২/ বাবা
বছর দুয়েক হলো রেহানের বাবা ফাহিম চৌধুরী মারা গিয়েছেন। তবুও তার মা মৌচাক চৌধুরীর সাথে রেহানের জীবন খুব সুখেই কাটছিল।
কিন্তু রেহানের জীবনে দুঃখ নেমে আসে তার নয় বছর বয়সে। কারণ- তার মা তাদের অফিসের ম্যানেজার মি. অপূর্বকে বিয়ে করে তাদের বাসায় নিয়ে এসেছেন। যাতে রেহান একজন বাবা পায়।
মি. অপূর্ব সাথে তার দুই ছেলে আরজু ও আকাশ এসেছে তাদের বাড়িতে। মি. অপূর্বর স্ত্রী নাকি আকাশকে জন্ম দিতে গিয়ে দেহ ত্যাগ করেন।
তিন জনের সাথে পরিচিত হয়ে রেহান বুঝতে পারে মি. অপূর্ব আর আরজু খুব নিষ্ঠুর প্রকৃতির। তাকে ওরা একটুও সহ্য করতে পারছে না! কিন্তু আকাশের মন তার (রেহানের) মায়ের মত নরম ও সরল।
বিয়ের দু'দিন পর___
বাড়ির সবাই যখন ব্রেকফাস্ট খেতে বসেছে ঠিক তখনই মি. অপূর্ব বলে ওঠেন, অনেকদিন ধরে কারো বাইরে কোথাও যাওয়া হয় না। চলো আজ সবাই মিলে একটু শপিং করে আসি।
মি. অপূর্বর এই কথা শুনে সবাই নিজ নিজ ঘরে চলে গেল রেডি হওয়ার জন্য। সবার মত রেহানও রেডি হয়ে নিচ তলায় ফিরে এলে মি. অপূর্ব রেহানকে উদ্দেশ্য করে বললেন, রেহান তোমায় আমাদের সাথে যেতে হবে না। বাড়ির সবাই চলে গেলে বাড়িতে কে থাকবে!
রেহান করুন স্বরে বলল, কেন? বাড়িতে তো রোজা আন্টি, পারভীন আন্টি আছে। আর বাইরেও দুজন দারোয়ান আছে।
রেহানের এমন কথা শুনে হঠাৎ আরজু বলে উঠলো, বাইরের লোককে বিশ্বাস করা যায় না বাবা! তুমি রেহানকে বাড়িতেই থাকতে বলো।
এরপর মা আর আকাশের জেদের কারণে রেহানকে নিয়ে যাওয়া হলো শপিং করার জন্য।
সবার কেনাকাটা প্রায় শেষের দিকে। একমাত্র রেহানের কেনাকাটা এখনো হয়নি। মি. অপূর্ব বলেছিলেন, সবার কেনাকাটা শেষ হলে রেহানকে ভালো দেখে শপিং করাবেন।
সবার কেনাকাটা শেষ হলে মা মি. অপূর্বকে উদ্দেশ্য করে নরম গলায় বললেন, অপূর্ব, এবার তো রেহান কেউ কিছু কিনে দাও!
মায়ের কথা শুনে মি. অপূর্ব বললেন, মৌচাক, আমার কাছে আর মাত্র একশো টাকা আছে, এটা দিয়ে রেহানকে তো কিছু কিনে দেওয়া যাবে না! আমি বরং ওকে অন্য একদিন নিয়ে আসবো শপিং করানোর জন্য!
তাই আর রেহানের কিছু কেনা হলো না। দুপুর বেলা বাড়িতে ফিরে গিয়ে সবাই নিজেদের জামা-কাপড়গুলো নেড়েচেড়ে দেখতে লাগলো। তা দেখে রেহান অভিমান করে ছাদে চলে গেল। আর কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো, বাবা, কেন তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে! আজ তুমি নেই বলে আমায় কত অবহেলা সইতে হচ্ছে! তুমি যদি আজ আমার কাছে থাকতে তাহলে কি আমায় এত কষ্ট পেতে হতো! ফিরে এসো বাবা, প্লিজ তুমি আবার আমার কাছে ফিরে এসো!
অভিমান করে বেশ অনেকক্ষণ ছাদে বসে থাকার পর বিকেলে আবার নিচে নেমে এলো রেহান। ফিরে এসে সে দেখলো, ভাত শেষ হয়ে গেছে। শুধু দু-এক মুঠো ভাত দেখা যাচ্ছে ভাতের বাটিতে। আর একটা ছোট বাটিতে রয়েছে সামান্য একটু আলুর ভাজি। কষ্ট করে সেগুলোই খেয়ে নিজের রুমে চলে গেল রেহান।
সন্ধ্যায় রেহানের খুব খিদে পেল। তাই সে তার মায়ের কাছে একটি একশো টাকার নোট নিলো বাইরে গিয়ে কিছু খাবে বলে। টাকাটা নিয়ে যখনি রেহান বাড়ি থেকে বের হতে যাবে মি. অপূর্ব কোত্থেকে এসে একটা বেত দিয়ে রেহান কে মারতে লাগলেন। মৌচাক চৌধুরী ছুটে এসে মি. অপূর্বর থেকে রেহানকে ছাড়িয়ে কোমল স্বরেই বললেন, কি হয়েছে ওকে এভাবে মারছো কেন?
মি. অপূর্ব বললেন, মারব না তো কি করবো তোমার ছেলেকে! পড়ালেখা ছেড়ে সন্ধ্যাবেলা কি এসব, "আড্ডা" এই বয়সে বন্ধুদের সাথে আড্ডা, টাকা কি গাছের পাতা নাকি! তুমি জানো না মৌচাক, ও প্রতিদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়!
এ কথা শুনে মৌচাক চৌধুরী হালকা একটু রেগে গিয়ে বললেন, এই শোনো, আমি আমার ছেলেকে খুব ভালো করেই চিনি! আমার ছেলে কখনোই বন্ধুদের সাথে সন্ধ্যাবেলা আড্ডা দিতে যায় না, আড্ডা দিতে তো যায় তোমার বড় ছেলে আরজু।
মায়ের কথাগুলো শুনে মি. অপূর্ব আর কিছু না বলে রেগে-মেগে নিজের রুমের দিকে চলে গেলেন। রেহান হাতের একশো টাকার নোটটা ফ্লোরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে নিজের রুমের দিকে চলে গেল। সে এত কষ্ট আর না সইতে পেরে মৃত্যুর সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল।
তাই সে ফ্যানের দড়ি বেঁধে ফাঁসি লাগার পরিকল্পনা শুরু করল। রেহান এত তাড়াহুড়োর মাঝে দরজাটা বন্ধ করতেই ভুলে গিয়েছিল। মি. অপূর্বর ছোট ছেলে আকাশ সেখান দিয়ে যাচ্ছিল হঠাৎ তার চোখে পড়ে রেহানের এই কান্ড। এবং সে দ্রুত গিয়ে মি. অপূর্ব এবং মৌচাক চৌধুরীকে এই কথা জানায়। এই কথা শুনে মি. অপূর্ব তো রেগে আগুন।
দুজনের দ্রুত ছুটতে লাগলেন রেহানের ঘরের দিকে। কিন্তু ওনারা রেহানের ঘরে এসে দেখেন রেহান ততক্ষণে তার কার্যসম্পন্ন করে ফেলেছে। এত কষ্ট না সইতে পেরে শেষ পর্যন্ত সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে বিদায় নিয়ে নিয়েছে।
"""এই ছোট্ট গল্পটাতে আমি বোঝাতে চাইলাম, আমরা যে বাবার কাছে এত আবদার করি, খরচ করার জন্য টাকা চাই! যখন উনি বলেন, বাবা/মা আমার কাছে তো এখন অত টাকা নেই তুই বরং পরে নিয়ে নিস আমার কাছ থেকে। কিন্তু আমরা কেউই তখন বাবার কথা শুনি না! আমরা বলি, যতক্ষণ পর্যন্ত টাকা না দেবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমি এখান থেকে নড়ছি না!
একবার সবাই রেহানের জীবনের দিকে চেয়ে দেখুন তো, যখন তার বাবা ছিল তার জীবনটা খুব সুখেই কাটছিলো, কিন্তু তার বাবা মারা যাওয়ার পর কি দশা হলো তার জীবনের!
তাই সবার প্রতি আমার অনুরোধ,, কেউ বাবাকে কষ্ট দেবেন না! বাবা না থাকলে কি হয় তাই বোঝাতে চাইলাম আপনাদের। আশা করি সকলে বুঝতে পেরেছেন।"""
ছোট্ট লেখকের ছোট গল্পের ঝুলি
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
101
Views
12
Likes
2
Comments
5.0
Rating