বোবা কান্না (পর্ব ৪)

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
২০১৮ সাল চলছে নতুন বছর রিয়া নাইনে উঠেছে।সুমির পরিক্ষা সেই কবেই শেষ এখনো আসে না। সেন্টুর তাই মন খারাপ সুমি কে একটু দেখার জন্য পাগল হয়ে আছে। ঠিক করলো বিকেল সুমির মামা বাড়ির যাবো।আসে পাশে সুমিকে খুঁজব হয়তো দেখা পেয়ে যাবো। সেন্টু একটা লুঙ্গি পড়লো।এক জোড়া চটি জুতা ছিল সেলাই করে নিল। একটুখানি সরিষার তেল দিতেই মামি বলল- এতো খানি তেল মেখে নবাবারে পুত কৈ যায়?
তৈরি হয়ে সেন্টু আস্তে আস্তে হেটে গেল।

সুমির মামাতো বোন এবং তাদের পরিচিত মেয়েরা, রাস্তায় ঘুরা ঘুরি করছে ওদের ভিতরে একজনের বয়ফ্রেন্ড লাগবে ।তাই একটু বড়সি ফেলতে আসলো যদি বোয়াল মাছের দেখা মিলে। সবাই হাসাহাসি করতে করতে চলছে। সুমি আর রেজা মজিয়ে প্রেম করছে। সেই গল্প করছে,কার বয়ফ্রেন্ড কেমন?কি বলে?কি করে কতবার কিস হয়েছে সেই গল্প করছে। হঠাৎ করেই সুমি দেখলো সেন্টু রাস্তায়। সুমি না দেখার ভান করে চলে যেতে চাইলো।
সেন্টু:- সুমি! এ সুমি একটুখানি থামো?
সুমি:- কি সমস্যা রাস্তায় চিল্লাচিল্লি করছো কেন?
সেন্টু:- কেমন আছো তুমি?
সুমি:- ভালো আছি। এখন কথা বলার সময় নেই। পড়ে কথা হবে এই চল তাড়াতাড়ি যেতে হবে তো?
লিমা:- ছেলেটা কে এভাবে বিরক্ত করছে?
সুমি:- আরে বাদ দে ও আমাদের ঘরে কাজ করে। সুমি চল ঐ দিকে যাই? বলেই হাটা দিল।

সেন্টুর কথাটা খারাপ লাগছে একটুখানি। কিন্তু ভাবছে সত্যিই তো বলছে। আমার তো আর কোন পরিচয় নেই।

সেন্টু সুমিকে এক নজর দেখে, নিজে কিছুটা শান্তি পেল। হয়তো এখন আবার কিছু দিন না দেখে থাকতে পারবে। তিন মাইল জায়গায় পায়ে হেঁটে যেতে বেশি সময় লাগলো না।

সেন্টুর বড় মামা পাকা ঘর বানাবে তাই ইট,বালু, সিমেন্ট আনছে। সেন্টু বাড়ি যেতেই রিয়া বলল-তুমি কোথায় ছিলা? মা রেগে আছে, এদিকে কত কাজ গাড়িতে মাল নিয়ে আসছে ‌
সেন্টু:- বলল আমি কাজে যাই তুই মামীকে বলিস। বলেই হাটা শুরু করলো
রিয়া:-আচ্ছা ঠিক আছে।

সেন্টু মনের আনন্দে কাজ করছে। আজকে সুমির সাথে দেখা হয়েছে।তাই মনটা খুব বেশি ভালো। আজকে পৃথিবীর সবাই গালি দিলেও সেন্টুর কষ্ট হবে না,আর হেসে উড়িয়ে দিবে।

২০২৩ সাল হয়ে গেছে আজকে লিজার বিয়ের বয়স তিন মাস পুর্ণ হলো। লিজার মনে ভয় হলো এখনো সেন্টু কে আকৃষ্ট করতে পারলো না। যদি সেন্টু সেই কথা অনুযায়ী তাকে দূরে সরিয়ে দেয়।
লিজা যে সেন্টু কে ভালোবাসে সেটা কি সে বুঝে না? সেন্টু আগের থেকে অনেক সহজ হয়ে গেছে। আগে কথাই বলতো না এখন মোটামুটি বলে। আগে কিছু প্রয়োজন হলে কাছে এসে দাঁড়িয়ে থাকতে মুখে বলতো না।
এখন কিছু লাগলে নির্দ্বিধায় বলতে পারে।
কিন্তু তার মনে কি তা এখনো কেউ বুঝতে পারে না।

লিজা বসে সেন্টুর দিকে তাকিয়ে আছে।আর ভাবছে তিন মাস শেষ যদি তাকে তাড়িয়ে দেয়। সেন্টু লিজা কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অস্বস্তি অনুভব করছে।
সেন্টু:- এভাবে তাকিয়ে আছেন? কি কি দেখছেন?
বলতে গিয়ে গলা কেঁপে উঠলো
লিজা একটা দির্ঘ্য নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল-
আপনাকে দেখছি।
সেন্টু কিছু বলতে গিয়ে ঠোঁট দুটো একটু ফাঁক করে আবার থেমে গেল। লিজার চোখ থেকে নিজের চোখ সরিয়ে নিচে চাইলো।
হয়তো লিজার চোখে তাকাতে লজ্জা লাগছে।

লিজা বলল- বিয়ের আগে না অনেক স্বপ্ন ছিল। স্বামীর সাথে নদীতে ঘুরতে যাবো।
হাতে হাত রেখে সারা রাস্তায় ছুটে চলবো।
সারা দিন কাজে শেষে আমার জন্য দুটো চুড়ি একটা টিপ এনে বলবে, তুমি সাজলে অনেক বেশি সুন্দর লাগে। সকালে কাজে যাবার আগে আমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু দিয়ে বলবে ভালো থেকো তুমি! একটুখানি হেসেই থেমে গেল। একটা নিঃশ্বাস নিয়ে বলল- একটা ঘর পেলাম সংসার পেলাম না।
একটা বর পেলাম ধংস স্তুপ মেরামত করতে পারলাম না।
সেন্টু বলল- খাবার খাইছো?
লিজা:- আপনি কি এ ছাড়া আর কোন কথা জানেন না?
সেন্টুর ঠোঁট দুটো একটু ফাঁকা হলো মুখ উজ্জ্বল হয়ে গেল। মনে হচ্ছে সে হাসতে চেষ্টা করছে।
তার পর বলল- আপনার রাগ অনেক সুন্দর?

লিজা এই প্রথম মুখে হাসি দেখে কিছুটা অবাক হল।যা তাহলে হাসতে জানে লোকটা। কিন্তু সেন্টুর বোকা টাইপের কথা শুনে আরো রেগে বলল- কি? আমার রাগ সুন্দর মানে?
সেন্টু মনে মনে ভাবছে দূর কথা বলতে গেলে এতো ভুল হয় কেন? গলাটা ভিজে নিয়ে বলল- আসলে বলতে চাই ছি, না মানে, আপনার..
লিজা:- থাক আর বলতে হবে, আল্লাহ আমি কোন পাগলের সাথে পড়লাম?
সেন্টু:- আপনি রেগে গেলে অনেক বেশি সুন্দর লাগে!
লিজা:- অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল বলল- আপনি আবার সুন্দর চিনেন? যাক ভালো।
বলে উঠে গেল আর বলল- খেতে আসুন।

সেন্টু খাবার খেতে খেতে বললো আপনি ঘুরতে যাবেন?
লিজা:- সে ভাগ্যে কি আছে আমার?
সেন্টু:- যদি আমি নিয়া যাই? যাবেন?
লিজা:- আপনার সাথে যাওয়া যায়।অন্য পুরুষের সাথে গেলে রিস্ক আছে।
সেন্টু:- কিসের রিস্ক বুঝতে পারলাম না?
লিজা:- এখন এতো বুঝতে হবে না। যেদিন বুঝিয়ে দিব সেই বুজলেই হবে।
সেন্টু:- তাহলে কাজে যাবো না?
লিজা:- না, কাজ করুন।আমরা রাতে ঘুরতে যাবো?
সেন্টু:- ঠিক আছে।

আজকে রুস্তম আলী এক সপ্তাহের টাকা দিসে।তাই লিজার জন্য একটি নীল সাড়ি আর ব্লাউজ কিনলো। বিয়ের পর এই প্রথম কিছু কিনে দিল। আর অল্প দধি চিড়া আনলো।

লিজা অল্প দধি চিড়া দেখে বলল- এতটুকু কেন?
সেন্টু:- দুই জনের এতেই হবে?
লিজা:-ইয়া আল্লাহ আপনি তো স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছেন? খালা আছে ভাবী আছে তাদের দিতে হবে না?
সেন্টু:- তাদের টাকা কিনে খেতে পারবে? আমি গরিব মানুষ ব‌উ কে কিছু কিনে দিতে পারি না।
সবারি তো ইচ্ছে করে একটু ভালো খেতে ভালো পড়তে।
আমাকে বিয়ে না করলে হয়তো কোন বড়লোক স্বামী পাইতেন।
লিজার চোখে জল এসে গেল বলল- আমি কে? কি বললে ব‌উ ?
সেন্টু:- দেখো আমি জানি আমি স্বামী হতে পারিনি। কিন্তু তুমি তো আমার বৈদ্য স্ত্রী।ব‌উ হিসেবে মেনে নিতেই হবে।

লিজা শাড়িটা দেখে খুলে ফেললো বলল- এটা কার? অনেক সুন্দর হয়েছে শাড়িটা ।
সেন্টু:- আপনাকে নীল শাড়িতে সুন্দর লাগবে।
লিজার চোখে মুখে আনন্দে জ্বল-জ্বল করছে। একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল- আমার জন্য বুঝি?

লিজার হাসিতে কাপালে চাঁদের মতো জ্বলে উঠে।দেখলে হৃদয় জুড়িয়ে যায় , হাসিটা অনেক সুন্দর কিন্তু সেন্টু কখনো মুখ ফুটে বলতে পারেনি।
সেন্টু:- আপনার পছন্দ হয়েছে?
লিজা:- অনেক পছন্দ হয়েছে, কিন্তু আমার জন্য এতো টাকা খরচ করা কি দরকার ছিল? আপনি তো দোকান দিতে চান?
সেন্টু:- আপনাকে কিছু দিতে পারিনি। আমার তো সবার মতো না টাকা নেই।
লিজা:- আমিও গরিবের মেয়ে সামান্য হলেও অনেক।
নিজেকে এতো ছোট ভাবতে হবে না। টাকা দিয়ে সব কিছু হয় না। আল্লাহ চাইলে আপনার অনেক টাকা হবে।

সেন্টু:- আসুন না খেয়ে নিই?
লিজা:- ঠিক আছে, কিন্তু আমি তাদের না দিয়ে খেতে পারবো না।

লিজা গিয়ে ঘরে সামনে উঠানে বসে পড়লো। সেন্টু ভাবছে এই মেয়ে কেমন কে জানে? ওর জন্য তো বললাম উল্টো রেগে আছে। ঘরে দুটো মানুষ এক জনে না খেয়ে বসে থাকলে ভালো দেখায় না। দূর বাধ্য হয়ে একটা চামচ নিয়ে লিজার কাছে গেল।

লিজা:- আমি খাবো না, আপনি খেয়ে নিন?

সেন্টু মাঝখানে একটু ভাগের মতো করে নিল।এক পাশ থেকে উঠিয়ে লিজার মুখের কাছে ধরলো। একটুখানি খেয়ে নিন?

লিজা:- না, বলে মুখ ঘুরিয়ে নিল।

সেন্টু এক হাতে চামচ নিয়ে অন্য হাতে মুখ ধরে খাইয়ে দিল। এক সাথে অনেক চামচ দিল। লিজা হাতটা সরিয়ে বলল- আপনি কি মেরে ফেলতে চান? এক সাথে এতো খাবার কেউ মুখে দেয়?
সেন্টু:- আমি বুঝতে পারি নি, রেগে আছিলাম তো?
লিজা:- খাবার গিলে বললো কেন রেগে ছিলেন? ভালোবাসেন আমাকে?
সেন্টু:- না, তবে না খেয়ে থাকলে খারাপ লাগে।
লিজা:- হাসি দিয়ে বলল এই বার সত্যি বলেছেন। আপনি তো ভালো বাসতেই জানেন না।
আমারি ভুল ছিলো। আপনার খাইয়ে দিতে হবে না যান

রাতে দুজনে নৌকায় ঘুরতে গেল।
সেন্টু নৌকা বাইছে লিজা বসে আছে।
লিজা বলল-আপনি নৌকা পেলেন কোথায়?
সেন্টু:- কাদের মাঝির নৌকা।এক সময় তার সাথে নদীতে মাছ ধরতাম।
নদীতে ছল ছলৎ করে পানি শব্দ হচ্ছে। হালকা শীতল বাতাস লিজা চুলগুলো মুক্ত করে দিল। নৌকা এলোমেলো ভাবে দুলছে। লিজার ইচ্ছে করছে সেন্টুর বুকে মাথা রেখে আকাশে চাঁদ দেখতে। লিজা উদাসীন হয়ে বসে আছে। নদীর বুকে ভেসে আসা নৌকা দেখছে। হাঁড়িকেনের আলো কাছে আসে আবার দূরে মিলে যায়। চাঁদ আর ঢেউয়ের খেলা দেখছে।

সেন্টুর মনটা অন্য রকম লাগছে, এই সুন্দর রোমান্টিক পরিবেশে দুটো নারী-পুরুষ নদীর মাঝে বসে আছে। ইচ্ছে করছে গান শুনতে কিন্তু লিজা কি গান জানে? জিগ্গেস করার মতো এতো সাহস তার হয়নি। কিন্তু লিজা অথবা কেউ যদি একটুখানি গান খাইতো।

লিজা সেন্টু কে বলল- এদিকে আসুন সেন্টু ঘেরাফি ফেলে লিজার কাছে এসে বসলো।
দুজনে নৌকার মাঝে বসে আছে। লিজার চুলগুলো সেন্টুর নাকে মুখে উরে পড়ছে।
সেন্টু সরাতে চেয়ে আবার ভাবছে থাক না।
তার চুলের স্পর্শ খুব ভালো লাগছে। কিন্তু ভয় হয় যদি লিজা লজ্জা পায় বা বুঝে ফেলে।

সেন্টু বলল- কিছু বলবে?
লিজা:- আমার খুব শীত লাগে একটুখানি জড়িয়ে ধরবেন? প্লিজ একবার ধরুন না?
সেন্টু না মানে,এটা উচিত হবে না। আপনি, মানুষ কি বলবে?
লিজা:- এখন কেউ নাই তো? আপনি কি পুরুষ মানুষ এতো ভয় পান কেন?
সেন্টু:- যদি কেউ এসে যায় তখ.., লিজা মুখে উপর বা হাত দিয়ে চেপে ধরে বললো কেউ আসবে না।
সেন্টু হাতটা সরিয়ে বলল- এটা কি করলেন বা হাত মুখে দিলেন কেন?
লিজা বলল- বেস করেছি। আগে জড়িয়ে ধরুন?
সেন্টু:- আমি পারবো না।
লিজা:- না ধরলে আমি কিন্তু নদীতে ঝাঁপ দিব বলে দাঁড়িয়ে গেল।
সেন্টু কেন বুঝতে পারছে না। আমি জীবনে কখনো কাউকে জড়িয়ে ধরি নি।
লিজা:- তাতে কি হয়েছে এখন ধরবেন?
সেন্টু:- ঠিক আছে ঝাঁপ দিতে হবে না, কিন্তু এই একবারি আর না।
লিজা:-ঠিক আছে। বলে সেন্টুর হাত ধরলো
সেন্টু কেঁপে উঠলো মনে হচ্ছে সমস্ত পৃথিবী থমকে গেল। কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না।
সেন্টুর গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। মুর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে।

লিজা:- কি হলো কোথায় হারিয়ে গেলে? জড়িয়ে ধরো?

সেন্টু ঢোঁক গিলে গলাটা ভিজে নিয়ে বলল-
হ্যাঁ, কি?
লিজা বাম হাত সেন্টুর হাতের নিচ দিয়ে পিঠে, অন্য হাত গলা পিছনে দিয়ে জড়িয়ে ধরলো। লিজা কিছুটা উত্তেজিত হয়ে আছে। লিজার উত্তপ্ত ঘন নিঃশ্বাস সেন্টুর নাকে মুখে এসে পড়ছে। চুলগুলো সেন্টুর দুই পাশে গাড় ছুঁয়ে বাতাসে দুলছে। সেন্টু অনুভব করলো হার্টবিট বেড়ে গেছে। কিন্তু তার হাঁটু থড়ালে কাঁপছে।কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে। একটা মেয়ের কাছে এসে কেন এমন কাঁপছি? তাহলে কি মেয়ে মানুষ কে আমি ভয় পাই? ছিঃ এটা খুবই লজ্জার বিষয়,যদি লিজা বুঝতে পারে? এভাবে ভাবছে

লিজা খুব উত্তেজিত হয়ে সেন্টু কে বুকের সাথে মিশে নিল। সমস্ত শক্তি দিয়ে সেন্টু কে বুকের সাথে পিষে ফেলতে চাইছে। ঠোঁট দুটো সেন্টুর ঠোঁটে দিয়ে দির্ঘ্য কিস করলো।
সেন্টু লিজার উষ্ণ, কোমল,নরম দেহের স্পর্শে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না।
জীবনে প্রথম একটা পুর্ণ যুবতী নারীর স্পর্শে।পাগলা ঘোড়ার চেয়েও আরো বেশি ক্ষেপা হয়ে উঠলো। সম্পুর্ণ রুপে দুজন দুজনকে সঁপে দিল।

২০১৮ অতীত

সুমি পরিক্ষায় অনেক ভালো রেজাল্ট করলো। সুমির মামাতো ভাই একটা নকিয়া ফোন কিনে দিল। তার সাথে জমিয়ে প্রেম করছে। মাঝে মাঝে রেজা সাথে দেখা করতে যায়। সেন্টু বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকে তারা পরিচিত একজনের ঘরে বসে মজা করে। আড্ডা দেয় অনেকে মিলে দুষ্টুমি করে আবার চলে আসে। সুমি রেজাকে ভালোবাসে। সেটা শুধু ভালো বাসাতেই সিমা বদ্ধ নয় । তাদের ওপেন ধরা ছোঁয়াতেই বুঝতে পারছে। সুমি সেন্টুর সাথে ঠিক মতো কথা বলে না। কেমন জানি খারাপ আচরণ করে। কিন্তু সেন্টু কখনো মুখ ফুটে কিছু বলে না। এমনকি বিরক্তের ভাব‌ও প্রকাশ করে না।

বিকেল সুমি বাজারে যাবে মিষ্টি কিনতে। সাথে সেন্টু কে নিয়ে যাবে রিয়া সেও যেতে চাইলো।তাই তিন জনে চলে গেল পায়ে হেঁটে চলছে। একটা ছেলে রিকশা চালিয়ে যায়। কিন্তু রাস্তার দিকে না তাকিয়ে সুমির দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ করেই রিকশা নিয়ে খালে পড়ে গেল। সুমি আর রিয়া আস্তে করে হেসে উঠলো।
সেন্টু বলল- এই জন্যেই মেয়েদের নিয়ে রাস্তায় চলতে হয় না।
সুমি:- কেন? তোর সমস্যা কি?
সেন্টু:- তোকে দেখতে দেখতে ছেলেটা রিকশা নিয়ে পড়ে গেছে।আর তুই হাসো যদি বড় ধরনের আঘাত পায়?
সুমি:- আমি তো বলিনি তাকাতে।

রিয়া দেখলো সুমি সেন্টুর সাথে কেমন জানি কড়া ভাষায় কথা বলে। আগে এমন করতো না। বাজারে আসলো পাঁচ কেজি মিষ্টি কিনলো। মিষ্টির দাম ৭৮০ সুমি ৭০০ টাকা দিয়ে বলল- সেন্টু তুই ৮০ টাকা দেয়? আমার কাছে নাই
সেন্টুর কাছে একটা টাকাও নাই কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না। তাই চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।
সুমি:‍- কি হলো টাকা দিয়ে মিষ্টি নিয়ে আয়।
সেন্টু:- আমার কাছে টাকা নাই তো
সুমি:- পুরুষ মানুষ হ‌ইছো কিসের জন্য? ৮০ টাকাও কাছে নেই। এ তো ভিখারি অথবা বাচ্চাদের কাছেও থাকে।
রিয়া:- আপু ও টাকা পাইবে কোথায়?‌
সুমি দোকানদার কে বলল- ভাইয়া আমি কালকে ভোরে দিয়ে যাবো,প্লিজ রাগ করবেন না?
দোকানদার মিষ্টি কথা শুনে বললো ঠিক আছে।
সেন্টু তুই মিষ্টি নিয়ে যা আমি আর রিয়া পড়ে আসবো। ঠিক আছে বলে সেন্টু চলে আসলো।

আজকে সেন্টু, সুমি আর রিয়া মিলে পুকুরে অনেক মাছ ধরছে। সবার খাবার পড়ে সেন্টু কে খেতে ডাকে। একটা মাথা খেতে খুব ইচ্ছে থাকলেও কখনো লেজ ছাড়া কিছুই পায়নি। খাবার খেয়ে সেন্টু বাগানে বসে আছে। রিয়া আসে বলল- ভাইয়া এখানে কি করো?
সেন্টু:- কিছু না,খাইছো তুমি?
রিয়া:- হুম,
সেন্টু:- এখন গিয়ে পড়তে বসো, এখানে থেকে কি হবে।
রিয়া:- পড়াশোনা আমার ভালো লাগে না। ইচ্ছে আছে একটা প্রেম করে পালিয়ে বিয়ে করবো।
সেন্টু হেসে বললো তোমার যে মা, মাটির নিচে পালিয়ে থাকলেও খুঁজে বের করবে।
রিয়া:- ভাইয়া তুমি কি কখনো লেখা পড়া করেছো?
সেন্টু:- হুম, ক্লাস ফাইভে তারপর আর হয়নি।

সুমি ডেকে বললো সেন্টু রিয়া এখন পড়তে বসবে, আর তুই এখানে বসে গল্প করো।
রিয়া চলে গেল সেন্টু কে কিছু কাজ দেখিয়ে দিল। সুমির ফোন বেজে উঠলো..

হ্যাঁলো.. ভাইয়া তুমি কেমন আছো?
রেজা:- ভালো নাই ময়না পাখি! চার পাঁচ দিন হলো তোমাকে দেখতে পারছিনা।
সুমি:- কালকে কজেলে যাবার সময় দেখা করো?
রেজা:- তার চেয়ে তুমি বাড়িতে আসো।
সুমি:- এতো আসা যাওয়া ভালো না,তার চেয়ে রাস্তায় বা নির্দিষ্ট কোন স্থানে হলে ভালো হতো।
রেজা- ঠিক আছে কালকে কথা হবে

রিণা খান বলল-সেন্টু কালকে সবাই কে দাওয়াত দিতে হবে।
সেন্টু:- কেন মা মানি?
মামী:-ঘরের কাজ শেষ তাই সবাই কে মিষ্টি মুখ করাতে হবে।
সেন্টু‍-ঠিক আছে মামী

সেন্টুর বড় মামা ছয় রুম দিয়ে ছাদসহ একতলা বাড়ি করছে। উপরে একতলা করবে পড়ে । কালকে সবাই কে পায়েস খাওবে। দোয়া করিয়ে নতুন বাসায় উঠতে হবে।
সেন্টু? এ সেন্টুর বাচ্চা?
সেন্টু:- মামী আসতে আছি?
সেন্টু তারাতাড়ি মামির কাছে আসে বলল-
মামানী কি?
মামী:- সবাইকে আসতে বলছো
সেন্টু:- হুম,বলছি।
মামী:- মসজিদের হুজুর সহ সবাই কে আসতে বলবি,যা...
সেন্টু:- ঠিক আছে।

একটু পরে এসে রিণা খান সুমি কে বলল-সেন্টু কৈ
সুমি:- কৈ তা আমি জানি না খুঁজে দেখো।

অনেক পরে সেন্টু আসলো,রিণা আর তার মেয়ে সুমি কি কি বাজার করবে তার লিস্ট করলো। সেন্টু কে বাজারে পাঠাবে সুমি বলল- মা যদি ও টাকা চুরি করে তখন?
রিণা:- সত্যি তো কিন্তু আর কাকে পাঠিবো।
সুমি:- আমি যাই টাকা আমার কাছে দাও।

সুমি বলল-সেন্টু চল বাজারে যেতে হবে। সুমির সাথে যেতে পারবে ভেবে আনন্দ হচ্ছে। কিন্তু যদি আবার অপমান করে সেই ভয় করে।কড়ায় গন্ডায় হিসাব করে বাজার করলো।সব টাকা সুমির কাছে থাকে।

বিকেলে সুমির মামা বাড়ির সবাই আরো মেহমান এসেছে। সেন্টু রেজা কে দেখলো অনেক সুন্দর। একটুখানি খাটো ভালো দামি জামা কাপড় পড়ে আছে। বাড়িতে সবাই নতুন পোশাক পড়ে আছে। রিয়া অনেক সেজে গুজে আসলো ভাই কেমন লাগছে?
সেন্টু:- তোকে অনেক সুন্দর চিনায়।
রিয়া:- কত মানুষ আসবে তুমি একটু সুন্দর জামা কাপড় পড়তে পারো না?
সেন্টু:- দূর যা আছে তাতেই চলবে।

সবার গায়ে সুন্দর পোশাক অনেক সেজে গুজে আছে। সেন্টুর তো মানুষের দেয়া পুরানো পোশাক ছাড়া নেই।
দুপুরে রিণা খান বলল-সেন্টু রানা ঘরে গিয়ে খাবার খেয়ে আসিস।
সেন্টু:- ঠিক আছে।

রান্না ঘরে সব মেহমান নাই, কিছু গরিব মানুষ এখানে বসে খায়।
সেন্টু খেতে বসলো মুলা, মিষ্টিকুমড়া ছিলো।
খাবার খেয়ে দুপুরে পুকুর পাড়ে বসে আছে।
হঠাৎ করে রেজা আসলো সেন্টু বলল- ভাইয়া আপনি কেমন আছেন?
রেজা:- ভালো আছি। আপনার নাম কি?
সেন্টু:-আমি সেন্টু। আপনি সুমির মামাতো ভাই তাই না?
রেজা:‍- হুম, আপনি তো সুমিদের কাজের ছেলেটি
সেন্টু:- ভাত খাইছেন?
রেজা:- হুম, আমি গরু খাই না তাই মুরগি রান্না করছে।
সেন্টু:- সুমি আপনাকে পছন্দ করে তাই না?
রেজা:- আরে ভাই শুধু পছন্দ না, আরো বেশি কিছু?
সেন্টু:- আমি জানি সব কিছুই। শুধু ধরা ছোঁয়াতেই শেষ না সব কিছু হয়?
রেজা কি যেন ভেবে বলল- আচ্ছা রাতে কথা বলবো। এখন সুমির সাথে ঘুরতে যাবো।

রাতে সেন্ট হাঁড়ি পাতিল,থালা বাসন ধোয়া থেকে সব কাজ একাই করছে।
লিমা, রেজা আর রিয়া গান ছেড়ে বসে আছে। সুমি ডান্স করছে সবাই মিলে অনেক মজা করছে। সব মহিলা মিলে উঠানে বসে গল্প করছে।কাজ শেষ করে সব কিছু গুছাতে অনেক রাত হয়ে গেছে।সেন্ট ঘুমাতে যাবে কিন্তু দুয়ার বন্দ করে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। এতো বড় বিল্ডিং এ সেন্টুর জন্য একটু জায়গা হলো না। একটা দির্ঘ্য নিঃশ্বাস ছেড়ে দরজায় টুলের উপর বসে পড়ল।
খুব বাতাস হালকা শীত পড়ছে এভাবে সারা রাত বসে থাকা যায় না। কোথায় যাবে ছোট মামার বাড়িতে গিয়ে দেখি বলে চলল..
তারাও সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে এতো রাতে ডাকা যাবে না।ডাকলে ঘুম নষ্ট করার জন্য গালি দিবে।
নিরুপায় হয়ে দরজার টুলের উপর শুয়ে রইল।
রাতে অনেক বৃষ্টি হলো সেন্টু রান্না ঘরে
খড়কুটো দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।

ভোরে সুমির মাম বাড়ির সবাই রহনা দিল। সাথে সুমি, রিয়া যাবে আর সেন্টু ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে আসবে। হালকা কাঁদা মাটিতে সেন্টু পড়ে গেল।
রেজা:- চিৎকার দিয়ে উঠলো ভিখারির বাচ্চা।এই ব্যাগটার দাম জানো তুই? কতো বড় সাহস কাঁদা লাগিয়ে দিলি।
সুমি এসেই একটা চড় মেরে দিল বলল- ইচ্ছে করে এমটা করছো তাই না? শয়তানের বাচ্চা এখন পরিস্কার করবি।
রিয়া:- আপু তুমি কি করছো? কেউ কি ইচ্ছা করে কাঁদা পড়ে যায়?
সুমি:- তুই থাম আমি ঠিকই করছি।
সুমির মামী এমন অকর্মণ্য ঢেকি না আনলেই ভালো হতো

কিছু দিন হয়ে গেল সেন্টুর খুব কষ্ট হচ্ছে সুমি শারীরিক মানসিক ভাবে অত্যাচার করে। সেন্টু কিছু বলে না শুধু এই আশায় আছে হয়তো একদিন ভালো হবে।

সেন্টু বাগানে দাঁড়িয়ে আছে সামনে খাল। হাতে কিছু খোয়া নিয়ে পানিতে ছুড়ে মারছে।
হঠাৎ করে সুমি অসলো বলল- সেন্টু কি করো?
সেন্টু:-পানির ঢেউ গুনছি
সুমি হা হা করে হেসে উঠলো বলল- তুই তো ইটের টুকরো পানিতে ফেলছো?

সুমির হাসি দেখার জন্য সেন্টু প্রচন্ড পাগল হলেও এখন আর তাকাতে ইচ্ছা করছে না।
মেয়েটি বহুরুপী এবং খুবই হিংসুটে অহংকারী।তাই মনে কিছুটা ঘৃণা জমে আছে। কিন্তু ভালোবাসা তার চেয়ে অনেক বেশি আছে।

সেন্টু বলল- রেজা কে পছন্দ করো বুঝি?
সুমি:- আমি ঢাকা যাবো, তুই ঠিক মতো বাড়ির খেয়াল রাখতে পারবি না?
সেন্টু:- কবে যাবি?
সুমি:- কালকে যাবো।
সেন্টু:- ঢাকা গিয়ে লাভ কি?
সুমি দুই হাত সেন্টুর গালে রেখে সেন্টুর চোখের দিকে তাকিয়ে বলল- সোনা ভাই আমার! দেখ বাড়িতে বাবা নেই, মা আর ছোট বোন সব কিছু তোর উপর। ঠিক মতো কাজ করিস তাদের খেয়াল রাখিস।

সেন্টু সুমির চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারলো না। সেকেন্ডের মধ্যেই তার সমস্ত রাগ অভিমান,সব কিছু বাষ্প হয়ে উড়ে গেল। শুধু হাজার বছরের না দেখা অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

সুমি:- কি হলো কথা বল?
সেন্টু:- আচ্ছা।
বলে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। সুমি একটা মিষ্টি করে হাসি দিয়ে চলে গেল।

ভোরে সুমিকে এগিয়ে দিলো গাড়িতে।
সেন্টু যতক্ষণ গাড়ি দেখা যায় ততক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলো। ইচ্ছে করছে সুমিকে নিজের কাছে রেখে দিতে। খুব কষ্ট হচ্ছে সুমিকে যেতে দিতে।

বাড়িতে অসলো মন খুব খারাপ লাগছে।কি করবে কিছুই ভালো লাগে না। ছাদে গিয়ে শুয়ে শুয়ে সুমির কথা ভাবছে। কতো কথা,কতো আনন্দ,এক সাথে মাছ ধরা, দুষ্টুমি করা সব কিছুই ছবির মতো মনে হয়। কিন্তু খুব কষ্ট হচ্ছে নিজের অজান্তেই চোখ থেকে জল পড়লো।
হঠাৎ রিয়া আসলো ভাইয়া কি করো তুমি?
সেন্ট:- কিছু না।
রিয়া:- তোমার কি আপুর জন্য মন খারাপ?
সেন্টু:- না, তোমার আপু তো রেজা কে ভালোবাসে।
রিয়া:- আমি জানি, কিন্তু তুমি তো আপু কে ভালোবাসো?
সেন্টু:- দুর বাদ দাও, আমি হলাম তোমাদের কাজের লোক।
রিয়া:-আমি যদি কখনো চলে যাই তুমি কষ্ট পাবে?
সেন্টু:- তুমি অনেক ভালো একটা মেয়ে। তুমি আমাকে সব চেয়ে বেশি ভালোবাসো কষ্ট তো হবেই?
রিয়া বলল- চল না ঐদিকে যাই?
দুজনে হাঁটছে সেন্টু ভাবছে রিয়া কি আমাকে পছন্দ করে? না এমনি ভাই হিসেবে দেখে মনের ভিতরে কৌতুহল হচ্ছে।

2023 বর্তমান

সুর্যের আলো চোখে পড়তেই লিজার ঘুম ভেঙ্গে গেল। অনুভব করলো সে দুলছে,চার পাশে ছল ছলৎ করে শব্দ হচ্ছে।এর মানে সে এখনো নদীতে নৌকায় শুয়ে আছে।চোখ মেলে দেখলো খোলা আকাশের নিচে শুয়ে আছে। হালকা হালকা মিষ্টি রোদ আর মৃদু বাতাসে নৌকা দুলছে। হঠাৎ খেয়াল হলো তাহলে সেন্টু কি তাকে এখানে ফেলে চলে গেল। রাতে একা নদীর মাঝে ছিল?
হায় আল্লাহ যদি কেউ..., তারপর মেরে নদীতে ফেলে দিত? ভাবতেই বুকটা কেঁপে উঠলো। তাকিয়ে দেখলো পাশে সেন্টু পা দুটো পানিতে রেখে।হাটু ভাঁজ করে শুয়ে আছে। এবার একটু শান্তি পেল তাহলে রাতে ছেড়ে যায়নি।অন্য কেউ তাকে কিছু করতে পারে নি।

লিজা উঠে বসলো তারপর বললো- আপনি এখানে কেন?
সেন্টু:- তাহলে কোথায় থাকবো?
লিজা:- আমি জানি কোথায় থাকবেন?
সেন্টু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
লিজা বলল- আপনি রাতে আমার সাথে ছিলেন?
সেন্টু:- বাড়িতে চলুন

লিজা কিছু হয়নি তো দেখি বলেই খুন খুন করে কান্না শুরু করলো।
সেন্টু:- কি হলো কাঁন্না করছো কেন?
লিজা কান্না জড়িত কন্ঠে বলল- আপনি আমার সর্বনাশ করেছেন। রাতে একা একটা মেয়েকে পেয়ে হুম, হুম করে কাঁদছে।
সেন্টু:- দেখুন কান্না করবে না?
লিজা:- আমি না হয়ে জড়িয়ে ধরে একটা চুমু দিসি,তাই আপনি সুযোগ পেয়ে সব কিছু করে নিবেন হুম..
সেন্টু:- দেখুন আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি বুঝতে পারিনি এমনটা ঘটে যাবে।
লিজা:- আমি পুরুষ মানুষকে একটুও বিশ্বাস করি না। তুমি আগে থেকেই এমনটা করতে চাই ছিলা
সেন্টু:- না, আসলে হঠাৎ করেই, ভুলে হয়ে গেছে
লিজা কান্নার অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছে আর বলছে আমি তোমাকে পুলিশে দিবো।
সেন্টু:- দেখো আমরা তো স্বামী-স্ত্রী এগুলো করলে দোষ নেই। পুলিশ কিছু করবে না।
লিজা:- তাহলে বলবো তুমি আমাকে জোর করে, মানে রেপ করছো অথবা অন্য কিছু।
সেন্টু:- দেখ আর কখনো ভুল হবে না ঠিক আছে। এখন সব কিছু ভুলে যাও।
লিজা:- ঠিক আছে কিন্তু ভুলতে ইচ্ছে করছে না
সেন্টু:- মানে?
লিজা- ভুলতে পারছি না।
সেন্টু কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। শুধু ভাবছে এ আবার কেমন মেয়ে মানুষ।
মনে হচ্ছিল তো তার ইচ্ছা ছিল এখন বলে কি।
লিজা বলল- ঠিক আছে যদি তুমি আমার কথা মতো চলো তাহলে সব কিছু ভুলে যাবো। না হলে সবাই কে বলে দিব পুলিশকে বলবো তুমি আমাকে জোর করে করছো।
সেন্টু:- ঠিক আছে তোমার সব কথা শুনব এখন ঘরে এলো।

লিজা আজকে খুব খুশি নিজের ইচ্ছে পূরণ করতে পারছে। তবে আস্তে আস্তে তার হৃদয়ে স্থান করে নিতে হবে। কিন্তু কিভাবে তার মন জয় করবো? এটা তো মানুষ না একটা রোবট, যার কোন অনুভূতি নেই।

লিজা পুকুরে গোসল করে বলল- সেন্টু আমার শাড়ি ব্লাউজ সব কিছু নিয়ে আসো।
সেন্টুর মাথা গরম হয়ে গেল বলল- কি আমি নিয়ে আসবো?
লিজা:- হুম, তুমি নিয়ে আসবে না তো কে নিয়ে আসবে? তারাতাড়ি করো বেশিক্ষণ ভিজা কাপড়ে ঠান্ডা লাগবে। তাহলে আবার কিন্তু সারা রাত জড়িয়ে ধরে থাকতে হবে
সেন্টু:- আপনার সাহস তো কম না? চিৎকার দিয়ে বললো আমি পারবো না
লিজা:- রাতে কথা ভুলে গেছেন।
কথা দিয়েছেন আমার সব কথা শুনবেন?
সেন্টু:- ঠিক আছে আর মনে করিয়ে দিতে হবে না।
লিজা কাপড় খুলে ছায়া ব্লাউজ পড়ে আছে। সেন্টু তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে বলল- এসে নিয়ে যান?
লিজা:- চোখ খুলে বলো তুমি এসে দিয়ে যাও
সেন্টু:- আমি তাকাতে পারবো না।
লিজা:- কেন?
সেন্টু:- আপনি? এখন কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে?
লিজা:‍- তুমি তো বললা আমরা স্বামী-স্ত্রী সব কিছুই করতে পারবো, তাহলে দেখতে দোষ কিসের।
সেন্টু:- তাই বলে এই পোশাকে
লিজা:- এখনো যথেষ্ট পোশাক আছে। বেশি কথা বললে কিন্তু..
সেন্টু:-ঠিক আছে তুমি উপরে এসে কাপড় নাও।
লিজা এসে বললো- পড়িয়ে দিন?
সেন্টু এবার রাগ ধরে রাখতে পারছে না, বলল- আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? আমি কাপড় পড়িয়ে দিবো?
লিজা:- হ্যা আপনি দিবেন না তো কে দিবে?
সেন্টু:- আমি দিবো? আপনার কি মাথায় সমস্যা?
লিজা:- দিবেন কি না? যদি না পড়িয়ে দেন, তাহলে হলে আমি রাস্তায় থেকে মানুষ এনে পড়িয়ে দিতে বলবো। তখন শুধু তাকিয়ে দেখবেন
সেন্টু:- চিৎকার দিয়ে বললো হ্যা তাই করুন। যাকে ইচ্ছে নিয়ে আসুন। আমার তাতে সমস্যা নাই?
লিজা:- রাতে কথা কি ভুলে গেছেন? আর সত্যিই সমস্যা নাই তো?
সেন্টু:- ভুলে একবার হয়ে গেছে বলে যা ইচ্ছে তাই করাবেন? যাকে ইচ্ছে নিয়ে আসুন আমার সমস্যা নাই

এতো চিৎকার চেঁচামেচি শুনে বাড়ি থেকে রিমা চলে আসলো। এসেই লিজা কে এভাবে দেখে লজ্জা পেয়ে আড়ালে গিয়ে বলল- কি হয়েছে সেন্টু?
সেন্টু:- আমি চাইনি বিয়ে করতে এখন তোমরা খুশি হয়েছো? আমাকে বলে কাপড় পড়িয়ে দিতে?
রিমা হাঁসি দিয়ে বলল- আচ্ছা ও যখন চাইছে পড়িয়ে দিতে সমস্যা কোথায়?
দাও পড়িয়ে দাও?
সেন্টু:- আমি পারবো না
লিজা:- তুমি যদি না দাও আমি রাস্তায় লোক দিয়ে পড়িয়ে নিব কিন্তু?
সেন্টু:- আমি তোমার হাতের পুতুল না।
রিমা:- সেন্টু তোমার ব‌উ কে অন্য পুরুষ কাপড় পড়িয়ে দিবে তোমার দেখতে ভালো লাগবে বলো?

লিজা ঘাট থেকে উঠে বললো- ভাবী রাস্তায় দেখো কোন পুরুষ মানুষ আছে কিনা। একটু সুন্দর আর যুবক হলে তো সেই হবে।

সেন্টু বলল- ঠিক আছে দাও আমি পড়িয়ে দিচ্ছি ভাবী তুমি ঘরে যাও।

সেন্টু কে যেভাবে বলে সেই ভাবে পড়িয়ে দিল। লিজা খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে একটা চুমু দিল। সেন্টু না চাইলেও নিজেকে সরিয়ে নিতে পারছে না। সেন্টু ভাবছে আমি কি মেয়েদের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছি? না তাহলে তো হবে না আরো শক্ত হতে হবে।
যাই হোক মেয়েদের থেকে দূরে থাকতে হবে।

সেন্টু লজ্জায় ঘরে ভাবীর সামনে আসতে পারলো না। তাই রাস্তায় একটু হাঁটাহাঁটি করছে। রিমা লিজা কে দেখেই হা হা করে হেসে উঠলো বলল- তুই পারো বটে
লিজা:- বাবাহ আর বলনা এতো কঠিন পুরুষ জীবনে দেখিনি। তোমার দেবরের বাড়াটা বাজিয়ে ছাড়বো।
রিমা:- আমার ভয় হয় যদি গায়ে হাত তুলে?
লিজা:- আরে না,এতো খারাপ না। মেয়েদের যথেষ্ট সম্মান করে। শুধু চিৎকার চেঁচামেচি করে বেশি রেগে গেলে কোথায় চলে যায়।

সেন্টু লিজা সাথে রাতের স্মৃতি কিছুতেই ভুলতে পারছে না। নিজের প্রতি বিরক্ত হয়ে বলছে একটা মুহূর্ত ভুলে থাকতে পারছি না।আর মানুষ সারা জীবন ভুলে থাকে কিভাবে।
মনে পড়ছে লিজার পানিতে ভিজা শরীর।
মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটা লিজা। ছোট বেলায় ছবিতে পুর্ণিমা, মৌসুমে কে দেখে পাগল হয়ে ছিলাম। কিন্তু লিজা তাদের থেকেও অনেক বেশি আকার্ষণিও।
প্রতিটা মুহূর্তে সেন্টুর চোখের সামনে ভেসে ওঠে লিজার শরীর। লিজা কে নিয়ে ভাবতে ভাবতে খাবারের কথা,এমনকি কাজে যেতে হবে হুঁশ হারিয়ে ফেলেছে।

হঠাৎ লিজা ডাক শুনতে পেলো সেন্টু। তাকিয়ে দেখলো লিজা ভাবছে হয়তো এটা কল্পনা।তাই বলল- তোমার সমস্যা কি আমাকে একটা মুহূর্ত একা ছাড়বে না? এখন এই মূহুর্তে চোখের সামনে থেকে সরে যাও?
লিজা:- অনেক রেগে তাকিয়ে আছে বললো
এটা কেমন ব্যবহার? আমি আপনার শত্রু? আমি কি ক্ষতি করেছি যে এভাবে খারাপ ব্যবহার করছেন?
সেন্টু দেখলো সত্যি তো লিজা সামনে।কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা ঢোক গিলে বলল- তুমি এখানে কি করো?
লিজা:- কাজে যেতে হবে না, খাবার তাও খেতে হবে না।
বলে লিজা হাটা শুরু করলো, সেন্টু অবাক হয়ে গেল লিজার চেহারা কষ্টে কলো হয়ে গেল। ভাবছে মনে হয় অনেক বেশি আঘাত দিয়ে ফেলেছি।

ঘরে এসে লিজা বসে আছে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে।
সেন্টু কখনো লিজা এভাবে কষ্ট পেতে বা কান্না করতে দেখেনি। সামান্য কথায় এভাবে কান্না করছে কেন? সেন্টু কাছে গিয়ে বলল- লিজা তুমি কাঁদছো?
লিজা:- না, কাঁদবো কেন? আমার মন হৃদয় এমনকি কষ্ট বলে কিছু নেই।

সেন্টু একটা পিঁড়ি লিজার সামনে দিয়ে বসে বলল- আমি ওভাবে বলতে চাইনি। আমার ভুল হয়ে গেছে।
লিজা:- আমি না অনেক গরিব ঘরের মেয়ে। জীবনে কখনো সুখ পাইনি,তাই আপনার সামান্য কথায় কাঁদছি না।
সেন্টু লিজার চোখের জল মুছে দিয়ে বলল- দেখো আমি কখনো তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি। কিন্তু আমি না চাইতেই তোমাকে আঘাত করে ফেলি। তোমার চোখের জল দেখলে আমার খারাপ লাগে কষ্ট হয়।
লিজা সেন্টুর দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো বলল- ভালোবাসো আমাকে?
সেন্টু:- না, তবে অনেক বেশি ভালো লাগে আপনাকে? আমাকে জীবনে কেউ কখনো আদর যত্ন করেনি। কখনো একটুখানি ভালো ব্যবহার করেনি। ছোট বেলায় থেকেই মানুষের অবহেলা আর আঘাত সহ্য করে বড় হয়েছি।তাই জানি না কিভাবে ভালো কথা বলতে হয়। আমি সবার মতো হাসতে জানি না। সবার মতো মিষ্টি করে কথা বলতে পারি না।
লিজা:- তারাতাড়ি খেয়ে কাজে যাও

আজকে অনেক বেশি দেরি হলো রুস্তম আলী বলল- কিরে সেন্টু বিয়ে করে তো ঠিক মতো কাজে আসতে পারো না।
সোবহান:- ভাই এখন তো কাজ বেশি করতে হয় তাই আসার সময় পায় না।
সেন্টু বলল- ভাই আর দেরি হবে না।
রুস্তম আলী:- আচ্ছা দিনে দেরি হলে রাতে একটু বেশি কাজ করলে তো হয়।
সেন্টু মনে মনে বলল- তোর কাজের পিন্ডি চটকাই
322 Views
4 Likes
1 Comments
5.0 Rating
Rate this: