ভয়ানক জম্বি‌র‌ আক্রমণ (পর্ব 12)

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
পাপিয়া ‌ : প্রিয়া ভয়‌ পাসনা‌ তোকে আমরা এক্ষুনি  হসপিটালে নিয়ে যাব,,,

প্রিয়া ‌ : আমাকে সান্ত্বনা দিস না আমার বেশি টাইম নেই আমি জানি,,তাড়াতাড়ি আমাকে মেরে ফেল তা না হলে আমাকে এখান থেকে বাহিরে বের করে দে ,,

প্রিয়া বুঝতে পারলো কেউ তাকে মারতে পারবে না‌ ,,,,

নোবেল : এভাবে থাকলে‌ তো‌ আমাদের‌ই‌ জম্বি‌ হয়ে যেতে হবে ,, আমি বুঝতে পারছি তোমাদের বান্ধবী এরজন্য  তোমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে ,,,

প্রিয়া সুযোগ বুঝে স্কুল বিলিং এর‌ ভেতর থেকে দৌড়ে জম্বিদের ভীড়ে চলে গেল,,,,আর‌ প্রিয়া বাহিরে‌ যাওয়ার সময় বাহির‌ থেকে গেটটি‌  আটকিয়ে দিয়ে গিয়েছিল ,,,, গেটের ভেতর থেকে মিনা‌ , সাবরিনা,, পাপিয়া তারা সবাই চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে প্রিয়াকে‌ ডাকতে‌ লাগলো,,,,

পাপিয়া ‌ : প্রিয়া তাড়াতাড়ি ভেতরে আস ,, ওখানে বিপদ আছে,,, তোর কিছু হবে না ,, আধা ঘন্টা হয়ে গিয়েছে এখনো কিছু হয়নি তোর‌ ,,, এসে পর‌ । সবাই কান্নাকাটি করতে লাগলো প্রিয়ার জন্য । কিন্তু প্রিয়া কারো কথা শুনছে না স্কুলের মাঠের মধ্যে জম্বিদের মাঝখানে বসে বসে তার প্রিয় জনের কথা চিন্তা করতে লাগছে কারণ সে ভালোভাবে বুঝতে পারছে আর কিছুক্ষণের মধ্যে তার মাথা থেকে আবেগ ,ভালোবাসা ,অনুভূতি সবকিছু চলে যাবে ।

জম্বিরা প্রিয়ার আশপাশ দিয়ে ঘুরাঘুরি করছে ,, কিন্তু অবাক করা বিষয় কোন জম্বিরা আর তাকে আক্রমণ করছে না । প্রিয়া মারা যাওয়ার আগে কিছু একটা করতে চায় এর জন্য সেখানে রাখা তলোয়ারটি‌ হাতে নিয়ে গ্যাচাং ঘ্যাচাং করে ৫০ জন জম্বির মাথা থেকে গলা আলাদা করে ফেললো ,,,,

এরপর নিজেও আস্তে আস্তে জম্বি হয়ে গেল ,, প্রিয়াও এখন সাবরিনার মতো জম্বি হয়ে নতুন শিকারের জন্য ঘুরা ঘুরি করছে ।

ছোট মনি এই দৃশ্যটা দেখে কান্না করতে শুরু করে দিল ,,

নোবেল ‌ : তোমাদের জন্য আমার অনেক কষ্ট লাগছে ,, কি বলে তোমাদেরকে সান্ত্বনা দিব সেই ভাষা আমি খুজে পাচ্ছি না ,, আমি এই মেলাতে আমার ভাইকে নিয়ে এসেছিলাম আমার ভাইয়ের বয়স মাত্র ১৫ বছর ,, এখন আমার ভাইও জম্বি‌ হয়ে গিয়েছে । এখানে যত জম্বি‌ দেখছো‌ যেগুলো ঘুরাঘুরি করছে সবগুলাই কারো না কারো আপনজন ছিল । আমার কানে এখনো আমার ভাইয়ের কান্নার শব্দ ভেসে ওঠে ,,,

আমার ভাইকে আমি এক জায়গায় দাড়‌ করিয়ে রেখে ,, ৫ মিনিটের জন্য এক জায়গায় গিয়েছিলাম কারণ আমি এক দোকানে ভুলে আমার মোবাইলটি রেখে এসেছিলাম সেই মোবাইলটি নিতে গিয়েছিলাম ,,, কিন্তু ফিরে এসে দেখি আমার ভাই মাটিতে পড়ে পড়ে চিৎকার করছে ,, এতক্ষণে আমার ভাই‌ জম্বির কামড় খেয়ে ছিল সেই ব্যথায় উঠে আর দাঁড়াতে পারল না ,,, সাথে সাথে আমার ভাইকে আমি আমার কোলে তুলে নেই এরপর দৌড়ে হসপিটালে যাওয়ার উদ্দেশ্যে যেতে থাকি, কিন্তু গেটের সামনে যাওয়ার আগেই আমার ভাই আমার কোলেই জম্বিতে পরিণত হয়ে যায় ।

আমাকে আমার ছোট ভাই অনেক ভালোবাসতো সেই ভাই জম্বি‌ হ‌ওয়ার‌ পর আমাকে আক্রমণ করার জন্য উঠে পড়ে লাগে‌ ,,

তবু আমার ভাইকে আমি ছাড়িনি তার মুখ শক্ত করে ধরে তাকে নিয়ে এগিয়ে গিয়েছি । কিন্তু এই স্কুল গেটের কেউ আমার এই আক্রান্ত ভাইকে নিয়ে বাহিরে যেতে দেয়নি ,, ওকে রেখে আমাকে যেতে বলল কিন্তু আমি আমার ভাইকে রেখে কোথাও যাবো না এই সিদ্ধান্ত নিলাম । আমি তখন জানতাম না আমার ভাইযে আর কখনো সুস্থ হবে না এটা । আমি ওইখানেই আমার ভাইয়ের মুখ সাপটে ধরে হাত পা বেঁধে তাকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম ,, একে একে সব সুস্থ মানুষ আমার চোখের সামন দিয়ে চলে গেল কিন্তু আমি আমার ভাইয়ের মায়া কোনভাবে ত্যাগ করতে পারলাম না ।

যখন গেটের বাইরে তালা দেবে তখন তারা আমাকে বারবার বলল বেরিয়ে যেতে কিন্তু আমি  বাহিরে চলে না‌ যেয়ে বরং উল্টো পথ ধরে এই স্কুল বিল্ডিং এ এসে পড়লাম । আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি কখনো লুকিয়ে থাকবো না এই জম্বির ভয়ে । যেভাবেই হোক ওদের সাথে মোকাবেলা করব এবং এই ভাইরাসের কোন ঔষধ আছে কিনা বা বাঁচার উপায় সবকিছু আমি বের করব । আমি শুধু আমার মত সাহসী কিছু মানুষকে খুঁজছি যে আমার সাথে আমার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে ।

কিন্তু পাপিয়া তোমার মত এমন মেয়ে এত সাহসী মেয়ে আমি আগে কখনো দেখিনি । তোমরা এখানে আটকে পড়ার পর থেকে আমি তোমাদের উপর নজর রেখে গিয়েছি ।

পাপিয়া ‌ : আমি তোমার সাথে থাকতে চাই আমিও কখনো মুখ লুকিয়ে ঘরের ভেতরে আটকে থাকতে পারবো না ,,

সবাই যদি এভাবে শুধু নিজেকেই রক্ষা করার জন্য উঠে পড়ে লেগে থাকে তাহলে আমাদের এই পৃথিবীটা জম্বি ভাইরাসের আক্রমণে সবাই একে একে শেষ হয়ে যাবে ।

আমি তোমার সাথে এই যুদ্ধে থাকতে চাই ‌।

মিনা ‌ : আমিও তোমাদের সাথে থাকতে চাই ,, আমিও বেইমানের মত মুখ লুকিয়ে থাকতে চাই না ।

সাবরিনা ‌ : আমিও থাকব ,,, দরকার হলে নিজের জীবন দিয়ে হলেও এই জম্বিদের‌ শেষ দেখে ছাড়বো । জানিনা কোথা থেকে হঠাৎ করে এই ব‌ই মেলাতে জম্বি ভাইরাস আসলো ? আর কেই বা সর্বপ্রথম এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল ? এই ভাইরাসের ওষুধ কিভাবে হবে এগুলো কিছুই জানিনা ,,, কিন্তু জানি মানুষ চাইলে সব পারে আমাদেরকে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে ।

পাপিয়া ‌ : একদম ঠিক বলছিস । চল আমরা হাত মিলাই আর প্রতিজ্ঞা করি নিজের জীবন দিয়ে হলেও আমরা এই ভাইরাসের শেষ প্রান্তে যেয়ে ছাড়বো ‌।

এভাবে পাপিয়া ,, নোবেল,, মিনা আর সাবরিনা তারা চারজন প্রতিজ্ঞা করলো ।

মনি‌ : আন্টি আমিও তোমাদের সাথে থাকবো ,,,,

পাপিয়া ‌ : না সোনা তুমি ছোট মানুষ তোমাকে তোমার পরিবারের কাছে আমরা দিয়ে আসবো । তুমি বলছো এতেই আমাদের অনেক ভালো লাগলো ।

নোবেল ‌ : উপরতলায় চলো তোমাদেরকে একটি জিনিস দেখাবো ,,,,

পাপিয়া ‌ : কি দেখাবে ,,,

নোবেল ‌ : আগে চলো এরপর দেখাচ্ছি ,,,

পাপিয়া মনিকে কোলে তুলে নিল ,, এরপর উপর তলায় যেয়ে দেখতে পেল ,,, নোবেল তার ছোট ভাইকে‌ চেয়ারের‌ সাথে বেঁধে রেখেছে ,,,,জম্বিটি‌ চেয়ারের মধ্যে সটফট‌ করছে‌ ছুটার‌ জন্য ‌ । আর তাদেরকে খাওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে ।

নোবেল ‌ : এটাই আমার ভাই ,, আমি এখনো তার মায়া ছাড়তে পারিনি এর জন্য এভাবে বেঁধে রেখেছি । কারণ এখন যদি এখান থেকে ছেড়ে দেই তাহলে আমাকেই খেয়ে ফেলবে , না হয়‌ তোমাদেরকে । আমরা বাড়ি থেকে যখন মেলার উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলাম , তখন মা‌ বারবার বলেছিল‌ তোর ভাইকে দেখে রাখিস কখনো হাত‌ ছেড়ে দিস না কিন্তু ,,, আমি আমার মাকে কথা দিয়েছিলাম আমি শক্ত করে ধরে রাখবো ভাইকে কখনো ছেড়ে দেবো না । কিন্তু আমি আমার মায়ের কথা রাখতে পারলাম না । আমার কাছে এখনো মোবাইল আছে আমার মা ফোন দিয়েছিল ,,,

আমি বলছি ভালো আছি ভাইও ভালো আছে ,, যদি শুনে আমার মা, আমার ছোট ভাই এভাবে জম্বি‌ হয়ে গিয়েছে তাহলে আমার মা স্টোকও করতে পারে । আমার ওই ছোট ভাই পেটে থাকার পর আমার বাবা মারা যায় আমার মা আমাদেরকে অনেক কষ্টে লালন পালন করেছে তবুও আমার ভাইকে কষ্ট পেতে দেয়নি মা । এগুলো বলে নোবেল কান্না করা শুরু করে দিল ।

আজকে এই পর্যন্তই থাক ❤️❤️

চলবে,,,,,,,

199 Views
5 Likes
1 Comments
5.0 Rating
Rate this: