লিজা রাকিব কে বলল- ভাইয়া কম দামের ফোন আছে?
রাকিব:- আছে তো ১০০০/১২০০কেন?
লিজা:-আপনার ভাইর জন্য একটা ফোন লাগে। মানুষটা কখন কোথায় যায় আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না
রাকিব:-আচ্ছা তুমি চিন্তা করো না। আমি একটা ফোনের ব্যবস্থা করবো
সেন্টু কাজে যাবার সময় দোকানদার বলল- সেন্টু তোর ভাইয়ের একটা মোবাইল আছে নিয়ে যা।
সেন্টু মোবাইলটা হাতে নিয়ে রেখে দিয়ে বলল- আমার এক জায়গায় যেতে হবে। পড়ে নিয়ে যাবো।
সেন্টু আজকে একটা লোকের সাথে কথা বলতে হবে। কিছু টাকা লোন নিয়ে একটা দোকান দিবে। সেই জন্যই আজকে তারা আছে।
রাতে সেন্টু ঘরে আসলো মনে অনেক খুশি।টাকার ব্যবস্থা হয়ে গেছে তাই। কিন্তু ঘরে এসে দেখলো রিমা আর তার খালায় বসে আছে। লিজা শুয়ে কাতরাচ্ছে,
সেন্টু বলল- কি হয়েছে ?
রিমা বলল- লিজার হাত পা পুড়ে গেছে।
সেন্টু:- কিভাবে এমন হলো?
রিমা- রান্না করতে গিয়ে ভাতের হাঁড়ি গায়ে পড়েছে।
সেন্টু দেখলো অনেক জায়গায় পুড়ে ফোস্কা পড়ে গেছে। ব্যাথায় গায়ে জ্বর উঠে গেছে।
সেন্টু পাগলের মত ছটফট করতে করতে ছুটে গেল। গিয়ে ওষুধ নিয়ে আসলো
রিমা আর খালা চলে গেল..,
সেন্টু বলল-
তুমি না পাড়লে কি দরকার ছিল রান্না করার?
ভাবীকে বলতে? তুমি এতো বোকা কেন? এই টুকু কাজ পার না?
না হয় আমি এসে রান্না করতাম।নাও ভাত খেয়ে ঔষুধ খেয়ে নাও ।
লিজা শুধু সেন্টুর মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। কিছু বলছে না,ভাবছে লোকটা ভালো না বাসলেও আমার কত খেয়াল রাখে।
সেন্টু বলল- হা করে তাকিয়ে কি দেখছো? ভাত খেয়ে ঔষুধ খাও
লিজা:-না,আমি ঔষুধ খাবো না।
যে আমাকে ভালোবাসে না তার ঔষুধ কেন খাবো? যদি বিষ দিয়া থাকে এতে..?
সেন্টু:- দেখো এখন পাগলামী করার সময় নাই। কথা না বলে চুপচাপ ঔষুধ খেয়ে নাও।
লিজা হঠাৎ বলল- কিসের দূর গন্ধ আসে?
সেন্টু হয়তো ঘামের গন্ধ, তুমি খেয়ে নাও। আমি গোসল করে আসছি।
লিজা:- একটুখানি রেগে বললো তোমাকে বলছি না পরিস্কার না হয়ে আমার কাছে আসবা না।এখনি যাও..
সেন্টু:- ঠিক আছে যাই..,
লিজা:- ওয়াক.. আগে যাবা কি না?
সেন্টুর গায়ের ঘামে কোন দূর গন্ধ আসে না।
কেমন জানি একটা গন্ধ আসে যেটা লিজা খুব পছন্দ করে। সেন্টুর গায়ের গন্ধ লিজাকে অনেক বেশি উত্তেজিত করে। পাগল করে দেয় তার ঘ্রাণ। কিন্তু লিজা অপরিষ্কার পছন্দ করে না।তাই সেন্টু কে তারাতাড়ি গোসলে পাঠালো।
সেন্টু গোসল করে এসে বলল- ঔষুধ খাইছো?
লিজা:- না, কিছু খাইনি?
সেন্টু:- কেন ? বলছি না খেতে হবে?
লিজা:- হাতে ব্যাথা করছে তো?
সেন্টু ভাত তরকারি মেখে চামচ দিয়ে খাইয়ে দিচ্ছে। লিজা বলল- তুমি হাত দিয়ে খাইয়ে দাও?
সেন্টু:- এই হাতে?
লিজা- হুম
সেন্টু:- তা ভালো হবে না।তার চেয়ে চামচ থাক।
লিজা:-কেন ভালো হবে না?
সেন্টু:- আমি গাছের কাজ করি হাত অনেক শক্ত। তোমার হাতের মতো এতো নরম আর সুন্দর না, তাই বলছি..
লিজা:- তোমার হাত চামচের থেকে নরম হলেই হবে।চামচে ব্যাথা লাগছে তো?
লিজা মিষ্টি করে ছোট বাচ্চাদের মত অদূরে গলায় কথা বলে।এই আদুরে গলায় শব্দ সেন্টু কে পাগল করে দেয়। ইচ্ছে করছে শুধু তার সোহাগ মাখা কথাগুলো শুনতে।
লিজা যখন এভাবে কথা বলে মনে হয়,ছোট বাচ্চা একটু আধটু মিষ্টি কথা বলা শিখছে।
সেন্টু লিজার দিয়ে তাকিয়ে দেখলো ,মনে হচ্ছে একটা নিষ্পাপ ফুটন্ত গোলাপ। আবার মনে হচ্ছে একটা সুন্দর মিষ্টি বাচ্চা যাকে দেখলে আদর করে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে।
লিজা:- বাম হাত দিয়ে সেন্টু কে ধরে বললো তুমি কি ভাবছো? তারাতাড়ি খাইয়ে দাও?
সেন্টু হুঁশ ফিরে পেল হুম বলে খাইয়ে দিচ্ছে।
সেন্টু:-তুমি দেখতে যেমন সুন্দর,তেমনি সুন্দর করে কথা বলতে জানো।
লিজা:- সত্যি বলছো?
সেন্টু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।
ভাত খাইয়ে ঔষুধ খাওয়ালো তার পর হাতে পায়ে সেন্টু মলম লাগিয়ে দিল। লিজা শুধু বসে বসে সেন্টু কে দেখছে। সেন্টু উঠে যেতে চাইলো লিজা বলল- এদিকে আসো?
সেন্টু-কি বলো?
লিজা:- তুমি আমার জন্য এতো কিছু করলে তাই ভালো একটা খরব দিতে চাই
সেন্টু:- কি বলো
লিজা:- কানে কানে বলবো কাছে আসো?
সেন্টু মুখের কাছে আসতেই লিজা ঠোঁটে একটা কিস করলো। সেন্টু প্রস্তুত ছিলনা এক কান্ডে। শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।
**00**00**
সেন্টুর মনটা অস্থির হয়ে গেছে কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে। আজকে দুই মাস সুমি আসলো না।সুমিকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে। ফোন করলে মামী, রিয়া কথা বলে। কেউ কখনো বলে না সেন্টু সুমির সাথে কথা বলবি? বুকের ভিতরটা ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। মনে মনে বললো হে আল্লাহ সুমি কে শুধু এক নজর দেখতে দাও? কখনো তার ভালোবাসা চাইবো না শুধু দুই চোখ ভরে দেখতে চাই।
রিণা খান বলল-সেন্টু ক্ষেতে মরিচ পেকে আছে , তুলে নিয়ে আয়..
সেন্টু:- ঠিক আছে মামী।
সেন্টু মরিচ ক্ষেতের কাছে গিয়ে হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে পড়লো। চিৎকার দিয়ে বললো সুমি আমি তোমাকে ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! কেন বুঝ না তুমি?
সুমি আমি জানি আমার সাথে তোমার যায় না। কিন্তু কি করব বল?নিজের অজান্তেই তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। এখন ভুলতে পারছি না, এখন ভুলতে পারছি না। বলে চিৎকার করছে।
রিয়া সেন্টু কে একা আছে ভেবে পিছু পিছু আসলো।কিন্তু এভাবে কাঁদতে দেখে আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে।
সুমি তোমাকে না দেখে আমি একটা মুহূর্ত থাকতে পারছি না। আমার প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে কেন বুঝ না? আমি কখনো তোমার ভালোবাসা চাইবো না। শুধু দূর থেকে এক নজর দেখতে চাই। দয়া করে তুমি চলে আসো। বিশ্বাস করো তোমার সমস্ত অপমান আমি সইবো ,শুধু একটু দেখতে দিও।
হে সৃষ্টি কর্তা আমাকে এতো কষ্ট দিও না। আমি আর সই'তে পারছি না। বলে ঘাসের উপর মাথা ঠেকিয়ে দিল।
রিয়ার প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে এই প্রথম বার বুঝতে পারছে, সেন্টু আপু কে কতটা ভালোবাসে।
রিয়া এসে সেন্টুর কাঁদে হাত দিল সেন্টু - কে? বলে তাকালো। ওহ্ রিয়া, বলে চোখ মুছলো
রিয়া:- আসো দু'জনে এক সাথে মরিচ তুলি?
সেন্টু- না, তোমার তুলতে হবে না। তুমি যাও আমি তুলতে পারবো।
রিয়া মরিচ তুলছে আর বলল- তোমার প্রিয় খাবার কি?
সেন্টু:-মুশরী ডাল,আলু ভর্তা।
রিয়া হা হা হা করে হেসে উঠলো বলল- এটা কি কোন খাবার হলো?
সেন্টু হাসির কারণ অনুসন্ধানের চোখে তাকিয়ে বলল- তোমার প্রিয় খাবার কি?
রিয়া:- বিরানি আর ফুচকা, নুডুলস।
সেন্টু বলল- আমি ছোট বেলায় এক বার বিরানি খাইছিলাম। কিন্তু কেমন লাগে মনে নেই।আর ফুচকা নুডুলস কখনো খাইনি।
কথাটা শুনে রিয়ার খারাপ লাগছে। ভাবছে আমরা তো কতো খাইছি। হয়তো মা কখনো দেয়নি ।
রিয়া বলল- যদি আমি তোমাকে রান্না করে দিই খাইবা তুমি?
সেন্টু হেসে বললো - তুমি তো রান্না করতে জানো না।
রিয়া:- কে বলেছে আমি ডিম ভাজি আর নুডুলস ভাজি করতে জানি। আর সব কিছু শিখে নিব
সেন্টু:- ঠিক আছে তুমি যখন রান্না করবে আমি পেট ভরে খাবো। তুমি দিতে না চাইলেও জোর করে খাবো বলে হাসলো।
রিয়া:- তুমি কখনো মেলায় গেছো?
সেন্টু:- হুম, একবার গেছিলাম তখন আমি ছোট।
রিয়া:- আমাকে মেলায় নিয়ে যাবা? আর দুই মাস পর বৈশাখী মেলা শুরু হবে।
সেন্টু:- কোথায় মেলা হবে?
রিয়া- বেশি দূর না,বধু ঠাকুরানী বাজারে।
সেন্টু:- মামানি যেতে দিলে যামু।
রিয়া:- মনে থাকবে তো? তখন না গেলে তোমাকে খুন করবো কথাটা মনে রেখো।
সেন্টু তাকিয়ে দেখলো রিয়ার চোখের পাশ দিয়ে,ডান পাশে গালের উপরে কিছু চুল ঝুলে আছে। সেই চুলগুলো ধরে একটা টান দিল। মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলল- ইস তুমি আমাকে খুন করবা? আঙ্গুল দিয়ে খোঁচা মেরে বললো তোমার যে পাট-কাটির মতো শরীর?
রিয়া চুলে ব্যথা পেয়ে উহঃ করে উঠলো বলল-তুমি একটা শয়তান।আর তুমি কাকে পাটকাঠি বলছো? আমি একটু চিকনা তবে শক্তি তোমার থেকে কম নাই।
সেন্টু:- হেসে বললো হুম অনেক শক্তি তাই না?
রিয়া:- কেন বিশ্বাস কর না?
সেন্টু:- না, বিশ্বাস করি
রিয়া:- যে দিন ঘুসি মেরে নাক ফাটিয়ে দিব সে দিন বিশ্বাস হবে
**00**00**
সেন্টু- দূর আপনি না ,বলে তাকিয়ে আছে
লিজা - হুম, আমি কি? বলো ?বলো? বলো?
সেন্টু:- পাগল আছেন
লিজা শুধু একটা হাসি দিল। তারপর সেন্টুর দিকে হৃদয়ে গভীর আকাঙ্ক্ষা নিয়ে তাকিয়ে রইল। সেন্টু এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে গলা শুকিয়ে গেল। লিজার বড় বড় চোখে এভাবে তাকালে সেন্টুর হৃদয়ে তোলপাড় করে দেয়। মনে হচ্ছে এই চোখের মাঝে আগুনে তৈরি বিষাক্ত তীর আছে। সেই তীর সেন্টুর হৃদয়ের গভীরে তীব্র ভাবে আঘাত করছে। সেন্টু নিজেকে কোন ভাবে সামলিয়ে নিল। বলল- দুর দিলো তো মাথাটা নষ্ট করে। বলে চলে গেল..
লিজা হাসি মুখে বললো ওই একটু শুনে জান?
সেন্টুর শুধু বার বার লিজার কথাই মনে পড়ছে। লিজার মিষ্টি কথা,তার কত সুন্দর চেহারা, পাগল করা দৃষ্টি সব কিছু মাথার ভিতরে ঘুরপাক খাচ্ছে। সেন্টুর কাছে মনে হচ্ছে লিজার সব কিছুই ভালো লাগে।
নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে বলল- আমার কি হয়েছে? আগে তো লিজা কে একদম সহ্য করতে পারলাম না। এখন কি হয়েছে?
লিজার সব কিছুই ভালো লাগে কেন?
তাহলে আমি কি লিজা কে ভালোবেসে ফেলেছি?
নিজের উপর জোর করে উত্তর বসালো না। আমি লিজা কে ভালোবাসি না।
এটা শুধু কামনা।ও সুন্দরী মেয়ে তাই কাছে পেতে ইচ্ছে করছে।এর বেশি কিছু না, কাছে পাওয়া আর ভালোবাসা কখনো এক না। কামনা হলো কিছুটা মুহূর্ত কাছে পাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে যাওয়া।আর ভালোবাসা হলো সারা জীবন কাছে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ।
সেন্টু আজকে কাজে যাবে না লিজা অসুস্থ তাই। লিজার জন্য ছামুছা,পুরি,দধি নিয়ে আসলো। ঘরে গিয়ে দেখলো লিজা বাড়ান্দায় বসে, এক হাত দিয়ে মাথায় তেল দিতে চেষ্টা করছে। সেন্টু বলল- তুমি ভাবী কে ডেকে নিলেই তো হয়।
লিজা:- সারা দিন ভাবীকে বিরক্ত করতে ইচ্ছে করছে না। ভাবী অনেক কাজ করছে আর কতো?
সেন্টু:- তোমার বাবার বাড়ি যাইবা?
লিজা:- হইছে আর বলতে হবে। বাবার বাড়ির নাম শুনলেই আপনার কাজ থাকে।
সেন্টু:- তুমি চাইলে যেতে পারো।
লিজা:- কথা না বলে তেল লাগিয়ে দিন?
সেন্টু:- কি আমি? দেখুন এগুলো..,
লিজা:- এগুলো কি বলো?আপনি তেল দিবেন কি না?
সেন্টু দেখলো হাতে ব্যাথা না বলা উচিত হবে না।তাই বলল- ঠিক আছে এই প্রথম এই শেষ কিন্তু।
লিজা:- পিঁড়ি দিয়ে আমার পিছনে বসে তেল লাগিয়ে দিন।
সেন্টু পিছনে বসে তেল দিয়ে দিচ্ছে, লিজার অনেক বড় আর ঘন কালো চুল।বড় চুল সেন্টু খুব ভালো লাগে।
সেন্টু বলল- তোমার এতো বড় চুল তেল তো সব লাগবে?
লিজা:- কেটে ছোট করবো?
সেন্টু:- না থাক,বড় চুলে তোমাকে খুব সুন্দর লাগে।
লিজা এই জীবনে প্রথম সরাসরি সেন্টুর মুখের প্রশংসা শুনলো।
কথা বলতে কোন সমস্যা হলো না।এর আগে তো কথা বলতে গিয়ে ঘাবড়ে যেত, ঠোঁট কেঁপে উঠতো। কথা বলতে গিয়ে থেমে থেমে যেত।
লিজা ঘুরে সেন্টুর চোখে চোখ রেখে তাকালো।
সেন্টু মাথা নিচু করে বলল- ওদিকে ফিরুন না হলে তেল দিব কিভাবে?
লিজা:- তুমি কি মেয়ে মানুষ যে এতো লজ্জা পাও? আমার দিকে তাকাও?
সেন্টু:- আমি পারবো না
লিজা:- কেন পারবে না?
সেন্টু:- তোমার চোখে তাকাতে যতটা লজ্জা লাগে তার চেয়ে বেশি ভয় লাগে
লিজা হা হা করে হেসে উঠলো বলল- কেন ভয় করে?
সেন্টু:- আমি জানি না, তবে তোমার চোখে তাকালে আমরা কেমন জানি করে।
লিজা:- কেমন করে?
সেন্টু:- তা বলতে পারবো না
লিজা:- ভালো লাগে? না খারাপ লাগে?
সেন্টু:- ভালো লাগে তবে.., আমি জানি না।
লিজা:- তবে কি বলো? এতো লজ্জা পাচ্ছো কেন? দেখো আমি তো তোমার বউ তার সাথে কথা বলতে এতো লজ্জা কিসের?
সেন্টু:-খুব ভালো লাগে কিন্তু তার ভিতরে কেমন জানি একটা কষ্ট লুকিয়ে আছে।
সেই কষ্টাও খুব বেশি ভালো লাগে।
লিজা:-ভালো লাগলে নিচে তাকিয়ে আছো কেন?
সেন্টু:- সাহস হচ্ছে না। খুব ভয় লাগে, তোমার চোখ তীরের চেয়েও বেশি আঘাত করে।
লিজা:- তুমি পুরুষ মানুষ তো এতো ভিতু হলে চলবে। আমার দিকে তাকাও ?
সেন্টু:- তাকাবো?
লিজা:- পলক না দিয়ে তাকিয়ে থাকবা। যতক্ষণ আমি সরাবো না
সেন্টু অনেক সাহস নিয়ে লিজার চোখে দিকে তাকালো।
সেন্টু কিছুই বুঝতে পারছে হঠাৎ করেই কি হয়ে যাচ্ছে।
মনে হয় নিজের ভিতরে তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে।
কোথায় যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে।
কথা বলার শক্তি টুকু শরীরে নেই।
পৃথিবীর কোন হুঁশ তার ভিতরে নেই।
এটা কোন মোহ? এটা কোন মায়ায় জগতে প্রবেশ করলো?
হঠাৎ রিমার ডাকে দুজনে হুঁশ ফিরে পেল।
রিমা বলল- দিনে দুপুরে বাড়ান্দায় বসে এভাবে প্রেম, উফ দেখতে খুব মজা লাগে।
লিজা- ভাবী তুমি কিন্তু আমার শত্রু হয়ে যাচ্ছো। একটু প্রেম করতে দাও না
সেন্টুর অনুভব করলো বুকের ভিতরটা ধুপ ধুপ করে বাজতেছে।
শরীর সেদিনের মতো কিছুটা কাঁপছে।
এখন কি করা উচিত কিছু বুঝতে পারছে না। মাথায় মনে হচ্ছে কোন কাজ করছে না। তাই শুধু লিজা আর রিমার দিকে তাকিয়ে বসে রইল।
রিমা:- কিরে সেন্টু বিয়ে করবো না,বিয়ে করবো না বলে গান গাইছিলি।আর এখন এই অবস্থা?
সেন্টু শুধু হা করে তাকিয়ে আছে। মনে হয় কথাগুলো কানের কাছে পৌঁছে নি।
লিজা বলল- সেন্টু কি হলো ভাবী কে বসতে দাও?
সেন্টু:- নিজের হুঁশ ফিরে পেয়ে লজ্জায় তাকাতে পারছে না। ঘরে ভিতরে চলে গেল।
**00**00**
আজকে পহেলা বৈশাখ,বধু ঠাকুরানী বাজারে মেলা।
রিয়া তার মাকে বলল- মা আমি মেলায় যাবো?
মা:- কার সাথে যাবি? তা তো অনেক দূর।
রিয়া:- আমি একা যাবো। বেশি দূর না আমি চিনি।
মা:- না,কোন মেলায় যাও হবে না।
রিয়া:- আমি যাবো, যাবো, তুমি না যাইতে দিলেও পালিয়ে যাবো।
মা:- ঠিক আছে সেন্টু কে নিয়ে যাইস, কিন্তু এক ঘণ্টার বেশি সময় থাকা যাবে না।
বিকেলে রিয়া আর সেন্টু মেলায় গেলো।
মেলায় সবাই সুন্দর সার্ট আর প্যান্ট পড়ে আসছে।
সেন্টু একটা লুঙ্গি আর গত বছরের দেয়া একটা সার্ট পড়েছে।
সবার ভিতরে যেতে লজ্জা করে।
তাই কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না । রিয়া কে বলল- ঐ দিকে চলো ..
সেন্টু সবার দিকে তাকিয়ে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো, এই মেলায় তাকে মানায় না। মানুষ রিয়া কে দেখে তার পর সেন্টু কে দেখে আনন্দ পায়। রিয়া বুঝেও না বুঝার ভান করে চলছে।
সেন্টু বলল- আমার মাথায় খুব ব্যাথা করে। আমি এখানে বসি তুমি ঘুরে দেখে আসো।
প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে দুজনে কিছু খেয়ে পায়ে হেঁটে রহনা দিল।
রিয়া একটু হেঁটেই বলল- ভাইয়া আর হাঁটতে পারছি না।
সেন্টু রিয়ার হাত শক্ত করে ধরে বলল- আস্তে আস্তে হাঁটা শুরু কর।
একটুখানি হেঁটে আর পারছে না।রাত হয়ে এসেছে তারাতাড়ি যেতে হবে। সেন্টু রিয়া কে পিঠের উপর তুলে নিলো। রিয়া দুই হাতে সেন্টুর গলা জড়িয়ে ধরলো। অনেক হেঁটে বাড়ির কাছে এসে সেন্টু হাঁপিয়ে গেছে। রিয়া বসে আছে ওর গায়ের সাথে হেলান দিয়ে বসে পড়লো।
রিণা খান অনেক চিন্তিত মেয়ে বড় হয়েছে। এখনো আসলো না অনেক রাত হয়েছে। মেয়ের চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়েছে।যদি পথে খারাপ ছেলেরা কিছু করে ফেলে।
সেন্টু সাথে আছে কিন্তু যদি খারাপ লোক বেশি হয়।কি করবে? কেন যে যেতে দিলাম? আচ্ছা যদি সেন্টু কিছু করে ফেলে?
সেন্টুর চরিত্র তো খারাপ না,কিন্তু একটা মেয়ে সাথে থাকলে এই অন্ধকার রাতে কে জানে কি করে। অনেক আজে-বাজে চিন্তা ভিড় করছে মনের ভিতরে।
একটুখানি পড়ে সেন্টু আর রিয়া আসলো।
রাত হয়েছে তাই সেন্টু কে অনেক গালি দিল।
সুমি ঢাকা থেকে চলে আসলো। অনেক বেশি সুন্দরী হয়ে গেছে। একটা টাচ ফোন নিয়ে আসলো।সবাই ফোন দেখার জন্য ভিড় করে আছে। সেন্টু বলল- সুমি কেমন আছো?
সুমি কোন উত্তর না দিয়ে, সেন্টু কে বলল- ফ্যান ছেড়ে দিতে। গ্রামে নতুন বিদ্যুৎ এসেছে দুটো ফ্যান আছে। একটা মামী আর অন্যটি সুমিরা দুই বোনের জন্য।
সুমি পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে। কথায় মনে হচ্ছে এটা নতুন কোন প্রেমিক হবে।
সুমি সেন্টু কে বলল- সেন্টু এদিকে আয় তো?
সেন্টু:- কি ?
সুমি:- আমার বড় ব্যাগে এক জোড়া জুতা আছে।একটু সেলাই করে দে তুই তো অনেক ভালো পারো।
সেন্টু ভাবছে একটু কথা বলবে,কিন্তু সুমির কথা শুনে কিছু না বলে চলে গেল।
রেজা আসলো সুমি কে দেখতে।
সুমি প্রায় তিন মাস ঢাকা ছিল।
রেজা আর সেন্টু বসে টিভি দেখে।
সুমি পাশেই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চেহারায় ক্রিম দিচ্ছে। রেজা কাছে গিয়ে সুমির বুকে হাত দিলো। সুমি সেন্টুর দিকে তাকিয়ে রেজার হাতটা সরিয়ে দিয়ে বলল- এখন বিরক্ত করো না?
রেজা কিছু না বলে তাকিয়ে দেখছে।
সেন্টুর বুকটা হঠাৎ করেই কেঁপে উঠলো। মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাহাড় টা তার বুকের উপর পড়লো।
সেন্টুর ইচ্ছে করছে রেজা কে খুন করে ফেলতে।
সেন্টুর কলিজা টা ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাচ্ছে। চিৎকার দিয়ে কান্না করছে ইচ্ছে করছে। সেন্টু তাকিয়ে দেখলো, দু'জনেই স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলছে। মনে হচ্ছে আমি না থাকলে ভালো হতো।
সেন্টুর চোখের জল লুকাতে দ্রুত উঠে পড়লো।
দৌড়ে গিয়ে অনেক দূরে বাগানের মাঝে দাঁড়ালো।
চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠলো। মনে হচ্ছে সেন্টুর কান্নায় আকাশ বাতাস কেঁদে উঠছে। এতো কষ্ট হয়তো মা মরার সময় হয়নি।
বুকে হাত দিয়ে বসে পড়লো। কেমন জানি মাথাটা ঝিমঝিম করছে। সমস্ত শরীর ঘেমে যাচ্ছে সেন্টু অস্থিরতা অনুভব করলো।
চোখ দুটো ঘোলাটে হয়ে আসছে। হঠাৎ করেই মাথা ঘুরে পড়ে গেল।
চোখ মেলে দেখলো ছোট মামার হাতিনায়/বাড়ান্দায়। বিজয় পাশে বসে আছে, রিয়া হাত পাখা নিয়ে বাতাস করছে।
ছোট মামায় একটুখানি দূরে একটা চেয়ার দিয়ে বসে আছে।
হুঁশ ফিরে আসতেই সবাই বলল- কি হয়েছে? বিকেলে বাগানে কি করছো?
সেন্টু বলল- আম,কাঠাল পেকেছে কিনা দেখতে গেছি।
রিয়া:- বেহুঁশ হলে কিভাবে?
সেন্টু:- হঠাৎ করেই মাথা ঘুরে পড়ে গেছি।
বিজয়:- মনে হয় তোমাকে ভুতে ধরছে।
মামা:- একা না গেলেও পারতে।যে জঙ্গল আমি তো ভয়ে কখনো যাই না।
সবাই আসলে সেন্টু কে নানান প্রশ্ন করছে।
কেউ বললো জ্বীন লগে লইছে
**00**00**
লিজার হাত অনেক ভালো হয়ে গেছে।
সেন্টু অনেক যন্ত করে মলম লাগিয়ে দেয়। অনেক কেয়ার করে যা দেখে লিজা খুব খুশি।
লিজা বসে বসে মোবাইল টিপসে সেন্টু আসলো।
সেন্টু তাকিয়ে দেখে রাকিব এর ফোনটা। তাহলে কি রাকিব কথা বলতে লিজা কে ফোন কিনে দিছে? ভাবতেই চোখ দুটো রাগে লাল হয়ে গেল বলল- ফোন পাইছো কোথায়?
লিজা বলল- রাকিব ভাই দিসে?
সেন্টু:- আরো রেগে গেল বললো রাকিব কেন তোমাকে ফোন দিসে? কি চায় তোমার কাছে?
লিজা অবাক হয়ে গেল সেন্টু এভাবে কথা বলে কেন? বলল- তুমি কি বলছো আমি বুঝতে পারছি না?
সেন্টু:- অনেক রেগে বললো তোর সাথে তার কিসের সম্পর্ক? ছিঃ ছিঃ আমি তোকে ভালো ভাবছিলাম।
লিজা:- আরে তুমি আমাকে ভুল বুঝছো? দেখো আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তাকে আমি বড় ভাইয়ের মতো দেখি।
সেন্টু:- ভালোবাসা ,তোর মতো মেয়েদের ভালোবাসা আমি ঘৃণা করি।
লিজা:- তুমি আমাকে বিশ্বাস করো? তার আর আমার ভিতরে কিছু নেই। আমি তোমাকে ভালোবাসি।
সেন্টু:- বিশ্বাস বলতে পৃথিবীর কিছু নেই। আমি তোকে ঘৃণা করি আমি কখনো তোর মুখ দেখতে চাই না।
চিৎকার শুনে রিমা আসলো বলল- কি হয়েছে?
সেন্টু:- বললো আমি ওর সাথে থাকতে চাই না। খালা, রিমা অনেক বুঝালো।
লিজা অপমান সইতে না পেরে ব্যাগ গুছিয়ে চলে গেল। যাবার সময় বলল- আমি জীবনে কখনো তোর ঘরে আসবো না।
সেন্টু বলল- তোকে আমার প্রয়োজন নাই।
সেন্টু প্রচন্ড রাগে দুঃখে নদীর তীরে গিয়ে বসে আছে। সেন্টু ভাবছে মেয়ে জাতটাই খারাপ। বলে আমাকে ভালোবাসে অথচ কেউ ফোন দিলে নিতে হবে।
রাকিব তুই আমার ভাই,এমন কাজটা আমার সাথে করলি?
আমি তোর জন্য কি না করেছি।তোর জন্য জেলে গেছি আর তার প্রতিদান এভাবে দিলি।
সেন্টু ভাবছে আমি তো তাকে ভালোবাসি না। তাহলে যার সাথে ইচ্ছে কথা বলুক আমার কি? আমার কেন এতো কষ্ট হচ্ছে? আমি কেন এতো রেগে গেলাম? লিজা কে কি আমি ভালোবেসে ফেলেছি?
তা কিভাবে সম্ভব আমি সুমিকে ভালোবাসি।
সেন্টুর কিছু ভালো লাগে না, আমার এভাবে রেগে যাওয়া উচিত হয়নি। লিজা তো তেমন মেয়ে নয়।
সেন্টুর বার বার একটা কথা মনে পড়ছে যে" তুমি
আমাকে বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ভালোবাসি"
তার আর আমার ভিতরে কিছু নেই এই কথাগুলো মনে পড়ছে।
তাহলে কি আমি ভুল করেছি? আমি এতো রেগে ছিলাম যে ওর কথাই শুনতে চাইনি।
সেন্টুর খুব খারাপ লাগছে লিজার জন্য।
রাগ করে দুপুরে কিছুই খায়নি ঘরেও আসেনি।
রাতে খালার বাসায় আসলে রাকিব বলল- তুই লিজার সাথে খারাপ ব্যবহার করছো এটা উচিত হয়নি।
সেন্টু:- দুর বাদ দে তো।যা হবার হয়ে গেছে।
রাকিব বলল- লিজা তোর জন্য একটা ফোন কেনতে ১০০০ টাকা দিয়েছে। ফোনের দাম ৯০০ এই নে ১০০ টাকা।
সেন্টু:- কৈ আমার কাছে তো কিছু বলেনি?
রাকিব:- তুই নাকি ফোন কিনতে চাও না। তাই আমার কাছে দিসে, কোথাও গেলে তো বলে যাও না।
সেন্টু:- আসলে তখন আমার মাথা ঠিক ছিল না। কি বলতে কি বলছি নিজেও বুঝতে পারিনি।
রিমা বলল- তোমার কপালে এমন একটা মেয়ে জুটেছে এটা তোমার ভাগ্য।
খালা:- কপাল পোড়া! ভালো জিনিসের কদর করতে শেখ।
সেন্টু:- আমি যাই ঘুমাতে হবে।
রাকিব:- ভাত খেয়ে যা
সেন্টু ঘরে এসে ট্রাঙ্ক এর ভিতর হাজার ১০ হাজার টাকা ছিল তা গুনে দেখলো।
এক হাজার কম আছে তাহলে কি ফোন কিনতে দিসে? নিজের প্রতি লজ্জা হচ্ছে ছিঃ এটা কি করলাম আমি?
লিজা কে এতো বড় একটা অপবাদ দিলাম?
একটা বার যদি ওর কথা শুনতাম।
আমার না হয় মাথা ঠিক ছিল না।
রাগ করে যেতে বলছি তাই যেতে হবে? আমি তো ওর স্বামী চাইলে জোর করে থাকতে পারতো।
সারা রাত সেন্টুর চোখে ঘুম আসলো না।
যাবার সময় লিজার করুন চাহনি। তোমাকে ভালোবাসি শব্দ কানের কাছে বেজে উঠে।
কতো কথা,এক সাথে , কতো সুন্দর মুহূর্ত কাটানো। লিজার মিষ্টি কথাগুলো, পাগল করা দৃষ্টি,তার আদর যত্ন সব কিছুই মনের ভিতরে ভিড় করছে। মনে হচ্ছে সবাই সেন্টু কে ধিক্কার দিচ্ছে। সেন্টুর ভাবছে লিজা কে কতটা নোংরা কথা বলছি।জানি না কতটা কষ্ট পাইছে।
লিজা সারা রাস্তায় কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে গেলো। বাবা মা বলল-জামাই কোথায়?
লিজা- ওই বাড়ি থেকে চলে আসছি।
মা:- কেন কি হয়েছে?
লিজা:- কথা না বলে ঘরে চলে গেল।
লিজা সারা দিন কেঁদে কাটিয়ে দিল। দুপুর থেকেই কিছু খায়নি।
রাতে ওর মা বলল- লিজা এদিকে আয় মা?
লিজা কাছে গিয়ে বলল- কিছু বলবা তুমি..?
মা:-শোন মা! এক সাথে দুটো হাঁড়ি পাতিল থাকলেও আঘাত লাগে।আমরা তো মানুষ সারা জীবন এক সঙ্গে থাকতে গেলে,একটু ঝগড়া-ঝাটি তো হবেই।তাই বলে কি সংসার ছেড়ে আসতে হবে?
লিজার চোখ দিয়ে দুই ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। জল টুকু মুছে বলল- মা তাই বলে বিনা দোষে আঘাত করবে?
মা:-সংসার জীবন বড় কঠিন রে মা। এখানে হাজারো ঘাত-প্রতিঘাত থাকবেই।শত কষ্ট বুকে চাঁপা দিয়ে হাসি মুখে সবার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করার নামই নারী।
লিজা:-যে ভালোবাসার মূল্য দিতে জানে তার জন্য কষ্ট সহ্য করা যায়। কিন্তু যে অবহেলা করে তার জন্য নিজেকে কষ্টের মানে কি?
মা:-এই পৃথিবীতে কেউ কারো মূল্য দিতে জানে না। শুধু নিজের টাই বুঝে নিতে চায়।
নিজের খেয়াল নিজেকেই রাখতে হবে।"এই পৃথিবী শুধু আঘাত দিবে, বিপদে ভালোবাসা দিবে না" কিছু খেয়ে নে?
লিজা:- আমার খেতে ইচ্ছে করছে না
লিজার মা জোর করে খাবার খাইয়ে দিল।
সারাটা রাতে একটু ঘুম চোখে আসলো না।
সেন্টুর নোংরা কথাগুলো কষ্টের কিট হয়ে সারা শরীরে আঘাত করছে। পাহাড় সমান অভিমান জমে আছে। ছিঃ এতটা নিচ মানুষটার মন? এভাবে আমাকে বলতে পারলো? আমি হয়তো মানুষ চিনতে ভুল করেছি? সারা রাতে চোখে ঘুম আসলো না।
সেন্টুর কথা মনে পড়ছে,ওর কথা ভেবে কষ্ট হচ্ছে।
সেন্টু ভোরে উঠে রাকিব এর কাছে গেল।
ভাই -ভাবী দু'জনকে অনেক অনুরোধ করলো।
রাকিব বলল-তুই অন্যায় করছো তুই গিয়ে নিয়ে আসবি?
সেন্টু:- আমি ভুল করেছি। কিন্তু লিজার সামনে দাঁড়ানোর মতো মুখ আমার নেই।
সেন্টুর অনেক অনুরোধে রাকিব বলল-ঠিক আছে কিন্তু এই শেষ বার। আর কখনো এভাবে করলে আমরা তোর সাথে থাকবো না।
লিজা বসে একটা হাত পাখা সেলাই করে
হঠাৎ করে দেখলো রিমা আর রাকিব আসছে।
লিজা বলল- ভাবী তোমরা কেমন আছো?
রিমা- ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?
লিজা:- বসেন আমি মা কে ডেকে নিয়ে আসছি।
লিজার মা আসলো কুশল বিনিময় হলো।
লিজার মা বলল- জামাইয়ের সাথে কি হয়েছে?
রাকিব:- দুজনে একটু ঝগড়া-ঝাটি করছে।
রিমা:-আসলে মাওই! দুজনে একসাথে থাকলে তো একটু মতের পার্থক্য হতেই পারে। আপনি চিন্তা করবেন না সব কিছুই ঠিক হয়ে যাবে।
মাওয়াই:- মেয়েটা আমার সারা দিন কিছু খায়নি, শুধু কেঁদে কাটিয়েছে।
রিমা:-সেন্টু কে এমন শাসন করছি, বলছে আর জীবনে এমন করবে না।
রাকিব বলল- লিজা তুমি তৈরি হয়ে আসো আমাদের তারাতাড়ি যেতে হবে।
লিজা:- মাফ করবেন ভাই আমি আর ওই বাড়ি যেতে চাই না
রিমা:- দেখো বোন নিজের ভুল বুঝতে পারছে।সে আর কখনো এমন করবে না।
লিজা- আমি ওই বাড়িতে যেতে পারবো না।
সবাই অনেক বুঝিয়ে বললো কিন্তু লিজা মরে গেলেও সেন্টুর কাছে যাবে না। লিজার মা বললেন কিছু দিন লিজা এখানে থাকুক।রাগ কমলে পড়ে পাঠিয়ে দিব।
রাকিব আর রিমা সেন্টু কে অনেক গালি দিল।
বলল-কখনো লিজা তোর কাছে আসবে না। ঠিকই আছে,তোর মতো পাঠার কপালে কখনো বউ জুটবে না। রিমা ও অনেক বেশি রেগে আছে।সবাই সেন্টু কে গালি দিলো।
সেন্টু দুঃখ-কষ্ট আর রাগে বাড়ি থেকে বাজারে চলে গেল। কিছু না খেয়েই কাজে গেল কিন্তু কাজে মন বসছে না। লিজার কথা মনে পড়ে খুব। কেমন জানি লাগে কিছু ভালো লাগে না। যাদের সাথে কাজ করে সবাই লক্ষ্য করলো, সেন্টু কেমন জানি হয়ে গেছে। আজকে কারো সাথে কথা বলে না। যদি কারো সাথে কথা বলে তবে ঝগড়া লেগে যায়।
এভাবে কিছু দিন কেটে গেল সেন্টু লিজা কে প্রতি মুহূর্তে মিস করছে। ঠিক মতো কাজে যায় না, ঠিক মতো গোসল, খাওয়া হয় না।
রাতে মাঝে মাঝে নদীতে নৌকায় শুয়ে থাকে। সেন্টু লিজার জন্য প্রচন্ড পাগল হয়ে গেছে।
সেন্টু অনেক ভেবে দেখলো.. জীবনে অনেক কষ্ট পেয়ে। অনেক বছর একা থেকেছে,এক মাত্র লিজা তাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবেসেছে। হয়তো লিজা কে চাইলে ভুলে থাকা যাবে। কিন্তু একা জীবন চলবে না। হয়তো কখনো কারো সাথে জীবন কাটাতে হবে। আমি যদি অসুস্থ হয়ে পড়ি অথবা যখন বৃদ্ধ হয়ে যাবো তখন একটা আস্রায় দরকার। একটা স্থান লাগবে, কিন্তু নিজের ছেলে মেয়ে ছাড়া কেউ কখনো আমাকে সেবা যত্ন করবে না। আমি জানি না কখনো লিজার চেয়ে সুন্দরী মেয়ে পাবো কিনা। কিন্তু তাকে পেয়ে আবার হারাতে পারবো না।তার চেয়ে বেশি হলো তাকে ভালোবেসে ফেলেছি। আমি তাকে ভালোবাসি এটা কোন বিষয়ে না,সে আমাকে ভালোবাসে এটাই বড় বিষয়ে।
কাউকে ভালোবাসলে হয়তো কষ্ট পেতে হয়। কিন্তু কারো ভালোবাসা হয়ে থাকলে কষ্ট পেতে হয় না। কারণ সে তার সবটুকু সুখ দিয়ে আক্রে ধরে যাতে কখনো ভালোবাসার মানুষটি কষ্ট না পায়।
ভোরে সেন্টু খাবার খেয়ে কাজে যাবে তখন খালা বলল- এখন লিজা কে নিয়ে আয়
আর কত রাগ করে থাকবি।
সেন্টু:- ঠিক আছে খালা রাতে যাবো।
সেন্টু কাজে গেল মনটা খুব বেশি অস্থির হয়ে আছে। লিজা কে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে। কষ্টে নিজের অজান্তেই চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। হঠাৎ করেই বেখেয়ালী হয়ে হাতে দা এর কোপ পড়লো। লিজা বলে একটা চিৎকার দিল। অনেক হাত কেটে গেছে, সবাই এসে কাপড়ের টুকরা দিয়ে হাত বাঁধলো।
রুস্তম আলী বলল- সেন্টু ফার্মাসিতে গিয়ে সেলাই কর আর ঔষুধ খাও।
সেন্টু:-ঠিক আছে।
সেন্টুর লিজা কে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। ফার্মাসিতে না গিয়ে লিজার বাড়িতে গেলো।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে লিজাদের উঠানে সেন্টু দাঁড়িয়ে বলল-লিজা? লিজা?
অনেক ডাকলো লিজা আসছে না।
সেন্টু:- লিজা আমি তোমার সাথে কথা বলতে চাই। লিজা লিজা দয়া করে একবার আসো? লিজা.., সেন্টু ডেকেই যাচ্ছে লিজা কাছে অসলো না। লিজার মা লিজা কে অনেক বুজালো কিন্তু লিজা শুনে না।
লিজার মা বলল- বাবা তুমি ঘরে এসে বসো।
সেন্টু:- না আমি লিজার সাথে একটু কথা বলতে চাই। লিজা চোখের জল মুছে ঘরে বসে রইল।
সেন্টু উঠানে বসে রইল অনেক রাত হয়েছে।
লিজার মা মেয়ে কে বলল- তুই যদি সেন্টুর সাথে কথা না বলো আমার মরা মুখ দেখবি।
লিজা একটা হারিকেন নিয়ে আসলো।
হাতের প্রচন্ড যন্ত্রনায় সেন্টুর গায়ে জ্বর উঠে গেছে। লিজা নিচে দিকে চেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
সেন্টু বলল- লিজা আমাকে মাফ করে দাও?
সব কিছু ভুলে যাও চলনা বাড়ি যাই?
লিজা:- যে মানুষটা সামান্য কারণে আমর চরিত্র নিয়ে খারাপ কথা বলে, তার সাথে আমি থাকতে চাই না।
সেন্টু:- আমি বুঝতে পারিনি, ভুল হয়ে গেছে। আসলে রাগে মাথা ঠিক ছিল না।
লিজা:- আমি সব কিছু ভুলে গেছি। তুমিও আমাকে ভুলে যাও।
সেন্টু:- তুমি এভাবে বল না তুমি তো আমাকে ভালোবাসো? চলনা সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।
বলেই সেন্টু লিজার গালে দুই হাত দিয়ে ধরলো। লিজা হাতে ঝামটা মেরে সরিয়ে দিয়ে বলল- আমি তোমাকে ভালোবাসি না।
ভুলে যাও আমাকে, আমি তোমাকে চাই না।
লিজার হাতে সেন্টুর হাত লেগে কাঁটা জায়গা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে, সেন্টুর খেয়াল নেই।
সেন্টু- লিজা আমি তোমাকে ভালোবাসি! সত্যি বলছি আমার তোমাকে লাগবে।
আমি তোমাকে চাই কেন বুঝ না?
লিজা:- আমি বুঝতে চাই না। তুমি চলে যাও আর কখনো এসো না।
সেন্টু বলল-আমি বুঝতে পারিনি তোমাকে কতটা ভালবাসি। কিন্তু তুমি যখন ছিলে না। আমি বুঝতে পারছি তুমি ছাড়া একটি মূহুর্তে আমি থাকতে পারবো না।
লিজা:- বিশ্বাস ছাড়া কখন ভালোবাসা থাকে না।যে ভালোবাসে সে সামান্য কারণে নিজের স্ত্রীর কে অপবাদ দিতে পারে না।
সেন্টু- যে সারা জীবন ঠকতে ঠকতে এসেছে সে কিভাবে এতো তাড়াতাড়ি বিশ্বাস করবে বলো। ঠিক আছে আমি ভুল করেছি আর কখনো এমন ভুল হবে না।
লিজা:- তোমার কাছ থেকে কি পেয়েছি আমি বল? না পেয়েছি স্ত্রীর মর্যাদা, না পেয়েছি সামান্য একটু ভালোবাসা। পেয়েছি শুধু অপমান, অবহেলা আর কষ্ট।বলো কি দিয়েছো তুমি আমাকে?
সেন্টু আবারো হাত দুটি দিয়ে লিজার গাল ধরে করুন সরে বলল-দেখ আমি ভুল করেছি আর ভুল তো মানুষেই করে বলো? আমিও তো মানুষ আমাকে মাফ দাও আর কখনো এমনটা হবে না।
লিজার গাল বেয়ে রাজুর হাত থেকে রক্ত পড়ছে। আর লিজা দেখলো রাজু শরীর খুব গরম। লিজা হাত দিয়ে দেখলো রক্ত দেখেই চমকে গেল। বলল-সেন্টু তোমার হাত রক্ত কিসের?
সেন্টু:- কিছু না, তুমি শুধু হাতের রক্ত টাই দেখলে বুকের রক্ত টা দেখলে না।
লিজার চিৎকার শুনে ওর মা চলে আসলো।
দুজনে সেন্টু কে ঘরে নিয়ে আসলো ।হাত থেকে অনেক রক্ত পড়ছে। লিজা দেখলো সেন্টুর গায়ে জ্বর। সেন্টুর জন্য লিজার খুব কষ্ট হচ্ছে। ঔষুধ এনে খাইয়ে দিল সারা রাত জল পট্টি দিল।
ভোরে সেন্টু ঘুম ভেঙ্গে দেখলো। লিজা মাথার পাশে বসে ঘুমিয়ে পড়েছে। সেন্টু একটা হাত দিয়ে লিজার হাত ধরে বলল-
আমাকে ছেড়ে যেওনা আমি সত্যি বলছি তোমাকে ছাড়া ভালো নেই। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। বলে চোখের জল ছেড়ে দিলো। লিজা ঘুম থেকে উঠে দেখলো সেন্টুর চোখে জল। লিজা মুছে দিয়ে চলে যেতে চাইলো হঠাৎ সেন্টু হাত ধরলো। লিজা দাঁড়িয়ে আছে। সেন্টু বলল- সারাটা জীবন সবাই আমাকে শুধু কষ্ট দিয়েছে। শেষ ভরসা ছিলে শুধু তুমি। তুমিও আমাকে কষ্ট দিও না? তাহলে আমি বাঁচতে পারবো না।
তোমাকে ছাড়া আমি একটা নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। বেঁচে আছি ঠিকই কিন্তু মনে হচ্ছে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছি।
লিজা পাশে বসে সেন্টুর কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল- আমি কখনো তোমাকে ছেড়ে যাব না। ঠিক আছে এখন খুশি তুমি? কিন্তু আমাকে আর কষ্ট দিলে তোমাকে খুন করবো
সেন্টু:- আর কখনো এমনটা হবে না, আমাকে মাফ করে দাও।
লিজা- ঠিক আছে, আমার কাজ আছে এখন যাই বলেই চলে গেল..
সেন্টু- ওই শোন..
বোবা কান্না (পর্ব ৫)
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
308
Views
5
Likes
4
Comments
4.3
Rating