মামী- সেন্টু? ও সেন্টু?
সেন্টু:- জ্বী মামানী আসতে ছি ।
মামী:- তুই শোন এই ধানগুলো নিয়ে যা। সাথে সুমি ও যাইবে।
সেন্টু:- কোথায় লইয়া যামু?
সুমি:- আরে নানা বাড়িতে যেতে হবে।
সেন্টু:- এতো দূরে গাড়িতে নিবেন।
মামী:- আমার কাছে গাড়ি ভাড়া নাই।
তোর টাকা থাকলে লইয়া যা।
সুমি:- এতো টুকু জায়গা হেঁটে যেতে বেশি সময় লাগবে না।
সেন্টু নিরুপায় হয়ে তাকিয়ে দেখলো বিশ কেজি একটা ধানের বোস্তা। তিন মাইল দূরে হেঁটে যেতে হবে, ভাবতেই গলা শুকিয়ে গেল।
মামী:- শোন একটুখানি গিয়ে পথে রেস্ট নিয়ে আবার যাবি। তাতে কষ্ট হবে না।
বিকেলে সুমি সাথে সেন্টু ধান নিয়ে রহনা দিল। যতো দূরে যাচ্ছে মনে হয় ততই ওজন বেড়ে যায়। কিছু দূর গিয়ে সেন্টুর পা আর চলে না। ঘাড় ব্যথা করছে বলল-সুমি একটুখানি থামো বসে নিই।
সুমি বলল-সেন্টু এতোটুকু এসেই হাঁপিয়ে গেছো। পুরুষ মানুষ আরো শক্তিশালী হতে হবে।
সেন্টু বসে পড়লো গলা শুকিয়ে গেল। একটুখানি পানি পেলে ভালো হতো। ক্লান্ত হয়ে গরম নিঃশ্বাস ছেড়ে চোখ বুজে আছে।
এভাবে করতে করতে নিয়ে গেল।
রাতে সেন্টু কে মিষ্টি কুমড়া আর কলাই ডাল দিয়ে ভাত দিল। খেয়ে পিছনে বারান্দায় শুইতে দিল। এক পাশে একটা চৌকিতে, অন্য পাশে একটা ছাগল বাঁধা। ছাগলের গন্ধ বমি চলে আসে। হঠাৎ করেই রাতে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। টিনের চালার ফুটো দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে। সেখানে কিছু কোকা কোলার খালি বোতলের মাথা কেটে ঝুলিয়ে দেয়া। সেগুলো ঠিক করে সেন্টু ঘুমিয়ে পড়লো।
**00**00**
ভোরে ঘুম থেকে উঠে সেন্টু বসে কি যেন চিন্তা করছে। লিজা শুধু তাকিয়ে দেখলো কিছু বলেনি । অনেক পড়ে কাছে এসে লিজা
বলল-কি হয়েছে তোমার?
কি ভাবছো?
সেন্টু একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল- একা ভালো লাগে না।আর একটা মানুষের দরকার ছিল।
লিজা:- তাহলে আর একটা বিয়ে করো?
সেন্টু:-তার চেয়ে একটা বাচ্চা নিয়ে ভালো হতো?
লিজা:-যখন সময় হবে তখন নিব। সারা দিনের এত কাজ তাই করতে পারি না, আবার বাচ্চা পালন করতে হবে।
সেন্টু কোন কথা না বলে, লিজার কাছে এলো। লিজার দিয়ে তাকিয়ে আছে।
লিজা বলল-তোমার তো মতলব ভালো না তুমি আমার কাছ থেকে দূরে যাও।
সেন্টু লিজা কে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে চুমু দিয়ে বলল- আমার তোমাকে লাগবে কেন এমন করো?
লিজা:- এই শীতের সাকালে আমি গোসল করতে পারবো।যখন-তখন তোমার ইচ্ছে হবে ,আর আমি তা মেনে নিব কেন? আর একটা বিয়ে করে নাও।
সেন্টু:- এভাবে বল না আর কখনো বার বার আবদার করবো না। শুধু আজকে দাও না।
লিজা কিছুতেই রাজি হলো না।সে বলে দিয়েছে, এই শীতে রাতে আর ভোরে কাছে আসবা না।মন চাইলে দিনে বেলায় আসতে পারো।
সেন্টু বিরক্ত ভাব নিয়ে অনেক ক্ষণ ধরে বসে আছে। হঠাৎ উঠে কোন কথা না বলে দোকানে রহনা দিল।
লিজা:-কিছু খেয়ে যাও,না খেয়ে দোকানে যাও কেন?
সেন্টু:-না ক্ষুধা নাই, পড়ে হোটেলে খেয়ে নিব। বলেই সেন্টু হাঁটতে শুরু করলো।
লিজা:-দয়া করে একটুখানি দাড়ান আমার কথটা শুনুন?
সেন্টু দাঁড়িয়ে অন্য দিকে আছে । মনে মনে অনেক রেগে আছে লিজার উপরে।
লিজা কাছে এসে দুই হাতে কোমর জড়িয়ে ধরে বলল- তুমি রাগ করেছো?
সেন্টু:-না এমনি ক্ষুধা নাই।
লিজা:-কেন তুমি সামান্য কারণে বাচ্চাদের মত রাগ করো কেন? আমার দিকে তাকাও?
সেন্টু একটুখানি জোর করে হাসি দিয়ে বলল- আরে না তোমার উপর রাগ করিনি।
লিজা:-ইদানিং তুমি একটু বেশি জ্বালাতন করছো না তো?
সেন্টু:- আমার মনে কম করছি,আরো উচিত ছিল। বলে হেসে দিল।
লিজা একটুখানি চুপ থেকে কি যেন ভেবে বলল- কম হইছে তাই না? ঠিক আছে চলো দেখি তোমার মুরোদ কতো?
সেন্টু:- এখন সময় নেই যেতে হবে।
লিজা:- না, কোথায় যেতে পারবে না। এখন এই মূহুর্তে ঘরে চলো, বলে সেন্টুর হাত ধরে ঘরে নিয়ে গেল।
সেন্টু বড় দোকান রাখলো, কর্মচারী রাখলো। দোকানের পিছনে রুম আছে সেখানে লিজা থাকে। অনেক ব্যস্ত জীবন তাদের। বাজারে ভিতরে বড় মুদী-মনহরী দোকান এবং লিজা আর কর্মচারী মিলে টেইলার্সের দোকান চালাচ্ছে। অনেক বেশি সুনাম অর্জন করছে তারা। দিন দিন জীবনের মোড় পাল্টে যাচ্ছে।
অনু অনেক ভালো রেজাল্ট করছে।তাই মিষ্টি নিয়ে এসেছে। আজকে লিজা অনেক বেশি খুশি অনু কে পেয়ে। অনেক রকমের রান্না করছে ।অনু চায় ভাই -ভাবী কে নিয়ে এক সাথে থাকতে।অনু এক্সিডেন্ট এর পর থেকে সেন্টু আর লিজা কে অনেক বেশি ভালোবাসে। সে বুঝতে পারছে সেন্টুর প্রতি সবাই অন্যায় করেছে।
**00**00**
রেজার সাথে সুমির প্রেমের ভাটা লেগেছে। এখন আর রেজা সুমিকে পছন্দ করে না।প্রায় ছয় মাসে মাথা সম্পর্কে ইতি হলো।সুমিও রেজা কে দেখিয়ে একটা ছেলের সাথে নতুন প্রেম শুরু করলো। ছেলেটির নাম নাম রফিক।সে দুবাই থাকে ছুটি তে বাড়ি আসে। একটা মেলায় সুমিকে দেখেই পাগল হয়ে গেছে।
সেন্টুর এই বাড়িতে থাকতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু সুমিকে না দেখেও থাকতে পারছে না।
তাই কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না।
একা একা পুকুর ঘাটে বসে আছে।
হঠাৎ করে রিয়া চলে আসলো
রিয়া:- তুমি এখানে আমি সারা দেশে খুঁজি?
সেন্টু:- কেন খুজো আমারে?
রিয়া সেন্টুর দিকে তাকিয়ে বলল-কেন খুঁজি তুমি কি জানো না?
সেন্টু নিচের দিকে তাকিয়ে একটা দির্ঘ্য নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল- তুমি অনেক ভালো একটা মেয়ে কেন শুধু শুধু নিজেকে কষ্ট দাও?
রিয়া:- কষ্ট তো তোমার জন্যই পাই? আপু তোমাকে পছন্দ করে না তারপর কেন আমাকে ভালোবাসতে পারো না?
সেন্টু একটুখানি হাসি দিয়ে বলল-রিয়া আমাদের মতো মানুষের জন্য প্রেম ভালবাসা না। তুই একটা ভালো শিক্ষিত ছেলেরা সাথে প্রেম করবি।
রিয়া:- আমি যে তোমাকে ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারছি না। কেন বুঝ না তুমি?
সেন্টু:- আমার জীবনটা তোমার মতো সহজ না।
রিয়া রাগ করে পাশে বসে আছে।রিয়া সেন্টু কে অনেক ভালোবাসে। সেন্টু এভাবে বার বার ফিরিয়ে দেয়া বিষয়টি রিয়া কে খুব বেশি কষ্ট দেয়। রিয়া চোখ দুটো পানিতে ছল ছল করছে। মনে হচ্ছে একটুখানি নাড়াচাড়া করলে পড়ে যাবে। কতগুলো মাটির টুকরো নিয়ে পানিতে ফেলছে। সেন্টু একটা ধরতেই
রিয়া বলল- তুমি আমার তা নেও কেন? ধরবে না বলছি?
সেন্টু:- আমি একটা পানিতে ফেলি?
রিয়া:- আমার তা ফেলতে পারবে না।
রিয়া অনেক বেশি রেগে আছে
সেন্টু ঠিক আছে তাহলে আমি যাই বলে হাঁটা দিলো..,
রিয়া বলল-তুমি কেন যাইবা? তুমি দূরে গেলে আমার বেশি কষ্ট হয় তো? বলেই সেন্টুর হাত ধরলো।
সেন্টু একটুখানি হাসি দিয়ে বলল- তুমি রাগ করলে দেখতে বেশি ভালো লাগে।
অনেক গল্প করলো দুজনে..,
সুমি রফিকের সাথে প্রায় ছয় মাস ধরে সম্পর্ক হয়েছে গেছে। রফিক এক মাস পর দেশে এসেই সুমিকে বিয়ে করবে। কথা পাকাপাকি হয়েছে গেছে। সুমি খুব বেশি খুশি। ছেলে বিদেশে থাকে অনেক টাকা পয়সা মালিক। রিয়া সেও মনে মনে খুশি হলো।আপু চলে গেলে সেন্টু নিশ্চিত তাকে ভালো বাসবে।
সেন্টুর হৃদয়টা জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। সুমিকে না দেখে একটা মুহূর্ত থাকতে পারে না। কি হবে ওর বিয়ে হলে? কিভাবে সুমিকে না দেখে থাকবে।
কষ্ট হৃদয়টা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। সুমির কথা ভাবতে চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।
কেন এতো কষ্ট হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না। কিভাবে সুমিকে ভুলে থাকবে ভেবে পাচ্ছে না।
সেন্টু বিলের পাশে একটা গাছের নিচে মাটির উপর শুয়ে পড়ল। চোখের জল আস্তে আস্তে গড়িয়ে পড়ছে
রানার ডাকে হুঁশ হলো- কিরে সেন্টু মাটিতে শুয়ে আছো কেন?
সেন্টু মাটির উপর শুয়ে শুয়ে শান্ত গলায় বলল- মিঞা ভাই! শরীরটা ভালো লাগে না।
রানা:- শোন মানুষের বাড়িতে পেটে ভাতে কি সারাটা জীবন কাটাবি। কিছু একটা কর? টাকা পয়সা জমা।
সেন্টু:- কি করবো ভাই? কে আমারে কাজ দিবে?আর মানুষের বাড়ি বলছো কেন ওটা আমার নিজের বাড়ি মতোই।
রানা:-আমার এক মামা নতুন টলার বানাইছে।মাছ ধরতে যাবি?
সেন্টু একটা দির্ঘ্য নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল-
হয়তো যাওয়া লাগতে পারে। তোমারে পড়ে জানাবো।
সুমির বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসছে। অনেক আয়োজন করতে হবে। বাড়ির সমস্ত কাজ গুছিয়ে নিতে হবে। সেন্টুর উপরে কাজের পাহাড় ভর করেছে।হালকা শীতের মৌসুম এখন। সকালের রোদ মিষ্টি হয়ে উঠেছে। সেন্টু রোদে বসে আছে।
হঠাৎ রিণা খান ডাকলো.. সেন্টু, ঐ সেন্টু?
সেন্টু:- জি মামানী?
আসছি বলে চলে গেল।রিণা খান বলল-সেন্টু তুই,সুমি আর রিয়া মিলে কালকে মার্কেট করতে যাবি। সুমির বিয়ের শাড়ি -চুড়ি কিনতে হবে।
সেন্টু- মামানী আপনি যাবেন না ?
মামী:- না, আমার মায়ের পায়ে ব্যথা পাইছে। দেখতে যাবো।
পর দিন রিয়া, সুমি আর সেন্টু বাজার থেকে অনেক কিছু কিনলো, সেন্টুর পছন্দের নীল রঙের শাড়ি,একটা সাদা রঙের থ্রি পিস নিল সুমি।রিয়াও অনেক কিছু কিনলো। শুধু সেন্টুর ভাগ্য কিছু জুটলো। মার্কেট শেষ সব কিছু নিয়ে আসলো।
সেন্টুর মনটা খারাপ হয়ে গেল।মনে মনে ভাবছে এই বাড়িতে সারা জীবন চাকরের মতো খেটে গেলাম। জীবনে কিছুই পাইলাম না। আজকে সবার নতুন পোশাক হলো। শুধু আমার ভাগ্য জুটেনি। নিজেকে খুব বেশি অসহায় মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে এই পৃথিবীতে তার কেউ নেই। কার জন্য এই সংসারে খাটে? কার জন্য নিজের রক্ত পানি করে আগলে রেখেছে এই বাড়ি, এই সংসার?
আমার তো আপন বলতে কিছুই নেই? কিসের আশায় এখানে কষ্ট করছি?
সুমি রাতে তার মায়ের কাছে বলল-
মা সবার জন্য তো কিনলাম সেন্টুর জন্য কিছু আনা উচিত ছিল না?
মা:- আমি ভোরে গিয়ে ভ্যান গাড়ি থেকে কিনে আনবো। ওই দোকানের পোশাক দাম অনেক বেশি নিবে।
সুমি:- একটু ভালো পোশাক আনবা বিয়ের সময় পড়বে তো?
সুমি:- তোর চিন্তা করতে হবে না।
পরদিন ভোরে রিণা খান বাজারে গেল। রাস্তায় ভ্যান গাড়ি থেকে একটা টিশার্ট একটা প্যান্ট কিনলো।মোটা ১৯০ টাকায় অনেক ভালো মার্কেট করলো।
সুমি দেখে বলল-অনেক বেশি সুন্দর হয়েছে
মা কত টাকা নিলো?
মা:-৫০০ নিছে। ৮০০ চাইছিল আমি অনেক ধরাধরি করে আনছি।
রিয়ার পছন্দ হয়নি তাই কিছু না বলে চলে গেল।
সুমি বলল-সেন্টু তোর পছন্দ হয়েছে?
সেন্টু পছন্দ না হলে কখনো ভালো মন্দ কিছু বলেনি। বলল- পছন্দ হবে না কেন?
অনেক সুন্দর হয়েছে বলে চলে গেল।
বিয়ের আয়োজন চলছে,সব আত্মীয় স্বজন বাড়িতে ভর্তি। সেন্টু বুকের ব্যথাটা ক্রমশই বাড়ছে। কলিজা টা ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। বিরহের আগুনে পুড়ে পুড়ে কয়লা হয়ে যাচ্ছে।তারপর এতো কাজের চাপ আর নিতে পারছে না। কিন্তু সেন্টু কে বোঝার মতো এই পৃথিবীতে কেউ নেই।কেউ বলবে না সেন্টু একটুখানি বিশ্রাম নেয়? কেউ বলবে সেন্টু একটুখানি খেয়ে নে? না পারলে আমাকে দাও?কেউ বলবে না কষ্ট বেশি হলে একটু কেঁদে নেয়? সেন্টু গরিব,কেউ নেই এর জন্য নিজেই, নিজের উপর অভিমান করে। নিজেকে কষ্ট দেয়, ঠিক মতো খায় না, গোসল করে না।ব্যাথা পেলেও এমন ভাব নেয় মনে, হয় কিছুই হয়নি। এখন আর চোখের জল বের হয় না। হৃদয়টা শুকিয়ে মরুভূমি হয়ে গেছে। শুধু কষ্টের অনুভূতিগুলো রয়েই গেছে।
রিমা খান:-সেন্টু বাজারে গিয়ে মিষ্টি কুমড়ার, মূলা,আর লাউ কিনে আনতে হবে। অনেক বেশি আনবি যে পাঁচ ছয় দিন সবাইকে রানা করে দেয়া য়ায।
সেন্টু অবাক হয়ে বলল- মাছ, মাংস সবজি সব কিছুই তো আনলাম আবার কেন?
রিণা খান:-লাগবে তুই বুঝতে পারবি না।
সেন্টু:- ঠিক আছে মামী।
সেন্টুর মনে মনে ঘৃণা হচ্ছে এই বাড়ির মানুষ গুলো।গরিব আত্মীয় স্বজনদের কম দামে।সস্তা খাবার খেতে দেয়।আর বড় লোক আত্মীয় স্বজনদের জন্য ভিন্ন রান্না করে,মাছ, মাংস।
শুধু বউ ভাতে সবাই ভালো খাবার পাবে।তাও বড় লোকদের আগে খাবার দিবে। গরিবরা পরিবেশন করবে।
সেন্টু নিজের হাতে বাড়ি,গেট, বাসর ঘর সব কিছুই সাজালো। রিয়া কে সাথে নিয়ে রঙিন কাগজ কেটে ফুল বানিয়ে। সুমির বাসর ঘর সুন্দর করে সাজিয়ে দিল। কিছু তাজা গোলাপ,গাদা,আর সেন্টু নিজের হাতে বকুল ফুলের খাটে সাজিয়ে দিল। খাটের দিকে তাকিয়ে হৃদয়টা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে।
নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে চাইছে। সেন্টু নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না তাই চলে এলো।খালের পাড়ে বসে বার বার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে বসে রইল। ইচ্ছে করছে চিৎকার দিয়ে কান্না করতে। কেন এতো কষ্ট হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না। কোথায় যাবে?কি করবে কিছুই জানে না।গলা কাটা পশুর মতো ছটফট করছে। সেন্টুর বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে না। বার বার শুধু মনে হচ্ছে,মরে গেলে হয়তো কষ্টটা কমে যেতে।
অনেক পড় রিয়া এসে ডাকলো.. ভাইয়া! তুই এখানে? আমি সারা বাড়িতে খুঁজি?
সেন্টু তাকিয়ে বলল- কি,কি? আমাকে ডাকছো? হুম ব ব বল?
সেন্টুর কথা বলতে গিয়ে ঠোঁট দুটো কাঁপছে।
কেমন জানি এলোমেলো ভাবে কথা বলছে।
রিয়া বিষয়টি বুঝতে পারছে। মনে মনে ভাবছে,কি হলো সেন্টুর? এমন ভাবে পাগলের মত করছে কেন? কথাগুলো এলোমেলো বলছে কেন?
কাছে এসে সেন্টুর গায়ে হাত দিয়ে বলল-
ভাইয়া তুই ঠিক আছো? শরীর ভালো তো?
সেন্টু জোর করে একটু হাসি এনে বলল- কে, কেন ঠিক থাকবো না? আ আমি একদমই ঠিক আছি?
রিয়া বলল- তারাতাড়ি চলো অনেক কাজ আছে।
তুমি আমাকে একা ফেলে চলে আসবে না কিন্তু। বলেই রিয়া হাটা দিল।
সেন্টু নেশাগ্রস্ত মানুষের মতো কেমন জানি লাগছে। হাঁটতে গিয়ে গাছে সাথে ধাক্কা লেগে মা বলে চিৎকার দিল। রিয়া ধরলো মনে হচ্ছে সেন্টু ঠিক নেই।
সবাই আসলো পুরুষদের শরবত দিতে গিয়ে। সেন্টুর হাত থেকে গ্লাস পড়ে গিয়ে ভেঙে গেল।তার জন্য হয়তো অনেক কথা শুনতে হবে। মাংস কাটতে গিয়ে হাত কেটে গেল। কিন্তু তার পর কাজ তো করতেই হবে।
বিয়ে শেষ হলো, দুপুরে বরপক্ষ খেয়ে কনে নিয়ে যাবে। সেন্টু সব মালামাল গুছিয়ে দিল একটা প্রাইভেট কার ভাড়া করে করলো।
রিণা খান বলল-সেন্টু তুই আর খাট,ফ্রিজ গুলো একটা ভ্যান গাড়ি নিয়ে আসিস।
সেন্টু মামানীর দেয়া শার্ট প্যান্ট পড়ে নিল। এক জোড়া পুরানো চটি জুতা ছিল। পড়লে ছিঁড়ে যেতে পারে ভেবে খুলে হাত নিয়ে ভ্যানে বসলো। সুমির শ্বাশুরবাড়িতে সব মাল নামিয়ে দিল।
সেন্টু হাঁটা শুরু করলো হঠাৎ করেই জুতা ছিঁড়ে গেল। এখন কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। কোন ভাবে পা টেনে টেনে বাড়ি বাহিরে আসলো। হাতে ছিড়া জুতো নিয়ে মুচি খুঁজতে গেলে।দুই তিনটা বাজার ঘুরে মুচি পেলনা।খালি পায়ে তো বিয়ে বাড়ীতে যাওয়া যায় না। রাগ করে জুতো দুটি খালের ভিতরে ফেলে দিল। বসে বসে দেখছে জুতা ভেবে যাচ্ছে। কত আশা ছিল সুমির শ্বাশুরবাড়িতে যাবে হলো না। কপাল টাই খারাপ বলে ঘরে চলে আসলো।
**00**00**
২০২৪ বর্তমান
দুপুর গড়িয়ে বিকেল প্রায় তিনটার সময়। হঠাৎ করেই অনু আসলো।
লিজা দেখলো অনুর মুখ মলিন হয়ে আছে।
তেমন কথা বলে না। আগের সেই হাসিখুশি অনু নেই।
লিজা বলল- অনু দুপুরে খাইছো তুমি?
অনু:- ভাইয়া সাথে কথা বলার দরকার ছিলো?
লিজা:- তুমি দোকানে গিয়ে কথা বলো?
অনু:- না বাসায় আসবে কখন?
লিজা:- রাত দশটার দিকে। তুমি কি দুপুরে খাইছো?
অনু:- না, তবে ক্ষুধা লাগেনি।
লিজা:- তুমি আগে বলবা না, যে খাওনি?
লিজা খাবার আনতে যাচ্ছে।অনু বলল- তেমন ক্ষুধা নেই।
খাবার খেতে খেতে অনু বলল- ছত্তর গাজী
টাকা পাইবে।সেই জন্য বাড়ি, ঘর সব কিছুই দখল করেছে। এখন আমাকেও বিয়ে করতে চায়। বাবা রাজি না হলে জোর করে করবে।
গ্রামের মেম্বারের কাছে গিয়ে কোন লাভ হয়নি। মেম্বার টাকা খেয়ে চুপ করে আছে।
লিজা:- টাকা পাইবে, টাকা চাইবে।বাড়ি ঘর দখল করবে কেন? এতো সহজ সব কিছু?
তুমি আগে বলনি কেন?
অনু:- আমি কি করবো বলো? আমাকে যদি জোর করে বিয়ে করে?
লিজা:-বিয়ে কি মামাবাড়ি আবদার যে চাইলে পাইবে? তুমি কোন চিন্তা করো না।সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।
অনুর চোখ দুটো জলে পুর্ণ হয়ে গেছে। বলল-ভাবী বাবাকে অনেক মেরেছে ওরা। বাড়ি থেকে বের করে দিসে। বলো এখন আমরা কোথায় যাবো? তারপর যদি আমাকে ওরা..
লিজা বলল- এতো কথা বলতে হবে না। তুমি তারাতাড়ি খেয়ে নাও।
অনুর মনে হচ্ছে অনেক বেশি ক্ষুধার্ত হয়ে আছে। অনেক ভাত খেয়ে তৃপ্তি নিয়ে বসলো। বলল- ভাবী তোমর হাতের রান্না মায়ের থেকেও অনেক বেশি ভালো।
লিজা:- হুম, তোমার খাবার খেতে দেখেই তা বুঝা যায়।
অনু কিছুটা লজ্জা পেল, বলল- অনেক বেশি খেয়েছি তাই না?
লিজা:- কি জে বলো, আমি তোমার থেকেও অনেক বেশি খাই। তুমি জানো আমাকে কে রান্না শিখিয়ে?
অনু:- কে?
লিজা:-তোমার ভাইয়া। ওর রান্না অনেক বেশি ভালো। তুমি খাইলে সারা জীবন মনে রাখবে।
অনু খুশিতে চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠল। বলল-ভাই টা কার দেখতে হবে তো?
লিজা:- ভালো খাবার যেদিন থাকে সেন্টু কে রান্না করতে দিই।
দুজনে বসে বসে অনেক গল্প করছে। সেন্টু ফোন করল.. হুম, কি বলো?
সেন্টু:-রাতে দুজনে বাহিরে এক জায়গায় খেতে যাবো।
লিজা:- কোথায়? আমি তো অনেক বেশি রান্না করছি।অনু এসেছে।
সেন্টু:- দাওয়াত ছিল এক জায়গায় না গেলে রাগ করবে।
লিজা:- তুমি তারাতাড়ি বাসায় আসো? তোমার বাড়িতে ঝামেলা হয়েছে।অনু এখানে আছে তোমার সাথে কথা বলবে।
সেন্টু:- ঝামেলা হলে আমার কি? অনু কে ভালো মন্দ খাইয়ে দাও।
লিজা:- তুমি তারাতাড়ি আসো? তোমার বাবা মা কে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।ছতার গাজী সব কিছুই দখল করে নিছে। এখন অনু কে বিয়ে করবে।
সেন্টুর বাবা মায়ের উপর রাগ থাকলেও এত বড় অন্যায় মেনে নিতে পারছে না। তারপর অনু কে অনেক বেশি ভালোবাসে। তাই ছত্তর গাজী উপর রেগে
বলল-ওরে জায়গা জনমের মতো খাওবো। ঠিক আছে ফোন রাখো।
সেন্টু লিজাসহ সবাই মিলে ভোরে বাড়ীতে গেল। বৈঠক বসলো
ছত্তর গাজী বলল-মন্টুর আমার কাছে থেকে বাড়ি বন্ধক রেখে ৭০ হাজার টাকা নিছে।সুদসহ এখন মোট দুই লাখ হবে। টাকা দিতে পারেনি এখন আমি বাড়ি দখল করছি। এখানে আমার কি দোষ আপনারা বলুন?
সাথে সাথে কিছু সালিশগণ বলল- তোমার তো দোষ দেখি না? টাকা না দিলে বাড়ির মালিক তো হবেই।
সাবেক মেম্বার বলল-তোমাদের বিপদে সাহায্য করছে। এখন তাদের টাকাও দিবা না বাড়িও ছাড়বা না এ তো হয় না?
মন্টু নিরুপায় হয়ে কেঁদে বলল- আপনাদের পায়ে পড়ি আমাকে কয়েকটা মাস সময় দিন। সবাই চুপ হয়ে রইল মনে হচ্ছে কেউ শুনেনি।
বর্তমান মেম্বার বলল-সেন্টু তোমার কি কিছু বলার আছে?
সেন্টু বলল- আমার বাবা কত টাকা নিসে?
এবং কি শর্ত ছিল।
ছত্তর গাজী বলল-৭০ হাজার,বছরে সুদ ২০ হাজার
মন্টু বলল- আমাকে মাত্র ৩০ হাজার টাকা দিসে। বলছে বছরে ১৮ হাজার টাকা সুদ।
মন্টুর কথার মাঝে ছত্তর গাজী ক্ষেপে উঠলো। বলল-সালার পুত টাকা নিয়ে সব কিছু ভুলে গেছে? তোকে মেরে ফেলবো বলে চড় দিলো।
সেন্টু বাবার এভাবে অপমান দেখে রেগে উঠলো।শত হলেও বাবাতো সবাই দাঁত কেলিয়ে বলল-এতো দিন দরদ কোথায় ছিল। বাবাকে তো এক নজর দেখতেও আসনি?
সেন্টু চেঁচিয়ে বলল-৩০হাজার টাকা নিসে এবং সুদ পাবে ৪০হাজার।মোট ৭০ হাজার টাকা পাবে। টাকা নিয়ে এখনি লেখিত কাগজ ফেরত দিন।
মেম্বার চেঁচিয়ে উঠলো সে সেন্টু কে মারতে চাইলো। বলল-তোর এতো বড় সাহস সালিশদের অপমান করো।
টাকা দুই লাখ দিতে হবে কোন কম হবে না
সেন্টু বলল-তোর আর ছত্তর গাজীর নামে আমি আজকেই মামলা করবো। সুদ আর ঘুষ পেট গেলে বের করবো। তুই আমারে চিনো নাই?
মেম্বার এর সাথে অনেক ঝগড়া-ঝাটি হলো। শেষ মেশ মেম্বার ঘরে এক সপ্তাহ থাকার অনুমতি দিয়েছে।
রাতে একটা লোক এসে বলল- সেন্টু ঘরে আছো
সেন্টু:- হুম,আছি কে?
লোকটি:- তোমারে মেম্বারে ডাকছে?
সেন্টু চলে গেল মেম্বার সাব আমাকে ডাকছেন?
মেম্বার:- হ , সেন্টু বসো। খাবার খাইছো?
মেয়ে কে ডেকে বলল- সেন্টু কে চা বিস্কুট দে?
সেন্টু অবাক হয়ে গেল যে সালিশিতে মারতে চেয়েছিল তার এমন ব্যাবহার। সেন্টু বলল- ওই সময় খারাপ ব্যবহার করার জন্য আমি দুঃখিত! আসলে আমি বেশি রেগে ছিলাম তাই ভুলে..
মেম্বার:- আরে বাদ দাও মিঞা রাগের সময় তুমিও বলছো আমিও বলছি। এখন কি করতে চাও বলো?
সেন্টু:- ভাবছি মামলা করবো। তারপর রায় হলে টাকা দিব। বাবাকে মারছে ওরে তো উচিত শিক্ষা দিতে হবেই?
মেম্বার:- দেখো তুমি লেখাপড়া না করলেও যথেষ্ট জ্ঞানী মানুষ। মাথা গরম করতে হবে না।এই সব মামলা -মকর্দমা জরিয়ে লাভ হবে না। টাকা তো এমনি দিতে হবে, মামলা করে বাড়তি লস করবে কেন? আমরা সবাই মিলে মিশে থাকতে চাই। সবাই এক স্থানে বাস করি শুধু সত্রুতা বাড়িতে ক্ষতি হবে।
সেন্টু:-ঠিক আছে, আপনি বলুন কি করবো?
মেম্বার:- শোন টাকা ৭০না ৯০ হাজার দিও আমি সব কিছু ঠিক করে দিব।
সেন্টু:- ঠিক আছে ৯০বাদ দেন ৮০ হাজার দিব।
মেম্বার:-ঠিক আছে, আমাকে কিছু নাস্তা খরচ দিও।
সেন্টু:- আমি যাই তাহলে।
মেম্বার:- ভাত খেয়ে যাও মিঞা?
মেম্বার লোক পাঠিয়ে ছত্তর গাজী কে ডাকলো । ছত্তর গাজী আসলো তাকে অনেক বেশি চেঁচিয়ে বলল- তুমি নিজেকে কি ভাবো? টাকা আছে বলে মন্ত্রী-মেনিস্টার হয়ে গেছো? ৩০ হাজার টাকা দিয়ে দুই লাখ চাও কেন? সেন্টু তোমার নামে মামলা করতে গেছে আমি অনেক বুঝিয়ে বন্ধ করছি। অতিরিক্ত সুদ , গায়ে হাত তোলা,জোর পূর্বক জমি দখল, জোর পূর্বক মেয়ে বিয়ে করতে চাওয়া।
তুই তো সারা জীবন জেলে থাকবি।সালা এতো বোকা মানুষ থাকে। তুই পাবি ৭০ হাজার সেখানে দুই লাখ চাও কেন?
মামলা দিলে টাকা তো পাবি না আরো জেলে পঁচে মরতে হবে।
ছত্তর গাজী:- দাদা তখন তো রাগে উল্টো পাল্টা বলছিলাম। এখন আপনি ভালো একটা পরামর্শ দিন?
মেম্বার:-শোন যতো ঝামেলা হবে সব কিছু আমি দেখবো। শোন তুই টাকা ৭০ পাবি হাজার। আমি সব কিছু মিটিয়ে দিব। আমাকে ২০ হাজার দিতে হবে।
ছত্তর গাজী:- গত সালিশ তে পাঁচ হাজার দিলাম।তা তো গত সালিশতে । ভেবে দেখো আর যদি মামলা হয় আমি কিন্তু সত্যি কথা বলবো।
ছত্তর গাজী:- দাদা আর পাচ হাজার কম দিব নে।
মেম্বার:- ঠিক আছে। গোপনে যা কেউ দেখলে সমস্যা হবে।
পর সপ্তাহে সালিশ হলো। সেন্টু ৮০ হাজার টাকা দিয়ে বাড়ি ছাড়িয়ে আনলো।
সবাই মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। সেন্টুর মা বাবা ওর বাসায় মাঝে মাঝে আসে। লিজা সেন্টু ও যায় তাদের সম্পর্ক অনেক ভাল হলো। টাকা পয়সা সব কিছু মিলিয়ে এখন সেন্টু অনেক বেশি সুখী মানুষ।
**০০**০০**
অতীত ২০২২
সুমির আর ওর স্বামী রাফি আসছে। রাফির ছুটি মাত্র এক সপ্তাহ আছে। আবার ডুবাই যেতে হবে। রাতে খাবার খেয়ে সেন্টু ছাদের উপর শুয়ে আছে।
রিয়া আসলো সেন্টু বলল- তুমি এখানে কেন?
রিয়া:- আমি আসলে তোমার সমস্যা কি?
সেন্টু:- এখন রাত এভাবে দুজন কে একসাথে দেখলে সন্দেহ করবে?
রিয়া:- করুক তাতে কি আমি ভয় পাই না?
সেন্টু:-তুমি না পেলেও আমি ভয় পাই।
রিয়া:- আমি থাকতে তোমার কিছু হতে দিব না।
সেন্টু:- দেখ পাগমি করিস না। তোর এখন লেখাপড়া করার সময়। এখন এই সব ভুত মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল।
রিয়া:- আমি এতো কিছু বুঝি না। আমি শুধু তোমাকেই চাই। আমি তোমাকে প্রচন্ড ভালোবাসি। নিজের থেকেও অনেক বেশি।
সেন্টু:- আমি একবার ভুল করে এখনো কষ্ট পাচ্ছি। আবার সেই ভুল করতে পারি না।
এই সব কিছু আমার জন্য না।
রিয়া:- আমাকে তুমি অন্য কারো সাথে তুলনা করলে হবে না। আমি তোমাকে কখনো কষ্ট দিব না।
সেন্টু:- আমি আর কাউকে কখনো ভালো বাসতে পারবো না।
রিয়া কষ্ট নিজেকে আর সামলাতে পারছে না। অস্তে করে ফ্লোরে উপর বসে রইল।চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। বার বার সেন্টুর কাছ থেকে এভাবে অবহেলা পাচ্ছে।এটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। কেন সেন্টু এমন ভাবে তাকে ফিরিয়ে দেয়।
হঠাৎ করেই বিদ্যুৎ চলে গেল রিণা খান ছাদে আসলো।এসে সেন্টু আর রিয়ার সব কথা শুনতে পারলো।রিণা দৌড়ে গিয়ে সুমির কাছে সব কিছু বললো।
সুমি বলল-সেন্টু কে যেভাবে হোক বাড়ি থেকে বের করে দাও। না হলে পড়ে সমস্যা হবে।
রিমা খান:- কিভাবে বের করবো সেটাই তো ভাবতে হবে?
সুমি:- ওকে চুরির অপবাদে বের করে দিলে কেমন হয়?
রিণাখান:- তুই তো আমার থেকেও বুদ্ধিমতী।
পর দিন ভোরে তুমুল কান্ড বেঁধে গেছে।৩০ হাজার টাকা আর সুমির সোনার গহনা খুঁজে পায় না। অনেক খোঁজাখুঁজি করে কোথাও পেল না।রিণা খান সেন্টুরএকটা পুরাতন টেংরা এর ভিতরে সব কিছু পেল।
সেন্টু বলল- মামী আমি কিছু জানি না।
আমি এই টাকা নিই নি
রিণা খান এর চিৎকার চেঁচামেচি তে পাড়ার সব মানুষের ভিড় করছে।সবাই বলাবলি করছে। ভিক্ষারীর ছেলে তো অতগুলো টাকা দেখে চোখে সয়নি।
সুমি বলল-তোকে খাইয়ে পড়িয়ে যারা মানুষ করছে তাদের ঘরে চুরি করো? চোরের বাচ্চা তোর স্বাভাব এতো খারাপ?
রিয়ার বিশ্বাস হচ্ছে না যে সেন্টু চুরি করতে পারে।রিয়া ওর মাকে বলল:- মা হয়তো কেউ সেন্টু চোর করার জন্য।ওর টেংরাঙ্কে লুকিয়ে রেখেছে।
মা:-তুই চুপ থাক বলে ধমক দিল। তুই কি বোঝাতে চাও আমি নিজের চোখে দেখেছি।
রিণা খান সেন্টুর গালে কয়েকটা চড় দিয়ে বলল- কুকুর বাচ্চা! তোর স্বভাব এতো খারাপ? দুধকলা দিয়ে কাল-সাপ পুষেছি এখন ছোবল তো খেতেই হবে। তুই আমার বাড়িতে থেকে বের হয়ে যা।আর যেন কখনো না দেখি।
সেন্টুর কথা কেউ বিশ্বাস করলো না।তাই সেন্টু আর কিছু না বলে শুধু দাঁড়িয়ে আছে সবার কথা শুনছে। সেন্টুর খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে।এই পরিবারের জন্য কি না করেছি।
নিজের রক্ত পানি করেছি এই পরিবারের জন্য। এদের কে আপন ভেবে ছিলাম।এরাই আমাকে চোর বানিয়ে দিল।চোখ দিয়ে শুধু অশ্রু পড়ছে।
সেন্টুর ছোট মামা তার ভাবী কে অনেক বুঝাতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো।
সেন্টু কিছু না বলে নিজের পোশাক আর পু
বোবা কান্না
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
268
Views
2
Likes
0
Comments
3.5
Rating