আজ যে ঘটনাটা বলতে যাচ্ছি, সেটা আমার জীবনে ঘটে যাওয়া এক কালো অধ্যায়ের সাক্ষী। অবশ্য শুধু আমার জীবনের ঘটনা বললে ভুল বলা হবে। এটা শুধু আমার নয়, বরং আমাদের ৩ বন্ধুর জীবনে ঘটে যাওয়া এক অভিশপ্ত অতীত। যার স্মৃতিগুলো আজও এক অজানা ভয়ের পরশ লাগিয়ে যায়। আর আমরা কেউই আজও এই ঘটনাগুলোর কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পাই নি।
যাই হোক এবার মূল কথায় আসা যাক। আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, এটা তখনকার ঘটনা। আমি, অনির্বাণ আর সিদ্ধার্থ ছিলাম বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। আমাদের চিন্তা ধারা, পছন্দ-অপছন্দ প্রায় সবই একে অপরের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ থাকায় আমরা ছিলাম একে অপরের সব থেকে ভালো বন্ধু। এক কথায় বলতে গেলে আমরা কোনো কাজই একে অপরকে ছাড়া করতাম না; তা সে খাওয়া দাওয়া, পড়ালেখাই হোক বা কোথাও ঘুরতে যাওয়া। তো একবার ইয়ার ফাইনাল এক্সামের পর দীর্ঘকালীন লেখাপড়ার একঘেয়েমি কাটাতে আমরা ৩ বন্ধু মিলে একটা ভ্রমণের পরিকল্পনা করলাম। দিন, তারিখ ঠিক করে যাত্রার উদ্দেশ্যে সকলে মিলে পাড়ি জমালাম। ঠিক হলো ট্রেনে করেই যাত্রা উপভোগ করবো। যেই কথা সেই কাজ। টিকিট কেটে স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় বসে রইলাম। নির্ধারিত সময়ের প্রায় ২ঘণ্টা পর কাঙ্ক্ষিত ট্রেনের দর্শন পেলাম। অগত্যা সন্ধ্যা হয়ে গেল স্টেশনে বসেই। কী আর করার, উঠে পড়লাম ট্রেনে। দীর্ঘ পথের যাত্রা। যাত্রাটা যেন বোরিং না লাগে তাই ৩ বন্ধু মিলে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা শুরু করলাম। এক সময়ে কথা প্রসঙ্গে ভূত-প্রেতের অস্তিত্ব নিয়ে আলোচনা শুরু করলাম। যেহেতু আমরা বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র, তাই কেউই আমরা ভূতের অস্তিত্ব মানতে নারাজ। কারণ বিজ্ঞান মতে ভূত, প্রেতাত্মার কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।তবে অনির্বাণ নানা দৃষ্টান্ত দাঁড় করাতে চাইলো ভূতের অস্তিত্বের প্রমাণ দিতে। কিন্তু আমি আর সিদ্ধার্থ মোটেই সে যুক্তির দিকে কর্ণপাত করলাম না। এমতাবস্থায় হঠাৎ কোথা থেকে এক অদ্ভূত বৃদ্ধ আমাদের ট্রেনের কামরায় উঠে পড়লো। বৃদ্ধকে অদ্ভুত বলার অবশ্য কতগুলো কারণ ছিল। তাঁর পোশাক, তাঁর বাক্যালাপ এবং হঠাৎ করেই তাঁর উদয় হওয়া সবটাই কেমন যেন আকস্মিক একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়ালো। তো যাই হোক বৃদ্ধ আমাদের আলোচনার মধ্যে প্রবেশ করলেন এবং তিনি বললেন যে ভূতের অস্তিত্ব আছে। ভূত প্রেতাত্মা এসব শুধু মনের ভুল নয়। বিজ্ঞানের কাছে এর অস্তিত্বের কোনো ব্যাখ্যা না থাকলেও এটা বিজ্ঞান প্রমাণ করতে পারে নাই যে ভূত-প্রেত নেই। কারণ মাত্র কয়েকশ বছর আগেই বিজ্ঞান জানতে পারে যে পৃথিবী ছাড়াও আরও ৭ টি গ্রহ আছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে বিজ্ঞানের আবিষ্কারের পূর্বে ঐ গ্রহগুলোর অস্তিত্ব ছিল না।
বৃদ্ধের এই অকাট্য যুক্তি শুনে আমরা ৩ জনই চুপ করে রইলাম। ঠিক তখনই সিদ্ধার্থ বলে উঠলো, "দাদু,আপনি কি কখনো ভূত দেখেছেন?"
বৃদ্ধ একটু হেসে উত্তর দিলেন, " অবশ্যই দেখেছি। আর এখনও দেখছি"।
তখন আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, "এখনো দেখছি মানে?" আপনি এই ট্রেনের বগিতে কোথায় ভূত দেখতে পাচ্ছেন?" আপনি যদি দেখতেই পান ,তাহলে আমরা কেন দেখতে পাচ্ছি না?"
বৃদ্ধ খানিকক্ষণ আমাদের ৩ জনের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে যা বললেন তা শোনার জন্য আমরা কেউই কখনো প্রস্তুত ছিলাম না। সেই বৃদ্ধ বললেন , "তোমাদের ৩ জনের জীবনে খুব শীঘ্রই এমন কিছু ঘটতে যাচ্ছে যা ভূত-প্রেতাত্মার অস্তিত্ব সম্পর্কে তোমাদের সকলের ধারনাই পাল্টে দেবে। তবে এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। তোমরা সকলেই সাক্ষী থাকবে এক অপ্রত্যাশিত ঘটনার। আর ভেবো না এটা কোনো পাগলের প্রলাপ। এটা তোমাদের প্রত্যেকের ভবিতব্যে লেখা রয়েছে।"
এ কথা শুনে আমরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইলাম আর তখন হাজারো প্রশ্নের ঘুরপাক খেতে লাগলো। যখনই এই প্রশ্নের ভিড় কাটিয়ে ঐ বৃদ্ধকে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবো , তখনই দেখি ঐ চলন্ত বগিতে কোথাও বৃদ্ধ লোকটি আর নেই। এই অদ্ভুত ঘটনা দেখে আমরা ৩ জনেই বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। যেন কর্পূরের মতো উড়ে গেল বৃদ্ধ লোকটি। বাকি পথ আর কেউ কোনো কথা বলতে পারলাম না।
চলবে..................
অভিশপ্ত ভবিষ্যদ্বাণী
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
2.12K
Views
25
Likes
8
Comments
4.7
Rating