কানের ইবাদত

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
মুমিনের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত এবাদতে কাটবে।। রসুলের (সা.) সুন্নাত অনুযায়ী প্রতিটি মুহূর্ত কাটানো। নিজেকে আল্লাহ তায়ালার কাছে গ্রহণীয় করতে হলে বিশুদ্ধ মন মানসিকতা ও পরিচ্ছন্ন জীবন যাপনে অভ্যস্ত হতে হবে। নিজের মন, শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আল্লাহ তায়ালার হুকুম ও নবীর (সা.) সুন্নাত অনুযায়ী ব্যবহৃত হবে। অঙ্গের সঠিক ও ভুল ব্যবহারের ফল দুনিয়াতে তো দেখা যাবেই আখেরাতে এর চূড়ান্ত পরিনাম ভোগ করতে হবে।

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন মাজীদ এর মধ্যে এরশাদ করেছেন :

‘বস্তুত বহু সংখ্যক মানুষ ও জিন আমি জাহান্নামের জন্যই সৃষ্টি করেছি। তাদের কাছে যদিও অন্তর আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা চিন্তা করে না। তাদের কাছে চোখ থাকলেও তারা তা দিয়ে দেখে না। আবার তাদের কাছে কান আছে, কিন্তু তাদের কান দিয়ে শোনে না। এরা জন্তু-জানোয়ারের মতো, বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে এরা তাদের চেয়েও বেশি পথভ্রষ্ট; এসব লোকেরাই মারাত্মক উদাসীন।’ (সুরা আরাফ: আয়াত ১৭৯)

কান বা শ্রবণ শক্তি দেওয়া হয়েছে শোনার জন্য। ভালো কথা, ভালো শব্দ, ভালো ধ্বনি শোনার জন্য কান। কান এসব ইতিবাচক কাজে লাগানো হলে শরীর ও মনে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। নেককার ও বিচক্ষণ মানুষ কান বা শ্রবণ শক্তি দিয়ে এমনই ভালো কাজ করেন।

আধুনিক বিজ্ঞানের নানা গবেষণায় জানা যাচ্ছে যে, কানকে গঠনমূলক ও ইতিবাচক কাজে ব্যবহার করা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভালো ও পরিমিত শব্দ না শুনলে যেমন শ্রবণ শক্তি নষ্ট হয়ে যায়, তেমনি শব্দ দুষণ, হৈচৈ, উত্তেজক শব্দ মানুষের কানকে কষ্ট দেয়। তখন শ্রবণ শক্তি হ্রাস পায় এবং মনে কুপ্রভাবের মাধ্যমে হৃৎ ও মানসিক রোগের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন অপরাধের উস্কানিও কানের মাধ্যমে কুমন্ত্রণা রূপে মানুষের মনে সঞ্চারিত হয়, যা পাপের পথকে প্রশস্ত করে ও পবিত্র জীবনকে দুর্বিসহ নোংরা-পাপময় জীবনে পর্যবসিত করে।

এ কারণেই, কান বা শ্রবণ শক্তিকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এবং পরিমিত ও ভালো কিছু শোনার কাজে ব্যবহার করা মানবজীবনের সুস্থতা, পবিত্রতা ও সফলতার জন্য অত্যাবশক। এতে কানের কার্যক্ষমতা যেমন ঠিক থাকবে, তেমনি শরীরও অহেতুক শব্দের কবলে নিপতিত হয়ে দূষিত-কলুষিত হবে না। সুস্থ, সবল ও ভারসাম্যপূর্ণ জীবনের জন্য কান বা শ্রবণ শক্তির ব্যবহার ও অপব্যবহারের বিষয়ে খেয়াল রাখা শুধু ধর্মীয় কারণেই নয়, চিকিৎসা বিজ্ঞানের দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।

স্বাস্থ্যগত কুফল ছাড়াও ধর্মীয়-নৈতিক দিক থেকে কান বা শ্রবণেন্দ্রিয়কে ভুল বা পাপ কাজে লাগানোকে পশুর কাজের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। বিশেষত, যে কান সৎ, সত্য, সঠিক কথা শুনতে আগ্রহী হয় না, সে কান ও কানের অধিকারী মানুষ, শ্রবণশক্তি থাকার পরেও সত্য ও ন্যায়ের চেয়ে অনেক দূরে অবস্থান করে। এমনকি, মানুষ হয়েও পশুর স্তরের বলে চিহ্নিত হয় সেসব লোকজন।

পবিত্র কোরআনে সুস্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে:

‘হে নবী, আপনি কি মনে করেন, তাদের অধিকাংশ লোক আপনার কথা শোনে কিংবা এর মর্ম বোঝে; আসলে এরা পশুর মতো; বরং তারা আরো বেশি বিভ্রান্ত’ (সুরা ফোরকান: আয়াত ৪৪)।

কোনো মিথ্যা, অশ্লীলতা, কুমন্ত্রণা, উস্কানি, গিবত, পরচর্চা ইত্যাদি ভুল ও বিভ্রান্তিকর বিষয় দিয়ে কান বা শ্রবণকে মোটেও কলুষিত করা যাবে না। শ্রবণকে কলুষিত ও অপবিত্র করার মাধ্যমে শরীর ও মনকে দুষিত হওয়ার বিপদ থেকে বাঁচতে হলে সর্বাগ্রে কান বা শ্রবণকে হেফাজত করা জরুরি এবং সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার।


কানের এবাদত হলো হারাম, মিথ্যা, ভুল, বিভ্রান্তিকর, অশ্লীল কথা বা শব্দ থেকে কানকে হেফাজত করা। গান বাজনা,অপপ্রচার ও অপবাদমূলক, হিংসা, বিদ্বেষ, নেংরা শব্দ বা প্রচারণা শোনা থেকে দূরে থাকা নিজের স্বাস্থ্যগত ও ধর্মীয় কারণেই জরুরি। মূল কথায়, দ্বীন, হক ও পবিত্র বিষয়ের বাইরে অন্য কোনো অহেতুক ও পাপযুক্ত বিষয়ে কান বা শ্রবণ শক্তিকে কখনোই যেতে না দেওয়া। বরং কান ও শ্রবণ শক্তির সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে মুসলিমদের হতে হবে সত্যের শ্রবণকারী বা সঠিক শ্রোতা।

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে :

‘রাসুলের ওপর যা নাজিল হয়েছে তা যখন এরা শোনে, তখন সত্য চেনার কারণে আপনি এদের অনেকেরই চোখকে দেখতে পাবেন অশ্রুসজল’ (সুরা মায়েদা: আয়াত ৮৪)।

এ কারণেই আলেমগণ কান বা শ্রবণ শক্তিকে কেবলমাত্র সত্যবাদিতার কথা ও ভালো কথা শোনার তাগিদ দিয়েছেন এবং নিরর্থক কথা শোনা থেকে সরে আসতে বলেছেন। কারণ, কান বা শ্রবণ ক্ষমতা হলো জ্ঞান ও প্রজ্ঞার জানালা স্বরূপ। কানের মাধ্যমে সেইসব ইতিবাচক আলোচনা ও জিকির হৃদয়ে সংরক্ষিত করে নেওয়া উচিত। আর ‘আফজালুল জিকির’ বা সর্বোত্তম জিকির হলো ‘জিকরুল্লাহ’ তথা আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার জিকির বা আলোচনা, যা লিপিবদ্ধ করেছে ‘কালামুল্লাহ’ বা আল কোরআন।

আল্লাহ ও আল্লাহর কথা, উপদেশ, আদেশ, নিষেধ আলোচনার মাধ্যমে কানকে যেমন সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়, তেমনিভাবে কলব বা মনকে আলোকিত ও পরিশুদ্ধ করা যায়। আবার বাজে, অহেতুক, বেফুজুল, বেহুদা, বেশরম ও অসার কথাবার্তার মাধ্যমে কান বা শ্রবণ শক্তির অপব্যবহার করা হয় এবং মন ও হৃদয় এরূপ অপব্যবহারের দ্বারা কালিমালিপ্ত ও কলুষিত হয়।
104 Views
1 Likes
0 Comments
5.0 Rating
Rate this: