আমার তুমি

মুন সোনাই
মুন সোনাই
লেখিকা

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
প্রচণ্ড রেগে রাজা বলল
-"না।।।। তোকে দোষ দেবো না। দোষ আমার। ভুল আমি করেছি তোকে একটু বেশীই গুরুত্ব দিয়ে। "
ভীষণ অবাক হয়ে তোড়া বলল
-"কি বলছিস রাজা?? তুই আমাকে গুরুত্ব দিয়ে ভুল করেছিস? তুই বলতে পারলি?"
তোড়ার চোখ ছল ছল করে উঠলো।
-" না পারার কি আছে? এতটা গুরুত্ব দিয়েছিলাম বলেইতো তুই পারলি আমাকে এইভাবে ঠকাতে।
-" এটাকে ঠকানো বলে না বাবু। তুই কেনো বুঝতে পারছিস না। আমার অত গুলো টাকা দিতে প্রবলেম আছে। সামনেই ঠাকুমার অপারেশন ঠাকুমাকে সুস্থ করতে বাপির পাশে আমাকে দাড়াতেই হবে।"
এবার একটু নরম হয়ে রাজা বলল
-" তুই ই কেনো মন? আর কি কেউ নেই? তোর দাদা? সে তো বাড়ির বড়ো ছেলে। কি করছে আজ পরিবারের জন্য সে? আর তোর কাছে তোর পরিবার সব? আমি কেউ নয় মন?"
-" তুই আমার কাছে কি সেটা তোকে নতুন করে বুঝিয়ে দিতে হবে সোনাই?"
রাজার চোখটাও এবার ছলছল করে উঠলো। ও এই ডাক টাকে উপেক্ষা করতে পারে না।
-" থাক। আর তেল মারতে হবেনা। তুই পরিষ্কার করে বল তুই আমাকে টাকাটা দিতে পারবি কি না?"
-" তুই এমন করিস না বাবু । একটু শোন আমার......"
তোড়া কে আর বলতে না দিয়ে ডান হাত তুলে থামিয়ে দিয়ে নিজে বলল
-" থাক তোড়া কোনো দরকার নেই আর কোনো এক্সকিউজ দেওয়ার। আমার যা বোঝার আমি বুঝে গেছি। তোর জীবনে আমি যে কতটা দামী সেটা তুই তোর ব্যবহারে বুঝিয়ে দিয়েছিস। আমি তোকে স্পষ্ট করে বলে দিচ্ছি তোড়া। হয়ে তুই আমাকে টাকাটা দিবি। নয় তো আজই আমাদের শেষ দেখা। আর কোনো সম্পর্ক রাখবো না আমি তোর সাথে।" এবার তোড়া কেঁদে ফেললো।।
-"তুই।। এই কথাটা বলতে পারলি সোনাই? কিছু টাকার উপর আমাদের সম্পর্ক টা টিকে থাকবে?"
আবারও রাজা রেগে গেলো ভীষণ।
-" কিছু টাকা?? সিরিয়াসলি তোড়া? দেড় লক্ষ টাকা তোর কাছে কিছু টাকা? ওই দেড় লক্ষ টাকাটা আমার স্বপ্ন পূরণ করবে তোড়া। "
চোখের জল টা মুছে কঠিন গলায় তোড়া বলল
-" আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি তোকে যত দেখছি রাজা। তোর কাছে একজনের জীবনের থেকে বেশি তোর নিজের সখ নিজের স্বপ্ন টা আগে হলো? আজ যদি আমার ঠাকুমার জায়গাতে তোর নিজের কেউ থাকতো রাজা? তখন কি করতিস তুই?"
মাথাটা নিচু করে নিলো রাজা। তাও একটু না দমে গলাটা অত্যন্ত শান্ত করে বলল
-" আমার আর কিছু শুনতে ভালো লাগছেনা। আসতে পারিস এবার। "
তোড়া আঘাত পেলো ভীষণ
-" চলে যাবো আমি?"
-" হ্যাঁ যাবি। আর হ্যাঁ কোনোদিন আমার চোখের সামনে আসবি না তুই। তুই আমাকে অথৈ জলে ফেলে এইভাবে ঠকালী আর ভাবলি আমি তোকে কিছু বলবনা। আমি তোর পরিস্থিতি বুঝবো। তুই বুঝেছিস আমার পরিস্থিতি?  তোর কথার উপর ভরসা করে আমি লোন নিয়ে বাড়ি বানালাম।  টাকাটা জমিয়েছিলাম তিলে তিলে সবটা মাথার উপর ছাদ টা করতে গিয়ে শেষ হয় গেলো। আমার সেই ৮ বছরের স্বপ্ন মন কি করে ভেঙে দিলি রে । কি করে।।।।। কি করে???"
রাজা যেনো নিজের চিন্তা ভাবনা কতটা ভুল ভাবতেই পারল না।


রাজা ঘোষ। আর তোড়া অধিকারী। গত ৪ বছর ধরে পাগলের মতো এক অপরকে ভালবাসে। ৮ বছরের স্বপ্ন একটা বাইক কিনবে। সেটা তোড়া ভরসা দিয়েছিল বলে নিজের জমানো টাকাটা দিয়ে বাড়ি বানিয়েছে তোড়ার পছন্দ অনুযায়ী। যাতে বিয়ের পড়ে তোড়া তার পছন্দের মধ্যেই নিজের সংসারটা সুন্দর করে সাজাতে পারে। তোড়ার স্বপ্ন ছিল এটা। এটার জন্য নিজের বোনের থ্যালাসেমিয়া থাকা সত্ত্বেও বোনের চিকিৎসাতে বাবাকে দশ হাজার টাকার বেশি সাহায্য করতে পারেনি। মাস গেলে বোনের পাঁচ হাজার টাকার ওষুধ লাগে। হ্যাঁ ও গরীব। তাবলে কি স্বপ্ন দেখার অধিকার নেই? তাই বুঝিয়ে তোড়া ওকে বলেছিল "স্বপ্ন তুই দেখ। তুই যেমন আমার পছন্দ মতো বাড়ি বানিয়ে আমার স্বপ্ন সত্যি করলি তেমনি আমিও তোকে তোর পছন্দের বাইক গিফট করে তোর স্বপ্ন পূরণ করব। "
রাজি হতে চায়নি রাজা। কিন্তু ওর মনের মুখের দিকে তাকিয়ে আর নাও করতে পারেনি। ওর ওই টাকাটা দিয়ে বাইক কেনার স্বপ্ন থাকলেও। সেই স্বপ্ন টা ও এই মুহূর্তে পূরণ করতে পারবেনা। বাজারে ওর অনেক দেনা। তাই ও ভেবেছে তোড়ার দেওয়া টাকাটা দিয়ে ও সেই দেনা মেটাবে। কিন্তু এরই মধ্যে বাড়িতে একটা ঝামেলা হয়ে গেছে। যেটা অপ্রত্যাশিত। তাই কদিন ধরে ও তোড়াকে টাকাটা দিয়ে যেতে বলেছিল। আর আজ যখন তোড়ার টাকাটা আনার কথা ছিল। তখন তোড়া এসে বলছে ওর ঠাকুমার গত এক সপ্তাহ ধরে শরীর খারাপ। অপারেশন করতে হবে তাতে এক লাখ টাকা লাগবে। বাবার উপর ভীষণ চাপ। ও তাই সাহায্য করতে চায়। দাদা আছে। কিন্তু দাদা অপারগ। সেই নিয়েই আজ ওদের এই কথপোকথন।

অঝোর ধারায় কাঁদতে কাঁদতে তোড়া বলল
--"তুই বিশ্বাস কর সোনাই।আমি তোকেই দিতাম যদি না ঠাকুমার শরীরটা খারাপ হতো। বাপি অত গুলো টাকা জোগাড় করতে পারবেনা রে বাবু। একটু বোঝ।"
--" তোকে কি বললাম আমি?"
--" সোনাই?"
মন তার সোনাই এর দিকে তাকিয়ে রয়েছে এক ঠাঁয়। চোখ দিয়ে অনবরত জল পরেই যাচ্ছে ।
--"চলে যা ।"
বলেই রাজা মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পরে কোনো শব্দ না পেয়ে রাজা পিছন ফিরে দেখল ওর মন চলে গেছে। ছেলেটার দুচোখে আর বারি ধরা আটকে রইলো না। ওবাদে ঝরে পড়ল।
--" আমি পেরেছি মন । আমি পেরেছি তোকে আঘাত করে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিতে। আমি পেরেছি ।।।।"
কাঁদতে কাঁদতে এই কথা গুলো নিজেকেই বলতে বলতে হাঁটু মুরে ধোপ করে রাস্তাতেই বসে গেলো রাজা। চিৎকার করে ভীষণ কাঁদছে ও।
--" আমাকে ক্ষমা করে দে মন। ক্ষমা করে দে। আমি তোর যোগ্য নই রে। তোকে এমনি যদি বলতাম তুই তো যেতিস না। তাই এই অভিনয়ে টা করতে হলো। আমি তোকে ছেড়ে কি করে বাঁচবো মন। কি করে???""
তখনই রাস্তার একটা চায়ের দোকানে একটা গান বেজে উঠলো। যেটা ওর পরিস্থিতির সঙ্গে একদম মিলে যায়।
" একা এই রাস্তাতে..
           হাজারো স্মৃতির সাথে।
ভেজা মন কান্না তে... আমায় ।।
ফেলে আসা দিন গুলো..
       হঠাৎ আমায় ছুঁলো।।
জমেছে পাতায ধুলো... মনের খাতায়।
ভাবি বসে তোকে... আর কেনো আমি যে ।
বেঁচে আছি শুধু, আমি কোনো মতে। তোকে নিয়ে দেখা, সব স্বপ্ন আজকে।
হারিয়ে গেছে কোথায়, বেনামী হওয়াতে।
কেনো তোকে ভালো যে বেসেছি,
শুধু খুঁজে গেছি। কোনো এক পথের এ যন্ত্রণায়।।
কেনো তোকে আমি, সব টা দিয়েছি।
কেনো যে চেয়েছি , তোকে নিয়ে জীবন সাজাবার ।।।""
গান টা কানে আসতে রাজা আর পারল না ওখানে থাকতে। উঠে দৌড়ালো যেদিকে তোড়া গেছে তার উল্টোদিকে।
রাজা তার মন কে দেওয়া কষ্ট টা সহ্য করতে পারেনি। দৌড়ে এসে একটা ১২ চাকার লড়ির সামনে দাড়িয়ে গেছিল। রক্তাত্ব দেহটা পুরো থেতলে গেছে। লড়ি টাও দাঁড়িয়ে পড়েছে। ছেলেটা স্পট ডেট।।।


শুরু করলাম নতুন গল্পঃ। সবে শুরু এখানেই শেষ নয়। পাশে থাকবেন প্লীজ সবাই।

649 Views
9 Likes
4 Comments
4.0 Rating
Rate this: