তুমি আছো তাই পর্ব 7

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
মাহিম‌ : কি হলো চুপ করে আছো কেন‌,, বল তারপর ‌ ,,,

অন্তরা‌ ‌ : ধূর এগুলো আর ভালো লাগছে না ,, তুমি কখন বললে তোমার খিদে পেয়েছে এখন খাও না কেন ? অসুস্থ হয়ে পড়লে তখন সারারাত শুধু  বলবে আমাকে পা‌ টিপে দাও মাথা টিপে দাও । তোমার এত সমস্যার জন্য আমি তখন ঘুমাতেই পারিনা  । তাড়াতাড়ি খাবা নাকি আমি আমার রুমে চলে যাবো‌ ।

এমনভাবে জিজ্ঞাসা করছো‌ যেন আমি অন্য মানুষের কথা বলছি এগুলো । আরে পাগল এগুলো তোমার কথা তোমার কীর্তির কথা সব । এরপর সবাই আমাকে অনেক আদর যত্ন করে খাওয়েছে‌ ,, আমার  শাশুড়ি মা আমাকে ওই রাতে পরোটা ডিম ভাজি করে খাইয়েছে‌ । আমি অনেক পেট ভরে খেয়েছিলাম সেদিন এখনো ভাবলে অনেক ভালো লাগে ‌।  কত যত্নই না আমাকে করেছে তোমার বাড়ির সবাই। একে একে সবাই মারা‌ গেল ,, প্রথমে আমার শাশুড়ি মারা গেল তারপর শ্বশুর । চাচা শ্বশুররা অন্য বাসায় চলে গেল এভাবে একে একে সবাই আমাদেরকে রেখে চলে গেল এখন আমাদের সংসার আমাদের ছেলে মেয়েদেরকে নিয়েই।

এটা দুনিয়ার নিয়ম একজন আসবে একজন যাবে । মানুষ সারা জীবন পৃথিবীতে বেঁচে থাকে না । একদিন না একদিন তাদেরকে চলে যেতেই হয় ।

আর একটি কথাও বলবে না বুড়া এখন আমি তোমাকে খাইয়ে দিবো তুমি শুধু খাবে ।

মাহিম ‌ : না তুমি না খেলে আমিও খাব না । আমি বুঝতে পারছি তোমার অনেক খিদে পেয়েছে কিন্তু তুমি বলছো না । ভাত দাও আমাকে আমি তোমাকে খাইয়ে দিবো ।

অন্তরা‌ ‌ : তুমি খাও আমি একটু পর সত্যি সত্যি খেয়ে নিব । তুমি আগে খাও আমি বসে বসে দেখছি ।

মাহিম আর কিছু না বলে খেতে লাগলো কারণ মাহিমের অনেক খিদে পেয়েছে । মাহিমের খাওয়া হওয়ার পর ,, মাহিম অন্তরাকে বলল এখন তো তুমি খাবে ,,এখন দেখো আমি খেয়ে নিয়েছি ।

অন্তরা‌ : যাও এখন তুমি রুমে যেয়ে আরাম করো ,,, আমি খেয়ে আসছি ।

এ কথা শুনে মাহিম বুঝতে পারলো হয়তো খাবার নেই আজকে । মাহিম পাতিল ফ্রিজ চেক করতে চলে গেল চেক করে দেখল আজকে কোন অবশিষ্ট খাবার নেই ।
মাহিম অন্তরাকে বারবার বলল তাদের ছেলের বৌদেরকে‌ ডেকে বলতে কিছু খাবার বানিয়ে দেওয়ার জন্য ।

কিন্তু অন্তরা বারবার  না করলো কারণ এই টাইমে তাদের ছেলের বউরা বিশ্রাম করে এখন তাদেরকে ডাক দিবে না । তাদেরকে ডাক দিয়ে একটুও বিরক্ত করবে না অন্তরা । মাহিম তো রাগ করে কিচেন রুমে‌  চলে গেল ।

অন্তরা পিছন পিছন অনেক ডাকলো ,,, কিন্তু একটুও শুনলো না মাহিম সরাসরি রান্নাঘরে রান্না করার জন্য ময়দা গুলে নিল ।  ময়দা গুলে পরোটা বানানোর সময় হাত থেকে রুটি  বানানো বেলানি‌টি‌ পড়ে গেল মাহিমের হাত থেকে ‌। এই শব্দে তো ফাহাদ পায়েল এমনকি বাড়ির সবাই কিচেন রুমে চলে আসলো ।  সবাই বলতে বলতে আসছে কি হয়েছে কি হয়েছে ।

রাহাত : বাবা তুমি কিচেন রুমে কি কর ? তুমি রান্না করছো কেন ?

পায়েল ‌ : বাবা মা আপনারা কিসের জন্য রান্না ঘরে আসছেন ,,আপনাদের কে আসতে বলছে রান্নাঘরে । আজকে দুই ছেলে বাড়িতে বলে দেখাচ্ছেন আপনাদেরকে আমরা রান্না করে খাওয়াই না এটা তাই না । কি এমন হলো আপনাদেরকে রান্না করে খেতে হচ্ছে ।

রেসমি‌ ‌ : বাবা আপনি কিসের জন্য রুটি বানাচ্ছেন আমি তো দুপুরে রান্না করেছি ।

ফাহাদ ‌ : বাবা বল কিসের জন্য তুমি রান্না ঘরে আসছো ওরা কি কেউ রান্না করে দেয় না ।

মাহিম ‌ : তেমন কিছু না রে বাবা এমনি,, আমি একটু পরোটা বানিয়ে দিচ্ছি তোর মাকে ‌।

ফাহাদ ‌ : পরোটা বানিয়ে দিচ্ছ ,,,মার এত পরোটা খেতে ইচ্ছে করছে ,, তাহলে ভাবিকে বলতে পারতো পায়েল কেউ তো বলতে পারতে । তা না করে তোমরা কেন রান্নাঘরে আসছো ।

অন্তরা এক কোনায় যেয়ে দাঁড়িয়ে আছে ,,, কিছু বলার মতো ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না  । ফাহাদ অন্তরাকে বলল মা তোমাদের বয়স হচ্ছে আর জ্ঞান বুদ্ধি কোথায় চলে যাচ্ছে,,, কেন পায়েলকে বললে না পরোটা বানিয়ে দিতে ।

পায়েল ‌ : বলবে কেমন করে তোমার মা বললে তো আমরা পরোটা বানিয়ে দিতাম । তাহলে কি এই সমস্যা হতো‌ বাড়িতে ,,, আর কিছু না ,,তারা‌ দেখাচ্ছে ছেলেদের কে আমরা তাদের যত্ন করিনা । আমাদের মাঝে ঝগড়া বাঁধিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে ওনারা ,,, আমাদের সাথে ঝগড়া বাজিয়ে দিয়ে ,,, তারা ঠিকই সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে যাবে । আসলে শাশুড়িরা এমন কেন হয় আমি কিছু বুঝিনা ।

ফাহাদ ‌ : চুপ করবে কি তোমরা ?

মাহিম‌ ‌ : তোরা এত কথা কেন বলছিস আমি কিছু বুঝতে পারছিনা । আমরা কি তোদের কাছে বেশি হয়ে গিয়েছি নাকি । তোরা আরাম করছিস এটা দেখে তোদের মা তোদেরকে  বিরক্ত করবে না বলে তোদেরকে ডাক দেয়নি । আর আমরা খেয়েছি কিনা তোরা সেটা একবার জিজ্ঞাসা করতে আসছিস কি আমাদের কাছে । খাওয়ার জন্য যে কোন‌ কিছু নেই তাহলে তোর মা কি খাবে ? ,,, এর জন্য আমি পরোটা বানিয়ে দিচ্ছি তোদের মাকে ।

আর ফাহাদ তোকে বলি,, কেমন ছেলে হয়েছিস তোর মা যে তোর জন্য না খেয়ে আছে একবারও কি তোর মাকে ডাক দিয়ে বলছিস মা খেয়েছো,,,‌ ।

আমাদের নিয়ে তোদেরকে চিন্তা করতে হবে না । আর বউ মারা শাশুড়িকে এমন ভাবে কথা বলার আগে একটুও চিন্তা ভাবনা করে ব‌ইলো‌ । তোমাদেরকে অনেক ভালোবাসে তোমাদের শাশুড়ি ‌,,, ভালোবাসে বলেই না খেয়ে থাকবে তবুও তোমাদেরকে বিরক্ত করবে না । যাও যার যার রুমে চলে যাও ,, আমাদের জন্য টেনশন করতে হবে না তোমাদেরকে ,,আমি বানাতে পারি পরোটা । 

রেসমি‌ ‌ : বাবা যান আপনারা রুমে যান আমি পরোটা বানিয়ে আপনাদের রুমে পাঠিয়ে দিব । আমাকে ডাক দিতেন । ছেলেদের সামনে এগুলো না করে ,,এখন থেকে কোন সমস্যা হলে আমাদেরকে ডাক দিবেন ।

ফাহাদ ‌ :যাও‌ দুই জনই একসাথে যেয়ে মা বাবার জন্য রান্না করে খাইয়ে তারপর রুমে আসবে ‌। এখন থেকে মা বাবার প্রতি খেয়াল বেশি বেশি করে রাখবে । মা-বাবা যে না খেয়ে আছে তোমরা খেয়াল করনি কেন ?

এই কথা বলে ফাহাদ‌ আর রাহাত চলে গেল তাদের রুমে ,,, মাহিম আর অন্তরাও চলে গেল তাদের রুমে ।

পায়েল আর রেশমি রান্না করতে লাগলো আবার ,,

রেসমি‌ : জানিস পায়েল এগুলো আমার আর ভালো লাগছে না ,,, বয়স হয়েছে এদের এত প্রেম পিরিতি কিসের জন্য থাকবে বলতো । এদের জন্য আমাদের কত কথা শুনতে হয়। বিকেলবেলা একটু ঘুম আসি,, কি সমস্যা করে রাখলো একটু আরাম করতেও পারলাম না । এখন যদি আমাদের রান্না করে দিতে হয় ,,তাহলে আমাদেরকে আগে ডাক দিলেই তো হতো ।

পায়েল ‌ : আমারও অনেক বিরক্ত লাগে এদের জন্য আমাকে আজকেও ফাহাত মেরেছে ‌।‌ যানো ভাবি,,, আমার একটি ইচ্ছে এদেরকে আলাদা করবোই । আজ দিয়ে আমাকে ১০ দিন মেরেছে ফাহাদ এদের জন্য । এত আদিখ্যেতা ভালো না । দুজনকে আলাদা করেই ছাড়বো ।

অন্তরা আর মাহিমের কি হবে ‌?‌ এমন‌ পুএ‌ বধুদেরকে নিয়ে ,,।‌  এরা কি সত্যি মাহিম আর অন্তরা কে আলাদা করে ফেলবে কোন প্রকারে ? সবকিছু জানার জন্য পাশে থাকার অনুরোধ রইলো
139 Views
2 Likes
0 Comments
5.0 Rating
Rate this: