তুমি হীন (পর্ব ৩)

রাহুল
রাহুল
লেখক

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
বর সেজে নিলয়, কনে সেজে লাকি।

নিলয় বারবার তাকাচ্ছে লাকির দিকে এটা ভেবে যে এইটা হয়তো মুমমুম।

অবশেষে বিয়ে সম্পূর্ণ হলো।

কেটে গেলো ১০ টা দিন।
মুমমুমের কথা মতো বিয়ের ঠিক ১০দিন পরেই মুমমুম কে ফোন দেয় নিলয়। কিন্তু আজকে "সংযোগ দেয়ার সম্ভব হচ্ছে না" কথাটা বললো না। রিং হচ্ছে ওপাশ থেকেও ফোন রিসিভ করলো একটা মেয়ে। কন্ঠটা নিলয়ের অচেনা। অচেনা সুরে ভেসে এলো..
- হ্যালো assalamulaikum k
- Wlaikumsallam. আমি নিলয়
- ওও নিলয় ভাইয়া কেমন আছেন।
- জ্বি ভালো আছি। আপনি কে এটা মুমমুম এর নাম্বার তাই-না।
- হুম, এটা মুমমুম এর সিম। আমি মুমমুম এর বান্ধবী তাসফিয়া বলতেছি ।
- ওও মুমমুম কোথায় গেছে আপনার কাছে ওর সিম কোনো।
- ওর বিয়ের পর সিমটা আমি চাইছিলাম তাই তখন থেকেই সিমটা আমিই ব্যবহার করি।
আচ্ছা ভাইয়া আপনার কি বিয়ে হয়েছে। বিয়ে করছেন তাই না।
-- জ্বি। আপনি কি করে বুঝলেন..
-- মুমমুম বলছিল যে আপনার যখন বিয়ে হবে। তারপর আপনি ফোন করবেন তাই।
-- ওও আচ্ছা। মুমমুম এর নতুন ফোন নাম্বারটা দাও তাহলে
-- নাহ ভাইয়া। ও তো ✆ নাম্বার দিতে বারণ করছে।
-- কোনো, আর আমাকে দিতেও কি ।
-- হুম।
-- ওহ ভালো। আচ্ছা তাহলে ওকে বলে দিও যে আমি ফোন করছিলাম।
-- ওকে বলবো। আচ্ছা ভালো থাকিয়েন বায়। আর শুনেন আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল। দেখা করতে পারবেন।

*" নিলয় বেশ অবাক হয় তাসফিয়া তার সাথে কেন দেখা করতে বলতেছে। তার সাথে দেখা করে আমি কি করবো। থাক দেখা করবো না। ভেবে নিলয় বললো

-- সবসময় তো বিজি থাকি কেমনে দেখা করবো। আর যেটুকু সময় ফ্রী থাকি সেটা বউ কে দিতে হয়। তাই হয়তো দেখা হবে না।
-- আচ্ছা নো পোবলেম। ভাগ্য ক্রমে যদি কখনও দেখা হয় তাহলে সেদিন বলবো। ভালো থাকিয়েন বায়।
-- আচ্ছা। আপনিও ভালো থাকবেন।

* তাসফিয়া ফোন কেটে দিলো। তার চোখে পানি চলে এসেছে, কোনো পানি আসলো সেটা নিজেও জানে না। ফোন টেবিলে রেখে ফ্যান অন করে শুয়ে পড়লো। ফ্যানের পাখা ঘুরতেছে সেই পাখার দিকে এক পলকে তাকিয়ে আছে চোখের পাতাও নড়ছে না কিন্তু চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গাল বেয়ে বালিশে ভেজে যাচ্ছে।

নিলয় পুকুরের পাড়ে বসে আছে আর ভাবতেছে মুমমুম কি সত্যি সেটা বলছে আমাক ফোন নাম্বার দিতেও মানা করছে। তবে কোনো।
যদি ডিস্টার্ব করি তার জন্য কি। হয়ত সেটাও। আচ্ছা আর কোনোদিন তার খোঁজ নিবোনা ভালো থাকুক সে।

লাকি ও চলে এসেছে।

নিলয়ের চোখে পানি। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পুকুরের পানির দিকে হঠাৎ পিছনে দিক থেকে লাকি বললো কি করতেছেন এখানে একলা।
নিলয় চমকে উঠলো তবুও চোখের পানি মুছে পিছনে ঘুরে তাকালো দেখলো লাকি।
-- কিছু না বসে আছি। বসো।

লাকি নিলয়ের পাশে বসলো। নিলয়ের হাতে লাকির হাত পড়লো কিন্তু নিলয় হাতটা টেনে নিল।

আপনার কি মন খারাপ ( লাকি বললো)

-- না তো
-- তাহলে এভাবে বসে আছেন কোনো। কি ভাবতেছেন।
-- না তেমন কিছু না। এমনিই প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতেছি।
-- চলেন বাসায় যাই মা ডাকতেছে।
-- যাচ্ছি। একটু পরে তুমি যাও।
-- না একসঙ্গে যাবো।
-- আচ্ছা তাহলে এখানেই থাকো। একটু পরে যাবো।
-- আচ্ছা।

নিলয়ের কাঁধে লাকি মাথা দিলে। কিন্তু নিলয়ের কোনো রিয়েকশন নাই এক দৃষ্টিতেই তাকিয়ে আছে পুকুরের পানির দিকে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে কিছু একটা ভাবতেছে কিন্তু বলতেছে না।

৫ মিনিট এভাবেই কেটে গেলো কারো মুখে কোনো কথা নেই পিনপিন নিরবতা। শুধু আছে পাখির কিচিরমিচির ডাক। হালকে করে বাতাসের তীব্র ঝাপটা। মন ভালো হয়ে যাওয়ার মতো এই পুকুরের পাড়টা চারপাশে গাছে ভরা নানান রকম। গাছের নিচে ছোট করে বসার জায়গা মাঝখানে পুকুর।

শুনেন কোনো কিছু কি সমস্যা হয়েছে। কি নিয়ে এতো ভাবতেছেন। আমাক বলেন (লাকি বললো)
-- বললাম না কিছু হয়নাই
-- রাগ করতেছেন কোনো। থাক বলতে হবে না থাকেন আপনি আমি গেলাম।

লাকি উঠে চলে যাইতেছে কিন্তু বার বার পিছনে তাকাচ্ছে এই বুঝি নিলয় ডাকবে। কিন্তু নিলয় একবার ঘুরে ও তাকালো না। তাকিয়ে আছে পুকুরের মাঝখানে।

লাকি আবার ঘুরে নিলয়ের কাছে গেলো। এবার গিয়ে নিলয়ের কোলে বসলো নিলয়ের হাত দুটো টেনে নিয়ে তার হাতে রাখলো।
"দূর থেকে বোঝা যাচ্ছে যে নিলয় লাকি কে জরিয়ে ধরে আছে।
--এই কি করতেছো। কেউ দেখে ফেলবে। যাও ঐখানে গিয়ে বসো (লিলয় বললো)
-- আমি আপনার বউ কে দেখবে দেখুক। অন্য কেউ তো না আর এমনিতেই এদিকে কেউ আসেনা। আচ্ছা আপনি এতো আন রোমান্টিক কোনো।
-- কই না তো
-- কই না তো। তো এটা কি। আচ্ছা একটা কবিতা শোনান তো।
কই শোনান না।
ওই শোনান বলতেছি।


কিছুক্ষণ পর
নিলয় একটা কবিতা ধরলো যেটা আগে প্রতিদিন মুমমুম কে শোনাতো। এই একটা কবিতাই শুধু পারে তাই প্রতিদিন এটাই শোনাতো।
মুমমুমের কথা আবার গভীর ভাবে মনে পড়ে গেলো নিলয়ের চোখে আবার পানি চলে এসেছে। চোখ মুছে কবিতা থামিয়ে লাকি কে বললো বাসায় চলো।

আচ্ছা আপনার যে কখন কি হয় কে জানে। তো এখন আমাকে কোলো তুলে নিয়ে বাসায় চলেন। আজকে কোলে করে যাবো (লাকি বললো)
- পাগল হয়েছো। কি বলতেছো
এই বলে নিলয় লাকি কে রেখে একলা চলে যাইতে হাঁটা শুরু করলো। আর লাকি তার হাঁটার দিকে তাকিয়ে আছে।

লাকি তো আর ছোট্ট বাচ্চা না যে কিছু বুঝবে না। নিলয় কেন এমন করে। তার মনের অবস্থা বুঝতেছে। সব কিছু বুঝে তবুও না বোঝার ভান করে থাকে। নিলয় কে হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করে। অনেক পাগলামি করে। যেই মেয়েটার জন্য নিলয় এমন করতেছে তার শূন্যতা লাকি পূরণ করার চেষ্টা করতেছে।

এভাবে রাগ অভিমান ভালোবাসায় কেটে গেলো ৪ মাস।
নিলয় লাকির পাগলামির কাছে হাড় মেনেছে। নিলয় ও এখন লাকিকে অনেক ভালোবাসে। মুমমুম এর কথা এখন আর তেমন মনে পড়ে না। ভুলে গেছে। ভুলে গেছে বলতে ভুল হবে। প্রিয় মানুষকে ভুলা যায়না। সৃথির কোনো জায়গায় ঠিকই থেকে যায়। মনে ও পড়ে তবে আগের মতো আর কষ্ট হয় না।
সময়ের সাথে সাথে একজনের জন্য তার শূন্যতার কষ্ট গুলো ও এখন আর কষ্ট লাগেনা।

মুমমুম বায়না ধরেছে রিকশায় করে পুরো শহর ঘুরবে। পার্কে যাবে।
তাই তার আবদার রাখতে অফিস থেকে আজকে ছুটি নিতে হবে। নিলয় সেটাই করলো।

লাকি কালো বোরকা পড়ছে। নিলয় সাদা পাঞ্জাবি।

রিকশা করে আগে হিমালয় পার্কে যাবে তারপর বিকেলে রিকশায় করে ঘুরবে লাকি ঠিক করলো। এখানে নিলয়ের মতামত দেয়ার কিছুই নাই। লাকি যা বলবে তাই মাথা পেতে নিতে হবে আর পকেট ফাকা করবে। ১০০ টাকা দিয়ে ২টা টিকিট কেটে পার্কের ভিতরে ঢুকলো। নদীর পাড়ে গিয়ে বসলো।
এই পার্কের সৌন্দর্য শুধু এই নদীর পাড়টা।

পার্কে কিছুক্ষণ থাকার পর পার্ক থেকে বের হয়।
বের হয়ে একটা রিকশায় ডাকলো নিলয়। আগে কথা বলে নিলো রাত ১০টা পযন্ত ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়াতে হবে। রিকশাওয়ালা কে বললো কত টাকা লাগবে।
নিলয় ভেবেছিল যে ৩০০-৪০০ টাকায় হয়ে যাবে কিন্তু পাশে মেয়ে থাকলে রিকশাওয়ালা মামা তো সে-ই টাকা বেশি চাওয়ার অপশন পেয়ে যায়। টাকা চাইলো ১২০০ টাকা।
১২০০ টাকায় কয়দিন ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়াবেন মামা ( লাকি বললো)
-- কয়দিন কোনো আজকে রাত ১০ টা পযন্ত।
-- এ কয়েক ঘন্টার জন্য ১২০০ টাকা বাহ মামা আপনাক তো নোবেল দেয়া উচিত।

চলেন আজকে হাঁটে হাঁটে ঘুরবো থাক রিকশা।
লাকি নিলয়ের হাত ধরে হাঁটা শুরু করলো।

রিকশাওয়ালা মামা "আপনারা তো বলেন কত টাকা দিবেন
-- মামা শুনেন একদাম বলবো ৪০০ টাকা দিবো।

যাক আমার মনের কথা বলছে ( নিলয় মনে মনে ভাবলো)

রিকশাওয়ালা মামা তো সেখানেই হার্টঅ্যাটাক এর মতো সেখানেই থমকে আছে।
কিন্তু কি ভেবে নিলয় কে বললো চলেন মামা আর কিছু বাড়িয়ে দিয়েন।

আচ্ছা নাস্তার বাজেট দিবো শুধু ওকে। (নিলয় বললল)
-- আচ্ছা দিয়েন। এখন কোন পাশে যাবো।
-- উমম চলেন আগে তুলার ডাঙ্গার ঐদিকে যাই। ( লাকি নিলয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো)
-- যাহা আপকা মর্জি মহারানী, । চলেন মামা.. যাওয়া যাক

নিলয়ের কাঁধে মাথা দিয়ে তার হাতের ভেতরে হাত দিয়ে, চোখ বন্ধ করে বসে আছে লাকি। রিকশা চলতেছে নিজ গন্তব্যে। নিলয় বার বার লাকির চোখের দিকে তাকাচ্ছে আজ লাকিকে অদ্ভুত সুন্দর লাগতেছে বিশেষ করে চোখ দুটো কে।
নিলয় অনেক বার খেয়াল করছে। লাকি যখন অনেক হ্যাপি থাকে তখন অদ্ভুত সুন্দর লাগে, অদ্ভুত এক মায়া থাকে তার মধ্যে। যে মায়া বারবার নিলয়কে তার ভালোবাসায় আকৃষ্ট করে।

তুলার ডাঙ্গায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। কিন্তু সন্ধ্যা বেলার ভিউ টা ও অসাধারণ। আকাশ টা লাল বর্ণ ধারণ করছে। নদীর পানিটাও লাল হয়ে গেছে। অদ্ভুত সুন্দর লাগতেছে প্রকৃতিটা আর ও অদ্ভুত সুন্দর লাগতেছে লাকিকে তার চোখ দুইটাকে। নদীর ধারেই বসার জায়গা সেখানে বসলো কিছুক্ষণ থাকে রওনা দিলো শহরের দিকে
সারাটাদিন ঘুরতে ঘুরতে চলে গেলো।
আরো কোথায় কোথায় ঘুরতে যেতে হবে। কোথায় কেথায় বাকি আছে সেই হিসাব-নিকাশ নিলয় শোনাচ্ছে আর হাসতেছে লাকি। নিলয় শুধু তার দিকে তাকিয়ে আছে হাসিটা দেখা যাচ্ছে না কিন্তু চোখ দুটো কে আরো সুন্দর করে দিতেছে সেই হাসিটা। ( মানুষ হাসলে বুঝি অদ্ভুত সুন্দর লাগে) কেমনে হাসতেছে সেইটা কল্পনা করতেছে নিলয়।
হঠাৎ হাসি থেমে গেলো কথা বলা ও বন্ধ হয়ে গেলো। লাকি অজ্ঞান হয়ে গেছে। নিলয়ের বুকটা কেঁপে উঠল লাকি কে ডাকতেছে কিন্তু লাকি চুপচাপ হয়ে আছে। নিলয়ের চোখে পানি চলে এসেছে। লাকি কে হারানোর এক অদ্ভুত কষ্ট মনে নাড়া দিতেছে ভয় লাগতে কি হলো কি থেকে। বারবার লাকি কে ডাকতেছে কিন্তু কোনো নড়াচড়া নাই। এবার আর নিলয় কান্না কন্ট্রোল করতে পারলো না কান্না করেই দিলো। লাকি কে জরিয়ে ধরে কান্না করতেছে।
চলবে...

এই গল্পটি এবং আমার সব গল্প অন্য কোথাও পাবেন না। শুধু আমি আমার লেখা গল্প গুলো "গল্প সমাহার" অ্যাপ এ পোস্ট করছি।
248 Views
4 Likes
4 Comments
4.5 Rating
Rate this: