কিগো বুড়ি চুপ করলে কেন ? বলো গো তোমার ঔ মুখের ওই মিষ্টি হাসিটা দেখতে আমার অনেক অনেক ভালো লাগছে ।
অন্তরা : এত ঢং করবে না তো । ধারাও আগে হেসে নেই আমার খুব হাসি পাচ্ছে । তুমি যে কেমন করে পারো আমি বুঝতে পারি না । এগুলো আবার তুমি শোনার জন্য ব্যাকুল হয়ে যাচ্ছ । নিজের কান্ড কেউ নিজে এত শুনতে চায় আমি আগে জানতাম না ।
শোনো গো আমার সোনা বুড়া ,,, সবাই কিচেন রুমের দিকে আসতে লাগলো ,,কেউ নিয়ে আসছে হাতে লাঠি আর কারো হাতে জাড়ূ । আমার শাশুড়ি তো বলতে লাগছে আজকে যদি এই বিড়ালটা ধরতে পারি তাহলে মুখে কালি দিয়ে সারা মহল্লা ঘুরাবো । বিড়াল তুই আমার ঘরে চুরি করতে আসছিস দ্বারা আজকে তোর মজা আমি দেখাবো । এগুলো বলতে বলতে শাশুড়ি আসছে কিচেন রুমে, এসে দেখলো আমাদের এই কান্ড ।
সবাই একদম নিরব হয়ে আছে ,সবাই হা করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে । আমি তো কোন ভাবে নামতেই পারছি না এতটা উঁচু থেকে । আর তুমিও হা করে তাদের দিকে তাকিয়ে আছো ভয়ে নাকি লজ্জায় আমি এখনো বুঝতে পারিনি ।
সবাই এভাবেই তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে । আমার নানী শাশুড়ি ঠাস করে তখনই হেসে ফেলছে । আমার নানী শাশুড়ির হাসিতে বাড়ির যত আত্মীয়-স্বজন আছে সবাই হাসতে লাগছে । আমি তো লজ্জায় লাল হয়ে ওই উঁচু টেবিলের উপরেই বসে আছি ।
তুমি বললে তাদেরকে তেমন কিছু হয়নি বিড়াল আসছিল আমরা তাড়াতে আসছি । তোমার মুখে তো তখন আটা ভর্তি একদম সাদা ভূত হয়ে আছো । আটার ডিব্যা পরার সময় তোমার মুখেও লেগে গিয়েছিলাম ।
নানী শাশুড়ি বলল বিড়াল তারাতে আসছিস তাহলে তোর মুখে এত ময়দা লেগে আছে কিভাবে । বিড়াল কি তোর মুখে এসে ময়দা লাগিয়ে রেখে চলে গিয়েছে । এটা বলে আবারো বুড়ি হাসতে লাগছে । আমার শাশুড়ি তো লজ্জায় ওখান থেকে চলে গেল ।
জানো আমার শাশুড়ি অনেক ভালো মানুষ ছিল । কখনো আমাকে কোন বিষয় নিয়ে কথা শোনায়নি সব সময় মেয়ের মতো আগলে রাখছে । আমি যা বলছি এতে হ্যাঁ হ্যাঁ বলছে । আমার মা ছিল না কিন্তু আমার শাশুড়িকে পেয়ে আমার মায়ের অভাবটা আমি ভুলে গিয়েছিলাম । আচ্ছা আমি কি আমার শাশুড়ির মতো শাশুড়ি হতে পেরেছি ? বলোনা প্লিজ বুড়া ।
মাহিম : হ্যাঁ গো হ্যাঁ তুমি অনেক ভালো শাশুড়ি একজন । তোমার মতো একজন শাশুড়িকে পেয়ে ,, আমাদের পুত্রবধূরা ধন্য । আমার মায়ের মতোই তুমি তোমার পুএ বধুদেরকে ভালোবাসো ,,, এই কথা আর কেউ না জানলেও আমি ভালোভাবেই জানি । কিন্তু জানো গো আমার মা তোমার মত এত ভালো লক্ষী মেয়ে পুত্রবধূ হিসেবে পেয়েছিল । কিন্তু দুঃখের বিষয় তোমার পুত্রবধূরা তোমার মতো একদমই না ।
অন্তরা : আরে চুপ করো তুমি ,, বৌমারা শুনে ফেলবে তো । আমার পুত্রবধূরা অনেক অনেক অনেক ভালো । আমি দোয়া করি আমার পুত্রবধূরা যেন ভালো মানুষ হয়ে বাঁচতে পারে । আর আমাদেরকে বাবা মায়ের মতো আগলে রাখতে পারে । এমনভাবে আর কোনদিন বলবেনা বুঝছো গো আমার সোনা বুড়া ।
মাহিম : আচ্ছা আমার পুতুল বুড়ি আর কোনদিন বলব না। এখন আবার শুরু করো আমি তো শোনার জন্য বসে আছি ।
অন্তরা ; আচ্ছা গো বলছি । শাশুড়ি তো সেখান থেকে মুশকি একটি হাসি দিয়ে তার রুমে চলে গেলে । কিন্তু আর কেউ তো যায় না সবাই সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছে । আমার নানী শাশুড়ি বললো আগে আমার নাতি বউকে ওই উঁচু টেবিল থেকে নামা । আমার হাতে লাঠি দেখছিস, বুড়ি হতে পারি কিন্তু লাঠি এখনো ওঠাতে পারি মানুষের উপর । আমার নাতি বউটা কত কষ্টে বসে আছে । সোফার মধ্যে বসিয়ে রাখলে কি হতো । অন্তত্য তুলতুলের মধ্যে তো বসে থাকতে পারতো ।
এই কথা শুনে তুমি বললা,,, সত্যিই তো আমি তো একটা ভুল করে ফেলছি আমার এত সুন্দরী রুপুসী বউটা এত শক্ত টেবিলের মধ্যে বসে আছে । দাঁড়াও আমি তোমার কথা মতোই সোফার মধ্যে বসাচ্ছি । এই কথা বলার সাথে সাথেই তুমি আমাকে কোলে তুলে নিলে । আমি বারবার বলছি নামাও নামাও এগুলো কি করছো । সবাই তো দেখছে তোমার কি লজ্জা শরম লাগছে না । তুমি আমাকে ধমক দিয়ে বললা একদম চুপ করে আমার কোলে বসে থাকো । এই কথা বলে তুমি আমাকে সত্যি সত্যি সোফায় বসিয়ে রাখলে ।
আমি তখন মনে মনে ভাবলাম কোন পাগলের পাল্লায় আমি পড়লাম । আমার স্বামী কি পাগল ,,, শেষমেষ এই পাগলের সংসারে আমায় আসতে হবে সেটা যদি জানতাম আগে তাহলে বিয়েই বসতাম না ।
এখন আমি অনেক খুশি এ পাগল শুধু আমার পাগল ছিল এখনো আমারই পাগল একটি নারীর জন্য এর থেকে আর কি চাওয়া পাওয়া হতে পারে । আমার মিষ্টি মিষ্টি বুড়া । লাভ ইউ বুড়া ।
মাহিম : লাভ ইউ টু আমার সুন্দরী বুড়ি । হ্যাঁ সত্যি কথাই বলছো আমি তোমার পাগল ছিলাম এখনো আছি । আমি বিয়ে করার আগে থেকে আমার পরিকল্পনা ছিল আমি বিয়ে করে আমার বউকে কোনদিন ভালোবাসার অভাবটা বুঝতে দিব না । সব সময় তাকে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখবো ।
জানো বুড়ি আমার পাশের বাড়ির এক চাচা ছিল । সব সময় তার বউকে মারধর করতো কত কষ্টই না দিত আমার চাচীকে । এত কষ্ট সহ্য করতে না পেরে একদিন আমার চাচী আত্মহত্যা করে মারা যান । এটা দেখে আমি অনেক অনেক কান্না করছিলাম । মানুষ কিভাবে নিজের বউকে এভাবে এতটা কষ্ট দিতে পারে । একটু কি মানুষের মায়া দয়াও হয় না মানুষের প্রতি । যানো বুড়ি কিছু কিছু মানুষ আছে সেগুলো পশুর মতো ব্যবহার করে অপর মানুষের সাথে । আমার অনেক ইচ্ছে ছিল আমার বউকে সারা জীবন আমি একইভাবে ভালবেসে যাব । আজ আল্লাহর রহমতে এত বয়স হওয়ার শর্তেও আমি তোমাকে এতো ভালবাসতে পারছি । এতেই আলহামদুলিল্লাহ ।
এরপর আর একটু বলে শেষ দাও ।
অন্তরা : তোমার কথা শুনে আমার চোঁখ দিয়ে ঘরিয়ে ঘরিয়ে পানি পড়ছে । আমি এত ভাগ্যবতী নারী বারবার বললেও কোনভাবেই ফুরাবে না । তোমাকে পেয়ে আমি বলি আলহামদুলিল্লাহ । আমি অনেক অনেক খুশি । আচ্ছা আমাদের ভালবাসা এভাবেই থাকবে তো মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। আমার অনেক ভয় লাগে আমার মনে হয় তোমাকে হারিয়ে ফেলবো । এই ভয়টা আমার মনের মধ্যে সব সময় কাজ করে ।
মাহিম : আরে পাগলি একদিন না একদিন আমাদের আলাদা হতেই হবে । আর আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি মৃত্যু ছাড়া আমাদেরকে কেউ আলাদা করতে পারবে না । আমি তোমার সাথে সব সময় থাকতে চাই মৃত্যু হওয়ার আগ পর্যন্ত। আচ্ছা আরেকটু বলো না গো তোমার এই চোঁখের পানি আমি দেখতে পারছি না । আগের দিনের কথা একটু বল আর মুখে একটু হাসি আনো দেখবে আমার মনটা ভরে যাবে ।
অন্তরা : আচ্ছা গো সোনা বুড়া আমার ,,,।
আপনাদেরও কি ইচ্ছে আছে,, মাহিম আর অন্তরার আগের সব ভালবাসার কাহিনী শোনার জন্য ।
যদি আপনাদের জানার ইচ্ছা থাকে প্লিজ প্লিজ আমার পাশে থাকার অনুরোধ রইলো আপনাদেরকে । আমার গল্পটি স্টিকার দ্বারা সমর্থন করার অনুরোধ রইল । যদি আপনাদের কাছে সত্যি সত্যি আমার গল্পটি ভালো লেগে থাকে
চলবে,,,,,,,,,,,,
তুমি আছো তাই ( পর্ব ৬ )
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
177
Views
1
Likes
1
Comments
5.0
Rating