তোমার অপেক্ষায় (পর্ব ১৪)

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
#তোমার_অপেক্ষায়
#পর্ব ১৪
পূর্ণতা নানুবাড়ি বাড়ি এসেছে একদিন হলো।পূর্ণতার নানা এই গ্রামের চেয়ারম্যান।পূর্ণতার নানার নাম দেলোয়ার হোসেন। দেলোয়ার হোসেন এর দুই ছেলে সেলিম,, মোরশেদ আর এক মেয়ে মাহমুদা।দেলোয়ার হোসেন রাজনিতী করলেও তার দুই ছেলে রাজনীতির ধারে কাছেও নেই।দেলোয়ার হোসেন বুড়ো হয়ে গেলেও এখনো বেশ দাপট তার পাশাপাশি বেশ রাগিও তিনি বাড়িতে তার মুখের উপর কেও কথা বলার সাহস করে না। গ্রামেও বেশ নাম ডাক আছে তার।দেলোয়ার হোসেন এর স্ত্রী হেনা বেগম,,আজ বেশ কিছুদিন ধরে তিনি অসুস্থ।তাইতো পূর্ণতাকে দেখার জন্য সিমন কে পাঠিয়েছে পূর্ণতাকে আনার জন্য। সিমন সেলিম এর বড় ছেলে,, সেলিম এর দুই ছেলে সিমন আর সিফাত।সিমন পড়াশোনা শেষ বর্তমানে সে বাবার সাথে ব্যাবসা সামলান আর সিফাত এবার নবম শ্রেণিতে।মোরশেদ এর এক ছেলে নাম শান্ত। শান্ত বয়স সবে দুই।মোট কথা তাদের পরিবারে কন্যা সন্তান নেই বললেই চলে।তাইতো হেনা বেগম তার তার একমাত্র নাতনি পূর্ণতাকে চোখে হারায়।দেলোয়ার হোসেন ও পূর্ণতাকে অনেক স্নেহ করেন।পূর্ণতার মামা মামিও পূর্ণতাকে বেশ পছন্দ করেন।তার পরেও পূর্ণতা এখানে আসতে চায় না।শুধু মাএ নানা-নানির কারনেই আসা হয়।
হেনা বেগম সেই কখন থেকে কথা বলেই যাচ্ছে আর পূর্ণতা নিজের চুল নাড়াচাড়া করছে আর কিছু ভাবছে।
_কীরে বুবু তুই কী ভাবছিস?আমার কথা বুঝি তোর পছন্দ হচ্ছে না??হেনা বেগম এর কথায় পূর্ণতা চেয়ার ছেরে হেনা বেগম এর পাশে গিয়ে বসলো__হেনা বেগম এর হাত নিজের হাতে নিয়ে বললো_
_এটা তুমি কী বললা নানু?তোমার কথা আমার পছন্দ হবে না কেন??নানু?পূর্ণতার ডাকে হেনা বেগম বললো_
_বল।
_তোমাকে আজকে কিছু প্রশ্ন করবো তুমি সত্যিই সত্যিই উত্তর দিবা ঠিকআছে??পূর্ণতার কথায় হেনা বেগম বললো_
_ঠিক আছে বলবো।হেনা বেগম এর সম্মতি পেয়ে পূর্ণতা বলতে লাগলো_
_আমার দাদুর সাথে নানুভাই কেনো কথা বলে না?আমি ছোট থেকে একবারও দেখিনি নানুভাইকে আমাদের বাসায় আসতে আর না দাদুকে।মাও এই বাসায় বেশি আসে না আর আসলেও নানুভাই কথা বলে না।নিজের মেয়ের সাথে কেও কথা না বলে থাকতে পারে?বলো?
_পূর্ণতার কথা শুনে হেনা বেগম কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন।তারপর ধীরেসুস্থে জবাব দিলেন_
_এইসব ব্যাপার নিয়ে আমি এখন কথা বলতে চাই না পূর্ণতা।পুরোনো কথা এখন আর মনে করতে চাই না।যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে।এই বলে তিনি কিছুক্ষন চুপ থেকে আবার বললেন_তোর এইসব কথা শোনার এত আগ্রহ থাকলে তুই মাহমুদা কেই জিজ্ঞেস করিস।পূর্ণতা একটা দ্বীর্ঘশ্বাস ছেরে বললো_
_আচ্ছা ঠিক আছে।হেনা বেগম পূর্ণতার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন _
_তোর এসব ভাবতে হবে না।ওদের ব্যাপার ওরা বুঝবে।হেনা বেগম বিছানা থেকে নেমে আলমারী খুলে ওখান থেকে একটা বক্স বের করে পূর্ণতার হাতে দিয়ে বললো_
_এটা তোর জন্য বানিয়েছিলাম খুলে দেখ-কেমন হয়েছে?পূর্ণতা বক্সটা খুলে দেখলো একটা চকচকে সোনার চেইন।চেইন টা হাতে নিয়ে দেখতে দেখতে বললো_
_এসব এর কী দরকার ছিলো নানু?হেনা বেগম চেইন টা নিয়ে পূর্ণতাকে পরিয়ে দিতে দিতে বললো_
_দরকার ছিলো।এটা আমার সৃতি হিসেবে রেখে দিবি।পূর্ণতা ঘুরে হেনা বেগম কে জড়িয়ে ধরলো, হেনা বেগম ও পূর্ণতার পিঠে হাত বুলিয়ে দিলেন।
____________________________________________
ফায়াদ মাএই হাপিটাল থেকে বাড়ি ফিরলো।তার এখন ভীষণ ক্লান্ত লাগছে।অনিক নাইম আকাশ সেই কখনএসে বসে আছে ফায়াদের জন্য। ফায়াদ ওদের দেখে সিড়ি ডিঙ্গিয়ে উপরে উঠতে লাগলো।আকাশ বসা থেকে উঠে ফায়াদের উদ্দেশ্য বলতে লাগলো_
_আমাদের কী মানুষ মনে হয় না তোর?দেখেও না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছিস।ফায়াদ ঘার ঘুরিয়ে জবাব দিলো_
_ফ্রেশ হয়ে আসি।ভীষণ ক্লান্ত লাগছে,, তোরা বস।আকাশ আর কিছু না বলে বসে পরলো।সুরাইয়া বেগম দেখলো তার ছেলের ক্লান্ত মুখশ্রীটা।সারাদিন কত পরিশ্রম করে ছেলেটা।
ফায়াদ ওয়াশরুম থেকে মাত্রই ফ্রেশ হয়ে বের হলো।টিশার্ট টা গায়ে জড়াতে জড়াতেই সুরাইয়া বেগম এসে হাজির হাতে তার লেবুর শরবত এর গ্লাস।সুরাইয়া বেগম ফায়াদের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো_
_নে শরবত টা খেয়েনে ক্লান্তি দুর হবে।ফায়াদও বাধ্য ছেলের মতো খেয়ে নিলো।সুরাইয়া বেগম ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন_
_আর কতদিন এমন একা থাকবি?বলি তোর বউ দেখে আমি মরতে পারবোতো?মায়ের কথায় ফায়াদ ভ্র কুচকে বললো_
_এসব মরা টরার কথা মুখ দিয়ে আনবা নাতো।সময় হলে বিয়ে করবো।ছেলের কথায় সুরাইয়া বেগম চোখ পিট পিট করে বললো_
_সেই সময় কবে আসবে?ফায়াদ হাত দিয়ে চুল ঝারতে ঝারতে বললো_
_খুব শিঘ্রয়ই।
*******************************************
_এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?ফায়াদের কথায় নাইম বললে_
_তুই পূর্ণতাকে পছন্দ করিস সেটা আগে বললি না কেন?ওখানে থাকতে বললে আমরা কিছু একটা করতে পারতাম। নাইমের কথায় অনিক আকাশ বললো _
_হ্যা ঠিকিই তো...আর এদিকে নিধি ফারিনরা ফায়াদের দিকে চেয়ে আছে ফায়াদের উত্তর এর আসায়।ফায়াদ সোফায় গা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে বললো_
_তোদের কিছু করতে হবে না যা করার আমি করবো।আর তাছারা পূর্ণতা এখন ছোট আমি ইচ্ছে করেই এসবে জড়াই নেই। বাকি রইলো পূর্ণতার বিয়ের কথা... পূর্ণতার সপ্ন আইনজীবী হওয়া তাই মামা এখন ওকে বিয়ে দিবে না পড়াবে।
ফায়াদের কথা শুনে নিধি বললো_
_তুমি আসলেই একটা মাথা মোটা ভাইয়া।নিধির কথা শুনে ফায়াদ সোজা হয়ে বসলো।নিধি এবার বলতে লাগলো_
_তুমি এত দিনের আসায় থাকবা নাকি??আর পূর্ণতাও এতদিন তোমার আসায় থাকবে?এই এত দিনে যদি পূর্ণতার কাওকে পছন্দ হয়ে যায়?তখন তুমি কী করবা?সিনেমার মতো জোর করে বিয়ে করবা নাকি?ফায়াদ এবার ভাবনায় পরে গেলো সত্যিইতো।আকাশ বললো_
_এখন ভাব তুই ওর সাথে কিভাবে দেখা করবি?আর কিভাবে ওকে রাজি করাবি?নাহলে পাখি উড়াল দিবে।ফায়াদ এবার একটু নড়েচড়ে বসলো।কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বললো_
_দেখি কী করা যায়।ফারিনের তো খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে।পূর্ণতাকে তার অনেক পছন্দ। আর এখনতো তার ভাইয়ের বউ হবে।
____________________________________________
খাবার টেবিলে এত এত খাবার দেখে পূর্ণতা তার বড় মামিকে জিজ্ঞেস করলে_
_মামি আজকে কেও আসবে নাকি?শিউলি বললো_
_নাহ তো কেনো?
_তাহলে এত এত খাবার কে খাবে?পূর্ণতার কথা শুনে শিউলি হেসে বললো_
_তুমিকি এই বাড়িতে প্রতিদিন আসো নাকি?বছরে একবার দুইবারই তো আসো।তার জন্যেই এত আয়োজন।পূর্ণতা অবাক হয়ে বললো_
_তাই বলে এত??কবিতা রান্না ঘর থেকে আসতে আসতে বললো_
_কই এত? ছোট মামির কথা শুনে ফোস করে শ্বাস টানে। এ আর নতুন কী?
নানা-নানী,,দুই মামা ও মামাতো ভাইয়ের সাথে খেতে বসেছে পূর্ণতা।টুকটাক কথা বলছে আর খাচ্ছে।
_তুমিতো আমাদের ভুলেই গিয়েছো নানুভাই।আমাদের তো আপনই মনে করো না...নিজের নানার মুখে এমন কথা শুনে পূর্ণতা বললো_
_তুমি ভুল বুঝো না নানুভাই।পড়াশোনার চাপে কোথাও যাওয়া হয় না।তোমরাও তো একটিবার আমাকে দেখতে যাও না।এবার কিন্তু তোমরা সবাই যাবা।পূর্ণতার কথা শুনে দেলোয়ার ছোট করে জবাব দিলো _
_হ্যা যাবো।কথা এড়ানোর জন্য দেলোয়ার হোসেন শিউলি কে বলে উঠলে_
_পূর্ণতার প্লেট খালিতো ওকে চিংড়ি মাছটা দাও।শশুরের আদেশ পেয়ে শিউলি তরিঘরি করে পূর্ণতার প্লেটে খাবার দিতে থাকে।
___________________________________________
জানালার পাশ ঘেসে বসে পূর্ণতা উপন্যাস পরছিলো।হঠাৎ পূর্ণতার ছোট মামি কবিতা এসে যানায়_তার চাচাতো ভাই আরাফ এসেছে।এই বলে তিনি ব্যাস্ত পায়ে চলে গেলেন।পূর্ণতা ভাবতে থাকে আরাফ ভাই এখানে আসবেন কেন?কী কাজ থাকতে পারে তার এখানে?

বসার ঘরের সামনে এসেই দেখে আরাফ দেলোয়ারের হোসেন এর সাথে কথা বলছে।পূর্ণতা এগিয়ে যায় তাদের সামনে।আরাফ খেয়াল করে পূর্ণতাকে।তারপর পূর্ণতার উদ্দেশ্য বলে_
_তোকে নিয়ে যেতে এসেছি।রেডি হয়ে নে।মূহুর্তেই পূর্ণতার মন খুশিতে নেচে উঠে ওর এমনিতেই এই বাসায় ভালো লাগে না।পূর্ণতা খুশি মনে চলে গেলো তৈরি হতে।দেলোয়ার হোসেন আরাফকে বলো_
_পূর্ণতা আরো কিছুদিন থাকতো।পরে এসে নিয়ে যেতে।আরাফ বললো_
_ওর পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে নানুভাই।ছুটি পেলে আবার আসবে।দেলোয়ার হোসেন আবার বললেন_
_তুমি এই প্রথম আসলে। আজকের দিনটা থেকে যাও।আরাফ হেসে জবাব দিলো_
_ আজকে না নানুভাই অন্য একদিন আবার আসবো ইনশাআল্লাহ।
.
.
.
.
চলবে...... 🦋
200 Views
1 Likes
0 Comments
0.0 Rating
Rate this: