"রূপসি বালিকার ছলাকলা" পর্ব-০১

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
স্বদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অত্যন্ত আদর্শবান ও উচ্চবিত্ত এমনি সম্ভ্রান্ত এক ধার্মিক পরিবারের মেজো কন্যা তাঁর নিজ আলয়ের নৈকট্যে স্থানীয় জনপ্রিয় একটি পাঠশালায় অধ্যয়নের জন্য প্রাত্যহিক নির্দিষ্ট পথ দিয়ে গমনাগমন কালে ছোট্ট একখানা বিপণির দিকে মুহুর্মুহু তাকিয়ে থাকেন। মেয়েটির দেহের অঙ্গভঙ্গিমা আর মায়াবী মুখের গোলাপি ঠোঁট ও সাদা-কালো সংমিশ্রিত চোখের মনভোলানো চাহনি প্রদর্শন হলেই যেনো নবযৌবনের জোয়ারের লক্ষণ উপলব্ধি হতো। সুঠাম দেহের সেই রূপসি বালিকাটির বয়স তেরো কি'বা চৌদ্দ এর মাঝামাঝি হবে বটে। বিপণির অভ্যন্তরে বসে থাকা বিক্রেতা সহ একাধিক ক্রেতাও প্রতিদিন সেই কাণ্ড দেখে যে যাঁর মতন করে ভাবনায় পড়ে যায়। প্রতিনিয়ত প্রতিমুহূর্তে এমন প্রবল চাহনি আর মতিগতি দেখে বিক্রেতা সহ আরো দু-এক জন তরুণ বয়সী ক্রেতাও ধীরে ধীরে সেই বালিকার প্রতি আসক্ত হতে আরম্ভ করেন। সেই সাথে ক্রেতাদের একজন প্রায়শ বিপণিতে ছুটে যাওয়া ও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অবধি বসে থাকা এক স্বপ্নবাজ যুবকও এরূপ চালচলন দেখে নীরবে নিজের অজান্তেই মেয়েটিকে মন দিয়ে বসেন। বালিকাটি ঠিক কাকে পছন্দ করে কিংবা কার প্রতি তাঁর ভালো লাগা সৃষ্টি হয়েছে তা কউ জানতো না। বিক্রেতা সহ ক্রেতাদের সেই দু-এক জন নিজেদের মনে মনে নীরবে মেয়েটির প্রায় এরূপ চালচলন ও হাবভাব দেখে পছন্দ করতে থাকেন। বিপণিতে সারাক্ষণ বসে থাকা সেই স্বপবাজ ছেলেটির দিকে বালিকাটি বারবার চেয়ে চেয়ে থাকতেন বলে অনায়াসে সেই ছেলেটাও বালিকাটিকে সবার চেয়ে বেশি পছন্দ করতে শুরু করেন।

বালিকাটির জন্য সেই স্বপবাজ ছেলেটির বুকে পছন্দ হওয়া থেকে ভালো লাগা এবং ভালো লাগা থেকে নিজের অজান্তেই ভালোবাসা সৃষ্ট হয়ে যায়। ক্রেতাদের একজন ও বিক্রেতা-সহ এই দু'জনেই মেয়েটিকে দেখা মাত্র নিচু আওয়াজে বাজে ও অশালীন মনোভাব নিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত কুদৃষ্টিতে বারংবার তাকিয়ে থাকে। এইসব স্বচক্ষে দেখে দোকানে সারাক্ষণ বসে থাকা ছেলেটি তৎক্ষনাৎ প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতে না পারলেও মনে মনে তাঁদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং আনমনে বালিকাটিকে স্মরণ করে তাঁর প্রেমনদীতে ডুবে থাকেন। মেয়েটিকে দেখা মাত্র তাঁর চেহেরা আর চোখের দিকে আপাতদৃষ্টিতে চেয়ে চেয়ে নিজে নিজেই সেই বালিকার প্রীতিতে এক তরফা হাবুডুবু ভাবে মত্ত হয়ে পড়েন। এভাবে প্রায় মাস দু-এক পেরিয়ে যায়। দোকানদার ও ক্রেতাদের একজন ধীরে ধীরে মেয়েটির দিক থেকে নিজেদের কুনজর তুলে ফেলেন এবং কভু মেয়েটিকে বিদ্যালয় থেকে আসা-যাওয়ার পথে দেখলে নীরবে খানিক চেয়ে পরে দৃষ্টি সংযত করে নেন। বিপণিতে সব সময় ছুটে যাওয়া সেই স্বপ্নবাজ ছেলেটা মেয়েটির প্রতি দিন দিন অধিকতর আকৃষ্ট হতে থাকেন। সেই ছেলেটা মেয়েটিকে একপলক প্রদর্শন করার জন্য সাত সকালে ঘুম থেকে ওঠে মেয়েটির বাড়ির পাশের পথে গিয়ে খালি পেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতেন। যখন যথাযথ সময়ে মেয়েটি তাঁর বাড়ি থেকে বের হন, তখন বের হওয়া মাত্রই ছেলেটিকে দেখতে পান এবং ছেলেটিও সেই রকম এক অবস্থানে নীরবে বোকার মতো একটানা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চেয়ে থাকেন।

ধীরে ধীরে মেয়েটিও পাঠশালায় গমনাগমনের ক্ষণে সেই স্বপ্নবাজ ছেলেটার দিকে বারবার তাকিয়ে গন্তব্যে ছুটে যেতেন। ছেলেটি তাঁর সমস্ত কাজ কাম এড়িয়ে খেয়ে না খেয়ে এতিমের মতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা দিনের দুই তৃতীয়াংশ সময় নষ্ট করে একপলক দেখার জন্য মেয়েটির বাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে থাকতেন। মেয়েটি যখনই পাঠশালার আড়াল থেকে বেরিয়ে নির্দিষ্ট পথ পেরিয়ে হেঁটে হেঁটে চলে বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছাতে থাকেন, তখনই ছেলেটার বুকে একধরনের সংকেত গোচর হয় যে, তাঁর মানসিক প্রশান্তির সুখ পাখি যেনো সম্মুখ দিয়ে চলে যায়। মেয়েটিকে সেই ছেলেটা নীরবে এতটাই ভালোবেসে ফেলেন যে, যার কারণে ছেলেটি ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করতে পারে না এবং নিয়মিত ঘুমাতে পারেন না। রাত গভীর হতে না হতেই ছেলেটা মেয়েটিকে নিয়ে প্রকৃতির সাথে স্বপ্নের রাজ্যে চলে গিয়ে কতো আশা-আকাঙ্ক্ষা আর ইচ্ছা বুকের ভেতরে লালন করতে আরম্ভ করেন তা যেনো চলচ্চিত্রের দৃশ্যকেও হার মানবে। দুজনের ভালোবাসা পরিপূর্ণতা পেলেই হয়তো ইতিহাসের পাতায় গেঁথে রাখার মতো এক অমর কাহিনী হতো। প্রতিদিন এভাবে পরস্পর কোনো কথাবার্তা ছাড়াই প্রায় মাস তিন এক চলে যায়। এবার ছেলেটি মেয়েটির সাথে সরাসরি কথা বলার সুযোগ খুঁজতে থাকেন। কিন্তু নিয়তি যে সঙ্গ দিবে না তা হয়তো ছেলেটা জানতেন না। ছেলেটা প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে মেয়েটিকে নিজের চোখের ভাষায় হয়তো বুঝাতে পেরেছেন যে, সে তাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছেন। মেয়েটিও ছেলেটার এরূপ ভঙ্গি দেখে নিশ্চয়ই ভেতরে ভেতরে বুঝে গেছেন। কিন্তু...


বিঃদ্রঃ উপরিউক্ত গল্পটা সত্য ঘটনা অবলম্বনে বাস্তব জীবনে থেকে নেওয়া এক দৃষ্টান্ত কাহিনী। কাহিনীর অবশিষ্টাংশ পরবর্তী পর্বে প্রকাশিত হবে। সাথেই থাকুন ধন্যবাদ!
1.01K Views
15 Likes
3 Comments
4.2 Rating
Rate this: