার চোখে ঘুমের মাসি পিসি। ঘুমের সাথে অতোপ্রত ভাবে এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব করে নিয়েছে সকল মানুষ। কিন্তু এই বন্ধুত্ব যেন কিছুতেই সীমার চোখ জুড়ে নামছে না।ঘুমের মাসি পিসি বোধহয় আজ বেজায় অভিমান করেছে সীমার সাথে। এই নিস্তব্ধ রজনীতে ঘুম নামক শব্দটা ও তার চোখ থেকে চলে গিয়ে অশ্রু নামক কষ্টটা তার চোখে কার্নিশ বেয়ে ঝরে পড়ছে। ওর ভেতরের মন পাখিরা ছটফট করে মরছে। না পারছে কাউকে বলতে আর না পারছে সহ্য করতে। নিজের মনের সাথে নিজেরই একতরফা যুদ্ধ চলছে আর সেটা হলো একমাত্র রিয়াদ কে নিয়ে।
তার এই কষ্ট বোধয় প্রকৃতি ও মেনে নিতে পারছে না। বাহিরে বাতাসের বিচরণ, আকাশে মেঘে মেঘে ঘর্ষণের ফলে বিদ্যুৎ চমকানো। সীমার দ্রুত শোয়া থেকে উঠে জানলা আংশিক খুলে আকাশের দিকে তাকালো দেখলো আকাশটা পুরা মেঘে ছেয়ে গেছে। যে কোন মুহূর্তে আকাশের বুক চিরে বৃষ্টি নেমে আসতে পারে এই ধরণীতে। ভিজিয়ে দেবে তার শ্রাবণের ধারায় ধরনের প্রত্যেকটা আনাচে-কানাচে। আকাশের বুকে জমা মেঘগুলো বৃষ্টি নামবে ধরনের বুকে। কি বৃষ্টির পানি ধরণী নিজের বুকে আষ্টেপৃষ্ঠে। মেঘের সাথে আকাশের গভীর এক প্রেম জমে ওঠে বৃষ্টির মাধ্যমে। ঠিক সেভাবে রিয়াদের প্রেমে নিজেকে মজিয়ে নিতে ইচ্ছে করছে সীমার।
বাহিরে কিছু দেখা যাচ্ছে না ঘুটঘুটে অন্ধকার। আকাশের বুকে যে একফালি চাঁদ উঁকি দিয়েছিল তা মেঘের আবরণে ঢেকে গেছে। রিয়াদ তো ঠিকমতো অবলোকন করতে পারছে না সীমা। তার অবাধ্য মনটা আর বাঁধ মানল না। দরজা খুলে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গেল রিয়াদের দিকে। বাহিরে খুব ঠান্ডা একটা বাতাস বইছে যার শরীরটাকে একদম শীতল করে দিচ্ছে।
সীমা কিছুটা এগিয়ে গিয়ে দেখলো রিয়াদ একটা বেঞ্চের উপর গুটি শুটি মেরে শুয়ে আছে। রিয়াদকে এই অবস্থায় দেখে সীমার মনটা ভেতর থেকে নাড়া দিয়ে উঠলো। মনের ভেতরে যেন উথাল পাথাল শুরু হয়ে গেল রিয়াদের জন্য।
সীমা ক্ষীন কন্ঠে রিয়াদকে ডাক দিয়ে বলল,
"এই যে শুনছেন।
রিয়াদের তরফ থেকে কোন রকমের সাড়া আসলো না। সীমা তার গলার আওয়াজটা একটু বাড়িয়ে দিয়ে আবারো ডাক দিল রিয়াদকে। এই বারও রিয়াদের কাছ থেকে উত্তর আসলো না। সীমা কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলো। কোন কিছু না ভেবে রিয়াদের গায়ে হাত দিল। দেখলো রিয়াদের গায়ে প্রচন্ড জ্বর। রিয়াদের গায়ে এত পরিমাণ জ্বর দেখে সীমার আত্মা কেঁপে উঠল। সীমার চোখে মুখে কষ্ট এসে ভর করল ওর হৃদয়টা যেন ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে।
সঙ্গে সঙ্গে সীমা আওয়াজ ছেড়ে দারোয়ান আর রুবিনা খালাকে ডাক দিল। সীমার এত জোরে জোরে ডাক শুনতে পেয়ে দারোয়ান শফিক আর রুবিনা ছুটে আসলো সীমার কাছে। রিয়াদের এই অবস্থা দেখে ওরা ধরা-ধরি করে রিয়াদকে রুমে নিয়ে শুইয়ে দিলো।
বারান্দা গ্রিল ধরে বৃষ্টির দিকে একনাগারে তাকিয়ে আছে সাব্বির। তার এখন এই মুহূর্তে বিরহের গানটা যেন খুব বেশি শুনতে মন চাইছে। যে চাওয়া সেই কাজ। বিরহের একটা গান চলছে তার মোবাইলে কানে হেডফোন গুঁজা। সাব্বির সব সময় বিরহের গানের বিরুদ্ধে ছিল। কাউকে বিরহের গান শুনতে দেখলে মনে মনে এক গাল হেসে নিয়ে বলতো,
" এই যুগে কেউ বিরহের গান শুনে নাকি। বিরহের গান শুনে এরা যে কি মজা পায় আদিকালের লোকজন যতসব।
আজ সাব্বির তাদেরই কাতারে পড়ে গেছে, যারা বিরহের গান শুনতে খুব ভালোবাসে। কারণ সাব্বিরের অন্তর জুড়ে এখন না পাওয়ার এক বিরহ বিরাজ করছে। যা অনেক চেষ্টা করেও কিছুতেই মন থেকে বের করে দিতে পারছে না।
____________________________
হু হু করে করে রাত বাড়ছে। চারি পাশে যত দূরে চোখ যায় শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার। প্রকৃতি টাকে অন্ধকার নিজের বুকের ভেতর লালন করে রাখছে। আকাশের বুক চিরে ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছে ধরনীর বুকে। আকাশে এক বিদ্যুতের খেলা জমে উঠেছে। কিছুক্ষণ পর পর বিদ্যুতের রশ্নি দেখা দিচ্ছে আকাশে।
এই বৃষ্টিতে কাজে লাগিয়ে একজন অনেকক্ষণ ধরে ওঁত পেতে ছিল তার শিকারের জন্য। তার কাঙ্ক্ষিত শিকার টাকে রেইনকোট পরিহিত একজন তার শার্টের কলার ধরে পানির মধ্যে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
তার ঠিক কিছুটা দূরে অবচেতন হয়ে পড়ে আছে আরো কয়েকটি দেহ। তার পাশে পুলিশের একটি গাড়ি। আজ শিকারির শিকার হলো সুঠাম দেহের একজন পুলিশ অফিসার।
তার রক্তে আকাশ থেকে আছড়ে পড়া বৃষ্টির পানি গুলো লাল বর্ণ ধারণ করেছে। দেহটাকে সে টেনে এক নির্জন জায়গায় নিয়ে আসলো। তার মনের ভেতরের সমস্ত রাগ যেন সে নিথর দেহটার উপর মিটাচ্ছে পায়ের নিচে পিষে পিষে।
তাতেও তার মনের জ্বালা এতটুকু মিটছে না। অহরহ থু থু ছিটাচ্ছে তার গায়ে। পাশে পড়ে থাকা একটা ভারি ইট উঠিয়ে সজোরে ছুড়ে মারল তার মাথার ওপর। সঙ্গে সঙ্গে সেই নিথর দেহটার মুখ সহ মাথাটা একেবারে থেতলে গেল।
রেইনকোট পরিহিত ব্যক্তি টা উচ্চ শব্দের হেসে উঠলো। সে এক বিজয়ের হাসি। হাসতে হাসতে হাঁটু গেড়ে বসে চিৎকার করে কেঁদে উঠে বলল,
" আমি যে আর সহ্য করতে পারছি না। আমি আজ বড় ক্লান্ত। আমার এই ভারাক্রান্ত মন যে আর পারছে না রে। এই পৃথিবী থেকে কবে আমার বিদায় হবে বলতে পারিস তুই।
কথাগুলো বলতে বলতে চিৎকার দিয়ে কেটে উঠলো সে।
_______________________________
ঘুমের মধ্যে হঠাৎ একটা দেখে সঙ্গে সঙ্গে চোখ মেলে তড়িঘড়ি করে উঠে বসলো আরিয়ান। আরিয়ান তার দুই হাত মুষ্টিবদ্ধ করে চোখগুলো কচলাচ্ছে। অবচেতন মন বুঝতে পারছে না কেন এইরকম একটা খারাপ বিষয় তার কেন তার স্বপ্নে এসে ধরা দিল। তার মনের ভিতরে একটা অন্যরকম ভয় বাসা বেঁধে আঁকড়ে বসে আছে।হঠাৎ কাঁচা ঘুমটা ভেঙে যাওয়াতে আরিয়ানের মাথাটা খুব ঝিমঝিম করছে তার গলাটা বড্ড শুখিয়ে আসছে। এই মুহূর্তে তার বড্ড পানির প্রয়োজন। রুমের দরজাটা খুলে বেরিয়ে গেল তার পিপাসা মেটানোর জন্য। ডাইনিং এ গিয়ে ফ্রিজ খুলে ঠান্ডা পানি বের করে এক গ্লাস পানি ঢেলে ধক ধক করে পানিটা খেয়ে নিল। পানি খেয়ে নিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়াতে যাবে তখনই.......
#চলবে.....
প্রেম আমার সিজন ২
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
247
Views
2
Likes
0
Comments
5.0
Rating